তারপর? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
তারপর, বাইরে একটা শব্দ শুনলাম। লাফ দিয়ে উঠে জানালার কাছে চলে গেল হাইমাস। গাড়িপথ ধরে তোমাদেরকে আসতে দেখল। ভাবল, পুলিশ নিয়ে এসেছ। আমাকে কাবু করে হাত-পা বেঁধে ফেলল। মুখে রুমাল গুঁজে দিল, তার আগে কয়েকবার চেচাতে পেরেছি। বেশি ঠেসে ঢোকায়নি রুমাল, পরে আবার ফেলে দিতে পেরেছি। তা নইলে তোমাদের ডাকতে পারতাম না। হাত নাড়লেন ফোর্ড। কিন্তু কেন কি হচ্ছে, কিছুই মাথায় ঢুকছে না। আমি তো কারও কোন ক্ষতি করিনি। আমারই পাখি চুরি করেছে, আমার ওপরই যত…যাকগে, এখন আমার বিলিকে ফেরতে পেলেই হলো। তোমরা সাহায্য করবে?
সাধ্যমত করব স্যার, কথা দিল কিশোর।
মিস্টার ফোর্ডের কাছে আর কিছু জানার নেই। তাকে ধন্যবাদ আর বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এল দুই গোয়েন্দা।
ডলে ডলে গাড়িটাকে আরও চকচকে করে তুলছে হ্যানসন, ছেলেদেরকে দেখে থেমে গেল। এবার কোথায় যাব, মাস্টার পাশা?
বাড়ি চলুন।
আঁকাবাকা লম্বা গাড়িপথ পেরোচ্ছে রোলস রয়েস। মুসার দিকে ফিরল কিশোর। মনে হয়, হাইমাসই বিলিকে চুরি করেছে। আরও তথ্য জানার জন্যেই ফিরে এসেছে, মিস্টার ফোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছে। আমাদের পয়লা কাজ, ওকে খুঁজে বের করা।
আমি ভরসা পাচ্ছি না, সত্য কথাই বলল মুসা। খুব বাজে লোক। তখন সিগারেট লাইটার বের করে ভয় দেখিয়েছে। ঠেকায় পড়লে আসল পিস্তল বের করে গুলিও করে বসতে পারে, ওকে বিশ্বাস নেই। তাছাড়া, কি সূত্র আছে আমাদের হাতে? খুঁজে বের করব কিভাবে?
সেটাই ভাবছি। কোন উপায় নিশ্চয় হ্যানসন, লাগল লাগল।
সতর্ক করার দরকার ছিল না। কিশোরের আগেই ধূসর সেডানটাকে দেখে ফেলেছে হ্যানসন। সাই করে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়েছে রোলস রয়েসকে। পুরানো, অবহেলিত একটা ফুলের বিছানা মাড়িয়ে একেবারে নষ্ট করে দিল। আর কিছু করারও ছিল না।
বেখেয়ালে গাড়ি চালাচ্ছে সেডানের ড্রাইভার। দুর্ঘটনা যে এড়ানো গেছে, এই যথেষ্ট, তা-ও হ্যানসন, সতর্ক থাকায়।
৩
আর ইঞ্চিখানেক এদিক ওদিক হলেই লেগে যেত একটার সঙ্গে আরেকটা, রোলসরয়েসের চাকচিক্য তো বটেই, বডির মসৃণতাও নষ্ট হত অনেকখানি।
দরজা খুলে ভারিক্কি চালে নেমে গেল হ্যানসন। সেডানের ড্রাইভিং সীটে বসা ছোট্ট মানুষটার মুখোমুখি হলো। কড়া দৃষ্টি নোকটার। দোষ তো করেছেই, উল্টে নেমে এসে কৈফিয়ত চেয়ে বসল, হ্যানসন কিছু বলার আগেই।
দেখেশুনে চালাতে পারো না, গরিলা কোথাকার? চেঁচিয়ে উঠল তীক্ষ্ণচোখে। হ্যানসনের ছয় ফুট দুই ইঞ্চির কাছে তাকে এতটুকু মনে হচ্ছে। তা-ও কি দাপট!
