সে-কথা মনে করে রবিনও হেসে ফেলল।
পরিবেশ সহজ হলো অনেকটা। মিস্টার আর মিসেস হাইমাসও হাসল।
এসব করেই জটিলতা আরও বাড়িয়েছেন আপনি, বলল রবিন। খোঁচা মেরে জাগিয়ে দিয়েছেন কিশোর পাশাকে। ব্যাস, লেগে গেছে পেছনে। ও একবার যেটার পেছনে লাগে শেষ না দেখে ছাড়ে না।
মুসা, তোমার খুলি ভীষণ শক্ত, এমনভাবে ভূঁড়িতে হাত ডলল হাইমাস, যেন ব্যথাটা এখনও রয়েছে।
কেন হয়েছে, জানেন? ব্যাখ্যা করল মুসা। পড়া না পারলে মা খালি গাট্টা মারত মাথায়। কত আর সওয়া যায়? একদিন টেলিভিশনে দেখলাম, জুডো-কারাতে শেখানোর আগে বালির বস্তায় ঘুসি মেরে, ইটে কোপ মেরে হাত শক্ত করে ছাত্ররা। চট করে বুদ্ধি এল মাথায়। সেদিন থেকেই লেগে গেলাম, হাত নয়, মাথা শক্ত করতে। দেয়ালে বাড়ি মেরে মেরে কপাল-মাথা ফুলিয়ে ফেলেছি কতদিন। তাআরপর একদিন, হাসিতে বিকশিত হল ঝকঝকে সাদা দাঁত, পড়তে বসে ইচ্ছে করেই ভুল করতে লাগলাম। কষে এক গাট্টা মারল মা।…হি-হি…পুরো এক কৌটা বাতের মলম শেষ করেছে বাবা, মায়ের আঙুলে ডলে।
হো-হো করে হেসে উঠল মিস্টার আর মিসেস। ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল যেন হাইমাসের ছোটখাট পাহাড়টা।
যাই হোক, আবার কাজের কথায় এল হাইমাস, তোমরা পিছু লাগলে। শোঁপা তো আগে থেকেই আছে, লুকিয়ে পড়তে হলো আমাকে। রেঞ্জারটা লুকিয়ে ভ্যানটা ভাড়া নিতে হলো। আজ সকালে কাকাতুয়া খুঁজতে বেরিয়ে তোমাদের রোলস রয়েসটা নজরে পড়ল। কৌতূহল হলো। পিছু নিলাম।
একটা বাড়ির কাছে গাড়ি রেখে নামলে তোমরা। লুকিয়ে তোমাদের ওপর চোখ রাখলাম। লম্বা একটা ছেলের সঙ্গে দেখা হলো তোমাদের।
শুঁটকি টেরি, বলল মুসা। আমাদের শত্রু। পারে না তো কচুটাও করতে, খালি ঘাপলা বাধায়।
ওর হাতে একটা খাঁচা, বলে গেল হাইমাস, তাতে একটা কাকাতুয়া। নীল স্পোর্টস কারে চড়ে চলে গেল পাখিটা নিয়ে। ভেবেছিলাম, পিছু নিই। পরে ভাবলাম, গাড়ির নম্বর তো জানাই রইল, খুঁজে বের করে ফেলব। তোমরা কি করো, দেখতে লাগলাম। থামল এক মুহূর্তের জন্যে। তাছাড়া আরও একটা কারণে তার পিছু নেয়ার দরকার মনে করিনি। কানা কাকাতুয়াটা কি বলেছে, শুনে। ফেলেছি।
কি? নোটবই বের করল রবিন।
হাইমাসও নোটবই বের করল। বলেছে, আই নেভার গিভ আ সাকার অ্যান ইভন ব্রেক।
গালি, বিড়বিড় করল মুসা।
গালি ঠিক নয়, একটা পুরানো স্ল্যাঙ। তবে সঙ্কেত হিসেবে খুবই কঠিন। কি বোঝাতে চেয়েছে সিলভার, সে-ই জানে।
সাতটা পাখির বুলি এক করে ভাবলে হয়তো কিছু বোঝা যাবে, রবিন বলল।
সেটাই তো হলো সমস্যা, মুখ বাকাল হাইমাস। সাতটার মাঝে পাচটা পেয়ে গেছি, বাকি রয়েছে শুধু স্কারফেস আর ব্ল্যাকবিয়ার্ড। স্কারফেসের বুলিও জানি। কিন্তু, সেটা সহ জানা হয়েছে মাত্র তিনটে।
তিনটে কেন? জিজ্ঞেস করল রবিন। ছ-টা তো হওয়ার কথা।
কথা, কিন্তু হয়েছে তিনটে, বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল হাইমাস। কথা বলেছে শুধু বিলি আর বো-পীপ। বাকিগুলো একেবারে চুপ। টু শব্দও করে না। কি বুলি জানে, কি জানি!
