পারলেও সময় লাগবে। তাতে কিছুটা সময় পাব আমরা।
কি হবে তাতে? মুসা জিজ্ঞেস করল। চারটে মেসেজ জানি আমরা, লাগবে সাতটা। বাকি তিনটে শেপার কাছ থেকে ছিনিয়ে আনবে নাকি?
না, তা আনতে পারব না, স্বীকার করল কিশোের। মিস্টার ফোর্ডের কাকাতুয়া এনে দিতে পারব না, মিসেস বোরোরটাও দিতে পারব না। ছবিটা খুঁজতে সাহায্য করতে পারব না মিসেস হাইমাসকে…।
এমনকি শুঁটকির লম্বা নাকটা ঘুসি মেরে ভোতাও করে দিতে পারব না, মুসার সব রাগ গিয়ে পড়েছে টেরিয়ারের ওপর, তার জন্যেই হাত থেকে ফসকে গেল পাখিগুলো। ব্যাটা পালিয়েছে, আসার সময় শুনলাম। কোন আত্মীয়ের বাড়ি নাকি বেড়াতে গেছে। মরুকগে, হারামজাদা।
কয়েক মিনিট নীরবতা। চুপচুপ নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। অবশেষে মাথা ঝাকাল, হ্যাঁ, ভরসা কম।
আবার নীরবতা। ব্ল্যাকবিয়ার্ড দানা ঠুকরে খাচ্ছে, শুধু তার মৃদু খুটখুট আওয়াজ।
ক্যাপ্টেন কিড, শারলক হোমস আর রবিন হুডকে কথা বলাতে পারলে কিছু হয়তো করা যেত, বিড়বিড় করল রবিন।
রবিন হুড, খপ করে কথাটা ধরল ব্ল্যাকবিয়ার্ড। মাথা কাত করে তাকাল তিন গোয়েন্দার দিকে। ডানা ঝাপটাল। আয়্যাম রবিন হুড, স্পষ্ট উচ্চারণ। আই শট অ্যান অ্যারো অ্যাজ এ টেস্ট, আ হানড্রেড পেসেস শট ইট ওয়েস্ট।
ঝট করে মুখ তুলে তাকাল তিনজনেই।
শুনলে কি বলল? মুসার প্রশ্ন।
তোমার কি মনে হয়… কিশোরের দিকে চেয়ে থেমে গেল রবিন, ডোক গিলল।
চুপ, ফিসফিস করে বলল কিশোর। ওকে বাধা দিয়ো না। দেখি, আবার বলে নাকি? ময়নার দিকে চেয়ে জোরে বলল, হালো, রবিন হুড।
আয়্যাম রবিন হুড, আবার বলল ব্ল্যাকবিয়ার্ড আই শট অ্যান অ্যারো অ্যাজ এ টেস্ট আ হানড্রেড পেসেস শট ইট ওয়েস্ট, বলেই ডানা ঝাপটাল আবার।
হাঁ হয়ে গেছে মুসা।
কিশোরও অবাক। আস্তে বলল, মনে আছে, ডিয়েগো বলেছিল, ময়নাটা জন সিলভারের কাঁধে বসে থাকত? কাকাতুয়াগুলোকে যখন বুলি শেখাত তখনও।
হ্যাঁ, উত্তেজনায় কথা আটকে যাচ্ছে রবিনের। আরেকটা ব্যাপার সেদিন খেয়াল করিনি, ময়নাটা কিন্তু স্কারফেসের বুলি বলেছিল, আই নেভার গিভ আ সাকার অ্যান ইভন বেক…সত্যি, ময়নারা কাকাতুয়ার চেয়ে অনেক ভাল কথা শেখে কিশোর, অন্য দুটো…।
দেখি চেষ্টা করে, বেছে ভাল একটা সূর্যমুখীর বীচি নিয়ে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ঠোঁটের কাছে বাড়িয়ে ধরল কিশোর। ডাকল, হালো, শারলক হোমস। হালো, শারলক হোমস।
আগের বারের মতই সাড়া দিল ময়না। ডানা ঝাপটে বলল, ইউ নো মাই মেথডস, ওয়াটসন। থ্রি সেভেনস লীড টু থারটিন, কথায় কড়া ব্রিটিশ টান।
লিখে নাও, রবিন, নিচু গলায় বলল কিশোর। দরকার ছিল না, সে বলার আগেই লিখতে শুরু করেছে নথি-গবেষক।