দেখো, বাপু, সম্রান্ত ইংরেজের মত কণ্ঠস্বর যথাসম্ভব নিচু রাখল হ্যানসন, দোষটা আমার নয়, তোমার। এত স্পীডে গাড়ি ঘোরায় কেউ? গেট দিয়ে ঢুকতে চায়? আরেকটু হলেই তো দিয়েছিলে দুটো গাড়িকেই নষ্ট করে।
দেখো, গর্জে ওঠার আগে এক পা পিছিয়ে গেল লোকটা, বেশি সামনে থেকে গালমন্দ করার সাহস হচ্ছে না বোধহয়, চাকরের মুখ থেকে উপদেশ শুনতে চাই না।
ভদ্রভাবে কথা বললা, শান্ত কণ্ঠে বলল হ্যানসন। নইলে ভদ্রতা শিখিয়ে দেব। এক চড়ে ফেলে দেব বত্রিশটা দাঁত।
রাগে ঘুসি পাকিয়ে এগিয়ে এল তীক্ষ্ণচোখে।
আলগোছে তার হাতটা ধরে ফেলল হ্যানসন, আরেক হাতে কলার চেপে ধরে শূন্যে তুলে ফেলল। হাস্যকর ভঙ্গিতে ছটফট করতে লাগল লোকটা, করুণ হয়ে উঠেছে মুখচোখ।
সেডানের পেছনের দরজা খুলে নামল, আরেকজন লোক। দামী বেশভূষা। ধমক দিল, টমাস। গাড়িতে যাও। বেশ ভারি গলা, আদেশ দিতে অভ্যস্ত, বোঝ গেল কণ্ঠস্বরেই। কথায় ফরাসী টান। সরু গোঁফ, ঠোঁটের কোণে একটা বড় তিল।
হাত থেকে টমাসকে ছেড়ে দিল হ্যানসন। . পড়ে যেতে যেতে কোনমতে সামলে নিল টমাস। দ্বিধা করল। ফিরে গেল। গাড়িতে। পেছনে আরেকজন বসে আছে, হোঁতকা, কুৎসিত চেহারা দেখছে।
সরি, হ্যানসনকে বলল দ্বিতীয় যে লোকটা বেরিয়ে এসেছে সে, খুব বাজে কাজ করেছে আমার ড্রাইভার। রোলস-রয়েসটার দিকে চোখের ইশারা করে বলল, খুব সুন্দর গাড়ি। রঙ-টঙ নষ্ট হলে আমারই খারাপ লাগত। তা, তোমার মালিক কে? আমার সঙ্গে একটু কথা বলবেন?
একে একে এত দ্রুত ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, বাধা দেয়ার বা কিছু করার সুযোগই পায়নি কিশোর। এখন নেমে এল।
আপনি আমার সঙ্গে কথা বলতে চান?
অবাক হলো বিশালদেহী লোকটা। তুমি মানে আপনি এটার মালিক?
তুমি বললে কিছু মনে করব না, বলল কিশোর। হ্যাঁ, আপাতত আমিই মালিক। পরে কি হবে জানি না।
অ। দ্বিধা করছে লোকটা। তুমি মানে, মিস্টার ফোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম। তুমি কি তার কিছু হও?
তা, বন্ধু বলতে পারেন। এই তো, আমরাও কথা বলে বেরোলাম।
তাহলে হয়তো বলতে পারবে। আচ্ছা, তার বিলি শেকসপীয়ারের. কি অবস্থা?
পাওয়া যায়নি এখনও। খুব মনের কষ্টে আছেন বেচারা।
এখনও পাওয়া যায়নি, লোকটার মুখ দেখে বোঝা গেল না কিছু ভাবান্তর হয়নি চেহারায়। সত্যি খুব খারাপ কথা। কোন খবরই নেই?
না পুলিশের কাছেই যাচ্ছি, কতদূর কি করল, জানতে। আপনার কথা বলব? সাহায্য-টাহায্য করতে চান নাকি?
না না, তাড়াতাড়ি দু-হাত নাড়ল লোকটা, আমার কথা বলার দরকার নেই। আমি মিস্টার ফোর্ডের বন্ধু। এ-পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম, খোঁজটা নিয়েই যাই। তোমার কাছেই খবর পাওয়া গেল যখন, এখন-আর যাচ্ছি না। তাড়া আছে। আমার, অন্য সময় আসব। যাই।