কাজটা খারাপ হয়ে গেল তাহলে, জিভ দিয়ে চুকচুক শব্দ করল রবিন। কিশোর আর জিনা নিশ্চয় ফার্মে উঠেছে। আমাদের জন্যে খুব ভাববে।
হ্যাঁ, ছোট একটা পুকুর দেখে ঘুরল মুসা। চলো, হাত-মুখ ধুয়ে নিই। চেহারার যা অবস্থা হয়েছে একেকজনের। লোকে দেখলে পাগল ভাববে।
হাত-মুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিল দুজনে। ময়লা কাপড় ভরে রাখল ব্যাগে, পরে সময়-সুযোগমত ধুয়ে নেবে।
পাড়ের ওপর উঠতেই একটা ছেলেকে দেখতে পেল, শিস দিতে দিতে আসছে। হাল্লো, বলল হাসিখুশি ছেলেটা। ছুটি কাটাতে বেরিয়েছ বুঝি?
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল মুসা। আচ্ছা ভাই, ইয়েলো পণ্ড ফার্মটা কোথায়? ওই ওটা? বৃদ্ধার বাড়িটা দেখাল।
আরে দূর, ওটা ফার্ম নাকি? ও-তো মিসেস হ্যাগার্ডের বাড়ি। নোংরা। নাক কুঁচকাল ছেলেটা। ওটার ধারে-কাছে যেয়ো না। বুড়ির ছেলে একটা ইবলিস, গাঁয়ের লোকে ওর নাম রেখেছে ডারটি রবিন।…ইয়েলো পণ্ড ওই ওদিকে। ব্যাংকিন রেস্ট ছাড়িয়ে গিয়ে, বায়ে। .
থ্যাংকু, বলল মুসা।
মাঠের পথ ধরে হেঁটে চলেছে রবিন আর মুসা। পেটে খিদে। মনে ভাবনা। কিশোর আর জিনা নিশ্চয় খুব দুশ্চিন্তা করছে।
সরু পথটার কাছে এসে থামল, সেই যে সেই পথটা, যেটার দু-ধারে পাতাবাহারের জঙ্গল পথকে সুড়ঙ্গ বানিয়ে দিয়েছে।
হাত তুলে দেখাল রবিন, ওই যে দেখো, কোথায় নেমে যাচ্ছিলাম। নালা।
নালায়েকের বাচ্চা, বিড়বিড় করে টমটমওয়ালাকে গাল দিল মুসা।
র্যাংকিন রেস্টের কাছে আসতেই কিশোর আর জিনার দেখা পাওয়া গেল। মুসা আর রবিনকে আগেই দেখেছে ওরা, নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ছুটে আসছে। তাদের সঙ্গে লাফাতে লাফাতে আসছে রাফিয়ান।
নাস্তা কেউই খায়নি। র্যাংকিন রেস্টে ঢুকল ওরা।
এগিয়ে এল সেই মহিলা, গতদিন ডাস্টার দিয়ে যে জানালা পরিষ্কার করছিল। কি চাই?
নাস্তা খাইনি এখনও, বলল কিশোর। কিছু আছে?
পরিজ আর মাখন, জানাল মহিলা। আর আমাদের নিজেদের কাটা গরু, নিজেদের মুরগীর ডিম। নিজেদের হাতে চাক ভেঙে মধু এনেছি আমরা, আর পাউরুটি আমি নিজে বানিয়েছি। চলবে? কফিও আছে।
ইস, আন্টি, জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে আপনাকে, দাঁত আর একটাও ভেতরে রাখতে পারছে না মুসা। জলদি করুন। এক বচ্ছর কিছু খাইনি।
হেসে চলে গেল মহিলা।
ছোট গোছানো ডাইনিং রুমে আরাম করে বসল অভিযাত্রীরা। খানিক পরেই রান্নাঘর থেকে ভেসে এল ভাজা মাংস আর কড়া কফির জিভে পানি আসা গন্ধ। লম্বা জিভ বের করে ঠোঁট চাটল রাফিয়ান।
কুকুরটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল মুসা, ও তো দেখছি ভাল হয়ে গেছে। মিস্টার নরিসের ওখানে গিয়েছিলে?
