আমি বলছি, হাত তুলল মুসা। বলব, যে আগে খোঁজ দিতে পারবে, তাকে রোলস-রয়েসে চড়িয়ে এক ঘণ্টা ঘোরাব।
মন্দ না, বলল কিশোর। দেখেছি তো, ছেলেমেয়েরা যেভাবে চকচকে চোখে তাকায় গাড়িটার দিকে। তা নাহয় ঘোরালাম। সেই সাথে কিছু নগদের কথাও বলি? এই বিশ-পঁচিশ ডলার? আরও বেশি আগ্রহী হবে।
তা-ই ঠিক হলো। গাড়িতে এক ঘণ্টা চড়ানো, আর পঁচিশ ডলার পুরস্কার।
চালু করে দেয়া হলো ভূত-থেকে-ভূতে।
রাত করতে মানা করে দিয়েছেন মা। উঠল রবিন।
বাড়ি ফিরে দেখল গুম হয়ে বসে আছেন মা, হাতে রিসিভার।
কি হয়েছে, মা? কোন গোলমাল?।
সেই তখন থেকে কতবার চেষ্টা করছি, মিসেস ফেনারকে আসতে বলব। একা কুলিয়ে উঠতে পারব না, অনেক মেহমান আসবেন, আমাকে একটু সাহায্য করবে সে। লাইনই পাচ্ছি না। সব কটা লাইন এনগেজড! কি যে হলো আজ। একটাও খালি নেই।
ঢোক গিলল রবিন। জানে, কেন খালি নেই লাইন। কিন্তু সে-কথা মাকে বলা যাবে না।
আবার ডায়াল ঘোরাতে শুরু করলেন মিসেস মিলফোর্ড। মা এভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, খারাপই লাগল রবিনের। কিন্তু কিছুই করার নেই তার এখন। সে নিজে চেষ্টা করলেও লাইন পাবে না।
দোতলায় নিজের ঘ-১ উঠে এল রবিন। কাপড় ছাড়তে ছাড়তে একটা মোটামুটি হিসাব করল : কালো গাড়িটার খোঁজ চেয়ে তারা তিনজনে পাঁচজন করে বন্ধুকে ফোন করেছে। ওরা করবে আরও পাচজনকে, হয়ে গেল পঁচাত্তর। তারা করবে আরও পাঁচজনকে। হয়ে গেল তিনশো পঁচাত্তর। তারা আরও পাঁচ…হলো আঠারোশো পঁচাত্তর…তারা আবার পাঁচ…নয় হাজার তিনশো পঁচাত্তর… আরিব্বাপরে! লস অ্যাঞ্জেলেস আর হলিউডের কোন ছেলেমেয়ের জানতে আর বাকি থাকে না। লুকাবে কোথায় হাইমাস? নাহ্ কিশোরটা একটা জিনিয়াস, বন্ধুগর্বে আধহাত উঁচু হলো রবিনের বুক।
শুয়ে পড়ল রবিন। বালিশে হাত, তার ওপর মাথা রেখে ভাবতে শুরু করল সে। বিলি শেকসপীয়ার, লিটল বো-পীপ আর তাদের বিচিত্র বুলির কথা। গতকাল থেকেই কিছু আছে, কিন্তু ধরতে পারছে না। এখন আরেকবার চেষ্টা করল। টু-টু-টু বি অর নট…আচ্ছা, কাকাতুয়া তোতলাবে কি করে? সে জানে, এর কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। ইচ্ছে করেই ভুল শেখায়নি তো? কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারল না রবিন, গোলমালটা ধরতে পারছে না। সেটা অন্য কোথাও।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল সে। মাঝরাতে ঘুমের ঘোরেই যেন কানের কাছে বলল কেউ ও লিটল বো-পীপ হ্যাজ লস্ট হার শীপ অ্যাণ্ড ডাজ নট নো হোয়্যার টু ফাইণ্ড ইট। কল অন শার্লক হোমস।
ঘুম ভেঙে গেল রবিনের। অখণ্ড নীরবতা। ভুলটা আবিষ্কার করে ফেলেছে মগজ। তার মনে পড়ল মাদার গুজ-এ লেখা লাইনটা হলো : লিটল বো-পীপ হ্যাজ লস্ট হার শীপ অ্যাণ্ড ডাজনট নো হোয়্যার টু ফাইণ্ড দেম।
