উড়ে গেছে।
যাহ মিছে কথা বলছ। মুসা আর রবিনের দিকে তাকাল শোঁপা, শীতল চাহনি। তোমাদের কাছে আছে, না? খুব চালাক তোমরা।
নেই, চোখ সরিয়ে নিল রবিন। কোথায় আছে জানি না।
হাইমাসের পকেটের দিকে চোখ পড়ল শোঁপার। তাড়াহুড়ো করে রবিনের লেখা কাগজটা খুঁজে রেখেছিল হাইমাস, অনেকখানি বেরিয়ে আছে। শোঁপার দৃষ্টি অনুসরণ করে পকেটের দিকে চেয়েই সামান্য চমকে গেল সে। ঠিকই খেয়াল করল ধুরন্ধর চিত্র-চোর। হাত বাড়াল, দেখি কাগজটা? নইলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি খাদে ফেলে দেব।
মুসার হাতে কাগজটা দিল হাইমাস, মুসা দিল শেপাকে।
হুঁ, হাসিমুখে মাথা দোলাল শেপা, সাতটার মধ্যে তিনটে। বাকিগুলো কথা বলেনি, না? বলবে, বলবে। ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে দরকার। দেখি পারলে খুঁজে নেব। চলি হাইমাস, লণ্ডনে দেখা হবে।
চলে গেল সেডানটা।
ছাই হয়ে গেছে হাইমাসের চেহারা। স্টিয়ারিং খামচে ধরে গুঙিয়ে উঠল সে, পরক্ষণেই দু-হাতে চেপে ধরল পেট.। উফফ…
কি হলো, হাইম? ভুরু কোঁচকালো মিসেস। খারাপ লাগছে?
ব্যথা।…বেড়েছে…
হ্যাঁচকা টানে দরজা খুলে নেমে এল মিসেস হাইমাস। মুসা আর রবিনকে নামতে বলল। হাইমাসকেও নামাল ধরে ধরে। নিজে উঠে বসল ড্রাইভিং সীটে। তার পাশে উঠল আবার হাইমাস। মুসা আর রবিন উঠল পেছনে।
তাদের দিকে ফিরে বলল মিসেস, বেশি উত্তেজনা। অ্যাসিডিটি বেড়ে যায় ওর, আলসার আছে। গাড়ি স্টার্ট দিল, এখন সোজা হাসপাতাল। পড়ে থাকবে কয়েকদিন। স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে খাদের ধার থেকে গাড়ি সরিয়ে আনতে আনতে বলল, কাউকে কিছু বোলো না। পুলিশকে বলে কিছু হবে না। এদেশে শেপার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই পুলিশের।…তবে, তোমাদের হাজার ডলার ঠিকই পাবে, যদি ছবিটা আমাকে দিতে পারো।
ব্রেক কষল মিসেস। সামনে দু-হাত তুলে দাঁড়িয়েছে টেরিয়ার। শুনুন। আমাকে ফেলে যাবেন না, প্লীজ।
কঠিন চোখে তাকাল মিসেস হাইমাস। কুঁকড়ে গেল টেরিয়ার।
যাও, ওঠো, কড়া গলায় বলল মিসেস।
গাড়িতে উঠল টেরিয়ার।
বলল, কি হয়েছিল, গাড়ি চালাতে চালাতে বলল মিসেস হাইমাস। শোঁপা খুঁজে পেল কি করে আমাদের? তুমি কিছু করেছ।
এই শুঁটকি, সরো, গন্ধ লাগে, ঝাল মেটানোর সুযোগ পেয়ে গেছে মুসা।
থাক, মুসা, বাধা দিল মিসেস। এই, তুমি বলো। চুপ করে আছো কেন?
