এখানে মঠ তো স্থাপিত হইল। আমি আরও সাহায্যের জন্য বিদেশ যাইতেছি। … শ্রীমহারাজের আশীর্বাদে ভারত বাঁচিয়া উঠিবে। আমার আন্তরিক ভালবাসা জানিবে। ইতি
তোমাদের
বিবেকানন্দ
৩৯৬*
[রাজা প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায়কে লিখিত]
মঠ, বেলুড়
২৫ ফেব্রুআরী, ১৮৯৮
প্রিয় রাজাজী,
বক্তৃতার জন্য আপনার আমন্ত্রণ পেয়ে আপনাকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। দিনকয়েক আগে শ্রীযুক্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গে এই বিষয়ে আমার আলাপ হয়েছিল এবং তার ফলে আপনাদের সমিতির জন্য একটু সময় ঠিক করতে আমি বিশেষ চেষ্টা করছি। আমি এও বলেছিলাম যে, রবিবারে তাদের সঠিক জানাব।
একজন বিশেষ বন্ধুর কাছে আমি অনেকটা ঋণী; তিনি সম্ভবতঃ দার্জিলিঙ নিয়ে যাবার জন্য এখানে এসেছেন। জনকয়েক আমেরিকান বন্ধুও এখানে এসেছেন এবং আমি যা কিছু সময় পাই, তার সবটাই নতুন মঠ এবং তৎসংলগ্ন প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যে নিয়োজিত হচ্ছে। তা ছাড়া আমার আশা এই যে, আগামী মাসে আমেরিকা যাত্রা করব।
আপনাকে সত্যই বলছি—আপনার এই নিমন্ত্রণের সুযোগ গ্রহণের জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এবং ফলাফল শ্রীযুক্ত ভট্টাচার্যের মারফত রবিবারে আপনাকে জানাব।
আমার ভালবাসা ও শুভেচ্ছা জানবেন। ইতি
বিবেকানন্দ
৩৯৭*
[স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে লিখিত]
মঠ, বেলুড়, হাওড়া
মার্চ, ১৮৯৮
প্রিয় শশী,
আমি তোমায় দুইটি কথা লিখিতে ভুলিয়া গিয়াছিলাম। (১) তুলসীর উচিত গুডউইনের নিকট হইতে সাঙ্কেতিক লিখন—অন্ততঃ উহার গোড়ার জিনিষ—শিখিয়া লওয়া। (২) ভারতের বাইরে থাকা-কালে আমাকে প্রায় প্রতি ডাকে মান্দ্রাজে একখানি চিঠি লিখিতে হইত। আমি ঐ সব চিঠির নকলের জন্য লিখিয়া বিফল হইয়াছি। আমাকে ঐ সব চিঠি পাঠাইয়া দিও। আমি আমার ভ্রমণকাহিনী লিখিতে চাই। ইহাকে অন্যথা করিও না। কাজ হইয়া গেলেই আমি ঐগুলি ফেরত পাঠাইয়া দিব! ‘ডন্’ (Dawn) কাগজখানির প্রতি সংখ্যার জন্য ৪০ টাকা খরচ হইবে এবং দুইশত গ্রাহক পাইলেই উহা নিয়মিত প্রকাশিত হইতে পারিবে—ইহা একটা মস্ত খবর। ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ অত্যন্ত অব্যবস্থার মধ্যে রহিয়াছে বলিয়া মনে হয়; উহার সুশৃঙ্খলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর। বেচারা আলাসিঙ্গা! আমি তাহার জন্য অত্যন্ত দুঃখিত। আমি এইটুকু করিতে পারি যে, সে এক বৎসরের জন্য সকল সাংসারিক দায় হইতে মুক্ত থাকিবে, যাহাতে সে সমস্ত শক্তি দিয়া ‘ব্রহ্মবাদিন্’ কাগজের জন্য খাটিতে পারে। তাহাকে বলিও সে যেন চিন্তিত না হয়। তাহার কথা আমাদের সর্বদাই মনে আছে। তাহার ভক্তির প্রতিদান আমি কখনই দিতে পারিব না।
আমি ভাবিতেছি, মিসেস বুল ও মিস ম্যাকলাউডের সঙ্গে আবার কাশ্মীর যাইব।তাহার পর কলিকাতায় ফিরিয়া সেখান হইতে আমেরিকা যাত্রা করিব।
মিস নোব্লের মতে মেয়ে সত্যি দুর্লভ। আমার বিশ্বাস, বাগ্মিতায় সে শীঘ্রই মিসেস বেস্যাণ্টকে ছাড়াইয়া যাইবে।
