রিসিভার রেখে মা-বাবার দিকে তাকাল রবিন। আমার ফিরতে দেরি হবে: রাত দশটা…
কেউ মুখ খোলার আগেই ছুটে বেরিয়ে গেল সে।
ব্যাপার কি? জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার মিলফোর্ড। এত উত্তেজিত?
একটা হারানো কাকাতুয়া খুঁজছে, জানালেন মিসেস মিলফোর্ড, সেদিন বলেছিল আমাকে।
হারানো কাকাতুয়া? হাহ-হা, কফির কাপে চুমুক দিলেন মিস্টার মিলফোর্ড। কিন্তু গোরস্থানে কি করতে যাবে
চমকে উঠলেন মা। তাড়াতাড়ি দরজার দিকে ছুটলেন। কিন্তু রবিনকে দেখা গেল না। চলে গেছে।
১৪
প্রায় একই সময়ে লাল কুকুর চার-এর কাছে পৌঁছল রবিন আর মুসা। কোন কথা বলল না। গেট খুলে সাইকেল ভেতরে ঢুকিয়ে রেখে, জঞ্জালের তলা দিয়ে ক্রল করে এসে ঢুকল হেডকোয়ার্টারে।
ডেস্কের ওধারে মহাব্যস্ত কিশোর। এক গাদা বই, ম্যাপ, কাগজ ছড়িয়ে রয়েছে ডেস্কে। তার চেহারাই বলছে, সুসংবাদ আছে।
তাড়াতাড়ি করতে হবে আমাদের, বলল কিশোর। সে জন্যেই ডেকেছি।
মানে বুঝেছ? রবিন জিজ্ঞেস করল।
পুরোপুরি নয়। তবে কাজ শুরু করা যেতে পারে। তোমার গোরস্থান থেকেই সূত্রটা পেয়েছি।
আমার আইডিয়া নয়, বাবার, বলল রবিন, কিন্তু তার কথা কিশোরের কানে ঢুকল কিনা বোঝা গেল না। বইপত্র নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এক সময় মুখ তুলে বলল, কিছুদূর এগিয়েছি। সাত ভাগে মেসেজগুলোকে ভাগ করেছে জন সিলভার। পাখির কথা ভুলে গিয়ে শুধু এক দুই করেই চালিয়ে যাব।
যেভাবে খুশি চালাও, গুঙিয়ে উঠল মুসা। কিন্তু জলদি আসল কথা কিছু বলো।
তিনে বলেছে গোরস্থানে ছবিটা লুকিয়ে রেখেছে জন সিলভার। তারমানে, এক আর দুই আমাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে সেখানে।
কিভাবে? রবিনের প্রশ্ন।
এক-এ বলা হয়েছে : লিটল বো-পীপ হ্যাজ লস্ট হার শীপ অ্যাণ্ড ডাজনট নো হোয়্যার টু ফাইণ্ড ইট। কল অন শারলক হোমস। অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করেছ?
শারলক হোমস মারা গেছে, এই তো? মুসা বলল।
বইয়ের চরিত্র শারলক হোমস, মরল না বাচল, কিছু এসে যায় না। সাহায্যের জন্যে তাকে ডাকতে পারছি না আমরা, বলল রবিন।
ঠিক, তর্জনী দিয়ে বাতাসে কোপ মারল কিশোর। তাই মেসেজে কল ইন শারলক হোমস না বলে বলা হয়েছে কল অন…মানে? তার বাড়ি গিয়ে দেখা করো। কোথায় বাড়ি শারলক হোমসের?
লণ্ডনে, জবাব দিল মুসা।
লণ্ডনে, বেকার স্ট্রীটে, বলল রবিন।
বেশ, কিশোর বলল, তাহলে তাকে খুঁজতে বেকার স্ট্রীটেই যেতে হবে আমাদের। দুইয়ে বলা হচ্ছে, টু-টু-টু বি আর নট টু-টু-টু বিকাকাতুয়া পাখি, তোতলায় না, তার জিভ আর কণ্ঠনালীর গঠনই এরকম, তোতলামি রোগই হয় না। তার মানে? ইচ্ছে করেই শেখানো হয়েছে, যেটা আগেই সন্দেহ করেছিলাম।
তাতে কি? মুসার জিজ্ঞাসা।
একটা কাগজে কিছু লিখল কিশোর। এই যে, দেখো, বাড়িয়ে দিল দুজনের দিকে।
লিখেছে : বেকার স্ট্রীট ২২২বি।
আরি! চমকে গেল মুসা। ঠিকানা!
