ছুটল কিশোর।
আরেকটা ঝাড়ের কাছে চলে এল। আশ্চর্যবোধক আর তীর চিহ্ন আঁকা আছে আমি টিকা দিপে ধরল
গাছের গায়ে। কি ভাবে যেন কিশোরের আগে চলে গেছে মুসা। পেছনে একজন লোকের চিৎকার শোনা গেল, কোন কিছুতে হোঁচট খেয়ে পড়ে ব্যথা পেয়েছে। অন্য দুজনের গলাও শোনা যাচ্ছে, সরে যাচ্ছে দূরে।
কিশোর যেখানে রয়েছে, সেখানেও ঘন হতে শুরু করেছে কুয়াশা। ভীষণ এক দুঃস্বপ্নে রয়েছে যেন সে, কিংবা কোন প্রেতপুরীতে। গাছের ডালপাতাগুলোকে মনে হচ্ছে কোন পিশাচের বাহু, ধারাল নখ দিয়ে খামচে ধরতে আসছে তাকে। অতি সাধারণ স্তম্ভগুলোও ভয়াবহ ভূতুড়ে রূপ নিয়ে পথ রোধ করতে চাইছে তার। ছোটার সময় কয়বার যে বাড়ি খেয়েছে, কপাল ফুলে গেছে, ব্যথা করছে বুকের একপাশ। কিন্তু সেসব খেয়াল করার সময় এখন নেই।
ছুটে চলেছে কিশোর। যখন মনে করল, দেয়ালের ফাঁকের আর দেখা পাবে না, ঠিক সেই সময়ই দেখতে পেল দেয়ালটা। কুয়াশার মধ্যে দিয়ে শুধু ওপরের অংশ দেখা যাচ্ছে, কালো মোটা রেখার মত।
দেয়ালের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে এসে পড়ল কিশোর। মোটা রেখাটা ধরার জন্যে হাত বাড়াল ওপরে।
কে যেন চেপে ধরল কজি, জীবন্ত আরেকটা হাত।
ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে যাচ্ছিল কিশোর, ফিসফিসিয়ে বলল মূসা, কিশোর, আমি।
বন্ধুর গলা এত মধুর আর কখনও মনে হয়নি কিশোরের। টেনে তাকে দেয়ালের ওপর তুলে নিল মুসা।…
দুজনে লাফিয়ে নামল ওপাশে।
হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল মুসা। নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে আজ গোয়েন্দাপ্রধানের। কোন ব্যাপারে কারও ওপর এতখানি নির্ভরও আর কখনও করেনি।
ঘন কুয়াশার ভেতরে দেখা যাচ্ছে হলুদ দুটো ঘোলাটে আলো, যেন কোন দানবের চোখ। ট্রাকের হেডলাইট।
হাঁপাতে হাঁপাতে ট্রাকের কাছে এসে থামল দুই কিশোর।
তোমরা হোকে? পাশে এলিয়ে পড়া দুই গোয়েন্দাকে জিজ্ঞেস করল বোরিস।
হ্যাঁ হ্যাঁ, হোকে, দম নিয়ে সারতে পারছে না কিশোর, ফেটে যাবে যেন ফুসফুস। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, আর আলসেমি নয়, কাল থেকেই সকালে উঠে মুসার সঙ্গে ব্যায়াম শুরু করবে সে। আরিব্বাপরে বাপ, দৌড়ানো এত কষ্ট! বাড়ি যান। হারামি এই কুয়াশার ভেতর থেকে বেরোন।
সাবধানে এগিয়ে চলল বোরিস। পুবে। পাতলা হতে হতে এক সময় পেছনে পড়ে গেল কিশোরের হারামি কুয়াশা।
১৭
ট্রাক ছুটছে।
অনেকক্ষণ কোন কথা বলতে পারল না ছেলেরা।
একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত, অবশেষে বলল কিশোর। হারামী হোক আর যাই হোক, কুয়াশা আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। পিছু নিতে পারেনি শেপার দল।
কেন পিছু নেবে? মুসা বলল। ছবিটা পাইনি আমরা।