আলাসিঙ্গার প্রতি একটু নজর রাখিও। আমার মনে হয় সে যেন কাজে ডুবিয়া গিয়া নিজের শরীরপাত করিতেছে। তাহাকে বলিও শ্রমের পর বিশ্রাম এবং বিশ্রামের পর শ্রম—এই ভাবেই সর্বাপেক্ষা ভাল কাজ হইতে পারে। তাহাকে আমার ভালবাসা জানাইও। কলিকাতায় জনসাধারণের জন্য আমাদের দুইটি বক্তৃতা হইয়াছিল—একটি মিস নোবলের এবং অপরটি আমাদের শরতের। তাহারা দুজনেই খুব চমৎকার বলিয়াছিল। শ্রোতাদের মধ্যে প্রচুর উৎসাহ দেখা গিয়াছিল। উহাতে মনে হয়, কলিকাতার জনসাধারণ আমাদিগকে ভুলিয়া যায় নাই। মঠের কাহারও কাহারও একটু সর্দিজ্বর হইয়াছিল। তাহারা সকলেই এখন ভাল। কাজ সুন্দর চলিয়া যাইতেছে। শ্রীমা এখন আছেন। ইওরোপীয়ান ও আমেরিকান মহিলারা সেদিন তাঁহাকে দেখিতে গিয়াছিলেন। ভাবিতে পার, মা তাঁহাদের সহিত একসঙ্গে খাইয়াছিলেন! … ইহা কি অদ্ভুত ব্যাপার নয়? প্রভু আমার উপর দৃষ্টি রাখিয়াছেন, কোন ভয় নাই—সাহস হারাইও না, স্বাস্থ্য ঠিক রাখিও এবং কোন বিষয়ে অতি ব্যস্ত হইও না। খানিকক্ষণ জোরে দাঁড় টানিয়া তার পর দম লওয়া—ইহাই চিরন্তন পন্থা। রাখাল নূতন জমি-বাড়ি লইয়া আছে। এই বৎসরের মহোৎসবে আমি সন্তুষ্ট হই নাই। … প্রত্যেক মহোৎসব হওয়া চাই—এখানকার সকল ভাবধারার একটি অপূর্ব সমাবেশ। আমরা আগামী বৎসর এ বিষয়ে চেষ্টা করিব এবং আমি ব্যবস্থা ঠিক করিয়া দিব। তোমরা সকলে আমার ভালবাসা ও আশীর্বাদ জানিবে। ইতি
বিবেকানন্দ
৩৯৮*
[মিস মেরী হেলকে লিখিত]
মঠ, বেলুড়, হাওড়া
২ মার্চ, ১৮৯৮
স্নেহের মেরী,
মাদার চার্চের কাছে লেখা চিঠিতে আশা করি আমার খবর আগেই জানতে পেরেছ। তোমরা সকলে—সমস্ত পরিবারটিই—আমার প্রতি এত সদয় যে, মনে হয় পূর্বজন্মে আমি নিশ্চয়ই তোমাদেরই একজন ছিলাম, আমরা হিন্দুরা তো এই রকমই বলে থাকি। আমার একমাত্র আক্ষেপ যে, কোটিপতি আর জুটছে না; এই মুহূর্তে তাদের আমার খুবই প্রয়োজন; আমি সংগঠনের কাজ করতে করতে জরাজীর্ণ ও উগ্র স্বভাব হয়ে উঠছি। হ্যারিয়েট যদিও কোটিগুণসম্পন্ন একজনকে লাভ করেছে, তার সঙ্গে কয়েক কোটি টাকার অর্থ-গুণ থাকলে নিশ্চয় মানাত ভাল; সুতরাং তুমি আবার যেন সেই ভুলটি করে বসো না।
কোন এক তরুণযুগলের স্বামী-স্ত্রী হবার পক্ষে সব কিছুই অনুকূল ছিল, কিন্তু কনের পিতার দৃঢ় সংকল্প যে, কোটিপতি ছাড়া কাউকে তিনি কন্যা সম্প্রদান করবেন না। তরুণযুগল হতাশ হয়ে পড়ল, এমন সময় এক চতুর ঘটক এসে কার্যোদ্ধার করলে। সে বরকে জিজ্ঞেস করলে, দশ লক্ষ মুদ্রার পরিবর্তে সে তার নাসিকা দিতে প্রস্তুত কিনা। সে বললে, না। ঘটকটি তারপর কন্যার পিতার সামনে শপথ করে বললে যে, বরের বহু লক্ষ টাকা মূল্যের সম্পত্তি সঞ্চিত আছে। বিয়ে হয়ে গেল। হ্যাঁ, তোমারও কোটিপতি জুটছে না, আর আমারও তাই টাকা মিলছে না; সেজন্য আমাকে অনেক দুর্ভাবনায় পড়তে হয়েছে এবং নিষ্ফল কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে, তাই রোগে আক্রান্ত। হ্যাঁ, আসল কারণটি খুঁজে বার করা আমার মত মাথারই কাজ—নিজেকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই!