হলিউডের একটা ছেলে, জানাল সে। গাড়ির নম্বর মিলছে না।
আবার বাজল টেলিফোন। রিসিভার কানে ঠেকিয়ে স্পীকারের সুইচ টিপতে আর ভুল করল না কিশোর। সবাই শুনতে পেল ওপাশের কথা। সান্তা মনিকার একটা ছেলে কালো একটা রেঞ্জার দেখেছে, তবে কয়েক বছরের পুরানো গাড়ি। গাড়িতে ছিল দুই তরুণ দম্পতি। না, এবারেও হলো না।
আরও আটজন ফোন করল। কিন্তু সবগুলো বেঠিক।
নাহ্ কাজ হলো না, হতাশ হয়ে ভাবল কিশোর। ভূত-থেকে-ভূতে সাহায্য করল না এবার তিন গোয়েন্দাকে।
৫
চুপ করে আছে ওরা। হাইমাসের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
স্পীকারে ডাক শোনা গেল মেরিচাচীর, কিশোর, এই কিশোর? একটা ছেলে তোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। মেকসিকো থেকে।
মেকসিকো থেকে!
একই সঙ্গে কথাটা মনে পড়ে তিনজনের : কাকাতুয়া বিক্রি করেছে যে ফেরিওলা, তার কথায় জোরাল মেকসিকান টান ছিল।
হুড়োহুড়ি করে দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে এল ওরা।
এই যে ও, রবিনের সমান লম্বা রুগ্ন চেহারার একটা ছেলেকে দেখালেন মেরিচাচী। মলিন প্যান্ট, শার্টের কয়েক জায়গায় ছেড়া।
এখন কাজের সময়, তাড়াহুড়ো করে অফিসে চলে গেলেন আবার চাচী।
সিনর কিশোর? জানতে চাইল ছেলেটা।
আমি, বলল কিশোর।
আমি ডিয়েগো, কড়া মেকসিকান টান কথায়, রিনরিনে সুরেলা কণ্ঠস্বর। আউ-টোটা কোথায়? দেখাবেন?
আউ-টো? বুঝতে পারছে না কিশোর।
কিন্তু মুসা বুঝে ফেলল। রোলস-রয়েসটার কথা বলছে।
ও, ওটা? গ্যারেজে, বলল কিশোর।
সোনালি আউ-টো। নিশ্চয় খুব সুন্দর। দেখতে ভারি ইচ্ছে করছে, হাসতে গিয়েও হাসল না ছেলেটা, সহজ হতে পারছে না, চোখে ভয়। আমি সিনর কিশোর, আমি গাড়ি খুব ভালবাসি। সব গাড়ি। কোন সময়, কোন একদিন আমিও একটা কিনব।
গাড়ি? দূরে কাজ করছে বিশালদেহী দুই ব্যাভারিয়ান ভাই, বোরিস আর রোভার, ইয়ার্ডের ট্রাকটা ধুচ্ছে, সেদিকে চেয়ে ছেলেটাকে বলল কিশোর, এসো আমার সঙ্গে।
দ্বিধা করল ডিয়েগো। এক মিনিট, বলে ওয়ার্কশপের কোণের দিকে চলে গেল।
উঁকি দিয়ে দেখল মুসা, এই প্রথম দেখতে পেল গাধাটা। লোহার খুঁটির সঙ্গে বাঁধা, কাছেই একটা দু-চাকার গাড়ি।
আদর করে ধূসর জানোয়ারটার পিঠ চাপড়াল ডিয়েগো।
থাক এখানে, ডিংগো। আমি আসছি।
বাক্স, ছোট ড্রাম, যে যা পেল তার ওপরই বসল চারজনে, ওয়ার্কশপে। নানারকম লোভনীয় জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, চোখ বড় বড় করে দেখছে ডিয়েগো।
ডিয়েগো, বলল কিশোর, কালো একটা রেঞ্জারের কথা বলতে এসেছ?