দেম-এর জায়গায় ইট বলে কাকাতুয়াটা।
ব্যাপারটা হয়তো বিশেষ কিছুই নয়। কিন্তু কিশোরের কাছে শিখেছে রবিন, গোয়েন্দাগিরিতে অতি সামান্য ব্যাপারও অবহেলা করতে নেই।
হুম, চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলাল কিশোর, ঠিকই বলেছ, রবিন। এক বচন বহুবচন দুটোর বেলাতেই হয় শীপ, তাই ইট বললেও শুদ্ধ, দেমও শুদ্ধ। কিন্তু…
খাইছে! হাত তুলল মুসা। এই, তোমাদের ব্যাকরণ ক্লাস থামাও। গুঙিয়ে উঠল, স্কুলে শুনতে শুনতেই অবস্থা কাহিল…
হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসেছে তিন গোয়েন্দা। দশটা বাজতে কয়েক মিনিট বাকি। ভুত-থেকে-ভূতের মাধ্যমে খবর আসার সময় হয়েছে।
কিন্তু ভুল করেছে, মুসার কথায় কান দিল না রবিন। যিনি শিখিয়েছেন, ভুল তাঁরই।
কটা ভুল? বলল কিশোর। বিলি শেকসপীয়ার তোতলায়, সেটা একটা ভুল। মাদার গুজ থেকে শেখানো হয়েছে লিটল বো-পীপকে, সেখানে আরেকটা ভুল।
তাতে কি? মুসার প্রশ্ন। মাত্র তো দুটো। এক গ্রামার ক্লাসেই কয়েক ডজন ভুল করি আমি। আর কবিতা মুখস্থ লিখতে দিলে তো….।
সেটা তোমার হয়, বলল কিশোর। কিন্তু উচ্চ শিক্ষিত একজন ইংরেজ ভদ্রলোক এই সাধারণ ভুল করবেন না। একটা হলে ধরে নিতাম, নাহয় হয়ে গেছে কোনভাবে। কিন্তু দুটো? উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়।
উদ্দেশ্যপ্র… শূন্য দৃষ্টি ফুটল মুসার চোখে। তাকে দোষ দিতে পারল না রবিন। কিশোর পাশার ভাবনার সঙ্গে সব সময় তাল মিলিয়ে চলা কঠিন। অনেক সময় খুব বেশি শর্টকাটে এগিয়ে যায় তার মস্তিষ্ক।
ইচ্ছে করে ভুল শিখিয়েছেন বলতে চাইছ? জিজ্ঞেস করল রবিন।
হ্যাঁ। দুটো রহস্য আমাদের হাতে। এক : হাইমাস কেন কাকাতুয়া চুরি করছে? দুই? কেন ওগুলোকে ভুল বুলি শেখানো হয়েছে?
মাথায় ঢুকছে না, মাথা নাড়ল রবিন। এত কঠিন বুলি কেন শেখানো হয়েছে, সেটাও তো আরেক রহস্য। এসব কথা সাধারণত লোকে শেখায় না।
গভীর হচ্ছে রহস্য, বাস্তবে নেই যেন কিশোর, কণ্ঠে খুশির আমেজ। জটিল সমস্যা পেয়ে গেছে সে, জট ছাড়াবে ধীরে ধীরে, তাতেই তার আনন্দ। যে-ই শিখিয়েছে, অনেক ধৈর্যের সঙ্গে কষ্ট করে শেখাতে হয়েছে। নিশ্চয় অহেতুক কষ্ট করেনি। আর হাইমাসও বিনা কারণে কাকাতুয়া দুটোকে চুরি করেনি। নিশ্চয় কোন কারণ আছে।
কিশোর! উত্তেজিত মনে হলো রবিনকে। আরও পাখি তো থাকতে পারে? সেই কালো কাকাতুয়াটা? ব্ল্যাকবিয়ার্ড…
আরি সব্বোনাশ! আঁতকে উঠল মুসা। দুটোতেই মাথা ঘুরছে। আরও আমদানী করছ?
হাসতে গিয়েও থেমে গেল অন্য দুজন। ফোন বেজে উঠেছে। ছোঁ মেরে তুলে নিল কিশোর। হ্যালো হ্যাঁ।…তাই নাকি?…শেষ নম্বর দুটো ওয়ান থ্রী? …ও না না, তাহলে না, সরি। থ্যাংকু। হতাশ হয়ে রেখে দিল রিসিভার।