তার শেষ কথাটায় না হেসে পারল না মুসা।
গভীর চিন্তায় মগ্ন কিশোর। ঘনঘন চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে। কাকাতুয়াগুলোর ব্যাপারে অনেক কথা জেনেছে, তবে এখনও অনেক কিছু জানা বাকি। ডিয়েগোকে প্রশ্ন করতে যাচ্ছিল, এই সময় দরজায় দেখা দিল বোরিস।
ডিয়েগোর কাহিনীতে এতই মগ্ন ছিল দুই গোয়েন্দা, বোরিসের কথা ভুলে গিয়েছিল।
সব নামিয়েছি, জানাল বোরিস। যাওয়া দরকার। ইয়ার্ডে অনেক কাজ।
আরেকটু। হয়ে গেছে, বলল কিশোর। ট্রাকে লস অ্যাঞ্জেলেসের ম্যাপ আছে না?
কয়েকটা। লাগবে?
আপনি ট্রাকে বসুন গিয়ে। মুসার কাছে দিয়ে দিন।
ম্যাপ নিয়ে এল মুসা।
ডিয়েগো, ম্যাপ বিছিয়ে বলল কিশোর, দেখাও তো, কোন জায়গা?
খানিকক্ষণ দেখে নিয়ে এক জায়গায় আঙুল রাখল ডিয়েগো, মনে হয়, এখানে।
পেন্সিল দিয়ে একটা এলাকায় গোল বৃত্ত আঁকল কিশোর। ভাঁজ করে পকেট রেখে দিল ম্যাপটা।
থ্যাংকস, ডিয়েগো, বলল সে। বিলি আর বো-পীপকে কোথায় বিক্রি করেছেন তোমার চাচা, জানি। অন্যগুলোও দূরে কোথাও নয় নিশ্চয়। অনেক কথা জানা গেল তোমার কাছে, কিন্তু রহস্যের কোন কিনারা তো হলোই না, আরও জটিল হলো।
ঠিক বলেছ, আঙুল তুলল মুসা।
ইস, হাতে পেয়েও হারালাম ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে… আফসোস করল কিশোর। যাকগে, যা গেছে তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। হাত মেলাল ডিয়েগোর সঙ্গে। আশা করি, শিঘ্রী ভাল হয়ে যাবেন তোমার চাচা। আর হ্যাঁ, মোটকা যদি আবার বিরক্ত করতে আসে, সোজা পুলিশে খবর দেবে।
পুলিশ? জ্বলে উঠল ডিয়েগোর কালো চোখের তারা। মোটকা সিনর আবার এলে… বিছানার তলা থেকে মোটা একটা লাঠি বের করল সে। হাসপাতালে যাওয়ার অবস্থা করে ছেড়ে দেব।
হাসল তিনজনেই।
ছুটে চলেছে ট্রাক। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর।
কি ভাবছ? জবাব না পেয়ে কনুই দিয়ে বন্ধুর গায়ে তো দিল মুসা। হেই, কিশোর?
আঁ?।
কি ভাবছ?
কেসটা জটিল। –
শুধু জটিল? ।
না, বেশ জটিল।
কেন, মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মত বলতে লজ্জা লাগছে?
