সেগুলো ছাপা কপি, রবিন বলল। নিউ ইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অভ আর্ট যাদুঘরের নাম শুনেছ? বিখ্যাত ডাচ চিত্রকর রেমব্রান্ত-এর একটা ছবি বিশ লাখ ডলারে কিনেছে ওরা। কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলোর আসল মূল্যের চেয়ে অ্যানটিক মূল্য বেশি।
মারছে! চোখ কপালে উঠল মুসার। একটা ছবির জন্যে বিশ লাখ ডলার। কত রকমের পাগল যে আছে দুনিয়ায়।
হ্যাঁ, তারপর কি হলো শোননা, থেমে গেল হাইমাস। খাবারের ট্রে নিয়ে এসেছে তার স্ত্রী। বড় প্লেটে কয়েকটা স্যাণ্ডউইচ, দুই গ্লাস দুধ আর দুই কাপ কফি। টেবিলে নামিয়ে রাখল।
যার যার খাবার তুলে নিয়ে খেতে শুরু করল সবাই।
স্যাণ্ডউইচ শেষ করে কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল হাইমাস, হা, সিলভার বলল, যেহেতু সে তখন চাকরিতে নেই, ছবিটার মালিক সে। বললাম, চাকরিতে থাকার সময় আমার টাকায় কিনেছে, কাজেই ছবির মালিক আমি। অনেক তর্কাতর্কির পর আধাআধি বখরা অফার করল আমাকে।
ভালই তো প্রস্তাব, দুধের শূন্য গেলাসটা নামিয়ে রাখল মুসা। হাজার হোক, ছবিটা তো সে-ই খুঁজে পেয়েছে।
কিন্তু আমাকে ধরল ভূতে, আফসোসের সুরে বলল হাইমাস, তাতেও রাজি হলাম না। পুলিশের ভয় দেখালাম তাকে। রুখতে পারলাম না, ছবিটা নিয়ে পালাল। থানায় ডায়েরী করে তার নামে ওয়ারেন্ট বের করলাম। কিন্তু একেবারে গায়েব হয়ে গেল। পরে জানা গেল, একটা মালবাহী জাহাজে করে ইংল্যান্ড থেকে বেরিয়ে গেছে সে। সঙ্গে করে নিয়ে গেছে দামী মেষপালক।
দোষ তো তোমারই, বলল মিসেস হাইমাস।
হ্যাঁ, আমারই দোষ। ছেলেদের দিকে ফিরে বলল হাইমাস, দেশ-বিদেশের চেনা সমস্ত চিত্ৰব্যবসায়ীকে জানিয়ে দিলাম ছবিটার কথা। চোখ খোলা রাখতে অনুরোধ করলাম। কিন্তু বাতাসে মিলিয়ে গেল যেন সিলভার। ক্যালিফোরনিয়ায় এসে লুকিয়ে রইল।
হ্যাঁ, বলল রবিন, মিস্টার স্যানটিনোর বাড়িতে। সঙ্গে একটা ধাতুর বাক্স ছিল। রোজ রাতে নাকি খুলে দেখত আর বলত, আহা, কি সুন্দর রামধনুর টুকরো, নিচে একপাত্র সোনা।
একেবারে নিখুঁত বর্ণনা, সায় দিল হাইমাস। রামধনুর সাতরঙেই আঁকা হয়েছে ছবিটা। সোনার চেয়েও দামী। হ্যাঁ, তারপর হঠাৎ একদিন সিলভারের লম্বা এক চিঠি এসে হাজির আমার অফিসে। লিখেছে, ছবিটা নিরাপদেই আছে, লুকানো। সেটা বের করতে হলে একটা ধাধার রহস্য সমাধান করতে হবে। আরেক রসিকতা। আমার মনের ওপর অত্যাচার, এটা তার প্রতিশোধ।
চিঠিতে জানিয়েছে সে, ছয়টা কাকাতুয়া আর একটা ময়নাকে বুলি শিখিয়েছে, তাতেই রয়েছে ধাধার সমাধান। আমেরিকায় এসে স্যানটিনো নামের এক লোককে এক হাজার ডলার দিয়ে তার কাছ থেকে কিনে নিতে হবে পাখিগুলো। হলদে ঝুঁটি কাকাতুয়া বাছাই করেছে সে, কেন, তা-ও জানিয়েছে। ওই যে, মূল-ছবির ওপর ওই রঙের কাকাতুয়াই আঁকা ছিল, আর তাই নিয়ে আমার সঙ্গে ঝগড়া।
