পেছনেই তো আসছিল: দেখি তো, সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতে গিয়ে থেমে গেল কিশোর। ওপরে মেঝেতে পরিচিত নখের শব্দ।
সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল রাফিয়ান।
আরে, দেখো, মুখে করে কি জানি নিয়ে এসেছে। বলে উঠল জিনা।
তার কোলের কাছে এনে জিনিসটা রাখল রাফিয়ান।
বিস্কুটের টিন! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। পেল কই?
নীরব হাসিতে ফেটে পড়ল কিশোর। বলল, আমি যা করব ভাবছিলাম, রাফিই। সেটা করে ফেলল। তাঁবুতে কাপড়ে ঢাকা রয়েছে খাবার, অনেক খাবার। ফিরে এসেছি, সবাই মিলে গিয়ে লুট করে আনার জন্যে। আর দরকার হবে না।
আবার সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাচ্ছে রাফিয়ান।
ওরা যেমন করমচা, আমরা তেমনি বাঘা তেঁতুল, হাসতে হাসতে বলল মুসা। কারও চেয়ে কেউ কম নই।…রাফিটা আবার গেল?
যাক, বলল জিনা।
এক মিনিটের মধ্যেই ফিরে এল রাফি। মুখে বাদামী কাগজে মোড়া মস্ত এক প্যাকেট।
বিশাল কেক।
হেসে গড়াগড়ি খেতে শুরু করল গোয়েন্দারা।
রাফি, তুই একটা বাঘের বাচ্চা, হাসি থামাতে পারছে না মুসা।
আরে না, সিংহের, শুধরে দিল জিনা।
আমার তো মনে হয় ওর বাপ বাবুর্চি ছিল, পেট চেপে ধরেছে রবিন, চোখের কোণে পানি। বেছে বেছে পছন্দসই খাবারগুলো আনছে।
আবার চলে গেছে রাফিয়ান। ফিরে এল শক্ত মলাটের একটা বাক্স নিয়ে। গরুর মাংসের বড়া।
তাজ্জব করে দিল দেখি। বলল মুসা। কোথায় পেটে পাথর বাঁধার কথা ভাবছিলাম, আর হাজির হয়ে গেল একেবারে রাজকীয় ভোগ…
দারুণ হয়েছে, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আমাদেরগুলো ব্যাটারা নিয়েছে, আমরা ওদেরগুলো নিয়ে এসেছি। রাফি, আবার যা।
কিশোরের বলার আগেই রওনা দিয়েছে রাফিয়ান।
কি আনে, দেখার জন্যে উৎসুক হয়ে রইল চারজন।
নিয়ে এল আরেক বাক্স মাংসের কাবাব।
তুই একটা সাংঘাতিক লোক, রাফি! উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল মুসা, খুব ভাল মানুষ। এত সুগন্ধ, তা-ও ছুঁয়েও দেখছিস না। আমি হলে তো চাখার লোভ সামলাতে পারতাম না।
খাবার চুরি করার নেশায় পেয়েছে রাফিয়ানকে। যাচ্ছে-আসছে, যাচ্ছেআসছে, প্রতিবারেই মুখে করে নিয়ে আসছে একটা কিছু।
এবার ওকে থামানো দরকার, বলল কিশোর। যথেষ্ট হয়েছে। যা নিয়েছিল ব্যাটারা, তার তিনগুণ এসেছে।
থাক, শুধু আরেকবার, হাত তুলল জিনা। দেখি, এবার কি আনে।
টেনে-হিঁচড়ে ইয়া বড় এক বস্তা নিয়ে হাজির হলো রাফিয়ান।
আবার হাসাহাসি শুরু হলো। না ঠেকালে সব নিয়ে আসবে। কিছু রাখবে না, শূন্য করে দিয়ে আসবে।
রাফি, বেল্ট টেনে ধরল জিনা, আর না। শুয়ে পড়, জিরিয়ে নে। বাঁচালি আমাদের।
প্রশংসায় খুব খুশি হলো রাফিয়ান। জিনার গালটা একবার চেটে দিয়ে গড়িয়ে পড়ল তার পায়ের কাছে। জিভ বের করে হাঁপাচ্ছে।
