‘সব কাজ কর্ম কর্তব্যধর্ম ত্যাগ করে আমার শরণাগত হও, আমি তোমাকে সর্ববিধ পাপ থেকে উদ্ধার করব। দুঃখ কর না।’ (গীতা—১৮।৬৬)
সেটা উপলব্ধি করার জন্য আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছি। শীঘ্রই যেন তা করতে পারি।
সতত তোমার স্নহশীল ভ্রাতা
বিবেকানন্দ
৪৬৯*
[মিসেস লেগেটকে লিখিত]
১৭১৯ টার্ক ষ্ট্রীট, সান ফ্রান্সিস্কো
১৭ মার্চ, ১৯০০
মা,
আপনার সুন্দর চিঠিখানা পেয়ে খুবই আনন্দিত হলাম। হ্যাঁ, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, বন্ধুদের সঙ্গে আমি সংযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি। তা সত্ত্বেও বিলম্বের ক্ষেত্রে কখনও কখনও বিচলত হই।
ডাঃ হিলার ও মিসেস হিলার (Dr. and Mrs. Hiller) শহরে ফিরে এসেছেন; মিসেস মিল্টনের (Mrs. Milton) চিকিৎসায় তাঁরা উপকৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আমার বেলায় (তাঁরা চিকিৎসায়) বুকে অনেকগুলি বড় বড় লাল লাল দাগ ফুটে উঠেছে। আরোগ্যের ব্যাপারে কতদূর কি হয়, পরে বিস্তারিত আপনাকে জানাব। অবশ্য আমার রোগটা এমনই যে আপনা থেকে পূর্বাবস্থায় ফিরতে অনেক সময় লাগবে।
আপনি এবং মিসেস এডাম্স্ যে সহৃদয়তা দেখিয়েছেন, তার জন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ। চিকাগোয় গিয়ে নিশ্চয় তাঁদের সঙ্গে দেখা করে আসব।
আপনার সব ব্যাপার কিরকম চলছে? এখানে আমি চুপচাপ সহ্য করার নীতি অবলম্বন করে যাচ্ছি, এ পর্যন্ত ফল মন্দ হয়নি।
তিন বোনের মেজোটি মিসেস হ্যান্স্বরো (Mrs. Hansborough) এখন এখানে। সে আমাকে সাহায্য করবার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছে। প্রভু তাদের হৃদয় আশীর্বাদে ভরিয়ে দিন। তিনটি বোন যেন তিনটি দেবী! আহা, তাই নয় কি? এখানে ওখানে এ-ধরনের আত্মার সংস্পর্শ পাওয়া যায় বলেই জীবনের সকল অর্থহীনতার ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়।
আপনাদের উপর চির আশীর্বাদের জন্য প্রার্থনা। এও বলি, আপনিও একজন স্বর্গের দেবী। মিস কেটকে (Miss Kate) আমার ভালবাসা।
আপনার চিরসন্তান
বিবেকানন্দ
পুনঃ—‘মায়ের সন্তানটি’ কেমন!
মিস স্পেন্সার কেমন আছেন? তাঁকে সর্ববিধ ভালবাসা। ইতোমধ্যে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে, আমি মোটেই ভাল চিঠি-লিখিয়ে নই—কিন্তু হৃদয় ঠিক আছে। মিস স্পেন্সারকে এ কথা জানাবেন।
বি
৪৭০*
[মিসেস লেগেটকে লিখিত]
১৭১৯ টার্ক ষ্ট্রীট, সান ফ্রান্সিস্কো
১৭ মার্চ, ১৯০০
মা,
জো-র একটি চিঠি পেলাম; সে আমাকে চার-টুকরো কাগজ স্বাক্ষর করে পাঠাতে লিখেছে, যাতে আমার হয়ে মিঃ লেগেট আমার টাকা ব্যাঙ্কে জমা রাখতে পারেন। তার কাছে যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয় বলে, কাগজগুলি আপনার কাছে পাঠালাম।
আমার স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে, কিছু কিছু টাকাপয়সাও হচ্ছে। বেশ সন্তুষ্ট আছি। আপনার আবেদনে যে আরও বেশী লোক সাড়া দেয়নি, তার জন্য আমি মোটেই দুঃখিত নই। জানতাম, তারা সাড়া দেবে না। কিন্তু আপনার সহৃদয়তার জন্য আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব। আমার শুভেচ্ছা চিরকাল আপনাদের ঘিরে থাকুক।
