নামকরা অভিনেতা, বিরাট বড়লোক।
হীরা, না? মুসা বলল। দাম কত হবে? একশো পাউণ্ড?
মাঝে মাঝে এত বোকার মত কথা বলো না তুমি। একশো হাজার পাউণ্ডেও দেবে না।
থাকগে তাহলে, আমার ওসব কোনদিনই লাগবে না, হাত নাড়ল মুসা।
তুমি হার দিয়ে কি করবে? ব্যাটাচ্ছেলে হার পরে? জিনা বলল।
কে বলল পরে না? হিপ্পি মার্কা গায়কগুলোর গলায় তো প্রায়ই দেখি।
আরও কয়েকটা বাক্স খুলে দেখল ওরা। প্রতিটা গহনা দামী। হীরা-পান্না-চুনিমুক্তা, সবই রয়েছে। হার, কানের দুল, চুরি, আঙটি, প্রায় সব ধরনের অলঙ্কার আছে। রাজার সম্পদ।
একসঙ্গে এত গহনা কোন মিউজিয়ামেও দেখিনি, বলল রবিন।
যাক, ভালই হলো, ফোঁস করে চেপে রাখা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল কিশোর, চোরের হাতে পড়ল না। ভাগ্যিস আমরা এসে পড়েছিলাম। নইলে পুলিশ জানতই না, অখ্যাত এক হ্রদের তলায় লুকানো ছিল এগুলো।
নেব কি করে? মুসার প্রশ্ন।
সেটাই ভাবছি। ট্রাংক নিয়ে ডারটি আর টিকসির সামনে দিয়ে যাওয়া যাবে। এক কাজ করো, যার যার ব্যাগে ভরে ফেল, যতটা পারা যায়। বাকিগুলোর বাক্স ফেলে দিয়ে রুমালে পোটলা বাঁধব।
ভাগাভাগি করে ব্যাগে ভরার পরও অনেক জিনিস রয়ে গেল। বাক্স থেকে খুলে ওগুলো রুমালে বাঁধতে হলো, তাতেও লাগল চারটে রুমাল। চারজনের কাছ থাকবে চারটে, ঠিক হলো।
সকালে উঠে প্রথমে কোথায় যাব? রবিন জিজ্ঞেস করল। পুলিশ?
এখানকার পুলিশের যা সুরত দেখে এলাম, মুখ বকাল কিশোর। হবে না। পোস্ট অফিস থেকে মিস্টার নরিসকে ফোন করব। তিনি কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন। তাঁকে বিশ্বাস করা যায়।
আমার ঘুম পাচ্ছে, বড় করে হাই তুলল মুসা, মুখের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে আঙুলগুলো কলার মোচার মত বানিয়ে নাড়ল বিচিত্র ভঙ্গিতে, ঢুকিয়ে দেবে যেন মুখের ভেতর।
শুয়ে পড়ল সবাই। কিন্তু ঘুম কি আর আসে? বিপদ কাটেনি এখনও।
১৬
রাফিয়ানের চেঁচামেচিতে সকালে ঘুম ভাঙল ওদের। সিঁড়িমুখ দিয়ে রোদ ঢুকছে।
লাফিয়ে উঠে বসল কিশোর। অন্যদের ঘুমও ভেঙে গেছে।
কি হয়েছে দেখার জন্যে ওপরে উঠে এল গোয়েন্দাপ্রধান।
টিকসি দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে ভাব জমাতে চাইল, তোমাদের কুকুরটা কিন্তু খুব ভাল। ধারেকাছে ঘেষতে দেয় না কাউকে।
ধন্যবাদ, নিরস গলায় বলল কিশোর।
দেখতে এলাম, খাবার-টাবার কিছু আছে কিনা, হাসল টিকসি। লাগবে কিছু?
হঠাৎ দরদ এমন উথলে উঠল কেন? কেন, সেটা খুব ভালমতই বুঝতে পারছে কিশোর। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের হাত থেকে নিস্তার পেতে চায় দুই ডাকাত।
খাবার তাহলে লাগবে? কিশোরের তীব্র খোঁচাটা কোনমতে হজম করল টিকসি। তাছাড়া তাকে ভয়ও পেতে আরম্ভ করেছে। বড় বেশি ধার ছেলেটার জিভে। চাঁচাছোলা কথা। কাউকে পরোয়া করে বলে না।
নো, থ্যাংকস, আবার বলল কিশোর। অনেক খাবার বেঁচে গেছে। কারও লাগলে বরং দিতে পারি।
ও……তা, আমতা আমতা করছে টিকসি। কি বলতে গিয়ে আবার কি জবাব শুনতে হবে কে জানে! যাচ্ছ কখন?