কিছু মনে করবেন না, নরম গলায় বলল মুসা, ঠিকই করেছে সিলভার। আপনি তার সঙ্গে যেরকম দুর্ব্যবহার করেছেন…
ঠিকই বলেছ, খুব শান্তভাবেই স্বীকার করল হাইমাস। তবে এত কষ্ট হত না। আমার। এটাকে দুর্ভাগ্য বলতে পারো, চিঠিটা যখন পৌঁছল, আমি তখন নেই। জরুরী একটা ব্যবসার কাজে জাপানে গেছি। ফিরতে দেরি হয়ে গেল। এসে চিঠি পেয়ে তো চমকে গেলাম, সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এলাম আমেরিকায়। কিন্তু ততদিনে পাখিগুলো বিক্রি করে দিয়েছে স্যানটিনো।
ওই বেচারার সঙ্গেও কম দুর্ব্যবহার করেননি আপনি, কায়দামত ঝাল ঝাড়ছে মুসা।
হ্যাঁ, আগেই বলেছি, এ-জন্যে দায়ী আমার বদমেজাজ। তাছাড়া, কিভাবে জানি শুনে ফেলেছে শোঁপা, আমার পিছু নিয়েছে, সেটা আরেক দুশ্চিন্তা। মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনি। ব্যাটা যে কিভাবে শুনল, কে জানে। হয়তো অফিসে লোকের সামনে খোলাখুলি কিছু বলে ফেলেছিলাম, ঘুষখোর কর্মচারীর তো অভাব নেই।
হ্যাঁ, শেপাকে নিয়ে ভয়ই, মাথা দোলাল মিসেস হাইমাস। গন্ধ যখন পেয়েছে, সহজে ছাড়বে না।
হ্যাঁ, যা বলছিলাম, আবার শুরু করল হাইমাস, স্যানটিনোকে অনেক রকমে জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু কোথায় পাখিগুলো বিক্রি করেছে সঠিক বলতে পারল না। মোটামুটি ধারণা দিতে পারল শুধু। লোকের দ্বারে দ্বারে ফকিরের মত ঘুরলাম কয়েকদিন। চারটে পাখি জোগাড় করলাম, তোমরা বের করলে আরও দুটো।
চারটেই চুরি করেছেন? জিজ্ঞেস করল মুসা।
না, দুটো। আর দুটো ডবল দামে কিনেছি। মিস্টার ফোর্ড আর মিসেস বোরো বেচতে রাজি হলো না, তাই চুরি করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। ও হ্যাঁ, ফোর্ডের কাছেই লিটল বো-পীপ আর ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কথা শুনেছি।
এত বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম, যে কি বলব। কোনরকম ভাবনা চিন্তা না করে গিয়ে মিসেস বোরোর বাড়িতে ঢুকলাম। খালি বাড়ি, চুরি করলাম কাকাতুয়াটা। বেরিয়ে আসছি, এই সময় দুই কিশোরকে ঢুকতে দেখলাম। তুমি একজন, মুসার দিকে আঙুল তুলল হাইমাস।
হ্যাঁ, সঙ্গে কিশোর ছিল, মুসা বলল। টালি ছুঁড়ে আরেকটু হলেই দিয়েছিলেন তো আমার মাথা ফাটিয়ে।
ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম, কপাল ডলল হাইমাস।
ভয়? কিশোর আমাকে ধাক্কা দিয়ে না ফেললে তো গেছিলাম। মেরেছিলাম যাতে তোমার আশেপাশে পড়ে, কিন্তু নিশানা ফসকে…
হেসে ফেলল মুসা। নিশানা ফসকে লাগতে যাচ্ছিল। আমারও হয় ওরকম, এয়ারগান দিয়ে শিকারের সময়। একবার একটা ঘুঘুকে সই করে মারলাম, তিন হাত দূরের আরেকটা পড়ে গেল। হা হা…