আগেই বলেছিলাম… বলা আর হলো না, ফোন বেজে উঠল।
পরস্পরের দিকে তাকাল ওরা। কে? এখন তো কারও ফোন করার কথা নয়।
হবে হয়তো মিসেস হাইমাস, বলতে বলতে রিসিভার তুলে নিল কিশোর, স্পীকারের সুইচ অন করে দিয়ে বলল, হালো, তিন গোয়েন্দা।
কংগ্রাচুলেশনস, ইয়াং ডিটেকটিভস, শুকনো হাসির সঙ্গে বলল একটা খনখনে কণ্ঠ, কথায় কড়া ফরাসী টান।
কার গলা ঠিকই বুঝতে পেরেছে কিশোর, তবু জিজ্ঞেস করল, কে বলছেন?
এত তাড়াতাড়িই ভুলে গেলে? এই তো খানিক আগে মেরিটা ভ্যালির গোরস্থানে দেখা হয়েছিল। তোমাদের সঙ্গে কয়েকটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারলাম না। জন সিলভার খুব বোকা বানিয়েছে আমাকে। আর ঘোরাঘুরি করে কি লাভ? আমি পরাজিত, হতাশা ঢাকতে পারল না এনথনি শোঁপা।
চুপ করে রইল কিশোর।
এয়ারপোর্ট থেকে বলছি, আবার বলল শোঁপা। চলে যাচ্ছি আমি। পুলিশকে জানাতে পারো, লাভ হবে না। ওরা ধরতে পারবে না আমাকে। কেন ফোন করেছি জানো? আরেকবার তোমাদের প্রশংসা করতে। হাইমাসকে বলবে, আমি তার শুভকামনা করছি।
থ্যাংক ইউ, শুধু বলল কিশোর।
আমাকে টেক্কা দিয়েছ তোমরা, আবার বলল শেপা, আজতক আর একজন কি দুজন সেটা পেরেছে। দাওয়াত দিয়ে রাখছি। যদি কখনও ইউরোপে বেড়াতে আসসা, খুঁজে বের কোরো আমাকে। ইচ্ছে করলে সেটাও পারবে তোমরা, আমি জানি। ফ্রান্সের অপরাধ জগত ঘুরিয়ে দেখাব তোমাদের। কত রহস্য, কত রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা যে লুকিয়ে আছে সেখানে, কল্পনাও করতে পারবে না। আরেকটা কথা, হয়তো ভাববে চোরের উপদেশ কি শুনব? তবু বলছি, মানুষের কল্যাণে লাগিয়ে তোমাদের মেধা, মানুষের উপকার কোরো, আমার মত চোর হয়ো না। তোমাদের ওপর হয়তো অনেক অন্যায় করেছি, কষ্টও দিয়েছি, মাপ কোরো।
কি যে বলেন, এতই অবাক হয়েছে কিশোর, মিটমিট করছে চোখের পাতা।
কিশোর, আবার বলল শোঁপা, লেকচারের মত শোনাচ্ছে কথাগুলো, তবু বলছি, তোমার দেশ, বাংলাদেশে গিয়েছিলাম একবার। আহা, কি যে কষ্ট ওখানকার মানুষের। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। বড় হয়ে তোমার দেশে চলে যেয়ো, যদি কোনভাবে পারো, সাহায্য কোরো দেশের মানুষকে..ওরা সত্যি বড় অসহায়…
জোরে জোরে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর, কি যেন মনে পড়ি পড়ি করেও পড়ছে না। কিন্তু মনে পড়ে গেল হঠাৎ। মশিয়ে শোঁপা, আপনি সেই লোক নন তো? ফ্রান্সের গরীব-দুঃখীরা যাকে আধুনিক রবিন হুড বলে?
ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা, কিশোরের প্রশ্ন এড়িয়ে গেল শোঁপা, কাকাতুয়াগুলো ওশেন স্ট্রীটের একটা গ্যারেজ আছে, ঠিকানাটা লিখে নাও চট করে…
দ্রুত লিখে নিল রবিন।
অউ রিভোয়া, মাই বয়েজ, বলল শোঁপা, অ্যাণ্ড এগেন কংগ্রাচুলেশনস।
কেটে গেল লাইন।
অদ্ভুত একটা পরিবেশ সৃষ্টি হলো হেডকোয়ার্টারে। অনেকক্ষণ কেউ কোন কথা, বলতে পারল না। যেন অতি পরিচিত একজন বন্ধু চলে গেল ওদের।
কে ওই আধুনিক রবিন হুড? জিজ্ঞেস করল মুসা।
আমিও শুনেছি ওর নাম, বলল রবিন। দুর্দান্ত এক দস্যু। সেই প্রাচীন কথাটা—ধনীর যম, গরীবের বন্ধু…।
আমি পাল্টে দিচ্ছি কথাটা, কিশোর বলল। উৎপীড়কের যম, উৎপীড়িতের বন্ধু…দুনিয়ার সব ধনীরাই খারাপ নয়…যাই হোক, আমাদের আসল আলোচনা থেকে অনেক দূরে সরে গেলাম।
হ্যাঁ, ছবিটা কোথায় থাকতে পারে? পাইপ দিয়ে হাতের তালুতে আস্তে বাড়ি দিল মুসা। আরে অমন করে চেয়ে আছো কেন আমার দিকে…
ছয় নম্বর মেসেজে কি বলা হয়েছে? নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে কিশোরের।
লুক আণ্ডার দা স্টোনস বিয়ণ্ড দা বোনস ফর দা বক্স দ্যাট হ্যাজ নো লকস, জবাব দিল রবিন।
কিন্তু মূসা, কিশোর বলল, ডিংকি যে বাক্সটা পেয়েছে, ওটাতে তালা লাগানো ছিল। অথচ মেসেজে পরিষ্কার বলছে, ছবি যেটাতে থাকবে তাতে কোন তালা থাকবে না।
ঠিক! চেঁচিয়ে উঠল মুসা, আরেকবার পাইপ দিয়ে বাড়ি দিল হাতের তালুতে। আরেকটা বাক্স আছে…না। আর থাকতে পারে না। খুব ভালমত খুঁড়েছে ডিংকি।
কিন্তু এমন যদি হয়? হাতের তালুতে খুঁতনি রাখল কিশোর। ঘোট অন্য কোন ধরনের বাক্স? যেটাকে বাক্স মনে হবে না? আচ্ছা, সাত নম্বরে কি লিখেছে?
আই নেভার গিভ আ সাকার অ্যান ইভন ব্রেক, বলল মুসা। স্কারফেসকে ওকথাই বলতে শুনেছি, না রবিন?
হ্যাঁ, রবিন মাথা ঝাকাল। তবে তার সঙ্গে ব্ল্যাকবিয়ার্ড যযাগ করেছে, অ্যাণ্ড দ্যাটস আ লেড পাইপ সিশ। এটাও আরেকটা পুরানো স্যাঙ।
তাই? আপনমনে বলল কিশোর। প্রথম স্ল্যাঙে দৃষ্টি দূরে সরানো হয়েছে, তার পরেরটায় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, তাই তো বোঝায়? নাকি?
দূর! ঠকাস করে পাইপটা টেবিলে নামিয়ে রাখল মুসা। মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে আমার।
মুসা, পাইপটা কোথায় পেয়েছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
কেন জানো না? মুসা অবাক। গোরস্থানে। ডিংকি তুলে ছুঁড়ে ফেলেছিল।
ঝট করে পাইপটার দিকে চোখ চলে গেল রবিনের।
খাঁচার ভেতরে অযথাই ডানা ঝাপটাল একবার ব্ল্যাকবিয়ার্ড।
এটা দিয়েই খিচেছিলাম জনাব টমাস মিয়াকে, হেসে রবিনকে বলল মুসা।
ওই একই জায়গায় পাওয়া গেছে, যেখানে বাক্সটা পাওয়া গেছে, মুসার কথা কানেই ঢুকছে না যেন কিশোরের।
এবং এটা সীসার পাইপ, যোগ করল রবিন।
চোখ বড় বড় হয়ে যাচ্ছে মুসার।
এবং রবিনের কথার সঙ্গে যোগ করল কিশোর, সীসার পাইপ আজকাল খুব রেয়ার, কেউ ব্যবহার করে না। মাথায় দেখো, ক্যাপ লাগান রয়েছে। ভেতরের জিনিস সহজে নষ্ট হবে না।