নাম-ধাম কিছুই বলল না লোকটা, দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বলল, টমাস, গাড়ি ছাড়ো। হোটেলে চলো।
ইয়েস, স্যার, ঘোৎ ঘোঁৎ করল তীক্ষ্ণচোখো ড্রাইভার। হ্যানসনের দিকে আরেকবার দৃষ্টির আগুন হেনে গাড়ি পিছাতে শুরু করল। ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেল।
খুব চমৎকার সামলেছেন, স্যার, প্রশংসা করল হ্যানসন। আপনার চাকরি করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি, কিশোরের বার বার নিষেধ সত্ত্বেও অতিবিনয় প্রকাশ করে ফেলে সে মাঝেমাঝে, দীর্ঘ দিনের স্বভাব বদলাতে পারে না।
থ্যাংক ইউ, বলে গাড়িতে উঠল কিশোর।
কিশোর, কৌতুহলে ফেটে পড়ছে মুসা, লোকটার সঙ্গে কিশোরের কি কথা হয়েছে শুনতে পায়নি, এত সহজে তাড়ালে কি করে? মনে তো হলো খুব শক্তপাল্লা। ওসব লোককে চিনি আমি, অন্ধকার গলিপথে সামনে পড়লে ঝেড়ে দৌড় দেব। মনে হলো, তুমিই ওকে ভয় পাইয়ে দিয়েছ?
চেপে রাখা নিঃশ্বাস ফোঁস করে ছাড়ল কিশোর। হেলান দিল গদিতে। তেমন কিছু না। শুধু পুলিশের নাম বলেছিলাম।
আজকাল পুলিশ এত ভয় দেখাতে শুরু করেছে লোককে, গাড়ি পিছিয়ে আবার রাস্তায় তুলছে হ্যানসন, সেদিকে চেয়ে বলল মুসা। আগে জানতাম শুধু বদ লোকেরাই ভয় পায়…।
যারা পালাল, তারাও বদলোক, মুসার কথার পিঠে বলল কিশোর। ড্রাইভারের কোটের তলায় নিশ্চয় শোল্ডার-হোলস্টার আছে। খেয়াল করোনি, হ্যানসন যখন ওকে ধরেছে, বগলের তলায় হাত দিতে যাচ্ছিল? খুন খারাপি অপছন্দ করে না সে। .
পিস্তল? ঢোক গিলল মুসা। ব্যবহার করে?
আরেকটু হলেই আজও করে ফেলেছিল। মনিবের জন্যে পারল না। তার মনিব খুব উঁচুদরের লোক, বোঝাই যায়। এমন একজন মানুষ বন্দুকবাজ ড্রাইভার রেখেছে কেন?
প্রায় নিঃশব্দে, মসৃণ গতিতে আবার চলতে শুধু করেছে রোলস-রয়েস।
ভাবছি, গাল চুলকাল মুসা, এসব লোকের সঙ্গে জড়াচ্ছি কেন? একটা সাধারণ কাকাতুয়া খুঁজতে বেরিয়েছিলাম আমরা।
তা বেরিয়েছিলাম, স্বীকার করল কিশোর। তাহলে? আজব এক মোটা লোকের পাল্লায় পড়লাম শুরুতেই। তারপর আরেক লোক, পোশাক-আশাকে ভদ্রলোক, কিন্তু বন্দুকবাজ পোষে। রহস্যময় এক মেকসিকান ফেরিওলার কথাও শুনলাম। সবাই পাখিটার ব্যাপারে আগ্রহী।
মেকসিকান ফেরিওয়ালা বাদে, শুধরে দিল কিশোর। পাখিটা বেচে দিয়ে গেছে, ব্যস। আর আসেনি।
কিন্তু কেন? তোত একটা কাকাতুয়া এমন কি দামী জিনিস, চুরি করার জন্যে, হাতে পাওয়ার জন্যে খেপে উঠেছে সবাই?
