ক্যাপ্টেন কিড আর স্কারফেস, যোগ করল ডিয়েগো। স্কারফেসের এক চোখ কানা।
নাম দুটো দ্রুত লিখে নিল রবিন। ছটা হলো। আর ছিল?।
মাথা নাড়তে গিয়েও নাড়ল না ডিয়েগো, উজ্জল হলো চোখ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, ছিল। কালোটা। ব্লাকবিয়ার্ড দা পাইরেট। সুন্দর কথা বলে। ওই একটা ছাড়া বাকি ছ-টার মাথাই হলুদ। র্যাকবিয়ার্ডের কালো।
ব্ল্যাকবিয়ার্ড দা পাইরেট! লিখে নিল রবিন। ওটার কথা বলেছিলেন বটে মিস্টার ফোর্ড। কিশোর, কি মনে হয়? সাতটাই জড়িত?
পরে জানা যাবে, জবাব দিল কিশোর। ডিয়েগো, মোটা লোকটা ওই কাকাতুয়াগুলোর জন্যেই এসেছিল?
সি।
তোমার চাচা দিয়েছেন?
না, সিনর, বিষণ্ণ ছায়া নামল আবার ডিয়েগোর চেহারায়। তার আগেই বিক্রি করে দিয়েছে চাচা। লোকটা হাজার ডলার দিতে চাইল, কিন্তু পাখি কোথেকে দেবে চাচা? দিতে পারলে তো খুবই ভাল হত, এতগুলো টাকা। রেগে গিয়ে চাচাকে যাচ্ছেতাই গালাগাল করল লোকটা। কোথায় বিক্রি করেছে, ঠিকানা জিজ্ঞেস করল। চাচা তা-ও বলতে পারল না। কি করে বলবে, বলুন? চাচা তো আর লেখাপড়া জানে না। তাছাড়া কখন কোথায় কোন পাখি বিক্রি করেছে, সব কথা কি মনে থাকে ফেরিওলার?
তারমানে বাকি কাকাতুয়াগুলোরও খোজে রয়েছে হাইমাস, দুই সহকারীর দিকে চেয়ে বলল কিশোর। মূল্যবান তথ্য।
তা বলতে পারো, একমত হলো মুসা। একটা খুঁজতে গিয়ে দুটো হারানোর খবর পেলাম। যোগ হলো আরও পাঁচটা। সবগুলোই খুঁজব, না?
ঘুরিয়ে বলল কিশোর, যেহেতু সাতটা পাখিই এ-রহস্যের অংশ, খুঁজে তো বের করতেই হবে।
কিন্তু শুধু বিলি শেকসপীয়ার আর লিটল বো-পীপকে খুঁজে দেয়ার কথা বলেছি। আমরা। এ-রহস্যের মীমাংসার দায়িত্ব তো নিইনি।
রবিন বুঝতে পারছে, অযথা মুখ খরচ করছে মুসা। মুসাও জানে সেকথা। একবার যখন কিশোর পাশা রহস্যের গন্ধ পেয়েছে, ওটার সমাধান না করা পর্যন্ত তার আর স্বস্তি নেই। রক্তের গন্ধ পেয়েছে ব্লডহাউণ্ড, ডেকে তাকে আর ফেরানো যাবে না, শেষ মাথায় পৌছাবেই।
ডিয়েগোর দিকে ফিরল কিশোর। টেলিফোন করলেই তো পারতে? কষ্ট করে রকি বীচে এলে কেন?