বস্তাটা খুলল মুসা। ঘরে বানানো পাউরুটি আর বনরুটি। হুররে… আনন্দে নাচতে শুরু করল সে। রাফি, তো পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে ইচ্ছে করছে।
কি বুঝল কুকুরটা কে জানে, একটা পা বাড়িয়ে দিল।
নাও, করো এবার, হা-হা করে হেসে উঠল কিশোর। সবাই যোগ দিল হাসিতে।
পেট পুরে খেলো ওরা। রাফিয়ানের পেট ফুলে ঢোল, নড়তে পারছে না ঠিকমত। হাস্যকর ভঙ্গিতে পেটটাকে দোলাতে দোলাতে উঠে গেল সিঁড়ি বেয়ে, পানি খাওয়ার জন্যে। কল ছেড়ে দিল জিনা। সামনের দুই পা সিংকে তুলে দিয়ে পানি খেলো রাফিয়ান।
সিংক থেকে থাবা নামিয়েই স্থির হয়ে গেল সে। ঘুরে বনের দিকে চেয়ে ঘেউ ঘেউ করে উঠল।
ছুটে এল সবাই। ঝোপঝাড়ের ওপর দিয়ে ডারটির মাথা দেখা যাচ্ছে। এদিকেই আসছে।
কাছে এসে চেঁচিয়ে উঠল সে, আমাদের খাবার চুরি করেছ?
কে বলল? চেঁচিয়ে জবাব দিল কিশোর, আমাদের খাবারই আমরা ফিরিয়ে এনেছি।
এত্তবড় সাহস, আমার তাঁবুতে হানা… রাগে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল ডারটির। ঝাঁকড়া চুল নাড়ল, সঁঝের আবছা আলোয় অদ্ভুত দেখাচ্ছে তার চেহারা, চুলের জন্যে।
না আমরা যাইনি, সহজ কণ্ঠে বলল কিশোর, রাফি গিয়েছিল। আমরা বরং ঠেকিয়েছি, নইলে রাতে তোমাদের খাওয়া জুটত না। আমাদের তো উপোস। রাখতে চেয়েছিলে, আমরা তোমাদের মত অত ছোটলোক নই…না, না, আর কাছে এসো না, রাফি রেগে যাবে। আর হ্যাঁ, সারা রাত পাহারায় থাকবে ও। গায়ে ওর সিংহের জোর, মনে রেখো।
গরররর, এত জোরে গর্জন করল রাফিয়ান, লাফিয়ে উঠল ডারটি। তার মনে হলো সিংহেরই গর্জন।
ভীষণ রাগে হাত নেড়ে ঝটকা দিয়ে ঘুরল সে। চলে গেল।
সিঁড়িমুখে রাফিয়ানকে মোতায়েন করে ভাঁড়ারে ফিরল চারজন।
ব্যাটাদের বিশ্বাস নেই, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর।
নিশ্চয় পিস্তল-টিস্তল কিছু আনেনি, নইলে এতক্ষণে গুলি করে মারত রাফিকে।
তাড়াতাড়ি করা দরকার আমাদের, বলল রবিন। মালগুলো খুঁজে বের করে নিয়ে পালানো দরকার। ঠিকই বলেছ, ব্যাটাদের বিশ্বাস নেই। কখন যে কি করে…আচ্ছা, নকশা নিয়ে বসলে কেমন হয়? টল স্টোন তো দেখেছি।
নকশা বের করে সমাধান করতে বসল ওরা।
এই যে, একটা রেখার মাথায় আঙুল রাখল কিশোর। তাহলে, এটার উল্টো দিকে টক হিল, এই যে, আরেক মাথায় আঙুল রাখল।
তুমি ভাবতে থাকো, চিত হয়ে শুয়ে পড়ল মুসা। আমি একটু গড়িয়ে নিই। গতর খাটানোর দরকার পড়লে ডেকো।
মোমের আলোয় গভীর মনোযোগে নকশাটা দেখছে কিশোর। ঘন ঘন চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে। বিড়বিড় করল, চারটে…টল স্টোন…টক হিল-চিমনি… স্টীপল। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল, ইউরেকা! ইউরেকা!