যাব। আজ স্কুলে হাজিরা দিতেই হবে।
তাড়াতাড়ি করো তাহলে। বৃষ্টি আসবে।
আকাশের দিকে তাকাল কিশোর। কই, মেঘের নামগন্ধও তো দেখছি না।
অন্যদিকে চোখ ফেরাল টিকসি।
মুচকি হেসে ঘুরে দাঁড়াল কিশোর। সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল নিচে। টিকসি যেমন চাইছে ওরা চলে যাক, কিশোরও চাইছে সে চলে যাক। মহিলা দাঁড়িয়ে থাকলে ওদেরও বেরোতে অসুবিধে।
দশ মিনিটেই তৈরি হয়ে বেরিয়ে এল চারজনে।
টিকসি চলে যাচ্ছে, ঝোপের ওপর দিয়ে মাথা দেখা যাচ্ছে তার। ফিরে তাকাল একবার, এক মুহূর্ত থেমে দেখল, তারপর ঘুরে আবার হাটতে লাগল।
জলার ধার দিয়ে যেতে ভালই লাগবে, রবিন বলল।
সেদিন আসার সময় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল, ভালমত দেখতে পারিনি। আজ দেখব।
কথা বলতে বলতে চলেছে ওরা। জোরে পা চালাচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি পোড়া বাড়ির কাছ থেকে সরে যাওয়া যায়, ভাল।
সময়ের হিসেব রাখছে না ওরা, দরকার মনে করছে না। মুসার একটা কথায় হেসে উঠল সবাই। এই সময় হঠাৎ পেছনে চেয়ে গলা ফাটিয়ে ঘেউঘেউ জুড়ে দিল রাফিয়ান।
ফিরে তাকাল সবাই। চমকে উঠল। দৌড়ে আসছে দুই ডাকাত।
আরে, জলা ভেঙেই আসছে। গাধা নাকি? রবিন বলল
শর্ট-কাট, কিশোর বলল। চোরাকাদায় পড়লে ঠেলা বুঝবে। মরুকগে ব্যাটারা। হাঁটো। পথ ধরে। আমরা জলায় নামছি না।
চলার গতি বাড়িয়ে দিল ওরা।
পাগল হয়ে গেছে, ফিরে চেয়ে বলল জিনা।
হবারই কথা, কিশোর বলল। এভাবে নাকের ডগা দিয়ে লাখ লাখ ডলার চলে যাচ্ছে। নৌকায় মাল না পেয়ে নিশ্চয় আমাদের ভাড়ারে ঢুকেছিল। ট্রাংক আর বাক্সগুলো ওভাবে রেখে আসা উচিত হয়নি। জঙ্গলে ফেলে দিয়ে এলে হত।
আসুক না, কি হবে? মুসা বলল। রাফি আছে। তাছাড়া আমরা চারজন। দুজনের সঙ্গে পারব না? পিস্তল নেই ওদের কাছে।
তা-ও কথা ঠিক। দেখি কি হয়।
ছপছপ করে কাদাপানি ভেঙে আসছে ডারটি। তার পেছনে টিকসি। কোথায় পা ফেলছে, খেয়ালই করছে না।
অনেক কাছে এসে পড়ল দুজনে।
গোয়েন্দাদের সঙ্গে বোঝা, দৌড়ানোর উপায় নেই। হাঁপিয়ে পড়ল।
এভাবে হবে না, মাথা নাড়ল কিশোর। ধরে ফেলবে। তার চেয়ে দাঁড়াই। দেখা যাক কি করে।
ফিরে দাঁড়িয়ে চেঁচাতে শুরু করল রাফিয়ান। ভয়ানক হয়ে উঠেছে চেহারা। কিন্তু কেয়ার করছে না ডারটি। বাঘা কুকুরের সঙ্গে লাগতেও যেন আপত্তি নেই আর