রকি বীচের মেইন রোডে হাঁটছিলাম, মিনমিন করে বলল টেরিয়ার। হঠাৎ পাশে এসে থামল শেপার গাড়ি। জিজ্ঞেস করল, রোলস-রয়েস চড়ে এমন তিনটে ছেলেকে চিনি কিনা। বললাম, চিনি, আড়চোখে রবিন আর মুসার দিকে তাকাল, অস্বস্তি চাপা দিতে পারছে না। শোঁপা বলল, হলুদ ঝুঁটিওয়ালা কয়েকটা কাকাতুয়া খুঁজে বের করে দিতে পারব কিনা, ওগুলো নাকি তার, চুরি হয়েছে। প্রতিটি পাখির জন্যে দেড়শো ডলার করে দেবে। বললাম, পারব। আমাকে একটা ফোন নম্বর দিয়ে সে চলে গেল।
সে-রাতে এমনি ঘুরতে গিয়েছিলাম হলিউডে, কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করলাম। ওরা সবাই জানে কাকাতুয়ার কথা, খোজাখুঁজি করছে। আমিও যোগ দিলাম। একটা কাকাতুয়া কোথায় আছে, জেনে ফেললাম। গো… ইয়ে… গোয়েন্দাদের আগেই গিয়ে হাজির হলাম। নিয়ে গেলাম। ফোন করলাম শেপাকে।
খুব খুশি হলো ও। তখন বলল, কিশোর গোয়েন্দারা নাকি কয়েকটা চোরকে সাহায্য করছে। ওদের পিছু নিতে বলল।
রোলস রয়েসের পিছু নিলাম। একটা পুরানো বাড়ির সামনে থামল গাড়িটা। কিছুক্ষণ পর দেখলাম, গোয়েন্দাদের না নিয়েই গাড়িটা চলে যাচ্ছে। একটু পর দুই গোয়েন্দা বেরোল আরেকটা কাকাতুয়া নিয়ে। তারপর আপনাদের ভ্যান এল, ওদের তুলে নিতে দেখলাম।
ভ্যানকে অনুসরণ করে দেখে এলাম কোথায় থামে। পাহাড়ের চিপা থেকে বেরিয়ে একটা ফোনবুদে গিয়ে আবার ফোন করলাম শেপাকে। ছুটে এল সে।
তারপর আর কি? তিক্ত কণ্ঠে বলল টেরিয়ার। বেঈমানী করল সে, পাঁচশো ডলার দিল না…
ঘাড়েও হাত দিল…আহারে! জিভ টাকরায় ঠেকিয়ে চুকচুক শব্দ করল মুসা।
থাক, মুসা, টেরিয়ারের করুণ দশায় দুঃখ হচ্ছে রবিনের। আর কিছু বোলো।।
একটা মোড়ে এসে গাড়ি রাখল মিসেস হাইমাস। টেরিয়ারকে বলল, আমরা এখন হাসপাতালে যাব। হেটে চলে যাও বাস স্টপেজে।
টেরিয়ার নেমে গেলে দুই গোয়েন্দাকে বলল মিসেস হাইমাস। হ্যাঁ, তোমরা কিন্তু খোজা বন্ধ কোরো না, হাজার ডলার পাবে।
১২
হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসেছে তিন গোয়েন্দা।
সারাদিন ইয়ার্ডে ব্যস্ত থেকেছে কিশোর, একা একা অনেক কাজ করেছে। রবিন আর মুসাকে আরেকটা বাস স্টপেজে নামিয়ে দিয়েছিল মিসেস হাইমাস। ওখান থেকে রকি বীচে ফিরে যার যার বাড়ি গিয়ে খেয়ে তারপর ইয়ার্ডে এসেছে।
তিনজনেই শ্রান্ত।
ওই রোলস-রয়েসই যত নষ্টের মূল, কথা শুরু করল কিশোর। ওটাই ফাঁস করে দিল দু-বার, চোরেরা আমাদের পিছু নিতে পারল। শিক্ষা হলো একটা। চট করে লোকের চোখে পড়ে এমন কোন কিছু ব্যবহার করা উচিত নয় গোয়েন্দাদের।
শুধু একথা বলার জন্যেই বসেছ? হাত ওল্টাল মুসা। সারাদিন কত কাণ্ড হলো। হাতে পেয়েও হারালাম কাকাতুয়াগুলো। কষ্ট করলাম আমরা, আর শুঁটকির বদৌলতে ওগুলো সব পেল শোঁপা।
কাকাতুয়াগুলোরও অনেক হয়রানি হচ্ছে, কিশোর বলল। আমার মনে হয়, এত সহজে শোঁপার কাছে মুখ খুলবে।
কিন্তু ও খোলাবেই, রবিন বলল। ও যে-রকম মানুষ দেখলাম, কাকাতুয়াও ওর কাছে মুখ না খুলে পারবে না।