ভেবেছি, পুরস্কার মিলবে। জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাব, তাই গাড়ি নিয়ে এসেছি। তাছাড়া, সিনর, ফোন করার পয়সা তো নেই আমার কাছে।
একে অন্যের দিকে তাকাল তিন গোয়েন্দা। একটা ফোন করার মত পয়সা থাকে না, এমন লোকও আছে দুনিয়ায়, বিশ্বাস করতে পারছে না। তৃতীয় বিশ্বের কিছু দরিদ্র দেশের কথা মনে পড়ল কিশোরের, বাংলাদেশের কথা মনে পড়ল, করুণ কিছু ছবি দেখেছিল পত্রিকায়। দেখে বিশ্বাসই করতে পারেনি সে, এতখানি মানবেতর জীবন যাপন করে অনেক মানুষ, ভেবেছে অতিরঞ্জিত। কিন্তু আজ বিশ্বাস করল। বাংলাদেশ কেন? এই আমেরিকাতেও তো রয়েছে সে-রকম দৃষ্টান্ত। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আর বন্যাপীড়িত অসহায় বাংলাদেশীদের কথা ভেবে মন খারাপ হয়ে গেল তার। তাছাড়া, রোজই শুনছে, দুর্বিষহ রাজনৈতিক গোলমাল চলছে বাংলাদেশে। একে তো সাংঘাতিক দরিদ্র দেশ, তারপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তার ওপর এই গণ্ডগোল কতখানি বিপর্যস্ত করে তুলছে দেশের মানুষকে, ভাবতেই রোম খাড়া হয়ে গেল। তার। কথা বলতে পারল না কয়েক মুহূর্ত।
কিশোরকে বার কয়েক ঢোক গিলতে দেখল রবিন, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। এই প্রথম ভাল করে তাকাল ডিয়েগোর শরীরের দিকে। অস্বাভাবিক রুগ্ন দেহ, হাড়িসর্বস্ব। বলল, তুমি, বেশ কিছু মূল্যবান তথ্য জানিয়েছ, পুরস্কার তোমার পাওনাই হয়েছে। গাড়িটা খুঁজছিলাম আমরা…আচ্ছা, মোটা লোকটা, হাইমাসকোথায় থাকে বলতে পারো কিছু?
মোটা লোকটার নাম হাইমাস? উজ্জল হলো ডিয়েগোর মুখ। ভোলা পকেট হাতড়ে বের করে আনল একটা কার্ড। লোকটা যাওয়ার সময় দিয়ে গেছে চাচাকে, কার্ডটা কিশোরের দিকে বাড়িয়ে দিল সে। বলে গেছে, কাকাতুয়ারগুলোর খোঁজ পেলে যেন এই ঠিকানায় জানাই।
গলা বাড়িয়ে কার্ডের ওপর ঝুঁকে এল তিন গোয়েন্দা।
এই সময় ছাপার মেশিনের ওপর ঝোলানো লাল আলোটা জুলতে-নিভতে শুরু করল, তারমানে হেডকোয়ার্টারে ফোন বাজছে।
ডিয়েগো, বলল কিশোর, ঘুরে বসে চোখ বন্ধ করো।
অবাক হলো ছেলেটা, কিন্তু যা বলা হলো করল।
মুসা, রবিন তোমরা থাকো। আমি দেখে আসি।
দুই সুড়ঙ্গের মুখের ঢাকনা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল কিশোর। আবার জায়গামত লাগিয়ে দিল ঢাকনাটা।
ফোন তুলতেই ভেসে এল এক মহিলা-কণ্ঠ, হালো, খুব নিচু গলায় বলল, যেন তার কাছাকাছি কেউ শুনে ফেলবে, তুমি কি কিশোর পাশা? মিস্টার হাইমাসের গাড়ি খুঁজছ?
হ্যাঁ, ম্যাডাম। বলতে পারেন কোথায় আছে?
এমন এক জায়গায় আছে, যেখানে কেউ খুঁজে পাবে না, রাগ বোঝা যাচ্ছে। তুমিও খোঁজার চেষ্টা কোরো না, শুনছ? উনি খুব বদরাগী, তাঁর কাজে বাধা দিলে বিপদে পড়বে। ওঁর কাজে নাক গলাবে না, ব্যস, এই বলে দিলাম।
কিশোর কিছু বলার আগেই লাইন কেটে গেল।
ওয়ার্কশপে ফিরে এল কিশোর। বলল, ডিয়েগোর পুরস্কার দিয়ে দেব আমরা। তার বাড়ি যাব, আঙ্কেল স্যানটিনোর সঙ্গে কথা বলব। ঠিক পথেই এগোচ্ছি আমরা, বোঝা যাচ্ছে, তার শেষকথাটা রহস্যময় মনে হলো অন্য দুই গোয়েন্দার কাছে।
দুই ঘণ্টা পর। দুটো গাড়ির বিচিত্র এক মিছিল দ্রুত এগিয়ে চলেছে উপকূলের মহাসড়ক ধরে, দক্ষিণে। আগেরটা কুচকুচে কালো, সোনালি অলঙ্করণ, রাজকীয় রোলস-রয়েস। অবশ্যই হ্যানসন চালাচ্ছে। পেছনের সীটে বসেছে কিশোর, মুসা আর ডিয়েগো। রবিন গেছে লাইব্রেরিতে, চাকরিতে।