হ্যাঁ, বলল কিশোর। গিয়ে দেখলাম বাড়ি নেই। তার স্ত্রী বললেন, এসে পড়বেন শিগগিরই। খুব ভাল মহিলা। বসতে দিলেন। বসলাম।
কিন্তু শিগগির আসেননি ভদ্রলোক, জিনা যোগ করল। কাজে আটকে গিয়েছিলেন। সাড়ে সাতটার পর এলেন। খুব খারাপ লাগছিল, তাদের খাওয়ার সময় তখন।
তবে মিস্টার নরিসও ভাল, বলল কিশোর। রাফির পা দেখল, চেপে ধরে কি জানি কি করল..এমন জোরে কাউ করে উঠল রাফি, যেন ছাত ছুঁড়ে বেরিয়ে যাবে…জিনা গিয়ে লাফ দিয়ে পড়ল মিস্টার নরিসের ওপর…হাহ হাহ…ভদ্রলোক তো হেসেই বাঁচেন না…
যাব না, চোখমুখ ঘুরিয়ে বলল জিনা। যা ব্যথা দিয়েছে…
ডাক্তার যা করেন, বুঝেশুনেই করেন…
হ্যাঁ, তাই তো দেখছি, আবার রাফিয়ানের মাথায় হাত বোলাল মুসা। একেবারে ভাল হয়ে গেছে। তারপর কি করলে?
খাওয়ার জন্যে চাপাচাপি শুরু করলেন মিসেস নরিস, বলল কিশোর। কিছুঁতেই এড়াতে পারলাম না। খাওয়ার পর বেরোতেও দিতে চাইলেন না। বললেন, বৃষ্টিবাদলার মধ্যে গিয়ে কি করবে, শুয়ে থাকো এখানেই। তোমরা ভাববে বললাম। শেষে, ন-টা বাজার পর আকাশ পরিষ্কার হলে ছাড়লেন। ইয়েলো পণ্ডে গিয়ে তোমাদের পেলাম না। ভাবলাম, বৃষ্টিতে আটকে গেছ, অন্য কোথাও রাত কাটাতে উঠেছ। কিন্তু নিশ্চিন্ত হতে পারলাম না। এতক্ষণে না পেলে পুলিশকে জানাতাম।
ফার্মটা কিন্তু দারুণ, মাথা কাত করল জিনা। ছোট একটা ঘরে থাকতে দিল আমাদের। বিছানা বেশ নরম। আমার বিছানার পাশে নিচে রাফি শুয়েছিল।
আর কি কপাল, কপাল চাপড়াল মুসা, আমি কাটিয়েছি খড়ের গাদায়…
মস্ত ট্রে-তে খাবার বোঝাই করে নিয়ে ঘরে ঢুকল মহিলা। পরিজ থেকে ধোঁয়া উঠছে। সাদা বিরাট বাটিতে সোনালি মধু। ইয়া বড় এক ডিশ ভরতি মাংস-ভাজা আর ডিম সেদ্ধ। আরেকটা বাসনে ভাজা ব্যাঙের-ছাতাও রয়েছে। .
খাইছে! হাততালি দিয়ে উঠল মুসা। ঢোক গিলল।
টেবিলে ট্রে নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল মহিলা, এগুলো খাও। টোস্ট, ডিম ভাজা আর মাখন নিয়ে আসছি। দুধ-কফি পরে আনব। নাকি এখনি?
না না, তাড়াতাড়ি হাত নাড়ল মুসা, পরেই আনুন। একটা ডিম তুলে নিয়ে আস্ত মুখে পুরল। সেটা অর্ধেক চিবিয়েই এক টুকরো মাংস নিয়ে কামড় বসাল। প্লেটে খাবার তুলে নেয়ার তর সইল না।
হেসে যার যার প্লেট টেনে নিল অন্যেরা। খাবার তুলে নিল প্লেটে। বাকি খাবার সহ ট্রে-টা মুসার দিকে ঠেলে দিয়ে বলল জিনা, নাও, রাফিয়ানকেও কিছু দিয়ো।
কি আর বলব রে ভাই, ব্যাঙের ছাতার শেষ টুকরোটা মুখে পুরল মুসা। অন্ধকারে গিয়ে উঠেছিলাম এক বান্দরের বাড়িতে। রবিন, তুমি বলো। দরজায় দেখা দিয়েছে মহিলা, হাতে আরেক ট্রে, লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সেদিকে গোয়েন্দা সহকারী।