আবার এসে ঝাপ দিল ডিয়েগো।
শার্টের কলার চেপে ধরে চোখের পলকে তাকে শূন্যে তুলে ফেলল হাইমাস। অসহায় ভঙ্গিতে ঝুলে থেকে হাত-পা ছুঁড়তে লাগল ছেলেটা। মুসা আর কিশোরের দিকে চেয়ে শাসাল, খবরদার! এগোবে না। পিচকিটার ঘাড় মটকে দেব তাহলে।
থেমে গেল মুসা। কিশোরও দাড়িয়ে পড়ল।
রাগে জ্বলছে হাইমাসের চোখ। জানোয়ারের মত ঘড়ঘড় আওয়াজ বেরোচ্ছে কণ্ঠ থেকে। কলার ধরে আঁকাচ্ছেডিয়েগোকে।
সইতে পারল না পুরানো কাপড়, শার্টের কলার ছিড়ে থুপ করে মাটিতে পড়ে গেল ডিয়েগো। পড়েই দু-হাতে পা জড়িয়ে ধরল হাইমাসের।
লাথি মেরে পা ছাড়ানোর চেষ্টা করল হাইমাস, পারল না। জোঁক হয়ে গেছে যেন ডিয়েগো।
এই সুযোগ। লাফিয়ে উঠল মুসা। মাথা নিচু করে ছুষ্টি এল সে। তার বিখ্যাত কৌশল প্রয়োগ করল হাইমাসের ভূঁড়িতে।
কেঁপে উঠল যেন পাহাড়। শক্ত খুলির প্রচণ্ড আঘাতে হাঁউক করে উঠল হাইমাস। টলমল করেও সামলে নিল কোনমতে, পড়ল না।
মুসার মাথার এক গুঁতো খেয়েই বুঝে গেছে হাইমাস, ব্যাপার সুবিধের নয়। প্রাণপণে লাথি মেরে ডিয়েগোকে ছাড়িয়েই দৌড় দিল দরজার দিকে। পথরোধ করল কিশোর। কিন্তু লোকটার তুলতুলে শরীরে মোষের শক্তি। এক ধাক্কায় তাকেও ফেলে দিয়ে বেরিয়ে গেল দরজা দিয়ে।
কিশোরকে টেনে তুলতে গিয়ে দেরি করে ফেলল মুসা।
ছুটে বাইরে বেরোল তিন কিশোর।
স্টার্ট নিয়েছে ততক্ষণে কালো সেডান।
বোরিসের ট্রাকাটাও এসে থামল। কিন্তু লাভ নেই। মাল বোঝাই ঝরঝরে ট্রাক নিয়ে অনুসরণ করার কোন মানে হয় না, ধরা যাবে না সেডানটাকে।
ইস, আফসোফ করল মুসা, বোরিস নামা পর্যন্ত যদি আটকে রাখা যেত ব্যাটাকে…
হ্যানসন থাকলেও হত, পিছু নিতে পারতাম, হাঁপাচ্ছে কিশোর। কি আর করা। তবে ব্যাটার কার্ড আছে আমাদের কাছে, নামধাম আছে। কদিন পালিয়ে থাকবে? দেখেছ, কেমন রেগে যায়?
হাইমাস না ওটা, হিপোপটেমাস, মাথা ডলছে মুসা। ভুড়ি তো না, মনে হলো রবারের ব্যাগের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিতা, ব্যাটা রাগলে আমাদের কি লাভ?
ভয় থেকেই জন্ম নেয় রাগ, ব্যাখ্যা করল কিশোর। ভয় পেয়েছে ব্যাটা। আর তোমার গুতো খাওয়ার পর তো আরও চমকে গেছে।
আমাদের ভয় পায় বলতে চাইছ? মুসা বলল। আর আমরা?
নারভাস, বাট কনফিডেন্ট, অন্যমনস্ক হয়ে গেছে কিশোর।
কি বললে এটা? ইংরেজি না গ্রীক?