তদন্ত করলে জবাব মিলবে। এ-মুহূর্তে তোমার মতই অন্ধকারে আছি আমি।
থাকার দরকারটা কি? গজগজ করল মুসা। আমি বলি কি, শোনো…
হঠাৎ গতি কমে গেল রোলস-রয়েসের।
কি হয়েছে, হ্যানসন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
এক মহিলা। রাস্তায় এসে উঠেছেন। কিছু হারিয়েছেন বোধহয়।
জানালা দিয়ে মুখ বের করল দুই গোয়েন্দা। ততক্ষণে ব্রেক কষে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ফেলেছে হ্যানসন।
বেঁটে, গোলগাল এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তার ওপর, গাড়ি-ঘোড়া আসছে কিনা খেয়ালই নেই। ঝোপের দিকে চেয়ে কাকে জানি ডাকছেন। এসো, লক্ষ্মী,
এসো, জলদি এসো। দেখো কি এনেছি। খুব ভাল সূর্যমুখীর বীচি।
বোধহয় কিছু গণ্ডগোল হয়েছে, গাড়ি থেকে নামতে শুরু করল কিশোর। চলো তো, দেখি।
মহিলার দিকে হাঁটতে শুরু করল দুই গোয়েন্দা। কিন্তু কোন খেয়ালই নেই মহিলার : ঝোপের দিকে চেয়ে মুঠো খুলে দেখালেন, কত ভাল লোভনীয় বীচি এনেছেন! …
মাপ করবেন,কাছে এসে বলল কিশোর। কিছু হারিয়েছেন বুঝি?
অ্যাঁ…হ্যাঁ, পাখির মত মাথা একপাশে কাত করে অনেকটা পক্ষীকণ্ঠেই বললেন মহিলা। এই দেখো না, লিটল বো-পীপকে খুঁজি পাচ্ছি না। কোথায় যে গেছে কে জানে? তোমরা নিশ্চয় দেখোনি, না? লিটল বো-পীপকে?
না, ম্যাডাম, জবাব দিল কিশোর। লিটল বো-পীপ কি কোন কাকাতুয়া?
নিশ্চই, বিস্ময় ফুটল মহিলার চোখে। তুমি জানলে কি ভাবে?
পকেট থেকে কার্ড বের করে দিল কিশোর। আমরা গোয়েন্দা। বুঝতে পারছি, কাকাতুয়াই খুঁজছেন আপনি। ওই যে, ঘাসের ওপর চাটা ফেলে রেখেছেন। হাতে সূর্যমুখীর বীচি, ডাকাডাকি করছেন ঝোপের দিকে চেয়ে। কাকাতুয়া ছাড়া আর কি?
আরও বেশি অবাক হলেন মহিলা। বাহ, বেশ বুদ্ধি তো।
তারপর আরও কয়েকবার ডাকাডাকি করে হতাশ হয়ে দুই গোয়েন্দাকে নিয়ে রওনা হলেন বাড়ির দিকে, লিটল বো-পীপের নিখোজের ব্যাপারে খুলে বলবেন।
হ্যানসন, আপনি এখানেই থাকুন, ডেকে বলল কিশোর।
ইট বিছানো পথ ধরে মহিলার পিছু পিছু চলল দুই গোয়েন্দা। সামনে অনেকগুলো কলা-ঝাড়ের ওপাশে একটা বাংলো।
ছোট লিভিং রুমে দুই গোয়েন্দাকে বসালেন মহিলা, নিজেও বসলেন।
মিস বোরো, বলল কিশোর, কয়েক হপ্তা আগে এক মেকসিকান ফেরিওলার কাছ থেকে কাকাতুয়াটা কিনেছিলেন, না?
হ্যাঁ, চোখ বড় বড় হয়ে গেল তাঁর। আমার নামও জানো দেখছি? তুমি তো খুব ভাল গোয়েন্দা।
আগে থেকেই তথ্য জানা থাকলে ওগুলো বলা শক্ত কিছু না। কিশোর জানাল, মিস্টার ফোর্ড আপনার কথা বলেছেন।
তথ্য জানা থাকলেও অনেকেই বলতে পারে না, বললেন মিস বোরা। আর তথ্য জোগাড় করতেও বুদ্ধি লাগে। যাই হোক, মিস্টার ফোর্ড নিশ্চয় বিলিকে খুঁজে পেয়েছেন।
না, পাননি, মুসা বলল। ওকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। আপনারটা হারাল কি করে, বলবেন, প্লীজ?