একেবারে পিছে এসে গেছে, চেঁচিয়ে জানাল মিসেস। পাশ কাটাতে চাইছে।
আয়নায় দেখতে পাচ্ছি, বিড় বিড় করল হাইমাস। কিন্তু সাইড দেব না।
সাঁই করে রাস্তার মাঝখানে গাড়ি নিয়ে এল সে। পেছনে টায়ারের তীক্ষ্ণ চিৎকার শোনা গেল, গাল দিয়ে উঠল যেন হর্ন।
ঝাঁকুনি খেতে খেতে ছুটে চলেছে পুরানো ভ্যান, বডির বিচিত্র শব্দে আরোহীদের কান ঝালাপালা। কিন্তু উপায় নেই। গতি কমানো যাবে না। পেছনে ছায়ার মত লেগে আছে বিশাল সেডান। খালি পাশ কাটানোর চেষ্টা।
খানিকদূর নেমে ধীরে ধীরে আবার উঠে গেছে পথ। হঠাৎ যেন মাটি খুঁড়ে উদয় হলো বিশাল এক ট্রাক, পথের শেষ মাথায়। পুরো রাস্তা জুড়ে আসছে, ফাঁক খুবই সামান্য।
মস্ত এক দানব যেন ছুটে আসছে পাহাড় কাঁপিয়ে।
চিল্কার করে মাথা নুইয়ে ফেলল রবিন।
শেষ মুহূর্তে স্টিয়ারিং ঘোরাল হাইমাস, কোনমতে পাশ কাটিয়ে এল ট্রাকের। পলকের জন্যে ট্রাক-ড্রাইভারের এক জোড়া বিস্মিত চোখ নজরে পড়ল মুসার।
সেডানটাও নিরাপদেই ট্রাকের পাশ কাটাল। খানিকটা পিছিয়ে পড়ল। কিন্তু গতি বাড়িয়ে পুষিয়ে নিল আবার ফারাকটা। রাস্তার মাঝখানে ভ্যান তুলে আনার কথা যেন ভুলে গেল হাইমাস, সুযোগটা কাজে লাগাল সেডান। চলে এল ভ্যানের পাশে।
সীটের ধার, দরজার কিনার, যে যেটা পারছে খামচে ধরে সীটে বসে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে দুই গোয়েন্দা। ঝাঁকুনির চোটে বার বার সরে যাচ্ছে, পড়ে যেতে চাইছে সীট থেকে। ওই অবস্থায় থেকেই নজর দিল সেডানের ভেতর। চারজন আরোহী, তিনজন বয়স্ক, আরেকজন তরুণ। ফেকাসে চেহারা। লম্বা নাক চেপে ধরেছে জানালার কাচে, বিকৃত হয়ে গেছে চেহারা। কিন্তু তা-সত্ত্বেও চিনতে পারল দুই গোয়েন্দা।
টেরিয়ার ডয়েল।
শুঁটকি! বোম ফাটল যেন মুসার কণ্ঠে। হারামী কোথাকার।…দাঁড়াও, আগে ধরি, তারপর… আস্তিন গোটানোর জন্যে হাত সরিয়ে আনতেই খামচে ধরল জানালার কিনার।
ঢালু হয়ে গেছে আবার পথ। ভ্যানের এক পাশে একশো ফুট গভীর খাদ, আরেক পাশে সেডান। সরে আসছে পাশে, ইঞ্চি ইঞ্চি করে ভ্যানটাকে সরিয়ে দিচ্ছে খাদের দিকে। ধাক্কাধাক্কি করে সেডানের শক্তিশালী এঞ্জিনের সঙ্গে পারা যাবে না, বুঝে গেছে হাইমাস। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, না, হবে না। না থামলে খাদে ফেলে দেবে।
ব্রেক কষল সে। থেমে গেল ভ্যান, ডান পাশের চাকা দুটো খাদের কিনার থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে। বাঁ পাশে ভ্যানের একেবারে গা ঘেষে দাঁড়াল সেডান। দরজা খোলার উপায় নেই। ডান পাশের দরজা খোলা যায়, কিন্তু লাভ কি? একশো ফুট নিচে তো লাফিয়ে নামতে পারবে না।
