বিলিকে দেখাবেন, প্লীজ? অনুরোধ করল কিশোর। খুব বুদ্ধিমান পাখি, দেখতে ইচ্ছে করছে।
সরি মেঘ জমল লোকটার চেহারায়। আজ বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিল বিলি। তাকে থামানোর জন্যে শেষে খাঁচার ওপর কাপড় দিয়ে ঢেকেছি। এখন
আবার তুললেই হয়তো চেঁচানো শুরু করবে। মাথাই খারাপ হয়ে গেল, না কী।
ঠিক আছে ঠিক আছে, থাক তাহলে, হাত তুলল কিশোর। তদন্ত করার আর তো কিছু নেই, হতাশ হয়েছে খুব। যাই আমরা, মিস্টার ফোর্ড। আপনার কাকাতুয়া ফিরে এসেছে, এটা অরিশ্যি খুশির খবর।
থ্যাংকু বলল মোটা লোকটা। তোমাদের কার্ড রইল। কখনও দরকার পড়লে ডাকব। তিন গোয়েন্দা, মনে থাকবে।
সদর দরজা পর্যন্ত ছেলেদের এগিয়ে দিয়ে গেল ফোর্ড।
খুব খারাপ লাগছে, আঁকাবাঁকা পথে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল কিশোর। আশা হয়েছিল, দারুণ একখান কেস মিলেছে। পোড়া নির্জন বাড়ি, আর্তনাদ, অদ্ভুত এক মোটা লোক…বড় বেশি আশা করে ফেলেছিলাম।
আমার ভালই লাগছে, খুশি দেখাচ্ছে মুসাকে। ঢুকেই যা শুরু হয়েছিল, সত্যি সত্যি হলে এ-যাত্রা ঠিক ভূতের হাতে মারা পড়তাম। দরকার পড়লে আবার ডাকবে বলেছে ফোর্ড। না ডাকুক, সেটাই ভাল। ওকে মোটেও পছন্দ হয়নি ডাকবে হেলে এ-যাত্রা ঠিক খুশি দেখাচ্ছে আশা করে ফেলে নির্জন বাড়ি আমার।
হয়তো, কিছু ভাবছে কিশোর। নীরবে এগোল দুজনে, আলগা খোয়ায় জুতোর শব্দ হচ্ছে। হলিউডের একটা পুরানো এলাকা এটা, বড় বড় বাড়ি আছে। কিন্তু প্রায় সব কটাই যত্নের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে। মালিকেরা অভাবী হয়ে পড়েছে অনেকেই, ঠিকমত যত্ন নিতে পারে না। কিংবা যাদের এখনও টাকা আছে, তারা আর পছন্দ করতে পারছে না এলাকাটা। অন্য জায়গায় নতুন বাড়ি করে উঠে গেছে।
গেটের বাইরে পথের মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে কালো রোলস-রয়েস, জায়গায় জায়গায় সোনালি কাজ করা, আয়নার মত চকচকে শরীর, কিন্তু মডেলটা পুরানো। ইচ্ছে করেই বানানো হয়েছে। একবার বাজি জিতে গাড়িটা তিরিশ দিনের জন্যে ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিল তিন গোয়েন্দা। এখনও দরকার পড়লে করে, তবে ভাড়া দিতে হয়। খরচ দেয় তাদের এক বন্ধু, অগাস্ট অগাস্ট, রক্তচক্ষু উদ্ধারে তাকে সহায়তা করেছিল তিন কিশোর।
বাড়ি চলুন, হ্যানসন, শোফারকে বলল কিশোর। কাকাতুয়াটা ফিরে এসেছে।
তাই নাকি? ভাল, বিশুদ্ধ ইংরেজিতে বলল হ্যানসন, খাঁটি ইংরেজ বলে গর্ব আছে তার। চলুন।
গাড়ি ঘোরাচ্ছে হ্যানসন।
মিস্টার ফোর্ডের বাগানের দিকে চিন্তিত ভঙ্গিতে চেয়ে আছে কিশোর। গাছের জঙ্গলের জন্যে বাড়িটা দেখা যায় না।
মুসা, হঠাৎ বলল সে, ভাল করে দেখো। কোথায় জানি একটা গোলমাল রয়েছে, ধরতে পারছি না।
কি? বাগানে?
