তালাও নেই, থাবা দিয়ে পাইপটা তুলে নিল মুসা। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুলতে শুরু করল ক্যাপ। এই প্রথম খেয়াল করল, পাইপটা চোদ্দ ইঞ্চির মত লম্বা।
ক্যাপটা টেবিলে রেখে পাইপের ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিল মুসা। টেনে বের করে.আনল গোল করে পাকান এক টুকরো ক্যানভাস।
খুলে টেবিলে বিছাল।
হাঁ হয়ে গেল তিন গোয়েন্দা।
চোদ্দ বাই চব্বিশ ইঞ্চি ক্যানভাসের টুকরো। তাতে আঁকা রয়েছে অপরূপ সুন্দরী এক কিশোরী, মধ্যযুগীয় মেষপালিকার পোশাক পরনে, এক মেষশিশুর ভাঙা পায়ের পরিচর্যা করছে। ছবি সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই ওদের, তবু স্বীকার করে পারল না, অপূর্ব! দক্ষ শিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে, যেন এখুনি ভেড়ার বাচ্চা কোলে তুলে নিয়ে নাচতে নাচতে চলে যাবে মেয়েটা।
মাস্টারপীস, কোন সন্দেহ নেই।
রামধনুর এক টুকরো, বিড়বিড় করল কিশোর, এক পাত্র সোনা। ঠিকই বলেছে জন সিলভার। এত অল্প কথায় এর চেয়ে ভাল বর্ণনা আর হয় না।
ঘুম পাতলা হয়ে এসেছিল বোধহয় ময়নার, জন সিলভার নামটা কানে যেতেই ধড়মড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। বার দুই ডানা ঝাপটে বলল, আমি জন সিলভার। কি সুন্দর ছবি, আহা! খুক খুক করে কাশল কয়েকবার, যেন ভারি হয়ে কফ জড়িয়ে গেছে গলায়। তারপর আবার ঠোঁট জল পালকের তলায়, ঘুমিয়ে গেল।
তিন গোয়েন্দার মনে হলো, ব্ল্যাকবিয়ার্ড নয়, কথাগুলো বলল স্বয়ং জন সিলভার।
১৮
দুই দিন পর। বিখ্যাত চিত্রপরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে ঢুকল তিন গোয়েন্দা।
খবরের কাগজ পড়ছেন পরিচালক। ইঙ্গিতে ছেলেদেরকে চেয়ার দেখিয়ে দিয়ে আবার পড়ায় মন দিলেন।
পড়া শেষ হলে কাগজটা ভাঁজ করে রেখে দিলেন। হু। পত্রিকার খবর হয়ে গেছ দেখছি। ছবিও ছাপা হয়েছে।
ফাইলটা পরিচালকের দিকে ঠেলে দিল রবিন।
টেনে নিয়ে খুললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। পাতা উল্টে চললেন একের পর এক।
ঘরে পিনপতন নীরবতা। অপেক্ষা করে আছে ছেলেরা।
ফাইল পড়া শেষ করলেন পরিচালক। ঘড়ি দেখলেন। আজকে সময় খুব কম। জরুরী কাজ আছে। সংক্ষেপে কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দাও তো। কাকাতুয়াগুলো কি করেছ?
বিলি শেকসপীয়ার আর লিটল বোপীপকে যার যার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি, জবাব দিল কিশোর। অন্যগুলোর তো মালিক নেই, হাইমাসের স্ত্রীকে নিতে বলেছি, রাজি হয়নি। ভাবছি মিস কারমাইকেলের পাখির আশ্রমেই দিয়ে আসব।
হ্যাঁ, সেই ভাল হবে, একমত হলেন পরিচালক। তা হাইমাসের খবর কি? তার অসুখ?
পুরোপুরি ভাল হয়নি এখনও, রবিন বলল। আরও কয়েক দিন লাগবে।
মিসেস হাইমাস তোমাদের এক হাজার ডলার দিয়েছে?
দুই হাজার দিয়েছে। এত দামী ছবি খুঁজে পাওয়ার খুশিতে আত্মহারা মহিলা, বলল কিশোর।
খুব ভাল। অনেক টাকা। আচ্ছা, ডিয়েগো আর তার চাচার কি খবর?
দুই হাজার ডলারই মিস্টার স্যানটিনোকে দিয়ে দিয়েছি আমরা, বলল কিশোর। টাকাটা তো আসলে তারই প্রাপ্য। জন সিলভারকে আশ্রয় দিয়েছিল, খাইয়েছিল। কবর দিয়েছিল। এই কেসে যে আনন্দ আমরা পেয়েছি, আমরা তাতেই খুশি।
এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন পরিচালক। মনে মনে বোধহয় প্রশংসা করছেন। ছেলেদের। স্যানটিনো কোথায়?
মেকসিকো চলে গেছে, বাড়িতে। অনেক টাকা পেয়েছে, ওখানে গিয়ে ফুলের বাগান করতে পারবে। কাশির চিকিৎসাও করাতে পারবে, বলল কিশোর।
আর ডিয়েগো?
ও-তো মহাখুশি, স্যার, বলে উঠল মুসা। অটো কোম্পানিতে গিয়েছিলাম আমরা তিনজনে। ম্যানেজারকে অনুরোধ করতেই রাজি হয়ে গেল। ডিয়েগোকে অ্যাপ্রেনটিস হিসেবে নিয়ে নিয়েছে। মনের মত কাজ পেয়ে ডিয়েগো খুশির ঠেলায় রোজ দশবার করে ফোন করে আমাদের।
ভাল হয়েছে। গাড়ির জগতে যুগান্তকারী কিছু করে বসলেও অবাক হব না। মেধা আছে।..ততা, কিছু খাবে? আইসক্রীম…
না, আপনার তাড়া আছে বললেন, তাড়াতাড়ি হাত তুলল কিশোর। আরেকদিন। আজ যাই।
ঠিক আছে, এসো। গুড বাই, ইন্টারকমের সুইচ টিপলেন তিনি, সেক্রেটারিকে জরুরী নির্দেশ দেয়ার জন্যে।
দরজার কাজে চলে এসেছে তিন গোয়েন্দা, পেছন থেকে ডাকলেন পরিচালক, কিশোর?
ফিরে তাকাল তিনজনেই।
এনথনি শোঁপাই ফ্রান্সের আধুনিক রবিন হুড, বললেন তিনি। মহাপুরুষ হওয়ার মত অনেক গুণ আছে তার। তার উপদেশ মনে রেখো।
রাখব, স্যার, একই সঙ্গে মাথা কাত করল তিন গোয়েন্দা।