- বইয়ের নামঃ ছুটি
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, অ্যাডভেঞ্চার, রোমাঞ্চকর গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
ছুটি
১
বড় ম্যাপটা ভাঁজ করে পকেটে রাখতে রাখতে বলল কিশোর পাশা, হ্যাঁ, যা চাই সবই আছে। বিশাল প্রান্তর, জলাভূমি, পাহাড়, জঙ্গল, মাঝে মাঝে ছোট খামার, বাড়ি-ঘর। কয়েকটা সরাইখানাও আছে। কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাব আমরা। রাফিয়ানের খুব মজা হবে।
ওর তো পোয়াবারো, বলল পাশে বসা মুসা আমান। শুনেছি, অনেক খরগোশ আছে ওদিকে। হলিও।
খোলা জানালা দিয়ে হু-হু করে বাতাস আসছে, কোঁকড়া লম্বা চুল উড়ছে কিশোরের। বার বার এসে পড়ছে কপালে, চোখেমুখে, সরাতে হচ্ছে। মুসার সে ঝামেলা নেই, খাটো করে ছাটা চুল, খুলি কামড়ে রয়েছে যেন।
গাঁয়ের দিকে ছুটে চলেছে বাস।
স্কুল পালিয়েছ বুঝি? টিকিট বাড়িয়ে দিয়ে হাসল কণ্ডাকটার।
হ্যাঁ, তা বলতে পারেন, মাথা কাত করল মুসা। শহরের গ্যাঞ্জাম আর ভাল্লাগছিল না, স্কুলও ছুটি। পালিয়ে এসেছি।
শেষ স্টপেজে থামল বাস। আর সামনে যাবে না। বাস বদলাতে হবে।
সামনের দরজা দিয়ে নামল কিশোর আর মুসা। পেছনের দরজা দিয়ে রবিন, জিনা আর রাফিয়ান।
বদলানো বাসের যাত্রাও শেষ হলো। কিশোরকে বলল কণ্ডাকটার, শেষ। এবার ফিরে যাব।…তা কোথায় যাবে তোমরা? টিংকার ভিলেজ?
নামল পাঁচ অভিযাত্রী।
ছড়ানো সবুজ মাঠ, ছোট্ট পুকুরে হাঁস, মেঘের ছায়া।
আনন্যে পাগল হয়ে উঠল রাফিয়ান। চার বন্ধুকে ঘিরে নাচানাচি করছে, ছুটে গিয়ে এক দৌড়ে ফিরে আসছে আবার। লাফাচ্ছে। ঘেউ ঘেউ করছে হাঁসের দিকে চেয়ে। ঘাত ঘ্যাঁত করে তাকে ধমক দিল মস্ত এক রাজহাঁস।
খাবার-টাবার কিছু কিনে নেয়া দরকার, বলল কিশোর।
একটা দোকান দেখিয়ে জিনা বলল, চলো না, গিয়ে দেখি, কি পাওয়া যায়।
আরে, আরে! ভেতরের আরেকটা ঘর থেকে দরজায় বেরিয়ে এসেছেন এক মহিলা, দোকানের মালিক, কুত্তাটাকে ঢুকিয়েছ কেন? আরে কেমন লাফাচ্ছে। পাগলা নাকি? বের করো, বের করো।
না না, পাগল না, হেসে বলল জিনা। বেশি খুশি। খাওয়ার গন্ধ পেয়েছে তো।
অ। তাই বলো। তা কিছু মনে কোরো না। খাবারের দোকান, পরিষ্কার রাখি। ওটাকে বাইরে রেখে এসো, প্লীজ।
এই রাফি, আয়, কুকুরটার গলার বেল্ট ধরে টেনে নিয়ে চলল কিশোর। তুই বাইরেই থাক। আমরাই আনতে পারব সব।
কাউন্টারের পেছনে একটা তাক দেখিয়ে বলল মুসা, বাহ, দারুণ তো দেখতে। টেস্টও খুব ভাল হবে মনে হচ্ছে।
হ্যাঁ, ভাল, বললেন মহিলা। আমি বানিয়েছি। আমার ছেলে স্যাণ্ডউইচ খুব পছন্দ করে। এই তো, আসার সময় হয়ে এল তার। গ্রীন ফার্মে কাজ করে।
আমাদের কয়েকটা বানিয়ে দিতে পারবেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর। চিনি না জানি না, কোথায় আবার কোন গাঁয়ে গিয়ে খুঁজব। লাঞ্চের ব্যবস্থা সঙ্গেই নিয়ে যেতে চাই।
হ্যাঁ, তা পারব। কি কি নেবে? পনির, ডিম, শুয়োর, গরু?
