মুসারও তাই মনে হলো। তবে কিশোরের মত খুশি হলো না, শঙ্কিত হলো।
বিশ্রাম নিয়ে শক্তি ফিরে পেয়েছেন আবার মিস্টার ফোর্ড। খুলে বললেন সব। তিন হপ্তা আগে পাখিটা কিনেছেন তিনি, এক ফেরিওলার কাছ থেকে। ছোটখাট একজন লোক, কথায় জোরালো মেকসিকান টান, গাধায় টানা ছোট একটা গাড়িতে করে এসেছিল।
এক মিনিট স্যার, হাত তুলল কিশোর। আপনার বাড়িতে এল কি করে সে?
ও, মিস জলি বোরো পাঠিয়েছে, আমার পাশের রকটায়ই থাকে। সে-ও একটা কাকাতুয়া কিনেছে। যখন শুনল, শেকসপীয়ারের ডায়লগ বলে বিলি, ভাবল, আমি ইনটারেসটেড হব। তাই পাঠাল।
তাই? নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। সব সময়ই কাকাতুয়া ফেরি করে নাকি লোকটা? পাখিই শুধু বিক্রি করে?
তা-তো জানি না, চোখ মিটমিট করলেন ফোর্ড। আমার কাছে যখন এল, সঙ্গে মাত্র দুটো খাঁচা। একটায় বিলি। আরেকটায় অদ্ভুত একটা কালচে পাখি, দেখে মনে হয়েছে বারোমেসে রোগী। ফেরিওলা জানাল, ওটা দুর্লভ কালো কাকাতুয়া। কিন্তু ওরকম কোন পাখি আছে বলে শুনিনি। লোকটা বলল, পাখিটার রোগা চেহারা দেখে কেউ কিনতে চায় না।
ফেরিওলার নাম জিজ্ঞেস করেছিলেন? কিংবা গাড়িটার কোন নাম ছিল?
না, মাথা নাড়লেন অভিনেতা। পুরানো মলিন কাপড়চোপড় পরনে ছিল, কাশছিল বারে বারে। কাকাতুয়াটা বিক্রি করতে পারলে যেন বেঁচে যায়, এমন ভাবসাব। জিজ্ঞেস করায় বলল, তোতলা বলে নাকি কিনতে চায় না কেউ।
গাড়িটা সাধারণ দু-চাকার গাড়ি, না?
হ্যাঁ। কবে যে রঙ করেছে কে জানে। গাধাটার স্বাস্থ্যও বিশেষ সুবিধের না। ডিংগো বলে ডাকছিল।
কিশোর, মুসা বলল, কাকাতুয়াটা চুরি করে আনেনি তো?
মনে হয় না। ভোলাখুলি রাস্তায় নিয়ে বেরোনোর সাহস করত না তাহলে। চিন্তিত দেখাচ্ছে কিশোরকে। তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার, বিলির আসল মালিক নয় সে, বুলিও সে শেখায়নি।
কি করে বুঝলে?
সহজ। মিস্টার ফোর্ড বলছেন, কাকাতুয়াটার কথায় বিশিট টান ছিল। অথচ ফেরিওলার কথায় মেকসিকান্ত টান।
বিষ খেয়ে মরা উচিত আমার, কি শাস্তি হওয়া উচিত তার সে-ব্যাপারে বিন্দুমাত্র স্বজনপ্রীতি দেখাল না মুসা, মনে মনে বলল। এই সহজ কথাটা বুঝলাম না? আমি গোয়েন্দাগিরির অযোগ্য।
মিস্টার ফোর্ড, বলল কিশোর, পাখিটাহারাল কিভাবে খুলে বলুন তো।
বলছি, ছোট্ট কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিলেন অভিনেতা। দিন তিনেক আগে বিকেলে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। দরজায় তালা লাগাইনি, জানালাও খোলা ছিল। ফিরে এসে দেখলাম বিলি নেই। ড্রাইভওয়েতে গাড়ির চাকার দাগ। আমার নিজের কোন গাড়ি নেই। অনুমান করতে অসুবিধে হলো না, গাড়ি করে এসেছিল, বিলিকে চুরি করে নিয়ে গেছে। ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, অথচ পুলিশের বক্তব্য, বিলি উড়ে চলে গেছে। আচ্ছা তুমিই বলো, খাঁচা নিয়ে উড়ে যায় কি করে কাকাতুয়া? সম্ভব? এই হলোগে আমাদের পুলিশ সাহেবদের বুদ্ধি।
না, তা সম্ভব নয়, একমত হলো কিশোের। আজকের কথা বলুন। কি কি ঘটেছিল? কেন এসেছিল মোটা লোকটা? কেনই বা আপনাকে বেঁধে ফেলে গেল?