বাগান, ড্রাইভওয়ে, পুরো বাড়িটাই। মাথার ভেতরে কিছু একটা খোঁচাচ্ছে, বের করে আনতে পারছি না।
হাসালে। কিশোর পাশা যেটা বুঝতে পারে না, সেটা আমি পারব?
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে শুরু করেছে কিশোর, মুসার কথা কানে ঢুকল বলে মনে হলো না। গভীর চিন্তায় ডুবে গেছে।
হ্যানসনকে গাড়ি থামাতে বলে ভালমত দেখল মুসা। কিন্তু গোলমাল চোখে পড়ছে না। অযত্নে বেড়ে উঠেছে বাগান, মালির হাত না লাগলে উঠবেই, স্বাভাবিক ব্যাপার। ড্রাইভওয়েতে তালের পাতা জমে আছে, মাড়িয়ে গেছে গাড়ির চাকা। এতেও অস্বাভাবিক কিছু নেই।
নাহ্, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, মাথা নাড়ল মুসা। গাড়ি ছাড়তে বলল হ্যানসনকে।
কিশোরের কোন খেয়ালই নেই যেন।
গোটা দশেক রক পেরিয়েছে গাড়ি, আচমকা চেঁচিয়ে উঠল কিশোের। হ্যানসন! ঘোরান! গাড়ি ঘোরান! কুইক!
ঘোরাচ্ছি, কিশোরের স্বভাব হ্যানসনেরও জানা, কোন কারণ না থাকলে ঘোরাতে বলত না। তাই কোন প্রশ্ন করল না সে।
কিশোর, কি হয়েছে? আবার কেন?
গোলমালটা ধরে ফেলেছি, উত্তেজনায় লাল হয়ে গেছে গোয়েন্দাপ্রধানের মুখ। মিস্টার ফোর্ডের বাড়িতে টেলিফোন লাইন নেই।
লাইন নেই? তাতে কি?
কারেন্টের লাইন আছে, কিন্তু টেলিফোনের নেই। অথচ ফোনে কথা বলল কি করে মিস্টার ফোর্ড, মিস্টার ক্রিস্টোফারের সঙ্গে? মিথ্যে বলেছে। আর তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে আর যা যা বলেছে, সবই মিছে কথা।
মিছে কথা? মাথা নাড়ল মুসা। কেন বলবে?
কারণ লোকটা মিস্টার ফোর্ড নয়। ভণ্ড, প্রতারক। খুব সম্ভব আসল মিস্টার ফোর্ডই তখন বাঁচাও বাঁচাও বলে চেঁচিয়েছিলেন।
২
নয়টা ব্লক নিঃশব্দে পেরিয়ে এল বিশাল রোলস-রয়েস।
মিস্টার ফোর্ডের গেট দিয়ে ছোট আরেকটা গাড়ি বেরোচ্ছে, মোড় নিয়ে। এগিয়ে আসতে শুরু করল এদিকেই। গতি বাড়ছে, সঁ করে চলে গেল পাশ দিয়ে। পলকের জন্যে ড্রাইভারকে চোখে পড়ল। মোটাসোটা, চোখে চশমা। অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।
মিস্টার ফোর্ড যাচ্ছেন, চেঁচিয়ে বলল মুসা।
ভুল, শুধরে দিল কিশোর, ও মিস্টার ফোর্ড নয়। হ্যানসন, পিছু নিন।
ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল শোফার। বন বন করে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে মুখ ফেরাল আবার গাড়ির।
মোড়ের কাছে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে কালো গাড়িটা।
ধরতে পারলে কি করব? প্রশ্ন করল মুসা। ওর বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই। বরং আসল ফোর্ডের অবস্থা গিয়ে দেখা উচিত। সাহায্য লাগতে পারে।
দ্বিধা করছে কিশোর। মাথা ঝাকাল। ঠিকই বলেছ। আগে মিস্টার ফোর্ডকে দেখা দরকার, কি অবস্থায় রয়েছেন কে জানে। সরি, হ্যানসন, আবার ঘোরান।