দোকানে গিয়েছিলাম, মুখ বাঁকালেন মিস বোরো। বীচি ফুরিয়ে গিয়েছিল। সূর্যমুখীর বীচি খুব পছন্দ করে বো-পীপ। গেট দিয়ে বেরিয়েই মরতে বসেছিলাম, প্রায় চাপা দিয়ে দিয়েছিল আমাকে কালো একটা গাড়ি। বিদেশী গাড়ি। আজকাল লোকে যা বেখেয়ালে চালায় না।
একে অন্যের দিকে তাকাল কিশোর আর মুসা। গাড়িটা কার অনুমান করতে কষ্ট হলো না কারোই।
থামতে বললাম, থামল না, বলে গেলেন মিস বোরো। কি আর করার আছে? ভয় পেয়ে পালিয়েছে যখন? দোকানে গিয়ে বীচি কিনলাম। কোন বীচি ভাল, কোনটা খারাপ, খানিকক্ষণ আলোচনা করলাম দোকানের মেয়েটার সঙ্গে। ফিরে এসে দেখি বো-পীপের খাঁচার দরজা খোলা। সে নেই। বোধহয় দরজা খোলাই রেখে গিয়েছিলাম, এই ফাঁকে বেরিয়ে গেছে। ভাবলাম, কোন ঝোপঝাড়ে গিয়ে লুকিয়েছে। খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলাম রাস্তায়…তারপর তো তোমাদের সঙ্গে দেখা।
কালো গাড়িটাকে পরে আর দেখেছেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না, মাথা নাড়লেন মিস বোরো। সা করে গিয়ে মোড় নিয়ে হারিয়ে গেল। গাছপালা ঝোপঝাড় বেশি, মোড় নিলে আর দেখা যায় না। ভুরু কোঁচকালেন। ওই মোটা লোকটাই চুরি করেছে বলছ নাকি?
তাই তো মনে হয়, ম্যাডাম, বলল কিশোর। আমার ধারণা, বিলিকেও সেই চুরি করেছে।
সর্বনাশ! অসহায় মনে হচ্ছে মহিলাকে। তাহলে তো আর তাকে পাব না। কি নিষ্ঠুর গো। লোকের মনে কষ্ট দেয়। কিন্তু দুটো কাকাতুয়া চুরি করতে যাবে কেন? ইচ্ছে করলে তো কিনেই নিতে পারে।
এই প্রশ্নটার জবাব মুসারও খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু জবাব জানা নেই গোয়েন্দাপ্রধানের। আপাতত এটা রহস্য, বলল সে। আচ্ছা; মিস বোরো, আপনার লিটল বো-পীপ কি কথা বলতে পারে?
নিশ্চয় পারে। লিটল বো-পীপ বলে তার ভেড়াটা হারিয়েছে। কোথায় হারিয়েছে, জানে না। খুঁজে দেয়ার জন্যে ডাকাডাকি করে শারলক হোমসকে। অদ্ভুত কথা, তাই না? কাকাতুয়াকে আরও কত রকম বুলিই তো শেখানো যায়।
তা যায়, নোট বই বের করল কিশোর। ঠিক কি কি বলত বলুন তো?
লিটল বো-পীপ হ্যাজ লস্ট হার শীপ অ্যাণ্ড ডাটু নো হোয়্যার টু ফাইণ্ড ইট। কল অন শারলক হোমস।
দ্রুত লিখে নিয়ে বলল কিশোর, কথায় ব্রিটিশ টান আছে?
আছে। মনে হয়, খুব যত্ন করে শিখিয়েছে কোন উচ্চ শিক্ষিত ইংরেজ ভদ্রলোক।
হু। মিস বোরো, যা মনে হচ্ছে আপনার বো-পীপকে হাইমাসই মানে, মোটা লোকটাই চুরি করেছে। পুলিশকে ফোন করে জানান।
পুলিশ? ও, মাই গুডনেস! আঁতকে উঠলেন মহিলা। ফোন নেই আমার।। তাছাড়া পুলিশের ঝামেলায় যাব না। এত দূরে শহরে গিয়ে ওদের সাহায্য চাইতে বলছ? যাক, লাগবে না আমার। অনুরোধ করলেন, প্লীজ, তোমরাই খুঁজে দাও। দেবে?
