না-তো।
অ। রান্নাঘরের টেবিলে বসে খেতে শুরু করল রবিন।
এই সময় বাবা ঢুকলেন সেখানে। কি যে হচ্ছে আজকাল, অনিশ্চিত কণ্ঠস্বর, কাউকে উদ্দেশ্য করে বলেননি। রকি বীচেই আজ একটা লোককে মারার চেষ্টা হয়েছিল। পাবলিক হলে, লোকজনের সামনে।
রকি বীচে? আঁতকে উঠলেন মিসেস মিলফোর্ড। সাংঘাতিক কাণ্ড ! কে? কাকে?
আর বলো না, কোন চরমপন্থী হবে। যাকে আক্রমণ করা হয়েছিল, সে এক নিরামিষভোজী সঙ্রে প্রেসিডেন্ট, আরেক পাগল। ভক্তদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছিল, এই সময় সাদা, বিচিত্র পোশাক পরা দুই নোক মঞ্চে উঠে আক্রমণ করে বসল। দুজনেরই বাদামী চামড়া।
গলায় দুধ প্রায় আটকে গেল রবিনের। একটু কেশে পরিষ্কার করে নিয়ে বলল, বাদামী চামড়া?
তাই তো বলল।
প্রেসিডেন্ট ব্যথা পেয়েছে? জিজ্ঞেস করলেন মিসেস মিলফোর্ড।
না। লোক দুটোকে ধরা যায়নি। পালিয়েছে।
নাম কি ওর, বাবা? জিজ্ঞেস করল রবিন।
কার নাম?
ওই যে, নিরামিষভোজী প্রেসিডেন্ট।
ডাংম্যান। কি ডাংম্যান যেন।
কোন সন্দেহ থাকল না আর রবিনের, পুতুল ছিনতাইকারীরাই আক্রমণ করেছে। নিরামিষভোজীদের প্রেসিডেন্টকে। দুই ঢোকে বাকি দুধটুকু শেষ করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল সে। টেলিফোন করবে। একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গেছে, বাদামী। লোকগুলো যে-ই হোক, সাংঘাতিক কোন উদ্দেশ্য রয়েছে তাদের।
রিঙ হয়েই চলেছে হেডকোয়ার্টারে। কিন্তু ধরছে না কেউ। তারমানে ফেরেনি এখনও মুসা আর কিশোর।
হুমড়ি খেয়ে ঝোপের ভেতর পড়ে রয়েছে দুই গোয়েন্দা। হাঁপাচ্ছে জোরে জোরে। কাটা, ভাঙা শুকনো ডালের মাথার খোঁচা আর আঁচড় লেগে ছিলে গেছে গায়ের চামড়া। পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়েছে কয়েকবার, দুই হাঁটুর চামড়াও ক্ষতবিক্ষত। তবে অনেক পেছনে ফেলে এসেছে রহস্যময় কাঠের বাংলো।
পাগলা-ভূতটা তাদের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।
সাবধানে মাথা তুলে পেছনে তাকাল মুসা। কিশোর, কিছু দেখতে পাচ্ছ? .
না। এখানে আমরা নিরাপদ।
আমার তা মনে হচ্ছে না। কি ওগুলো? মুশূন্য বামনগুলো?
সহজ কোন ব্যাখ্যা নিশ্চয় আছে, অস্বস্তিবোধ পুরাপুরি যাচ্ছে না কিশোরের। ভাল মত দেখারই তো সুযোগ পেলাম না। ফিরে গিয়ে আবার যদি…
পারলে তুমি যাও, হাত নাড়ল মুসা। আমি নেই। একে তো পাগলা হাসি, তার ওপর ওই মাথাছাড়া… কেঁপে উঠল সে। আল্লাহগো, বাঁচাও !
জোরে নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর। হাসিটা অবশ্য বিকটই, ভয় লাগে।
খালি ভয়? চলো পালাই। আবার এসে পড়লে, ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকাল। মুসা।
নীরব হলো কিশোর। গভীর ভাবনায় ডুবে গেছে।
উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছে গোয়েন্দা-সহকারী।
অবশেষে বলল কিশোর, আমার মনে হয়, সব কিছুর মধ্যেই যুক্তি রয়েছে, মুসা। বাদামী চামড়ার সেই মূর্তিচোর লোকটা, এই ভূতের হাসি, মুশূন্য বামন…
কি যুক্তি?