গোরস্থানের? ভুরু কোঁচকাল রবিন।
ম্যাপের স্তুপ থেকে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার পুরানো একটা ম্যাপ বের করল কিশোর। শত শত শহর রয়েছে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায়, একাধিক বেকার স্ট্রীট। তবে, কবরস্থানই পথ দেখিয়েছে। এই যে, লস অ্যাঞ্জেলেসের দক্ষিণে একটা শহর, মেরিটা ভ্যালি। আর এই যে বেকার স্ট্রীট, আর এটা ভ্যালি স্ট্রীট, আড়াআড়ি কেটেছে দুটো পথ, এক কোণায় আঙুল রাখল সে, এই যে, গোরস্থান। এটার কেয়ারটেকারের বাড়ির নম্বর, টু-টু-টু বি।
আরিসব্বোনাশ! জানলে কি করে? মুসা অবাক।
এই যে রেফারেন্স বইগুলো ঘেঁটে, ডেস্কে ছড়ানো বইগুলো দেখাল কিশোর। তাছাড়া টেলিফোন তো আছেই। গোরস্থানের ওপর লেখা একটা পুস্তিকা পেয়েছি, ট্যুরিস্টদের জন্যে ছাপা হয়েছে। শোনো, পুস্তিকা খুলে পড়তে শুরু করল, ক্যালিফোর্নিয়ার সব চেয়ে পুরানো কবরস্থানগুলোর অন্যতম মেরিটা ভ্যালির গোরস্থান। এখন অব্যবহৃত, অযত্নে পড়ে আছে। শোনা যাচ্ছে, শিগগিরই সংস্কার করে ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। পুস্তিকাটা বন্ধ করল। স্যানটিনো
আর ডিয়েগো যেখানে থাকে, সেখান থেকে জায়গাটা মাত্র তিরিশ মাইল দূরে। তিন। দিনে হেঁটে গিয়ে হেঁটে ফিরে আসা সম্ভব ছিল না অসুস্থ জন সিলভারের পক্ষেও।
বাকি মেসেজগুলো কি বলে? জিজ্ঞেস করল রবিন। বুঝেছ?
না, এখানে বসে বোঝা যাবে না। গোরস্থানে গিয়ে মেলাতে হবে।
চলো, কাল ভোরেই রওনা হয়ে যাই। রোলস-রয়েসের কথা বলে রাখতে হয়, বলল মুসা।
শোঁপা এতক্ষণে বুঝে ফেলেছে কিনা কে জানে, হাত ওল্টাল কিশোর। বুঝলে সময় নষ্ট করবে না। আমাদেরও করা উচিত হয়। সকাল হতে অনেক দেরি। বেলা আছে এখনও। তাড়াহুড়ো করলে আঁধার নামার আগেই ফিরে আসতে পারব। তবে সবাই এক সঙ্গে যেতে পারছি না…
কেন?
শোঁপা নিশ্চয় লোক লাগিয়ে রেখেছে, চোখ রেখেছে আমাদের ওপর। রোলস-রয়েসটা চোখে পড়বেই। আমাদের পিছু নেবে।
তাহলে?
কি কি করতে হবে, দ্রুত ব্যাখ্যা করল কিশোর। ক্ষীণ প্রতিবাদ জানাল রবিন, কিন্তু গোয়েন্দাপ্রধানের জোরাল যুক্তির কাছে টিকল না।
কয়েক মিনিট পর হাজির হলো রোলস-রয়েস।
ধীরেসুস্থে চড়ল তাতে তিন গোয়েন্দা, কেউ যদি চোখ রেখে থাকে, যেন সে ভালমত দেখতে পারে।
ছুটি শেষ হয়নি হ্যানসনের। আজও গাড়ি নিয়ে এসেছে ক্র্যাব। হলদে দাঁত বের করে হাসল। পাখি খুঁজে পেয়েছ এক-আধটা?