তা-তো বুঝলাম, মুসা বলল। কিন্তু এসব কি প্রমাণ করে?
জলদস্যুর সঙ্গে নাম মিলিয়ে রাখাটা প্রমাণ করে, কিছু একটা চুরি করেছে সে, হয়তো তার সেই রহস্যময় গুপ্তধন, যেটা বিক্রি করার সাহস হয়নি। চুরি করেছে বলেই হয়তো।
তার সাহিত্যপ্রেমের আরেক নমুনা, নাম বাছাই, বলে গেল কিশোর। কিভাবে কাকাতুয়াগুলোর নামকরণ করেছে লক্ষ করেছ? বিলি শেকসপীয়ার, লিটল বো-পীপ, ব্ল্যাকবিয়ার্ড দা পাইরেট, শার্লক হোমস, রবিন হুড, ক্যাপ্টেন কিড।
এবং স্কারফেস, মনে করিয়ে দিল মুসা।
ওটা কোন বই থেকে নয়। মারপিটের কোন সিনেমার হীরো কিংবা ডাকাতের নাম হবে। যাই হোক, ওই একটা ছাড়া বাকি সব নামই বই থেকে নেয়া, ক্লাসিক থেকে, নয়ত ইতিহাস থেকে।
আচ্ছা, কথার মাঝেই বলে উঠল রবিন, তার গুপ্তধন কোন বইও তো হতে পারে? অনেক পুরানো দুর্লভ পুঁথি আছে, যে কোন যাদুঘর পেলে হাজার হাজার ডলার দিয়ে লুফে নেবে।
ভুরু কোঁচকাল কিশোর। হতে পারে। কিন্তু মনে করে দেখো, সিলভার অন্য কথা বলেছে। বলেছে? রামধনুর একটা টুকরোর নিচে একপাত্র সোনা। বই বলে মনে হয়?
না, সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল মুসা। কিন্তু তাতে কি? বিলি আর বো-পীপ কোথায় আছে জানি না, এমনকি হাইমাস কোথায় তা-ও অজানা। দেয়ালে ঠেকেছি আমরা, পথ বন্ধ।
কিন্তু ফোকর আছে, নাটকের সংলাপ বলছে যেন কিশোর।
গতকাল হাইমাসকে বলতে শুনেছি দুটো কাকাতুয়া এখনও নিখোঁজ। ওই দুটোকে জোগাড় করব আমরা। ব্ল্যাকবিয়ার্ড সহ আমাদের কাছে থাকবে তখন তিনটে, হাইমাসের কাছে চারটে। আগে পরে সেকথা সে জানবেই, নিতে আসবে।
কোন দরকার নেই, দু-হাত নাড়ল মুসা। আবার ওই হিপোর মুখোমুখি হব? আমি পারব না। তাছাড়া কাকাতুয়া চুরি করতেও যেতে পারব না আমি লোকের বাড়িতে।
কে চুরি করতে বলেছে তোমাকে? কিনে নেব।
যেন দোকানে আছে, গিয়ে নিয়ে এলেই হলো। কোথায় আছে তাই তো জানি না।
জানতে হবে, শান্ত কণ্ঠে বলল কিশোর। আবার চালু করে দেব ভূত-থেকেভূতে। কাকাতুয়া পছন্দ করে অনেক ছেলেমেয়ে, আর সেগুলো যদি ক্লাসিক ডায়ালগ বলে তাহলে কোন কথাই নেই। বাচ্চাদের চোখে পড়বেই পড়বে। হলিউডের একটা ম্যাপ বের করে এক জায়গায় আঙুল রাখল সে। এখানকার তিনটে ছেলেকে চিনি আমি।ওরা ছড়িয়ে দেবে খবর।
৮
খুব সহজেই কাজ হলো এবার।
এটাই তো মনে হচ্ছে, হাতের কাগজটার দিকে চেয়ে ঠিকানা মিলিয়ে নিল মূসা দুটো ঠিকানা লিখে নিয়েছে, তার একটা মিলছে। গাড়ি রাখুন।
