ভাল পয়েন্ট মনে করেছেন, বলল রবিন, খসখস করে লিখে চলেছে নোটবুকে। নইলে উল্টোপাল্টা লিখতাম, ধাধার সমাধান হয়তো হত না।
লিখে এক টানে ফড়াত করে ছিড়ে কাগজটা হাইমাসকে দেখাল রবিন। লিখেছে :
স্যাপ্টেন লঙ জন সিলভারের মেসেজ (অসম্পূর্ণ)
১। লিটল বো-পীপ : লিটল বো-পীপ হ্যাজ লস্ট হার শীপ অ্যাণ্ড ডাজ নো হোয়্যার টু ফাইণ্ড ইট। কল অন শারলক হোমস।
২। বিলি শেকসপীয়ার : টু বি অর নট টু বি, দ্যাট ইজ দা কোয়েশচেন।
৩। ব্ল্যাকবিয়ার্ড : আয়্যাম ব্ল্যাকবিয়ার্ড দা পাইরেট, অ্যাণ্ড আহ্যাভ বারিড মাই ট্রেজার হোয়্যার ডেড ম্যান গার্ড ইট এভার। ইয়ো-হো-হো অ্যান্ড অ্যা বটল অভ রাম।
৪। রবিন হুড : ?
৫। শারলক হোমস : ?
৬। ক্যাপ্টেন কিড : ?
৭। ক্ষারফেস : আই নেভার গিভ আ সাকার অ্যান ইন ব্রেক।
তাহলে, রবিন বলল, সাতটার মাঝে চারটা মেসেজই জেনে গেলাম। ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে যে পেয়েছে তিন গোয়েন্দা, সেকথা হাইমাস দম্পতিকে জানানোর ইচ্ছে নেই। ব্ল্যাকবিয়ার্ডের বুলি শুনেছি, স্যানটিনোর ভাতিজা ডিয়েগোর কাছে।
হতাশায় চোখের দু-ধারে ভাজ পড়ল হাইমাসের। কিছু বোঝা যায় না…কিচ্ছু না।
হাইম, স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর মেজাজ অনেক ঠাণ্ডা, বুদ্ধিও রাখে, এত ভেঙে পড়ছ কেন? দেখিই না চেষ্টা করে। প্রথম কাকাতুয়াটার কথাই ধরি, বো-পীপ তার ভেড়া হারিয়েছে বলছে। ধরে নেয়া যায়, ছবিটার কথা বলছে। ওটাও তো একরকম হারানোই আছে এখন। কোথায় আছে জানে না, তারমানে আমরা জানি না।
বেশ, হলো, বলল হাইমাস। কিন্তু শারলক হোমসকে ডাকার মানে কি?
বুঝতে পারছি না। এবার দু-নম্বরটার কথা ধরা যাক। বিলি শেকসপীয়ার বলে, টু বি অর নট টু বি…
ও ভাবে বলে না, তোতলায়, ফাঁস করে দিল মুসা।
তোতলায়! কাকাতুয়া? আঁতকে উঠেছে হাইমাস। না, আর হলো না। এ রহস্যের সমাধান আমার কাজ নয়। গোঙাতে শুরু করল সে। লরা, পেটটা চিনচিন করছে আবার।
কতবার বলেছি, উত্তেজিত হয়ো না, উদ্বিগ্ন হলো মিসেস।
ডাক্তারও তো বারণ করেছে। একটা ছবির জন্যে মিছেমিছি…হ্যাঁ, যা বলছিলাম, দুই নম্বর মেসেজ কিছুই বুঝছি না। তিন নম্বরে বোধহয় বোঝাতে চাইছে, কোন এলাকায় লুকানো রয়েছে ছবিটা।
হোয়্যার ডেড ম্যান গার্ড ইট এভার, এক হাতে পেট চেপে ধরে আরেক হাতে কপালের ঘাম মুছল হাইমাস। কোন জলদস্যুর দ্বীপ মনে হচ্ছে। জলদস্যু
আর গুপধনের গল্প দারুণ ভালবাসত জন সিলভার।
হ্যাঁ, জলদস্যুর দ্বীপের মতই শোনায়, একমত হলো মিসেস হাইমাস। ভালমত ভাবতে হবে।
কিন্তু ওই সাত নম্বরটা কি? ভুরু নাচাল হাইমাস। একটা আমেরিকান স্নাঙ, শুনে মনে হয় এক ডাকাত আরেক ডাকাতকে তার ন্যায্য পাওনা কিংবা অধিকার দিতে চাইছে না। কিংবা কোন সমঝোতায় আসতে চাইছে না। এর একটাই মানে, আপনাদের পাওনা দেয়ার ইচ্ছে নেই সিলভারের, আমাদের সঙ্গে কোন চুক্তিতে আসতে রাজি নয়।
