ম্যাক্কিণ্ডলি ভগিনীরা এখন কি করছে? আঙুরের রস খেয়ে খেয়ে বুঝি মোটা হয়ে উঠছে? এগিয়ে যাও, জীবনটা স্বপ্ন ছাড়া আর কি! আর তাই বলে তুমি কি খুশী নও? আর আমি! লোকে চায় চিরন্তন স্বর্গ। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, স্বয়ং তিনি ছাড়া আর কিছুই শাশ্বত নয়। আমি নিশ্চিত যে, একমাত্র তিনিই চিরন্তন স্বর্গ সহ্য করতে পারেন। এইসব বাজে জিনিষের চিরস্থায়িত্ব!
আমার পারিপার্শ্বিকের মধ্যে গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছি। শীঘ্রই তা গর্জন শুরু করবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি অচঞ্চল থাকব। এখনই তোমার চারপাশে কোন গুঞ্জন নেই। খুব দুঃখিত, অর্থাৎ দুঃখিত হবার চেষ্টা করছি, কারণ কোন কিছুর জন্যই আমি দুঃখিত হতে পারি না। সকল বোধের অতীত একটা শান্তি আমি লাভ করেছি, তা আনন্দ বা দুঃখের কোনটাই নয়, অথচ দুয়ের ঊর্ধ্বে। মাকে সে-কথা বল। গত দু-বছর ধরে মৃত্যু-উপত্যকার উপর দিয়ে শারীরিক ও মানসিক যাত্রা আমাকে এ বিষয়ে সহায়তা করেছে। এখন আমি সেই শান্তির সেই চিরন্তন নীরবতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সকল বস্তুকে তার নিজের স্বরূপে আমি দেখছি, সব কিছুই সেই শান্তিতে বিধৃত, নিজের ভাবে পরিপূর্ণ। ‘যিনি আত্মতুষ্ট, যিনি আত্মরতি, তাঁরই যথার্থ শিক্ষালাভ হয়েছে’—এ জগতে এই বড় শিক্ষাটি আমাদের জানতে হয় অসংখ্য জন্ম এবং স্বর্গ ও নরকের মধ্য দিয়ে—আত্মা ছাড়া আর কিছুই কামনার বা আকাঙ্ক্ষার বস্তু নেই। ‘আত্মাকে লাভ করাই হল শ্রেষ্ঠ লাভ’, ‘আমি মুক্ত’, অতএব আমার আনন্দের জন্য দ্বিতীয় কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। ‘চির একাকী, কারণ আমি মুক্ত ছিলাম, এখনও মুক্ত এবং চিরকাল মুক্ত থাকব’—এই হল বেদান্তবাদ। এতকাল আমি এই তত্ত্বটি প্রচার করছি। তবে আঃ, কী আনন্দ!—প্রিয় ভগিনী মেরী, এখন প্রতিটি দিন তা উপলব্ধি করছি। হ্যাঁ, তাই—‘আমি মুক্ত’। আমি একা—‘একমেবাদ্বিতীয়ম্’’।
সচ্চিদানন্দে মগ্ন তোমার চিরকালের
বিবেকানন্দ
পুনঃ—এখন আমি সত্যিকারের বিবেকানন্দ হতে চলেছি। তুমি কখনও মন্দকে উপভোগ করেছ? হাঃ! হাঃ! বোকা মেয়ে, সবই ভাল! যত সব বাজে। কিছু ভাল, কিছু মন্দ। ভাল-মন্দ দুই-ই আমার উপভোগ্য। আমিই ছিলাম যীশু এবং আমিই ছিলাম জুডাস ইস্ক্যারিয়ট; দুই-ই আমার খেলা, আমারই কৌতুক। ‘যতদিন দুই আছে, ততদিন ভয় তোমাকে ছাড়বে না।’ উটপাখীর মত বালির মধ্যে মুখ লুকিয়ে ভাবছ, কেউ তোমাকে দেখতে পাচ্ছে না। সব কিছুই ভাল। সাহসী হও, সব কিছুর সম্মুখীন হও; ভাল আসুক, মন্দ আসুক—দুটিকেই বরণ করে নাও, দুই-ই আমার খেলা। আমার লভ্য ভাল বস্তু কিছুই নেই, ধরে থাকবার মত কোন আদর্শ নেই; পূর্ণ করবার মত উচ্চাভিলাষও নেই; আমি হীরের খনি, ভাল-মন্দের নুড়ি নিয়ে খেলা করছি। ভাল-মন্দ দুই-ই ভাল। মন্দ, তুমি এস, ভালর জন্য; ভাল, তুমিও এস। আমার সামনে দুনিয়াটা উল্টে-পাল্টে গেলেই বা আমার কি আসে যায়? আমি বুদ্ধির অতীত শান্তি; বুদ্ধি আমাদের কেবল ভাল-মন্দই দিতে পারে। আমি তার বাইরে, আমি শান্তি।