তা দিতে পারি, বলল কিশোর। একই সঙ্গে দুটো তদন্ত চালানো এমন কিছু কঠিন না, তাছাড়া চোর যখন একজন।
প্লীজ। তোমার কথা চিরদিন মনে রাখব তাহলে। দেবে শুনেই যা ভাল্লাগছে না।
আরেকটা প্রশ্ন, মিস বোরো, তর্জনী তুলল কিশোর ! মেকসিকান ফেরিওয়ালা দুই চাকার একটা গাধায় টানা গাড়িতে করে এসেছিল, না?
হ্যাঁ। খুব কাশছিল। মনে হচ্ছিল, ভারি অসুখ। বেচারাকে দেখে খারাপই লাগছিল।
কাকাতুয়া বিক্রি করে রসিদ-টসিদ দিয়েছে কিছু?
না-তো। ইস্, বড্ড ভুল হয়ে গেছে, শূন্য দৃষ্টিতে তাকালেন মিস বোরো। চাওয়ার কথা মনেই ছিল না।
গাড়ির গায়ে কোন নাম বা কিছু লেখা ছিল?
মাথা নাড়লেন মিস বোরো। আর কোন তথ্য দিতে পারলেন না তিনি।
মহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এল দুই গোয়েন্দা।
বাইরে বেরিয়েই কিশোরের বাহু খামচে ধরল মুসা। কিশোর, কাকাতুয়া দুটোকে কিভাবে খুঁজে বের করবে? কোথায় আছে ওরা কিছুই তো জানি না। একজন শেকসপীয়ার জানে, অরেকজন মাদার গুজ। কিন্তু জঙ্গল থেকে ধরে এনে ওই বুলি তো যে কোন কাকাতুয়াকে শেখানো যায়। অযথা সময় নষ্ট করছি, বুঝলে?
চিন্তিত দেখাচ্ছে কিশোরকে। হাইমসকে দেখে কি মনে হয়েছে তোমার? ছেলেমানুষী করার লোক?
মোটেই না, জোরে মাথা নাড়ল মুসা। পিস্তল-চেহারার লাইটার দেখিয়ে যে রসিকতা করতে পারে, সে ছেলেমানুষী করার লোক নয়।
এক্কেবারে ঠিক। অথচ সেই লোকই দুই রকম বুলি আউড়ায় এমন দুটো কাকাতুয়া চুরি করল কি কারণে? জোরাল কোন যুক্তি নিশ্চয় আছে, এখন বুঝতে পারছি না।
কিন্তু তাকেই বা খুঁজে পাব কি করে?
আমরা গোয়েন্দা, বুদ্ধির খেলা খেলি। কোনভাবে..সরো সরো! ঝাঁপিয়ে এসে পড়ল মুসার ওপর, নিয়ে পড়ল মাটিতে।
খানিক আগে মুসার মাথা যেখানে ছিল, শিস কেটে ঠিক সে-পথে উড়ে চলে গেল কি যেন একটা। ঘাসে ঢাকা নরম মাটিতে গিয়ে গাঁথল।
সরো…ওহ, সরো! ঠেলে গায়ের ওপর থেকে কিশোরকে সরাল মুসা, শ্বাস নিতে পারছি না।
উঠে দাঁড়াল কিশোর।
মুসাও উঠল। জোরে জোরে শ্বাস নিল কয়েকবার।
নিচু হয়ে জিনিসটা তুলছে কিশোর। লাল টালির একটা টুকরো, মিস বোরোর বাংলোর ছাতে যে-ধরনের টালি, ওখান থেকেই ভেঙে নেয়া হয়েছে কিনা কে জানে।
এটা মাথায় লাগলে না মরলেও বেহুশ হয়ে থাকতে কয়েক ঘণ্টা, কিশোর বলল। ভাগ্যিস ঝোপের দিকে চোখ পড়েছিল।
থ্যা-থ্যাংকস, কাঁপছে মুসার গলা। ছুড়ল কে?
দেখিনি। হুঁশিয়ার করল। ও চায় না আমরা বিলি কিংবা বো-পীপকে খুঁজি।
৪
রাতের খাওয়া খেতে বসছে রবিন। বার বার তাকাচ্ছে টেলিফোনের দিকে। এই খানিক আগে ফিরেছে লাইব্রেরি থেকে, পার্ট-টাইম চাকরি করে ওখানে।