রাস্তার ধারে রোলস নামিয়ে আনল শোফার। হ্যানর্সন নয়, নতুন আরেকজন। বেঁটে, শয়তানী ভরা চাহনি, নাম ক্র্যাব। মুসার মনে হলো কাঁকড়ার দাঁড়ার মতই হাত নাড়ে লোকটা। রবিনও রয়েছে গাড়িতে। দুজনের কেউই পছন্দ করতে পারছে নতুন শোফারকে। সকালে রোলস-রয়েসের জন্যে ফোন করেছিল কিশোর, কোম্পানির ম্যানেজার জানিয়েছে জরুরী কারণে ছুটি নিয়েছে হ্যানসন। নতুন ড্রাইভার দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে গাড়ি।
এঞ্জিন বন্ধ করে দুই গোয়েন্দার দিকে ফিরে হাসল ক্র্যাব। কিশোর আসেনি সঙ্গে। বোরিস আর রোভার গেছে পুরানো মাল আনতে। চাচা-চাচী গেছেন আরেক কাজে। ফলে বাধ্য হয়ে ইয়ার্ডে পাহারায় থাকতে হয়েছে কিশোরকে।
কিছু তদন্ত করতে যাচ্ছ তোমরা? জিজ্ঞেস করল ক্র্যাব। হ্যানসন বলেছে। তোমাদের কথা। এসব ব্যাপারে আমিও খুব ইনটারেসটেড। যাও, আমি গাড়িতে আছি। দরকার পড়লে ডেকো। নিজের কপালে টোকা দিল। চোর-ডাকাতের স্বভাব রেকর্ড করা আছে এখানে।
লোকটার অহঙ্কারী ভাবসাব ভাল লাগল না মুসার। বলল, চোর-ডাকাত ধরতে যাচ্ছি না। একটা হারানো কাকাতুয়া খুঁজতে যাচ্ছি।
হারানো কাকা:… থেমে গেল ক্র্যাব, বিষয় পছন্দ হলো না। কিংবা হয়তো ভাবল মুসা তার সঙ্গে রসিকতা করছে। গম্ভীর হয়ে একটা খবরের কাগজ টেনে নিয়ে পড়ায় মন দিল।
ভূত-থেকে-ভূতে চালু করে দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই দুটো কাকাতুয়ার খোঁজ পাওয়া গেছে। আরও কিছু তথ্যও জানা গেছে। কদিন ধরেই নাকি কয়েকটা কাকাতুয়ার জন্যে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে মোটা এক লোক, শেষে ক্যাপ্টেন কিড আর শারলক হোমস নামের দুটো কাকাতুয়া পেয়ে ডবল দাম দিয়ে কিনে নিয়ে গেছে।
বাকি দুটো কাকাতুয়া, স্কারফেস আর রবিন হুডকে নিতে এসেছে এখন রবিন আর মুসা। ওগুলোর বর্তমান মালিকেরা বিক্রি করতে রাজি হলে কিনে নিয়ে যাবে, আর তা নাহলে রেকর্ড করে নিয়ে যাবে কাকাতুয়া দুটোর বুলি। টেপরেকর্ডার নিয়ে এসেছে সে-জন্যে সঙ্গে করে।
সিমেন্টে বাঁধানো পথ ধরে হাঁটতে শুরু করল দুই গোয়েন্দা। দু-ধারে উঁচু পাতাবাহারের ঝাড়। পথের শেষ মাথায় পুরানো একটা বাড়ি, নতুন প্লাসটার করা হয়েছে।
ওরা বাড়িটার ফুট বিশেক দূরে থাকতেই খুলে গেল সামনের দরজা। বেরিয়ে এল ওদের চেয়ে সামান্য বেশি বয়েসী একটা ছেলে। টিংটিঙে তালপাতার সেপাই, মুসার চেয়ে লম্বা, বাঁকা নাক। দুই গোয়েন্দাকে দেখে বত্রিশ দাঁত বের করে হাসল।
এহহেরে! আবার এসেছে জ্বালাতে! বলে উঠল মুসা। এই রবিন সরো, সরো, শুঁটকির গন্ধ লাগবে গায়ে।
রকি বীচে ফিরে এসেছে আবার তিন গোয়েন্দার চিরশত্রু টেরিয়ার ডয়েল।
মুসার কথায় কিছুই মনে করল না টেরি। হাসি আরও বিস্তৃত হলো। হাতের খাঁচাটা তুলে ধরে এগোল কয়েক পা, বলল, এটার জন্যেই এসেছ, না?