আমার নামে চিঠিপত্র—১২৩১ নং পাইন ষ্ট্রীটে ‘হোম অব্ ট্রুথ’ (Home of Truth)-এর ঠিকানায় পাঠালে ভাল হয়। আমি ঘুড়ে বেড়ালেও সেটি একটি স্থায়ী আস্তানা, এবং সেখানকার লোকেরা আমার প্রতি সদয়।
আপনি এখন এখন খুব ভাল আছেন জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। মিসেস ব্লজেট জানিয়েছেন যে, মিসেস মিল্টন লস্ এঞ্জেলেস্ ছেড়ে চলে গিয়েছেন! তিনি নিউ ইয়র্কে গিয়েছেন কি? ডক্টর হিলার ও মিসেস হিলার গত পরশু সান ফ্রান্সিস্কো ফিরে এসেছেন; তাঁরা বলেছেন, মিসেস মিল্টনের চিকিৎসায় তাঁরা খুবই উপকৃত হয়েছেন। মিসেস হিলার অল্পদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভের আশা করছেন।
এখানে এবং ওকল্যাণ্ডে ইতোমধ্যে অনেকগুলি বক্তৃতা দিয়েছি। ওকল্যাণ্ডে বক্তৃতাগুলি ভাল টাকাই পাওয়া গেছে। সান ফ্রান্সিস্কোয় প্রথম সপ্তাহে কিছু পাওয়া যায়নি, এ সপ্তাহে পাওয়া যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহেও কিছু আশা আছে। বেদান্ত সোসাইটির জন্য মিঃ লেগেট চমৎকার ব্যবস্থা করেছেন জেনে আমি খুবই আনন্দিত। সত্যি তিনি এত সহৃদয়।
আপনার
বিবেকানন্দ
পুঃ—তুরীয়ানন্দের বিষয় আপনি কিছু জানেন কি? সে কি সম্পূর্ণ নিরাময় হয়েছে?
বি
৪৭১*
[মিস মেরী হেলকে লিখিত]
১৭১৯ টার্ক ষ্ট্রীট, সান ফ্রান্সিস্কো
২২ মার্চ, ১৯০০
প্রিয় মেরী,
তোমার সহৃদয় চিঠির জন্য অশেষ ধন্যবাদ। তুমি ঠিকই বলছ য়ে, ভারতবাসীদের বিষয় ছাড়া আমার আরও অনেক কিছু চিন্তা করবার আছে, কিন্তু গুরুদেবের কাজই আমার জীবনের প্রধান কর্তব্য, তার তুলনায় ঐ-সবই গৌণ!
এই আত্মত্যাগ যদি সুখকর হত! তা হয় না, ফলে স্বভাবতই কখনও কখনও মনে তিক্ততা আসে; কিন্তু জেনো মেরী, আমি এখনও মানুষই আছি এবং নিজের সব কিছু একেবারে ভুলে যেতে পারি না; আশা করি, একদিন তা পারব। আমার জন্য প্রার্থনা কর।
আমার বিষয়ে বা অন্য বিষয়ে মিস ম্যাকলাউড বা মিস নোবল্ বা অন্য কারও মতামতের জন্য আমি অবশ্যই দায়ী হতে পারি না। পারি কি? কেউ সমালোচনা করলে তুমি কখনই আমাকে বেদনা অনুভব করতে দেখনি।
দীর্ঘকালের জন্য তুমি ইওরোপে যাচ্ছ জেনে আনন্দিত হলাম। লম্বা পাড়ি দাও— অনেকদিন তো পোষা পায়রার মত কাটালে।
আর আমার কথা যদি বল, আমি এই অবিরাম ঘোরাঘুরিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, তাই ঘরে ফিরে শান্তিতে কাটাতে চাই। আর কাজ করতে চাই না। জ্ঞানতপস্বীর মত নির্জনে জীবন যাপন করাই আমার স্বভাব। সে অবসর কখনও জুটল না! প্রার্থনা করি, এবার তা যেন পাই। এখন আমি ভগ্নস্বাস্থ্য, কর্মক্লান্ত! হিমালয়ের আশ্রম থেকে যখনই মিসেস সেভিয়ারের কোন চিঠি পাই, তখনই ইচ্ছা হয়—যেন সেখানে উড়ে চলে যাই। প্রতিনিয়ত প্ল্যাটফর্মে বক্তৃতা করে, অবিরত ঘুরে বেড়িয়ে আর নিত্যনূতন মুখ দেখে দেখে আমি একেবারে ক্লান্ত।