এত জোরে মাথা কঁকাল ডিয়েগো, মুসার ভয় হলো, গলা থেকে ছিড়ে না আলগা হয়ে যায়। সি, সি, সিনর কিশোর, কাল রাতে আমার বন্ধু টিরানো দেখা করতে এসেছিল। বলল, একজন সিনর কিশোর একটা কালো, রেঞ্জারের খোঁজ জানতে চান। শেষ দুটো নম্বর ওয়ানথ্রী।
রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে তিন গোয়েন্দা।
তাদের আগ্রহী চোখের দিকে চেয়ে আশা বাড়ল ডিয়েগোর। আরও বলল..পুরস্কার দেয়া হবে।
পুরস্কার! চেঁচিয়ে উঠল উত্তেজিত মুসা, ভয় পেয়ে গেল বেচারা ডিয়েগো। নিশ্চয়ই। গাড়িটা দেখেছ? কোথায়?
দেখেছি, তিন গোয়েন্দার মুখের দিকে তাকাচ্ছে ডিয়েগো। মোটা এক লোকের। কিন্তু সে যে এখন কোথায়… আঙুলে গুনলো, এক-দুই-তিন-চার…. সাত দিন আগে দেখেছি। তারপর আর দেখিনি।
সাত দিন? ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল মুসা, হতাশ হয়েছে। কোন লাভ হলো না। এতদিন মনে রাখলে কিভাবে?
গাড়ি সাংঘাতিক ভালবাসি আমি। গাড়ি আমার স্বপ্ন। কালো রেঞ্জারটা দারুণ এক গাড়ি। লাইসেন্স নম্বর মুখস্থ হয়ে গেছে : এ কে ফোর ফাইভ ওয়ান খ্রী। লাল চামড়ায় মোড়া গদি। সামনের বাম্পারের ডানদিকে ছোট একটা ঘষার দাগ আছে। পেছনের বাম্পারে এক জায়গায় টোল খাওয়া।
ছেলেটার ওপর ভক্তি এসে গেল তিন গোয়েন্দার। গাড়ির ব্যাপারে অনেক ছেলেরই অনেক রকম হবি আছে। কয়েক বছর পরেও একটা বিশেষ গাড়ির কথা মনে রাখতে পারে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বড় জোর কি গাড়ি আর কি রঙ, এই পর্যন্ত। কিন্তু ডিয়েগো ঠিক মনে রেখেছে লাইসেন্স নম্বর, বাম্পারের কোথায় দাগ, কোথায় টোল খাওয়া, সব। এক হপ্তা পরেও এত খুঁটিনাটি মনে রাখা সত্যি কঠিন।
পুলিশকে জানালে সহজেই খুঁজে বের করে ফেলতে পারবে, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। কিন্তু আমরা কথা দিয়ে এসেছি, পুলিশকে কিছু জানাব না। ডিয়েগোর দিকে ফিরল। দু-এক দিনের মধ্যে আর দেখা হয়নি না?
মাথা নাড়ল মেকসিকান ছেলেটা। তার বাদামী চোখ দুটো বিষণ্ণ। পুরস্কার পাচ্ছি না তাহলে।…গাড়িতে চড়তে পারছি না। সোনালি আউ-টো কি সুন্দর…।
হয়তো চড়তে পারবে, আশ্বাস দিল কিশোর। ডিয়েগো, মোটা লোকটাকে কোথায় কিভাবে দেখলে, বলো তো?
আমার চাচা স্যানটিনোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। কাকাতুয়াগুলোর জন্যে।
কাকাতুয়া? বলে উঠল মুসা। তোমার চাচাই তাহলে বিলি শেকসপীয়ার আর লিটল বো-পীপকে বিক্রি করেছে।
মাথা ঝাকাল ডিয়েগো। অন্যগুলোও। সব কটারই অদ্ভুত নাম।
অদ্ভুত নাম? দ্রুত রবিনের দিকে তাকাল একবার কিশোর। নামগুলো মনে আছে?
ঘন কালো চুলে আঙুল চালাল ডিয়েগো, ওর আবার মাথা ঝাকাল। আছে। শের-লক হোমস আর রবিন হুড।
নোট বই বের করে ফেলেছে রবিন। লিখতে লিখতে বিড়বিড় করল, শারলক হোমস, রবিন হুড।