সেটাই জানতে হবে। তবে এখন আমাদের বাড়ি যাওয়াই ভাল।
হ্যাঁ, এইটা হলোগে কাজের কথা।
অন্ধকারে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল মুসা। এই একটা কাজে সে বিশেষ পারদর্শী। একবার কোন পথে গেলে সেটা সহজে ভোলে না, কি করে যেন ঠিক চিনে নেয়। কিশোরের খুব অবাক লাগে মাঝে মাঝে।
চলছে ঠিক পথেই, তবে গতি ধীর।
যেখানে দিয়ে ঢুকেছিল দেয়ালের সেই জায়গাটার কাছে এসে থামল দুজনে।
ঝোপের ভেতর থেকে ব্যাগটা বের করল মুসা।
হুক ছুড়ে মারল কিশোর। একবার, দু-বার, তিনবার, আটকাতে পারছে না, অথচ তখন একবারই কাজ হয়ে গিয়েছিল। তবে তখন আলো ছিল।
দেখি, আমার কাছে দাও, হাত বাড়াল মুসা। প্রথমবারে সে-ও পারল না, কাজ হলো দ্বিতীয়বারে। টেনেটুনে দেখল দড়িটা না, খুলে আসবে না। উঠতে গিয়েই স্থির হয়ে গেল। নীরবতার মাঝে রাইফেলের বোল্ট টানার ক্লিক শব্দটা বড় বেশি করে কানে বেজেছে।
এই সরে এসো! কঠিন আদেশ শোনা গেল।
পথের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে লম্বা একটা মূর্তি, হাতের রাইফেল এদিকে ফেরানো।
কিছু করার নেই। দেয়ালের কাছ থেকে সরে এল দুই কিশোর, পথে উঠল। মূর্তিটার কাছে এসে বলে উঠল কিশোর, টনি, আমি কিশোর, ও মুসা।
রাইফেল সরাল না টনি। সন্দেহ যাচ্ছে না। শীতল কণ্ঠে বলল, এখানে কি করছ?
টনি, অধৈর্য হয়ে বলল মুসা, কি করছি ভালমতই জানো। সোনার পুতুল খুঁজছি।
এই অসময়ে? ধমকের সুরে বলল টনি। অন্ধকারে চোরের মত? কই, আজ আবার আসবে বলোনি তো। সত্যি করে বললো, কেন এসেছ?
কি জ্বালা! বললাম তো পুতুল খুঁজতে, জবাব দিল কিশোর। ভাবলাম, গেটের কাছে হারিয়েছে যখন, অন্ধকারে চোরটা আবার ফিরে আসতে পারে ওখানে। কণ্ঠস্বর পাল্টে গেল। টনি, পুতুল খোঁজার অনুমতি আমাদেরকে দিয়েছেন তোমার দাদী, নাকি?
দ্বিধায় পড়ে গেল টনি। তোমাদের বিশ্বাস করব কিনা ভাবছি।
তোমাকেও তো অবিশ্বাস করতে পারি আমরা! রেগে গেল মুসা। আমরা যে তিন গোয়েন্দা, অনেক আগে থেকেই জানো তুমি। আমাদের কার্ড পেয়েছ।
থামানোর জন্যে মুসার পায়ে লাথি মেরে বসল কিশোর, কিন্তু লাভ হলো না, ধনুক ছেড়ে বেরিয়ে গেছে তীর।
কি করে জানলে?
আর মিথ্যে বলে লাভ নেই, সত্যি কথাই বলল মুসা।
না, নরম হলো টনির গলা, রাইফেল নামাল, তোমরা চালাক ছেলে। হ্যাঁ, তোমাদের কার্ড পেয়েছি, গেটের কাছে। ডাংম্যানকে সেকথা বললাম। যা করার বুঝেশুনে করতে বলল আমাকে। দাদীর উকিলকে জিজ্ঞেস করলাম তোমাদের কথা। সে আমাকে টেরিয়ার ডয়েলের কাছে পাঠাল, সেকথা আগেই বলেছি। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ, মাল বিক্রির ছুতোয়ই তোমাদেরকে এস্টেটে নিয়ে এসেছিলাম, চাইছিলাম, পুতুল খোঁজার কাজটা দাদী তোমাকে দিক।