জবাব না দিয়ে ঘুরল কিশোর।
চাচাকে পানি খাওয়াচ্ছে ডিয়েগো।
ঘরে একটা মাত্র নড়বড়ে চেয়ার, উল্টে পড়ে আছে। তুলে সোজা করে রাখল। ওটা মুসা।
তাদের দিকে ফিরে তাকাল স্যানটিনো। কাশল কয়েকবার। তারপর বলল, তোমরা আমাকে বাঁচিয়েছ। নইলে মেরেই ফেলত। আবার কাশতে শুরু করল।
থাক থাক, কথা বলবেন না, হাত তুলল কিশোর।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডের খোঁজ নিতে এসেছিল মোটকাটা, বলল ডিয়েগো। মনেই রাখতে পারে না কিছু চাচা, বলবে কি? তবে সেদিন বলেছিল, কোন এলাকায় নাকি কোন একটা বাড়ি থেকে তিন-চার ব্লক দূরে এক মহিলার কাছে বিক্রি করেছে, পাঁচ ডলারে। আর কেউই কিনতে চায়নি, তাই এত কমে দিয়ে এসেছে।
মোটকা বেশি রেগে গিয়েছিল, বলল মুসা। কিছু একটা ব্যাপার আছে। পাখিগুলোর। ওই ব্যাটা জানে।
এবং ব্যাপারটা খুব জরুরী, যোগ করল কিশোর, খুব মূল্যবান তার কাছে। কিন্তু কি…
বাধা দিল বোরিস। দরজায় এসে দাড়িয়েছে। জিজ্ঞেস করল, মাল নামাব?
হ্যাঁ, নামান, বলল কিশোর। বোরিসের পেছনে এসে দাঁড়ালেন এক বয়স্ক মহিলা, হাতে কার্ডবোর্ডের একটা বাক্স, তাতে ঘোট ঘোট অসংখ্য ছিদ্র, ঝাঝরির মত।
পথে হাত তুললেন মহিলা, বলল বোরিস, এদিকেই আসছিলেন। তুলে নিলাম। সেজন্যেই আমার আসতে দেরি হয়েছে।
কই, সে ধোকাবাজটা কই? দুই গোয়েন্দার দিকে চেয়ে বললেন মহিলা। ফেরিওলার বাচ্চা, স্যানটিনো না ফ্যানটিনো?
মুসা আর কিশোরকে সরিয়ে এগিয়ে এল ডিয়েগো। চাচার শরীর খারাপ। কেন?
টাকা ফেরত চাই! কড়া গলায় বললেন মহিলা। পাখির ব্যবসা করে না ঠকবাজি করে? কাকাতুয়া বলে দিয়ে এসেছে একটা স্টারলিং। ভাগ্যিস আমার জামাই এসেছিল। পাখি চেনে। বলল এটা কাকাতুয়া না, হাতের বাক্সটা ডিয়েগোর হাতে ধরিয়ে দিলেন তিনি। দাও, আমার পাঁচ ডলার ফেরত দাও। নইলে পুলিশের কাছে যাব।
মুখ কালো হয়ে গেল ডিয়েগোর। বাক্সটা মুসার হাতে দিয়ে পকেট থেকে বের করল পাঁচ ডলার, দিয়ে দিল মহিলাকে। এই যে, নিন আপনার টাকা। যান এখন।
হুঁ, এবারের মত মাপ করে দিলাম, গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলেন মহিলা।
দুই গোয়েন্দার দিকে ফিরল ডিয়েগো। নিশ্চয় ব্ল্যাকবিয়ার্ড। কি পাখি ওটা, আমিও চিনি না, চাচাও না। কোন ধরনের কাকাতুয়াই হবে।
মুসার কাছ থেকে নিয়ে বাক্সটা খুলল সে। ফুড়ুত করে বেরিয়ে সোজা গিয়ে মুসার কাধে বসল কালো পাখিটা, উজ্জ্বল হলদে ঠোর্ট।
স্টারলিং কোথায়? চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। জামাইও পাখি চেনে না। এটা ময়না। কাকাতুয়ার চেয়ে ভালভাবে কথা শেখে, বলতে পারে। ভাল ট্রেনিং পাওয়া ময়নার দাম কাকাতুয়ার চেয়ে বেশি।
আয়্যাম ব্ল্যাকবিয়ার্ড দা পাইরেট! খসখসে কঠিন কণ্ঠে বলে উঠল ময়না, যেন সত্যিই একজন জলদস্য।. আহ্যাভ বারিড মাই ট্রেজার হোয়্যার ডেড ম্যান গার্ড ইট এভার। ইয়ো-হো-হো অ্যাণ্ড অ্যা বটল অভ রাম! তারপর মুখ খারাপ করে গাল দিল কয়েকটা, যা জলদস্যুকেই মানায়।