ওই শয়তানটা! জ্বলে উঠলেন ফোর্ড। প্রথমে এসে বলল, তার নাম হাইমাস, পুলিশের লোক। ভাবলাম, বুঝি মত পালটেছে পুলিশ, আমার পাখিটার ব্যাপারে তদন্ত করতে এসেছে। ডেকে এনে বসালাম ঘরে। নানা রকম প্রশ্ন শুরু করল কাকাতুয়া সম্পর্কে। ফেরিওলার কাছ থেকে আমার প্রতিবেশি কেউ আর কোন কাকাতুয়া কিনেছে কিনা জানতে চাইল। মিস জলি বোরোর কথা বললাম।
শুনে খুব উৎসাহী হয়ে উঠল ব্যাটা। জিজ্ঞেস করল, আমার কাকাতুয়াটা কি বুলি আউড়ায়। বললাম, সে কথা পুলিশকে আগেই বলেছি। দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ল লোকটা। আরেকবার বলার জন্যে অনুরোধ করল। নিছক রুটিন-চেকের খাতিরেই নাকি শুনতে চায়। বললাম : মাই নেইম ইজ বিলি শেকসপীয়ার। টু বি অর নট টু বি দ্যাট ইজ দা কোয়েশচেন।
শুনে খুব উত্তেজিত হয়ে উঠল সে। নোট বই বের করে লিখে নিল।
পাখিটা যে তোতলায় বলেননি তাকে? মুসা জিজ্ঞেস করল।
না, কপালে হাত বোলালেন অভিনেতা। বললে পুলিশ হাসবে মনে করে বলিনি। সোজা কথাই বিশ্বাস করে না, আর তোতলা কাকাতুয়ার কথা করবে।
অথচ, মিস্টার হাইমাস খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ল, বলল কিশোর, ঠিক প্রশ্ন নয়। আর কিছু জানাতে পারেন?
না, আর তেমন কিছু… মাথা নাড়তে গিয়েও নাড়লেন না অভিনেতা, হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে। হাইমাস জিজ্ঞেস করেছে, ফেরিওলার কাছে বিক্রি করার মত আর কোন কাকাতুয়া ছিল কিনা। কালো পাখিটার কথা জানালাম। বলতেই এমন উত্তেজিত হয়ে পড়ল।
নিচয় ব্ল্যাকবিয়ার্ড, চেচিয়ে উঠল সে। যা, নিশ্চয় ব্ল্যাকবিয়ার্ড। তার এই ভাবভঙ্গি দেখে সন্দেহ হলো আমার। শিওর হয়ে গেলাম, হাইমাস পুলিশের লোক নয়।
নোট নিতে নিতে মুখ তুলল কিশোর, মিস্টার ফোর্ড, আপনার কাকাতুয়া কেমন তাই জিজ্ঞেস করা হয়নি। কি জাতের? নানারকম প্রজাতি আছে, জানেনই তো।
সরি, জানি না। তবে বিলি খুব সুন্দর, মাথা আর বুক হলুদ রঙের।
হ্যাঁ, তারপর? হাইমাস বুঝল, আপনি সন্দেহ করেছেন?
বুঝবে কি? আমিই তো বলছি। রেগে গিয়ে বলেছি, কিভাবে বলেছেন, অভিনয় করে দেখালেন, তুমি পুলিশের লোক নও। তুমি একটা ভণ্ড, প্রতারক, চোর, আমার বিলিকে চুরি করেছ। জলদি ওকে ফিরিয়ে দাও, নইলে মজা বুঝিয়ে ছাড়ব।