ওদের ধারণা, পেয়েছি, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে শুরু করল কিশোর। খুব একচোট দেখিয়েছে জন সিলভার। সাংঘাতিক রসিকতা। এত কষ্টের পর পাওয়া গেল খালি বাক্স, তার ওপর আবার একটা নোট।
জাহান্নামে যাক ব্যাটারা, কিশোরের কথায় বিশেষ কান নেই মুসার। এখন আসুক। বোরিস আছে আমাদের সঙ্গে। পিটিয়ে তক্তা করে দেব। হাতের পাইপটা দেখাল সে। এখনও রয়েছে ওটা তার হাতে, ফেলেনি এত কিছুর পরও। তার কারণ, এটা একটা অস্ত্র। টমাসের বাচ্চাকে যদি আরেকটা খিচতে পারতাম! দাতে দাঁত চাপল সে।
যা একখান খিচেছ সেটাই জিন্দিগিভর মনে রাখবে, মাথায় লাগলে মরেই যেত, বলল কিশোর। দারুণ দেখিয়েছ আজ তুমি, মুসা। আমিও অনেকদিন মনে রাখব।
অবাক হলো মুসা, খুশিও। কিশোর পাশা প্রশংসা করছে। যে শুধু লোকের দোষ ছাড়া আর কিছু দেখে না (মুসার ধারণা) যাক, আজ তাহলে দেখিয়ে দিতে পেরেছে গোয়েন্দাপ্রধানকে, সুযোগ পেলে সে-ও মনে রাখার মত কিছু করতে পারে।
মেসেজের মানে তো বের করলাম, বলল কিশোর। বাক্সটাও পেলাম। কিন্তু ছবি কই?
বলেছেই তো : আই নেভার গিভ আ সাকার অ্যান ইভন ব্রেক, মনে করিয়ে দিল মুসা। হাইমাসের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে।
হয়তো, ভাবনায় ডুবে গেল কিশোর।
সারা পথে আর কোন কথা হলো না। কিশোর ভাবতেই থাকল, মুসাও বাধা দিল না।
রকি বীচে ঢোকার আগে খানিক দুর হালকা কুয়াশার ভেতর দিয়ে আসতে হয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে কুয়াশা। মেরিটা ভ্যালির গোরস্থানে এখন কি অবস্থা ভাবতেই রোম খাড়া হয়ে গেল মুসার।
জোর বাতাস বইতে শুরু করল, দ্রুত দক্ষিণে সরে গেল কুয়াশা।
নিরাপদেই স্যালভিজ ইয়ার্ডে ঢুকল ট্রাক।
চলে হেডকোয়ার্টারে, মুসাকে বলল কিশোর। রবিন নিশ্চয় বসে আছে।
অধীর হয়ে আছে রবিন। বসতে পারছে না। খালি ছটফট করছে, পায়চারি করছে ট্রেলারের ছোট্ট পরিসরে।
দুজনকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠল সে, পেয়েছ?
কিন্তু বন্ধুদের মুখ দেখেই প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেল রবিন। কারও হাতেই বাক্স নেই, মুসার হাতে শুধু পাইপটা। অস্ত্র অনুমান করতে কষ্ট হলো না রবিনের, মারপিট করে এসেছে মুসা।
শোঁপা ধরে ফেলেছিল, ধপাস করে গিয়ে নিজের চেয়ারে গড়িয়ে পড়ল কিশোর।
তবে ছবিটা সে-ও পায়নি, যোগ করল মুসা। নিজের সীটে বসল। বাক্সটা পাওয়া গেছে, ভেতরে শুধু একটা নোট। তাতে লেখা, মেসেজটার মানে নাকি ঠিকমত করতে পারিনি।
তাই? বলল রবিন। অবাক কাণ্ড! জন সিলভার শুধুই রসিকতা করল? খালি খাটানোর জন্যে? নো রেজাল্ট?
আমার তা মনে হয় না, চেহারা বিকৃত করে রেখেছে কিশোর। তাহলে অন্য কিছু লিখত। মেসেজটার মানে ঠিকমত করা হয়নি, একথা লিখত না।