এখন। যে করেই হোক, গহনাগুলো তার চাই।
আর বেশি বাকি নেই, ধরে ফেলবে ছেলেদের, এই সময় বিপদে পড়ল ডারটি। আঠাল কাদায় আধ হাত ডুবে গেল পা। কোনমতে টেনে তুলে আরেক জায়গায় ফেলল, ভাবল ওখানটায়ও নরম কাদা। কিন্তু তলায় পাথর বা শক্ত অন্য কিছু রয়েছে, যেটাতে জোরে পা পড়ায় বেকায়দা রকম কাত হয়ে গেল পা, গোড়ালি গেল মচকে। চেঁচিয়ে উঠল, বাবারে, গেছি। আমার পা গেল! উফ! আধহাত কাদার মধ্যেই বসে পড়ল সে।
তাকে ভোলার জন্যে লাফিয়ে এগিয়ে আসতে গিয়ে টিকসিরও দুই পা দেবে গেল কাদায়, একেবারে হাঁটু পর্যন্ত। টেনে তোলার জন্যে জোরাজুড়ি কররতেই আরও ডুবে গেল পা। আতঙ্কিত হয়ে পড়ল সে, ভাবল চোরা কাদায় ডুবে যাচ্ছে।
ভালমত আটকেছে দুজন। এমন এক জায়গায়, কেউ গিয়ে সাহায্য না করলে বেরিয়েই আসতে পারবে না। সাহায্যের জন্যে অনুনয় শুরু করল।
মায়া হলো রবিনের। যাব নাকি?
পাগল হয়েছ, বলল মুসা।
থাক, কিশোর বলল, শিক্ষা হোক কিছুটা। আমরা গিয়ে তোক পাঠিয়ে দেব। চোরাকাদায় পড়েনি, মরবে না। তুলতে গিয়ে আমরাই শেষে পড়ব বিপদে।
ওদেরকে দেখে খুশি হলো পোস্টম্যান। কেমন কেটেছে, অ্যাঁ? টু-ট্রীজে?
খুব ভাল, বলে অন্যদের রেখে টেলিফোনের দিকে এগোল কিশোর।
বাড়িতেই পাওয়া গেল মিস্টার নরিসকে। শুনে তো প্রথমে চমকে উঠলেন। বললেন, তোমরা ওখানেই থাকো। আমি আসছি।
ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে পৌঁছে গেলেন নরিস। ছেলেদের গাড়িতে তুলে নিলেন। গ্রামরক্ষীর কাছে গিয়ে কিছুই হবে না, সোজা চললেন শেরিফের কাছে। জেলখানাটার কাছেই শেরিফের অফিস।
শেরিফ লোক ভাল, বুদ্ধিমান। সাড়ে ছয় ফুট লম্বা, লিকলিকে শরীর। সব শুনে শিস দিয়ে উঠলেন। পোটলা খুলে প্রথমেই তুলে নিলেন ফেললানিয়া নেকলেসটা।
এটা যে কত খোঁজা খুঁজেছে পুলিশ, বললেন তিনি। বেল বাজিয়ে সহকারীকে ডেকে সংক্ষেপে সব জানিয়ে বললেন হ্যারি, তিনজন লোক নিয়ে যাও। ডাকাতদুটোকে তুলে আনোগে।
অবাক হয়ে শুনল হ্যারি। ছেলেদের দিকে চেয়ে সামান্য মাথা ঝাঁকাল। হেসে বলল, তোমরা বাহাদুর। যাই, নিয়ে আসিগে পাজিগুলোকে।
গহনাগুলো শেরিফের দায়িত্বে দিয়ে দিল ছেলেরা। তবে প্রতিটি জিনিসের একটা লিস্ট করে তাতে রিসিভড লিখিয়ে শেরিফের স্বাক্ষর নিয়ে নিল। সাক্ষী রইলেন মিস্টার নরিস। কাগজটা ভাঁজ করে সযত্নে পকেটে রেখে দিল কিশোর।
পাখোয়াজ ছেলে, তারিফ করলেন শেরিফ। বড় হয়ে কি হওয়ার ইচ্ছে?
হয়তো গোয়েন্দাই থেকে যাব, বলল কিশোর। জানি না এখনও।
শেরিফের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরোল ওরা। খামারে নিয়ে যাওয়ার জন্যে অনেক চাপাচাপি করলেন মিস্টার নরিস, কিন্তু রাজি হলো না ছেলেরা। স্কুল কামাই করবে না।
শেষে তাদেরকে বাস স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন মিস্টার নরিস।
বিদায় নেয়ার আগে একে একে সবাই হাত মেলাল তাঁর সঙ্গে। গম্ভীর মুখে রাফিয়ানও একটা পা বাড়িয়ে দিল।
হেসে উঠলেন মিস্টার নরিস। তুই একটা কুকুর বটে, রাফি।তোর মত একটা কুকুর যদি আমার থাকত।
গোঁ গোঁ করে কুকুরে-ভাষায় কিছু বলল রাফিয়ান, বোধহয় বলেছে, ঠিক আছে, যান। জিনা তাড়িয়ে দিলেই চলে আসব আপনার কাছে।
তার কথা যেন বুঝতে পারল জিনা, তাড়াতাড়ি গলার বেল্ট ধরে রাফিয়ানকে কাছে সরিয়ে নিল।
হাসল সবাই।
আবার এদিকে কখনও বেড়াতে এলে যেন তার বাড়িতে ওঠে, বার বার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিলেন মিস্টার নরিস। .
বাস আসতে বোধহয় দেরি আছে। মুসা বলল, কিছু খেয়ে নিলে কেমন হয়?
খুব ভাল, বলল কিশোর। আমিও একথাই ভাবছিলাম। খাবারের দোকানটা দেখিয়ে বলল, চলো, ডিকের মায়ের সঙ্গেও দেখা হবে। বলেছিলেন ফেরার পথে দেখা করে যেতে। –
ছেলেদের দেখে খুব খুশি হলেন বৃদ্ধা। তবে আগের বারের মতই রাফিয়ানকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন না, দরজার বাইরে রাখলেন। আদর-অভ্যর্থনার পর টুকটাক আরও কিছু কথা, তারপর জিজ্ঞেস করলেন, আজ কটা স্যাণ্ডউইচ লাগবে?
আজ বেশি লাগবে না, বাড়ি ফিরছি তো, বলল কিশোর। তাছাড়া পথে খিদে পেলে খাবার পাওয়া যাবে। হিসেব করে বলল, চার-পাঁচে বিশটা।
ঠিক আছে, ঘুরে রান্নাঘরের দিকে রওনা হলেন বৃদ্ধা। দরজার কাছে গিয়ে ফিরলেন। হ্যাঁ, কেউ এলে ডেকো।
চলে গেলেন দরজার ওপাশে।