ক্যাপ্টেন কিড, ময়নার ঠোঁটের ফঁাকে আরেকটা বীচি ধরিয়ে দিল কিশোর। হালো, ক্যাপ্টেন কিড।
আয়্যাম ক্যাপ্টেন কিড, জবাব দিল ময়না। লুক আনডার দা স্টোনস বিয় দা বোনস ফর দা বক্স দ্যাট হ্যাজ নো লকস।
খাইছে! কণ্ঠস্বর কিছুতেই দাবিয়ে রাখতে পারল না মুসা। এ-তো দেখি জ্যান্ত টেপ রেকর্ডার। সব মুখস্থ করে রেখেছে
আগেই আন্দাজ করা উচিত ছিল আমার, গম্ভীর হয়ে বলল কিশোর। ওই যখন, স্কারফেসের বুলি বলল…। ২ বলার নেশায় পেয়েছে যেন ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে, স্কারফেসের নাম শুনেই চেঁচিয়ে উঠল, আই নেভার গিভ আ সাকার অ্যান ইভন ৰেক! অ্যাণ্ড দ্যাটস আ লেড পাইপ সিনশ। হা-হা-হা! টেনে টেনে হাসল সে, যেন এক মহা-রসিকতা করে ফেলেছে।
কাগজের ওপর পেন্সিলের তুফান চালাচ্ছে রবিন। লেখা শেষ করে পাতাটা বাড়িয়ে দিল কিশোরের দিকে। নাও, সাতটাই হয়ে গেল।
তা হলো, মাথা কাত করল মুসা। কিন্তু আরেকটা কাজ বাকি রয়ে গেল। খুব ছোট্ট সহজ একখানা কাজ।
কি? রবিন বলল।
মেসেজগুলোর মানে বের করা। খুবই সহজ, না?
১৩
লাইব্রেরির কাজে কিছুতেই মন বসাতে পারছে না রবিন। শেষে বই গোছানো বাদ দিয়ে কোডস অ্যাণ্ড সাইফারস নাম লেখা একটা বই তাক থেকে নিয়ে টেবিলে মেলে বসল। মাথায় ঘুরছে সাতটা মেসেজ। কিন্তু বইয়ের সাহায্য নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও কিছু বুঝল না। বিরক্ত হয়ে রেখে দিল শেষে। আশা করল, এতক্ষণে হয়তো মানে বের করে ফেলেছে কিশোর।
ছুটির পর বাড়ি ফিরে কোনমতে নাকেমুখে কিছু খুঁজে দিয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল আবার।
নিরাশ হলো হেডকোয়ার্টারে ফিরে। শূন্য চোখে তার দিকে তাকাল মুসা।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। রবিনের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির জবাবে বলল, কয়েকটা ব্যাপার মোটামুটি আন্দাজ করা যাচ্ছে, বাকি কিছুই বুঝছি না। এক নম্বর ধরো, বো-পীপ তার ভেড়া হারিয়েছে, তারমানে ছবিটা হারানোর কথা বলছে, মিসেস হাইমাসেরও তাই ধারণা।
সায় জানিয়ে মাথা ঝাকাল অন্য দুজন।
কিন্তু কল অন শারলক হোমসের মানে কি? প্রশ্ন করুল রবিন।
ডেকে আনা গেলে তো ভালই হত, মুসা বলল। ভদ্রলোকের সাহায্য এখন খুব দরকার আমাদের।
বুঝতে পারছি না, মুসার রসিকতায় কান দিল না কিশোর। পাঁচ নম্বরে আবার শারলক হোমসের কথা বলা হয়েছে : ইউ নো মাই মেথডস, থ্রি সেভেনস লীড় টু থারটিন..
মাথা কাত করল ব্ল্যাকবিয়ার্ড, বলে উঠল, থ্রি সেভার্স লীড টু থারটিন।
সেভারস? মুসা ধরল শব্দটা।
সেভেনসকেই ওরকম উচ্চারণ করে অনেক ইংরেজ, বলল রবিন। তারপর, বলল, কিশোর?