ওদের দিকে চেয়ে মসৃণ হাসি হাসল ফরাসী লোকটা, দাঁতে চেপে রেখেছে সাগর কলার মত মোটা এক সিগার। ওটা সরিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল, এই যে, হাইমাস, দেখা হয়েই গেল। যতখানি ভেবেছিলাম তত বড় নয় আমেরিকা।
কি চাই এনথনি? ভোঁস ভেঁস করে নিঃশ্বাস ফেলছে হাইমাস, ঘামছে দরদর করে। মেরেই ফেলেছিলে।
কি যে বলো। মারব কেন? খুব বাজে ড্রাইভ করো তুমি, মাতালে ওরকম করে। এক কাজ করো খাঁচাগুলো আমার গাড়িতে তুলে দাও। টমাস, যাও তো, ভ্যানের পেছনের দরজাটা খুলে দেবে ওরা। খাঁচাগুলো নিয়ে এসো, সহজ ভঙ্গিতে কথা বলছে সে। যে কোন ব্যাপারই না এসব।
যাচ্ছি, স্যার, মনিবের মত শান্ত নয় বেঁটে ড্রাইভার, গাড়ি চালাতে হয়েছে তো, তাই বোধহয় সামান্য হাঁপিয়ে পড়েছে।
লরা, দরজা খুলে দাও, হাইমাস বলল, আর কিছু করার নেই। বাধা দিলে খাদে ফেলে দেবে।
অনিচ্ছাভরে উঠল মিসেস হাইমাস, পেছনের দরজার হুক সরিয়ে ওপরের দিকে তুলে দিল দরজা।
দুই গোয়েন্দা দেখছে টেরিকে। খুব মজা পাচ্ছে সে। হাসছে দাঁত বের করে। জোরে ঠোঁট কামড়ে ধরল মুসা। পারছে না নামতে, নইলে হাসি বের করে দিত। টেরির দাঁত ফেলে দেয়ার জন্যে হাত নিশপিশ করছে তার।
ব্যাপারটা বুঝতে পারছে টেরি। মুসাকে আরও রাগিয়ে দেয়ার জন্যে ভেঙচি কাটল। হাহ, গোয়েন্দা। চোরের সঙ্গে গিয়ে হাত মিলিয়েছে।
অনেক কষ্টে চুপ রইল মুসা আর রবিন।
খাঁচাগুলো নামাচ্ছে টমাস, শব্দ শোনা যাচ্ছে।
বস, টমাসের গলা শোনা গেল, জায়গা হচ্ছে না সবগুলো। ছেলেটাকে নামিয়ে দিলে হবে।
এই ছেলে,শোঁপা বলল। নামমা তো।
নামব? হাসি হাসি ভাবটা চলে গেল টেরির। নামব কেন? আমিই তো দেখালাম।
দেখানো শেষ হয়েছে। এবার নামো।
তর্ক শুরু করল টেরি।
টমাস, বলল শোঁপা, ছুঁড়ে ফেলে দাও তো বেয়াদবটাকে।
কুৎসিত হাসি হেসে এগিয়ে এল টমাস। টেরির ঘাড় ধরে বেড়াল-ছানার মত টেনে বের করে ফেলে দিল রাস্তায়।
উঠে বসল টেরি। বোকা হয়ে গেছে, বিশ্বাস করতে পারছে না এই ব্যবহার করা হবে তার সঙ্গে। কিন্তু আমাকে পাঁচশো ডলার পুরস্কার দেবেন বলেছিলেন।
বিল পাঠিয়ে দিয়ো তোমার বাবার কাছে। অনেক বড়লোক, আমাদের হয়ে দিয়ে দেবে, ময়লা দাঁত বের করে হেসে চোখ টিপল টমাস। সব কটা খাঁচা গাড়িতে তুলল। বস, একটা কম। কালো পাখিটা নেই।
নেই? জানালা দিয়ে মুখ বের করল শেপা। হাইমাস? ব্ল্যাকবিয়ার্ড কোথায়? সাতটা পাখিই তো লাগবে।
ও, আমার ঘরে ঢুকেছিলে তুমিই? কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক হচ্ছে না হাইমাসের। জেনেছ সবাই। চোর কোথাকার।
ব্ল্যাকবিয়ার্ড কোথায়? হাসি সামান্যতম মলিন হলো না শোঁপার। সাতটাই লাগবে।