ওই ছেলেটার কাছেই তোমাদের নম্বর পেয়েছি, জানাল হাইমাসের স্ত্রী। তোমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিলাম, হাইমাসের ব্যাপারে নাক গলাতে মানা করেছিলাম।
রেগে গেলে আমার মেজাজ ঠিক থাকে না, সামলাতে পারি না নিজেকে, স্বীকার করল হাইমাস। লোকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বসি। তোমাদের সঙ্গেও করেছি। এতখানি অবশ্য করতাম না, যদি না ভাবতাম শোঁপার সঙ্গে তোমরা হাত মিলিয়েছ।
হাতের ছুরিটার দিকে চোখ পড়ল তার, সরিয়ে রাখল তাড়াতাড়ি। লজ্জিত হেসে বলল, ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম, আর কিছু না। এত বেশি দুশ্চিন্তায় আছি…
যা হয়ে গেছে, গেছে, বাধা দিয়ে বলল তার স্ত্রী। এক কাজ করো না কেন? ওদের সাহায্য চাও। বুদ্ধিসুদ্ধি আছে ওদের, বোঝাই যায়। তুমি যা পারোনি তাই ওরা করেছে। স্কারফেস আর রবিন হুডকে খুঁজে বের করেছে।
ঠিকই বলেছ, তোয়ালের সমান এক রুমাল বের করে থলথলে গালের ঘাম মুহল হাইমাস। সত্যিই আমি লজ্জিত, সরি। বদমেজাজী লোককে কেন লোকে পছন্দ করে না, বুঝতে পারছি।
দৃষ্টি বিনিময় করল দুই গোয়েন্দা। থাক থাক, ভুল হয়েই থাকে মানুষের, হাত তুলল রবিন।
আমরা বয়েসে অনেক ছোট, আমাদের কথা বাদ দিন। কিন্তু মিস্টার ফোর্ড আর মিসেস বোরোর কাছে গিয়ে মাপ চাওয়া উচিত আপনার। তাদের কাকাতুয়া চুরি করেছেন, মিস্টার ফোর্ডকে তো হাত-পা বেঁধে ফেলে এসেছিলেন। যদি আমরা না যেতাম, কি অবস্থা হত?
না, কিছু হত না, আরেক দিকে চেয়ে বলল হাইমাস। তোমরা না গেলে পরে এক সময় গিয়ে খুলে দিয়ে আসতাম। তবে হ্যাঁ, মাপ চাওয়া উচিত, ঠিকই বলেছ।
কাকাতুয়াগুলো চুরি করলেন কেন?
না করে উপায় ছিল না। জন সিলভারের লুকানো গুপ্তধনের চাবিকাঠি রেখে গেছে সে কাকাতুয়াগুলোর কাছে।
কিশোর এটাই সন্দেহ করছে, হঠাৎ বুঝে ফেলল রবিন। মিস্টার হাইমাস, বলল সে, কাকাতুয়াগুলোর বুলিতে রয়েছে সঙ্কেত। সাতটা বুলি মিলিয়ে বুঝতে
হবে কোথায় রয়েছে গুপ্তধন।
বুদ্ধিমান ছেলে, বলল হাইমাস। ঠিক ধরেছ। আমার সঙ্গে তিক্ত রসিকতা করেছে জন সিলভার। আসলে এক ধরনের প্রতিশোধ। কাকাতুয়াকে বুলি শিখিয়ে গেছে, তাতে রয়েছে গুপ্তধনের সঙ্কেত, সেই সঙ্কেত বুঝে তারপর খুঁজে বের করতে হবে আমার। তার স্বভাবই ছিল এটা। অসাধারণ বুদ্ধিমান ছিল সিলভার, এবং পাগল।
হাইম, বলে উঠল মিসেস হাইমাস, খালি কথা বললে পেট ভরবে? কিছু খেতেটেতে হবে না? সেই কখন খেয়েছি…যাই, কয়েকটা স্যাণ্ডউইচ বানিয়ে আনি।
খাবারের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মোচড় দিয়ে উঠল মুসার পাকস্থলী। অবাক হয়ে ভাবল, এতক্ষণ ভুলে ছিল কি করে? রবিনেরও খিদে পেয়েছ। উত্তেজনার কারণেই ভুলে ছিল।