বাকি তিনটে মেসেজ পেলে হয়তো কিছু বোঝা যাবে, বলল মিসেস। ওগুলো ছাড়া হবে না।
এক কাজ করলে হয়, আঙুলে চুটকি বাজাল রবিন।
কী? এক সঙ্গে প্রশ্ন করল মিস্টার আর মিসেস।
রবিন হুড, শারলক হোমস আর ক্যাপ্টেন কিড তো আছেই। ওদের দিয়ে কথা বলালে হয়। তারপর সঙ্কেতের মানে বের করে ফেলতে পারবে কিশোর।
কিন্তু কথা তো বলে না, মুখ গোমড়া হয়ে গেল হাইমাসের। ওই দেখো না, কেমন চুপ করে আছে? চেঁ-টোও করছে না।
স্যানটিনো হয়তো বলাতে পারবে, বলল মুসা। তিন হপ্তা কাকাতুয়াগুলোকে পুষেছে, তাকে ওরা চেনে। আমার মনে হয় ও চেষ্টা করলে পারবেই।
ঠিক বলেছ, লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল হাইমাস, দুলে উঠল জালার মত পেট, স্যানটিনো পারবে। চলো, এক্ষুণি।
১১
ছুটে চলেছে ভ্যান।
সামনের সীটে হাইমাসের পাশে বসেছে রবিন আর মুসা।
পেছনে মিসেস হাইমাস। তার মাথার ওপরে ভ্যানের ছাতের রডে ঝুলছে পাঁচটা খাঁচা।
হাইমাস যেখানে নতুন বাসা নিয়েছে, তার থেকে অনেক দূরে স্যানটিনোর গ্রাম, উপকূলের ধারের সমভূমিতে। পৌঁছতে বিকেল হয়ে যাবে।
আঁকাবাঁকা নির্জন পাহাড়ী পথ ধরে ছুটছে গাড়ি।
হঠাৎ শোনা গেল মিসেসের উত্তেজিত কণ্ঠ, হাইম, একটা গাড়ি! পিছু নিয়েছে।
গাড়ি? রিয়ার-ভিউ মিররে তাকাল হাইমাস। কই?।
মোড়ের ওধারে…ওই যে বেরোচ্ছে: কোয়ার্টার মাইল দূরে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, দেখছি। সেডান পিছু নিয়েছে, কি করে বুঝলে?
তাই তো মনে হচ্ছে?
কি রঙ? ধূসর? উত্তেজিত হয়ে বলল মুসা। কই, দেখি তো?
তার পাশের মিররে দেখা যাচ্ছে না গাড়িটা, পেছন দিকে উঁকি-ঝুঁকি দিয়েও কিছু দেখল না। শেষে কেবিনের দরজা খুলে শক্ত করে তার হাত ধরতে বলল রবিনকে। দরজা দিয়ে বের করে দিল শরীরের অর্ধেকটা। কই…ও, হ্যাঁ, দেখেছি। সেদিন ওই গাড়িটাই দেখেছিলাম, ধাক্কা লাগিয়ে দিচ্ছিল।
শোঁপা! গুঙিয়ে উঠল হাইমাস। কি করি এখন?
চালিয়ে যাও, তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে মিসেসের কণ্ঠ, সামনের শহরটায় ঢোকার আগে ধরতে দেবে না।
কিন্তু মাইল পঁচেকের ভেতর তো কোন শহর নেই। খালি পাহাড় আর পাহাড়। অ্যাক্সিলারেটর টিপে ধরল সে, যতখানি গেল। প্রচণ্ড গোঁ গোঁ করে প্রতিবাদ জানাল পুরানো এঞ্জিন, ঝনঝন করে কাপছে ঝরঝরে বডি, বিপজ্জনক গতিতে ছুটল পাহাড়ী পথ ধরে।
টায়ারের কর্কশ আর্তনাদ তুলে বাঁক ঘুরল গাড়ি। এক ধারে হালকা লোহার বেড়া, জোরে ধাক্কা লাগলে ঠেকাতে পারবে না, উড়ে গিয়ে পাঁচশো ফুট নিচের খাদে পড়বে গাড়ি। জোরে মোড় নিতে গিয়ে বেড়ার সঙ্গে নাক ছুঁই-ছুঁই হয়ে গেল ভ্যানের, দম বন্ধ করে ফেলল দুই গোয়েন্দা। কিন্তু সময়মত সরিয়ে আনল হাইমাস।