ইস্ এখনও ফোন করছে না কেন কিশোর?
খাওয়া শেষ হয়ে এসেছে রবিনের, তা-ও ফোন বাজছে না। উঠে গিয়ে সিংকে। প্লেট চোবাল, ধুয়ে পরিষ্কার করে এনে রাখল আবার জায়গামত।
কাছেই কাজ করছেন মিসেস মিলফোর্ড।
মা, বলল রবিন, কিশোর কোন খবরটবর দিয়েছে?
ও, হ্যাঁ হ্যাঁ, মুখ ফেরালেন তিনি। ভুলেই গিয়েছিলাম। একটা মেসেজ আছে।
কি মেসেজ? উত্তেজিত হয়ে উঠল রবিন। কি লিখেছে?
আগের দিন যা যা ঘটেছে, তাকে জানিয়েছে কিশোর। সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্টের ফাইল তৈরি করে ফেলেছে রবিন, এটা তার দায়িত্ব। আজ বিকেলে হেডকোয়ার্টারে কাকাতুয়ার রহস্য নিয়েই আলোচনা করার কথা।
এই যে, লিখে রেখেছি, মা বললেন, পকেট হাতড়ে বের করলেন এক টুকরো কাগজ। কি যে সব বলে কিশোর, মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝি না। ভুলে যেতাম, তাই লিখে রেখেছি। এই যে।
ও ওরকম করেই বলে, মাকে বোঝাল রবিন, হাত বাড়াল কাগজটার জন্যে।
বেশি পড়াশোনা করে তো, বড় বড় কঠিন শব্দ আপনাআপনি মুখে চলে আসে। চাচা-চাচীর সঙ্গেও ওভাবেই কথা বলে। বেশিদিন তোমার সঙ্গে ওভাবে বললে
তুমিও বুঝে যাবে, আর উদ্ভট লাগবে না।
কি বলছে, কিছুই বুঝিনি। জোরে জোরে পড়লেন মিসেস মিলফোর্ড, লাল কুকুর চার। উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। তীর বরাবর বুকে হাঁটবে। সহজ সহজ বাক্য, অথচ মানে করতে গেলে মনে হয় গ্রীক। কি বুঝিয়েছে রে?
জবাব নেই। রবিন ততক্ষণে পৌঁছে গেছে দরজার কাছে। ডাকলেন মা। এই রবিন, না বলেই চলে যাচ্ছিস যে?
দরজায় দাঁড়িয়ে ঘুরল রবিন, হতাশ ভঙ্গিতে কপাল চাপড়াল, ওফ্ফো, মা, এই সহজ কথাগুলো বুঝতে পারছ না। ইংরেজিই তো লিখেছে।
কোথায় ইংরেজি। কোন ধরনের কোড। এই, বল না। হ্যাঁ, কোডই। বাইরের লোক যাতে বুঝতে না পারে… কি বলছিস তুই, রবিন? মা অবাক। আমি তোর মা, বাইরের লোক?
তোমাকে বাইরের লোক বললাম নাকি? খালি উল্টোপাল্টা বোঝে। ঠিক আছে, কোন্ কথাটা জানতে চাও?
এই যে, উড়ে এসে জুড়ে বসেছে?