শুয়োর বাদে আর সবই দিন। চারটে কোক দেবেন?
নাও না, নিয়ে খাও, বললেন মহিলা। ওই যে গেলাস।
আচ্ছা। আর হ্যাঁ, ভাল পাউরুটিও দেবেন।
খারাপ জিনিস আমি বানাই না। তোমরা কোক খাও। কেউ এলে ডেকো। ভেতরের ঘরে চলে গেলেন আবার মহিলা।
ভালই হলো, বন্ধুদের দিকে ফিরে বলল কিশোর। খাওয়ার ভাবনা না থাকলে নিশ্চিন্তে ঘুরতে পারব। আজ একদিনেই অনেক জায়গা দেখা হয়ে যাবে।
কতগুলো লাগবে? হঠাৎ দরজায় দেখা দিলেন মহিলা। আমার ছেলে এক বেলায়ই ছটা স্যাণ্ডউইচ খেয়ে ফেলে। বারো টুকরো রুটি লাগে বানাতে।
অ্যাঁ…আমাদের একেকজনের জন্যে আর্টটা করে বানান, মহিলার চোখ বড় বড় করে দিল কিশোর। পাচ-আটে চল্লিশটা। সারা দিন চলে যাবে আমাদের।
মাথা ঝাঁকিয়ে আবার অদৃশ্য হয়ে গেলেন মহিলা।
ভারি কাজ দিয়ে ফেলেছি, সহানুভূতির সুরে বলল রবিন। মাকে বেশি খাটতে দেখলে কষ্ট লাগে তার, নিজেও গিয়ে সাহায্য করে। আটটা স্যাণ্ডউইচ তারমানে যোলোটা করে রুটির টুকরো, পাঁচ-যোলো আশি.নাহ, ভাবতেই খারাপ লাগছে, রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকতে ইচ্ছে হলো তার। কিন্তু মহিলা আবার কিছু মনে করে বসেন। ভেবে গেল না।
আরে অত ভেব না, প্রথমে এক চুমুকে আধ গেলাস কোকাকোলা খালি করেছে মুসা, আরেক চুমুকে বাকিটা শেষ করে ঠকাস করে গেলাস নামিয়ে রাখল টেবিলে। দেখো, কে আসছে।
দরজার বাইরে সাইকেল থেকে নামল লম্বা এক লোক, হ্যাণ্ডেল ধরে রেখেই ডাকল, মা?
কে লোকটা, চিনিয়ে দিতে হলো না। ওরা বুঝল, মহিলার ছেলে, যে গ্রীন ফার্মে কাজ করে। খেতে এসেছে।
আপনার মা ভেতরে, বলল মুসা। ডাকব?
থাক। সাইকেল রেখে ভেতরে ঢুকল লোকটা, তাক থেকে স্যাণ্ডউইচগুলো একটা প্যাকেটে নিয়ে আবার রওনা দিল। দরজার কাছে গিয়ে চেয়ে বলল, মাকে বোলো, আমি নিয়ে গেছি। তাড়াহুড়ো আছে। ফিরতেও দেরি হবে। কিছু জিনিস। নিয়ে যেতে হবে জেলে।
জোরে জোরে প্যাডাল ঘুরিয়ে চলে গেল লোকটা।
হঠাৎ দরজায় উদয় হলেন আবার মহিলা, হাতে ইয়া বড় এক রুটি কাটার ছুরি। আরেক হাতে রুটি। ডিকের গলা শুনলাম…ও-মা, স্যাণ্ডউইচও নিয়ে গেছে। ডাকোনি কেন?
তাড়াহুড়ো আছে বলল, জানাল কিশোর। ফিরতেও নাকি দেরি হবে আজ। কি নাকি নিয়ে যেতে হবে জেলে। আমার আরেক ছেলে আছে জেলখানায়।