খাঁচার ভেতরে একটা কাকাতুয়া। হলদে ঝুঁটি। এক চোখ কানা, ভয়ানক কোন লড়াইয়ে স্বজাতির ঠোঁট কিংবা নখের আঘাতে হারিয়েছে বোধহয় চোখটা।
কাকাতুয়া? বিস্ময় চেপে রাখতে পারল না মুসা। বলেই ফেলছিল, এটার জন্যেই এসেছে।
কিন্তু তাড়াতাড়ি বাধা দিল রবিন। কাকাতুয়া? ওই কানা পাখি আমাদের কি কাজে লাগবে, মিস্টার শুঁটকি?
কিন্তু ধাপ্পাটা কোন কাজে লাগল না। টেরি জানে, এটার জন্যেই এসেছে রবিন আর মুসা।
গতরাতে এসেই শুনল্লাম কাকাতুয়ার খবর, হেসে মুসার দিকে চেয়ে চোখ টিপল টেরি, রাগানোর জন্যে। তা কালু মিয়া কাকাতুয়া দিয়ে কি করবে? ভেজে খাবে?
শুঁটকির ভর্তা বানিয়ে খাব, রেগে গেল মুসা।
হা-হা করে হাসল টেরি। দারুণ বলেছ হে কালু মিয়া। বুদ্ধি খুলছে আজকাল। তো তোমাদের খোকা শারলক কই? কাকাতুয়ার খবর চেয়েছে কেন?
শার্টের হাতা গোটাতে শুরু করল মুসা।
হাত চেপে ধরল রবিন। টেরিকে জিজ্ঞেস করল, তুমি খবর পেলে কি করে?
এটা একটা প্রশ্ন হলো নাকি? আমেরিকার সব ছেলেই তো জানে, দুটো কাকাতুয়ার খোঁজ চায় শারলক পাশা। আমিও শুনলাম বন্ধুদের কাছে। তাই সকাল সকালই চলে এসেছি। চল্লিশ ডলারে কিনেছি এটা। নেবে নাকি? দেড়শো ডলার লাগবে।
এক আধলা দিয়েও নেব না আমরা, জবাব দিল রবিন। ওই কাতুয়া চাইনি আমরা, কানা কাকাতুয়া।
তাই নাকি? তাহলে অযথা সময় নষ্ট করছি। আরেক কাস্টোমার আগেই বলে রেখেছে আমাকে। পুরো দেড়শো দেবে। চলি, বাই-বাই। পা বাড়াল টেরি।
আই নেভার গিভ আ সাকার অ্যান ইভন ব্রেক! হঠাৎ কর্কশ গলায় বলে উঠল কাকাতুয়াটা।
অবাক হয়ে পাখিটার দিকে তাকাল টেরি। ভাবল, বকাটা তাকেই দিয়েছে। রেগে গিয়ে ধমক লাগাল, শাটাপ! গটমট করে হেঁটে গেল গাড়িবারান্দার এক দিকে। এঞ্জিন স্টার্ট নিল। শাঁ করে ঝোপের ওপাশ থেকে বেরিয়ে এল নীল একটা স্পোর্টস কার, চালিয়ে নিয়ে চলে গেল টেরি।
শুঁটকি কার কাছে বেচবে? রবিনকে জিজ্ঞেস করল মুসা। হাইমাস?