১০
মুখ ফিরিয়ে খাঁচাগুলোর দিকে তাকাল দুই গোয়েন্দা। চুপ করে বসে আছে। পাখিগুলো, যেন প্রাণ নেই। নড়ছেও না। কথা বলার মুড যে নেই বোঝাই যাচ্ছে।
খাঁচার দিকে চেয়ে মেজাজ আবার খারাপ হয়ে গেল হাইমাসের। লাফিয়ে উঠে গটমট করে গিয়ে দাঁড়াল টেবিলের কাছে। গর্জে উঠল, বল, হারামজাদারা। জলদি বল সিলভার কি শিখিয়েছে? এই, শুনছিস? বলবি?
ভয় পেয়ে আরও দূরে সরার চেষ্টা করল কাকাতুয়াগুলো, খাঁচার কোণে জড়সড় হয়ে রইল।
এই রকমই করে, জানাল মিসেস হাইমাস। প্রথম পাখিটা আনার পর থেকেই খালি ধমকাচ্ছে। কোনোটাকে বাদ দিচ্ছে না।
এ-কারণেই মুখ খুলছে না ওরা, হয়তো, রবিন বলল। খুব নাজুক স্বভাব। জোরে কোন শব্দ করলে, কিংবা জায়গা বদলালে চুপ হয়ে যায়।
ফিরে এসে ধপাস করে সোফায় গড়িয়ে পড়ল পাহাড়। আর ধৈর্য নেই! গুঙিয়ে উঠল হাইমাস। এভাবে আর কত? ওদিকে পিছে লেগেছে শেপা। যখনতখন এসে হাজির হতে পারে। সাংঘাতিক লোক।
তাহলে বসে আছো কেন, বাপু? টাকার লোভ ছেড়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও না, তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়, কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করল মুসার। বলল, কয়েকটা বুলি বা মেসেজও বলা যায়, জানি আমরা। কিন্তু মাথামুণ্ড কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। তবে, আমরা আপনার কাছে যা যা জানলাম, কিশোরকে জানালে হয়তো উপায় একটা করে ফেলতে পারবে।
এক কাজ করি না কেন? পরামর্শ দিল রবিন। যে কটা মেসেজ জানি, লিখে ফেলি কাগজে। তারপর দেখি, কোন মানে বের করা যায় কিনা।
ভাল কথা বলেছ, তর্জনী নাচাল মিসেস হাইমাস। স্বামীকে বলল, তোমাকে সেদিনই বলেছি, ছেলেগুলো চালাক। ওদের সঙ্গে কথা বলো।
তা বলেছ। কিন্তু কতখানি দুশ্চিন্তায় রয়েছি:.
রাখো তোমার দুশ্চিন্তা, মুখ ঝামটা দিল মিসেস। এক কথা শুনতে শুনতে কান পচে গেল। রবিন, আমি একটা প্রস্তাব দিচ্ছি। ভেবে দেখো। ছবিটা যদি বের করে দিতে পারো, এক হাজার ডলার পুরস্কার দেব।
খাইছে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। এই রবিন, দেরি করছ কেন? শুরু করে দাও।
দাঁড়াও, হাত তুলল হাইমাস, আরেকটা কথা মনে পড়েছে। চিঠিতে সিলভার লিখেছিল, সাত ভাগে ভাগ করেছে সে মেসেজটা। সিরিয়ালি সাজিয়েছে। এভাবে ও লিটল বো-পীপ এক নম্বর, দুই-বিলি শেকসপীয়ার, তিনব্ল্যাকবিয়ার্ড, চার-রবিন হুড, পাঁচ-শারলক হোমস, ছয়-ক্যাপ্টেন কিড, এবং সাত–স্কারফেস।