না, লাগছে না, স্বীকার করল কিশোর। মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতই।
৭
পরদিন সকালে। ইয়ার্ডে কাজকর্ম বিশেষ নেই। মেরিচাচীকে বলে-কয়ে অনুমতি নিয়ে বোরিস আর রোভারকে ডিয়েগোদের ওখানে পাঠাল কিশোর। কুঁড়ে মেরামতের কাজে ছেলেটাকে সাহায্য করার জন্যে। ডিয়েগো আর তার চাচা, দুজনকেই খুব পছন্দ হয়েছে তার। ঠিকমত খেতে পায় না, এত গরীব, কিন্তু আত্মসম্মান বোধ কি প্রচণ্ড।
দুপুরের পর ফিরে এল দুই ব্যাভারিয়ান ভাই।
হাসিমুখে ট্রাক থেকে নামল বোরিস। হাতে কার্ডবোর্ডের একটা বাক্স। ওয়ার্কশপের কাছে কিশোরকে দেখে এগোল।
বাক্সটা দেখেই চিনল কিশোর। এটাতে করেই ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে ফেরত দিয়ে গিয়েছিলেন মহিলা।
বাক্সটা বাড়িয়ে ধরল বোরিস। ডিয়েগো দিল।
নিয়ে মুসার হাতে দিল কিশোর।
পকেট থেকে একটা চিঠিও বের করে দিল বোরিস।
বাক্স আর চিঠি নিয়ে ওয়ার্কশপে ঢুকল তিন গোয়েন্দা।
দড়ি কাটো, মুসাকে অনুরোধ করল কিশোর।
বাক্সের দড়ি কেটে ডালা তুলতেই ফড়ফড় করে উঠল কালো ময়না, হলুদ ঠোঁট তুলে তাকাল মুসার দিকে।
আরিব্বাপরে! ব্ল্যাকবিয়ার্ড, চমকে সরে এল মুসা।
হেসে রবিনকে বলল কিশোর, চিঠিটা পড়ে তো কি লিখেছে।
পড়ল রবিন :
ডিয়ার সিনর কিশোর, সিনর ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে পাঠালাম। গতকাল দুপুরের খাওয়ার সময় এসে হাজির। আপনারা আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। আরও একটা কারণে পাঠিয়ে দিলাম, সিনর মোটকা এসে কেড়ে নিয়ে যেতে পারে। চমৎকার একটা ঘর হয়েছে আমাদের, আপনাদের সৌজন্যে। এক হাজার ধন্যবাদ।
–ডিয়েগো রটরিজ।
রবিনের চিঠি পড়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিল যেন ময়নাটা, লাফিয়ে বেরিয়ে এসে বসল বাক্সের কিনারে। কৌতুহলী চোখে তাকাল অসাবধানে বাক্সের কোণে ফেলে রাখা মুসার একটা আঙুলের দিকে।
সময়মত খেয়াল করল মুসা, চেঁচিয়ে এক টানে সরিয়ে আনল আঙুল, না না, আর না! কালই শিক্ষা হয়ে গেছে আমার, লতিটা এখনও শুকায়নি। ব্যাটা তো একেবারে রক্তচোষা ডাকাত। মরলে নির্ঘাত ড্রাকুলা হবে।
তার কথার জবাবেই যেন বার কয়েক ডানা ঝাপটাল পাখিটা, গম্ভীর কণ্ঠে বলল, আয়্যাম ব্ল্যাকবিয়ার্ড দা পাইরেট। আহ্যাভ বারিড মাই ট্রেজার হোয়্যার ডেড ম্যান গার্ড ইট এভার। ইয়ো-হো-হো অ্যাণ্ড অ্যা বটল অভ রাম!
হ্যাঁ, বাবা, তুমি ডাকাতই।
হেসে উঠল অন্য দুজন।
এতে অপমানিত বোধ করল বোধহয় ব্ল্যাকবিয়ার্ড। আরও গম্ভীর হয়ে মুখ খারাপ করে গাল দিল গোটা দশেক।
হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসেছে তিন গোয়েন্দা। তাদের মাথার ওপরে ঝোলানো খাঁচায় রাখা হয়েছে ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে, খাঁচাটা বানানো হয়েছিল টমের জন্যে, সেই রেসিং হোেমার কবুতরটা। ময়নার ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে, মহাজ্ঞানী সে, ছেলেদের সব কথা শুনছে যেন মন দিয়ে, দরকার হলেই উপদেশ কিংবা পরামর্শ দেবে।
বিলি শেকসপীয়ার আর লিটল বো-পীপ আছে হাইমাসের কাছে, কিশোরের কথার পিঠে বলল মুসা। ও-তো কাল বললই, চারটে কাকাতুয়া আছে তার কাছে। সোজা গিয়ে এখন তাকে বলতে পারি, মিয়া, পাখিগুলো ফেরত দিলে দাও, নইলে যাচ্ছি পুলিশের কাছে। আসলে তো যাব না পুলিশের কাছে, কারণ দুজনকে কথা দিয়ে এসেছি, কিন্তু সেটা হিপোকে বলতে যাব কেন?