—বি
১১. পত্রাবলী ৪৭৫-৪৮৪
৪৭৫*
১৭১৯ টার্ক ষ্ট্রীট,সান ফ্রান্সিস্কো
৩০ মার্চ, ১৯০০
প্রিয় জো,
বইগুলি শীঘ্র পাঠিয়েছ বলে তোমায় অশেষ ধন্যবাদ। আমার বিশ্বাস, এগুলি খুব তাড়াতাড়ি বিক্রী হয়ে যাবে। নিজের পরিকল্পনা বদলানো সম্বন্ধে তুমি দেখছি আমার চেয়েও খারাপ। এখন ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ এল না কেন বুঝতে পাচ্ছি না। আমার আশঙ্কা, আমার ডাকের চিঠিপত্র খুবই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আমি খুব খাটছি, কিছু টাকা সংগ্রহ করছি, আর স্বাস্থ্যও অপেক্ষাকৃত ভাল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাটুনি; তার পর পেটভরা নৈশভোজনান্তে ১২টায় শয্যাগ্রহণ!—এবং পায়ে হেঁটে সারা শহর বেড়ান! আর সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যের উন্নতি!
মিসেস মিল্টন তাহলে ওখানেই আছেন। তাঁকে আমার ভালবাসা জানাবে। জানাবে তো? তুরীয়ানন্দের পা কি ভাল হয়নি?
মিসেস বুলের ইচ্ছা অনুসারে আমি মার্গর চিঠিগুলি তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছি। মিসেস লেগেটকে কিছু দান করেছেন জেনে বড়ই আনন্দ পেলাম। যেমন করেই হোক সব জিনিষের একটা সুরাহা হতেই হবে—তা হতে বাধ্য, কারণ কোন কিছুই শাশ্বত নয়।
সুবিধা দেখলে এখানে আরও দু-এক সপ্তাহ আছি; তারপর ষ্টকটন নামে একটা কাছাকাছি জায়গায় যাব, তারপর—জানি না। যেমন করেই হোক চলে যাচ্ছে। আমি বেশ শান্তিতে ও নির্ঝঞ্ঝাটে আছি। আর কাজ-কর্ম যেমন চলে থাকে, তেমনই চলে যাচ্ছে। আমার ভালবাসা জানবে। ইতি
বিবেকানন্দ
পুনশ্চঃ—পরিবর্তনাদি সহ ‘কর্মযোগ’ বইখানি সম্পাদনার জন্য মিস ওয়াল্ডোই হচ্ছেন ঠিক লোক।
—বি
৪৭৬*
১৭১৯ টার্ক ষ্ট্রীট, সান ফ্রান্সিস্কো
এপ্রিল, ১৯০০
প্রিয় জো,
তোমার ফ্রান্স যাত্রার আগে এক ছত্র লিখছি। ইংলণ্ড হযে যাচ্ছ কি? মিসেস সেভিয়ারের কাছ থেকে একখানা সুন্দর চিঠি পেয়েছি।
লস্ এঞ্জেলেস্ থেকে এখানে শারীরিক ভাল নয়, কিন্তু মানসিক অনেক ভাল আছি—সবল ও শান্তিপূর্ণ। আশা করি, এ অবস্থা বজায় থাকবে।
তোমার কাছ থেকে আমার চিঠির উত্তর পাইনি, শীঘ্র পাব আশা করছি। আমার নামে ভারতের একখানা চিঠি ভুল করে মিসেস হুইলারের ঠিকানায় চলে গিয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তা আমার কাছে ঠিকমত এসে পৌঁছেছে। সারদানন্দের কাছ থেকে সুন্দর সব বিবরণ পেয়েছি; তারা সেখানে চমৎকার কাজ চালাচ্ছে। ছেলেরা কাজে লেগে গেছে; দেখছ তো, ধমকানির দুটি দিকই আছে, এর ফলে তারা উঠে পড়ে লেগেছে।