জবাব দিতে পারল না রবিন। তাড়াতাড়ি নোট বই বের করে লিখে নিল, স্কারফেস—মানে কানা কাকাতুয়াটা কি বুলি আউড়েছে।
একটা তো গেল, বলল মুসা। চলো, দেখি আরেকটা পাই কিনা।
ক্র্যাবকে আরেক ঠিকানায় যেতে বলল মুসা।
কয়েক রক পরেই বাড়িটা। এত পুরানো বিলডিং, জায়গায় জায়গায় প্ল্যাস্টার খসে গেছে, বেরিয়ে পড়েছে ইটের পাজর।
গাড়ি থেকে নেমে বাড়িটার দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল মুসা, ভাবছি, ভূতথেকে-ভূতের সুবিধে যেমন, অসুবিধেও তেমনি। সবাই জেনে যাচ্ছে খবর, শত্রুরাও জেনে যাচ্ছে। ফলে বেকায়দা হয়ে যায়। শুঁটকি তো কয়েকবারই অসুবিধেয় ফেলল এভাবে।
রবিন হুডকে না নিয়ে গেলেই বাঁচি, বলল রবিন।
পাওয়া গেল রবিন হুডকে। কোন কারণে খোঁজ পায়নি বা খবরই জানেনি শুঁটকি, কিংবা আগ্রহ দেখায়নি। যা-ই হোক, নিতে পারেনি, বা নেয়নি। আছে। বাড়ির মালিকের মাথা জুড়ে বিশাল টাক। জানাল, কেনার সময় একবারই কথা বলেছিল কাকাতুয়াটা, সেজন্যেই কিনেছে, তারপর একেবারে জবান বন্ধ। আর একটি বারও বুলি আউড়ায়নি। বাড়িওয়ালী গেছে রেগে। স্বামীকে কদিন ধরেই চাপ দিচ্ছে কাকাতুয়াটা বিদেয় করে দিয়ে একটা ক্যানারি কেনার জন্যে।
কাজেই, সস্তায়ই পাওয়া গেল কাকাতুয়াটা। পঁচিশ ডলারে কিনেছিল বাড়িওয়ালা, পঁচিশ ডলারেই বিক্রি করে দিল দুই গোয়েন্দার কাছে। টীকাটা গুণে নিয়ে পকেট রেখে বলল, কেন কিনছ, বুঝতে পারছি না। কথা জানে ব্যাটা, কিন্তু বলে না। দেখো, তোমরা বলতে পারো কিনা। বাচ্চারা অনেক সময় অনেক কিছু পারে, যা বুড়োদের পক্ষে অসম্ভব।
থ্যাংক ইউ, স্যার, বলল রবিন। দেখব চেষ্ট করে।
কাকাতুয়াটাকে নিয়ে বেরিয়ে এল ওরা।
বিষণ্ণ হয়ে খাঁচায় বসে আছে রবিন হুড। ছেলেদের দিকে ফিরেও তাকাল না।
তাজ্জব ব্যাপার? বলল মুসা। কথা বলে না কেন?
দেখা যাক, কিশোর বলাতে পারে কিনা…আরে, গাড়িটা গেল কোথায়? এখানেই তো ছিল।
আশেপাশে গাড়িটাকে খুঁজল ওরা। কিন্তু নেই।
ওই ক্র্যাবের বাচ্চাকে দেখেই ভাল্লাগেনি আমার, গোমড়া মুখে বলল মুসা। ব্যাটা আমাদের ফেলে চলে গেছে।
তা-তো গেছে, যাই কি করে এখন? আরেকটা গাড়ি কিংবা ট্যাকসির জন্যে, এদিক ওদিক তাকাল রবিন। যেন তার মনের খবর জানতে পেরেই ঘ্যাচ করে এসে পাশে থামল একটা ঝরঝরে ভ্যান। ড্রাইভিং সীট থেকে জানালা দিয়ে মুখ বের করল এক মহিলা। রোলস-রয়েসটাকে খুঁজছ? ওদিকে চলে যেতে দেখলাম।
কেন যে গেল বুঝতে পারছি না, কপাল চুলকাল রবিন।
যাবে কোথায় তোমরা?
জানাল মুসা।
এসো, বাস স্টেশনে নামিয়ে দেব। ওদিকেই যাচ্ছি, আমন্ত্রণ জানাল মহিলা।
মহিলাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাল মুসা। এসো, রবিন। কি আর করা। উইলশায়ার থেকে বাস ধরব।
মহিলার পাশে উঠে বসল মুসা।
রবিন উঠল তার পাশে। চিন্তিত। চেনা চেনা লাগছে মহিলার কণ্ঠস্বর, আগে কোথাও শুনেছে।
চলতে শুরু করেছে ভ্যান।
আরে, ওদিকে কোথায়? তাড়াতাড়ি বলল রবিন। উল্টোদিকে যাচ্ছেন তো। উইলশায়ার ওদিকে।
উইলশায়ারে যাচ্ছেটা কে? পেছন থেকে বলে উঠল একটা কর্কশ কণ্ঠ, কথায় ব্রিটিশ টান। অন্যখানে যাচ্ছি আমরা।
চমকে ফিরে চাইল দুই গোয়েন্দা।
সীটের পেছনের একটা পার্টিশন সরে গেছে। আরাম করে বসে আছে হাইমাস। গোল মুখে কুৎসিত হাসি।