কয়েকটা হারানো কাকাতুয়াকে খুঁজছি আমরা, ওটারই কোড : উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।
হুঁ, মায়ের আশঙ্কা দূর হলো, ভয়ের কিছু নেই, বিপদ হবে না ছেলের।
যাওয়ার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছে রবিন, মা আবার প্রশ্ন করার আগেই বলল, আর লাল কুকুর চার মানে…
থাক থাক, ওগুলোর মানে আর জানার দরকার নেই, হাত তুললেন মিসেস মিলফোর্ড। যা, বেশী রাত করিস না। গির্জার ফাদারকে দাওয়াত করতে যেতে হবে। আগামী রোববারে আমাদের এখানেই খাবেন।
লাল কুকুর চার হলো তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টারে ঢোকার অনেকগুলো পথের একটা। ওটা দিয়ে ঢোকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মেসেজে।
স্যালভিজ ইয়ার্ডের বেড়ায় নানা রকম ছবি। এক জায়গায় একটা লাল কুকুর বসে আছে, একটা বাড়িতে আগুন লেগেছে, তা-ই দেখছে। কুকুরটার একটা চোখ আসলে কাঠের গিঁট। আলগা। নখ দিয়ে খুঁচিয়ে ওটা বের করে নিল রবিন, ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে গোপন সুইচ টিপল। আস্তে করে তিন দিকে সরে গেল বেড়ার তিনটে অংশ, গোপন দরজার পাল্লা। ভেতরে ঢুকে আবার সুইচ টিপে দরজা বন্ধ করে দিল সে।
এক জায়গায় অনেকগুলো তক্তা আর লোহার বীম আড়াআড়ি পড়ে আছে মনে হয়, ওভাবেই ওগুলো সাজিয়েছে তিন কিশোর। নিচে দিয়ে পথ। বুকে হেঁটে যেতে হয়। ওপরে একটা তীর চিহ্ন। ট্রেলারটা কোনদিকে আছে, তার নির্দেশ।
বুকে হেঁটে এগিয়ে ট্রেলারের নিচে পৌঁছে গেল রবিন। দুইবার টোকা দিতেই ভেতর থেকে তুলে নেয়া হলো একটা পান্না। হেডকোয়ার্টারে ঢুকল সে।
হেডকোয়ার্টার মানে তিরিশ ফুট লম্বা একটা বাতিল মোবাইল হোম, জঞ্জালের তলায় চাপা পড়ে আছে। সেটাকে সারিয়ে নিয়ে অফিস সাজিয়েছে তিন গোয়েন্দা। নানারকম সুযোগ-সুবিধে আছে তার মধ্যে। ছোট একটা ল্যাবরেটরিও আছে, আছে ফটো প্রসেস করার ডার্করুম।
ডেস্কের ওপাশে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে আনমনে একটা পেন্সিল কামড়াচ্ছে কিশোর। রবিনকে দেখে বলল, এত দেরি যে?
মেসেজ দিতে মা ভুলে গিয়েছিল। তবে আগে দিলেও আসতে পারতাম না, খেয়ে আসতে দিত না। কেন ডেকেছ? জরুরী মীটিং?
হ্যাঁ, মাথা ঝাকাল কিশোর। বিলি শেকসপীয়ার আর লিটল বো-পীপকে খুঁজে বের করা দরকার।
কিভাবে, তাই তো মাথায় ঢুকছে না, মুসা বলল। মোটকা হাইমাসকে চিনি, সন্দেহ করছি ওই ব্যাটাই চুরি করেছে। ব্যস! আর কোন সূত্র নেই। পুলিশ চেষ্টা করলে হয়তো গাড়িটা খুঁজে বের করতে পারে, কিন্তু তারা তো শুনলে হাসে। এক কাজ করলে কেমন হয়? গিয়ে পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে ধরলে?
ভুলে যাও কেন? ভুরু নাচাল কিশোর। মিস্টার ফোর্ড আর মিসেস বোরো কেউই পুলিশের সাহায্য নিতে রাজি নন।
তাহলে? দু-হাত নাড়ল মুসা। আমি তো কোন উপায়ই দেখছি না।
উপায় একটা আছে।
আছে? এক সঙ্গে গলা সামনে বাড়াল রবিন আর মুসা।
আছে। ভূত-থেকে-ভূতে।
আরে, তাই তো, হাসল রবিন। এই কথাটা মনে পড়েনি!
আমিও একটা আস্ত গাধা, হতাশা চলে গেছে মুসার কণ্ঠ থেকে, উত্তেজনা ফুটেছে চেহারায়। তা এখুনি শুরু করে দিই না। আগামী কাল সকালেই খোঁজ পেয়ে যাব।
তা করতে পারো, রাজি হলো কিশোর।
আচ্ছা, একটা পুরস্কার ঘোষণা করলে কেমন হয়? প্রস্তাব রাখল রবিন।
তাহলে উৎসাহী হবে বাচ্চারা। তাড়াতাড়ি কাজ হবে।
ঠিকই বলছে। কি পুরস্কার দেয়া যায়?