মিসেস হাইমাস রান্নাঘরে চলে গেল।
ইংল্যাণ্ডে থাকতেই মিস্টার সিলভারকে চিনতেন? জিজ্ঞেস করল রবিন।
হ্যাঁ, দুবছর ধরে। আমার কর্মচারী ছিল। রেয়ার আর্ট কেনাবেচার কাজে সাহায্য করত। লণ্ডনে। উচ্চ শিক্ষিত লোক, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমান। তবে অদ্ভুত রসবোধ ছিল, আর এ-কারণেই কোন চাকরিতে বেশি দিন টিকতে পারত না, গুণ থাকা সত্ত্বেও। শেষে তো এমন অবস্থা হলো, কেউ আর চাকরি দিতে চায় না। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ধাধা আর জোক পাঠিয়ে কোনমতে দু-বেলা দুমুঠো জোগাড় করত।
এই সময়ই একদিন চাকরির জন্যে এল আমার কাছে। সাহিত্য আর শিল্প সম্পর্কে তার জ্ঞানের বহর দেখে সত্যি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তার দুর্নাম আমার কানেও এসেছিল, তবু চাকরি দিলাম। বুঝেছিলাম, খুব কাজে লাগবে।
ভালই কাজ চালাচ্ছিল, ছোটখাট রসিকতা করে মাঝেমাঝে জালাত অবশ্য। তবে সহ্য করে নিচ্ছিলাম। যাই হোক, একদিন একটা ছবি কিনে নিয়ে এল। অতি সাধারণ ছবি, হলদে ঝুঁটিওয়ালা দুটো কাকাতুয়া গাছের ডালে বসে আছে। অনেক বেশি দাম দিয়ে বাজে একটা জিনিস নিয়ে আসায় রাগ হয়েছিল খুব, বকে ছিলাম। চুপ করে রইল সিলভার। ভাবলাম, ওটাও আরেক রসিকতা। গেলাম রেগে, মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে দিলাম চাকরি থেকে বরখাস্ত করে।
জন সিলভার কিন্তু তার আসল নাম নয়, তবু ওই নামেই ডাকা হোক, এটা চাইত। নিজের নাম নিয়েও রসিকতা, পাগল আর কাকে বলে? অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে সে বলল, ওটা ডাবল পেইন্টিং। ডাবল পেইন্টিং মানে, রঙ লেপে মূল ছবিটাকে ঢেকে দিয়ে তার ওপর আরেকটা ছবি আঁকা। বিখ্যাত চিত্রকর্ম লুকিয়ে রাখার জন্যে কখনও কখনও করা হয় এটা। আমি তার কথা বিশ্বাস করলাম না। কিন্তু জোর গলায় বলে গেল সে, সেটা প্রমাণ করে দেখাবে। করলও তাই। চুপ করল হাইমাস।
আগ্রহে সামনে ঝুঁকে এসেছে রবিন আর মুসা, রোমাঞ্চকর এক গল্প শুনছে যেন।
হ্যাঁ, সত্যি সত্যি প্রমাণ করল সে। ওপরের ছবিটা মুছে ফেলল। বেরিয়ে পড়ল এক অসামান্য চিত্রকর্ম। একটা ভেড়ার বাচ্চাকে আদর করছে এক মেষপালক। আমাকে দেখাতে নিয়ে এল।
এক নজর দেখেই বুঝলাম কি ভুল করেছি তাকে তাড়িয়ে দিয়ে। এক মস্ত শিল্পীর আঁকা ওই ছবি নিখোঁজ ছিল অনেক দিন, কেন নিখোঁজ ছিল তখন বুঝতে পারলাম। চোরের ভয়ে ডাবল পেইন্ট করে ফেলা হয়েছিল। ছোট্ট ছবি, কিন্তু দাম অনেক। পাঁচ সাত-লাখ ডলারের কম নয়।
খাইছে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। একটা ছবির এত দাম? এক ডলারেই তো ফ্রেমসহ পাওয়া যায় কত ছবি।