[স্বামী তুরীয়ানন্দকে লিখিত]
সান ফ্রান্সিস্কো
মার্চ, ১৯০০
হরিভাই,
এই মিসেস বাঁড়ুয্যের কাছ থেকে একটা bill of lading (মাল চালানের বিল) এসেছে। সে মহিলাটি কি দাল-চাল পাঠিয়েছে—এটা তোমায় পাঠাচ্ছি। মিঃ ওয়াল্ডোকে দিও; সে সব আনিয়ে রাখবে—যখন আসবে।
আমি আসছে সপ্তায় এ স্থান ছেড়ে চিকাগোয় যাব। তারপর নিউ ইয়র্কে আসছি।
এক-রকম আছি। … তুমি এখন কোথায় থাক? কি কর? ইত্যাদি। ইতি
বি
৪৬৬
[স্বামী ব্রহ্মানন্দকে লিখিত]
সান ফ্রান্সিস্কো
১২ মার্চ, ১৯০০
অভিন্নহৃদয়েষু,
তোমার এক পত্র পূর্বে পাই। শরতের এক পত্র কাল পেয়েছি। তাঁর জন্মোৎসবের১৭ নিমন্ত্রণপত্র দেখলাম। শরতের বাতের কথা শুনে ভয় হয়। রাম রাম! খালি রোগ শোক যন্ত্রণা সঙ্গে আছে দু-বছর। শরৎকে বল যে, আমি বেশী খাটছি না আর। তবে পেটের খাওয়ার মত না খাটলে শুকিয়ে মরতে হবে যে! … দুর্গাপ্রসন্ন পাঁচিলের যা হয় অবশ্যই এতদিনে করে দিয়েছে। … পাঁচিল তোলা কিছু হাঙ্গামা তো নয়। … পারি তো সেই জায়গাটায় একটা ছোট বাড়ী বানিয়ে নিয়ে বুড়ো দিদিমা ও মা-র কিছুদিন সেবা করব। দুষ্কর্ম কাউকে ছাড়ে না, মা কাউকেই সাজা দিতে ছাড়েন না। আমার কর্ম ভুগে নিলুম। এখন তোমরা সাধু মহাপুরুষ লোক—মায়ের কাছে একটু বলবে ভাই, যে আর এ হাঙ্গাম আমার ঘাড়ে না থাকে। আমি এখন চাচ্ছি একটু শান্তি; আর কাজকর্মের বোঝা বইবার শক্তি যেন নাই। বিরাম এবং শান্তি—যে কটা দিন বাঁচব, সেই কটা দিন। জয় গুরু, জয় শ্রীগুরু!
লেকচার-ফেকচার কিছুই নয়। শান্তিঃ! মঠ-(এর) ট্রাষ্ট-ডীড শরৎ পাঠিয়ে দিলেই সই করে দিই। তোমরা সব দেখো। আমি সত্য সত্য বিশ্রাম চাই। এ রোগের নাম Neurosthenia—স্নায়ুরোগ। এ একবার হলে বৎসর কতক থাকে। তবে দু-চার বৎসর একদম rest (বিশ্রাম) হলে সেরে যায়। … এ দেশে ঐ রোগের ঘর। এইখান থেকে উনি ঘাড়ে চড়েছেন। তবে উনি মারাত্মক হওয়া দূরে থাকুক, দীর্ঘ জীবন দেন। আমার জন্য ভেবো না। আমি গড়িয়ে গড়িয়ে যাব। গুরুদেবের কাজ এগোচ্ছে না—এই দুঃখে। তাঁর কাজ কিছুই আমার দ্বারা হল না—এই আপসোস! তোমাদের কত গাল দিই, কটু বলি—আমি মহা নরাধম! আজ তাঁর জন্মদিনে তোমাদের পায়ের ধুলো আমার মাথায় দাও—আমার মন স্থির হয়ে যাবে। জয় গুরু, জয় গুরু, জয় গুরু, জয় গুরু,। ত্বমেব শরণং মম, ত্বমেব শরণং মম, (তুমিই আমার শরণ, তুমিই আমার শরণ)। এখন মন স্থির আছে বলে রাখি। এই চিরকালের মনের ভাব। এ ছাড়া যেগুলো আসে, সেগুলো রোগ জানবে। আর আমায় কাজ করতে একদম দিও না। আমি এখন চুপ করে ধ্যান জপ করব কিছুকাল—এই মাত্র। তারপর মা জানেন। জয় জগদম্বে!
বিবেকানন্দ
৪৬৭*
১৭১৯ টার্ক ষ্ট্রীট
সান ফ্রান্সিস্কো
১২ মার্চ, ১৯০০
প্রিয় ধীরামাতা,
কেম্ব্রিজ থেকে লেখা আপনার পত্রখানি কাল এসেছিল। এখন আপনার একটা স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে—১৭১৯ টার্ক ষ্ট্রীট, সান ফ্রান্সিস্কো। আশা করি এই পত্রের উত্তরে দু লাইন লেখবার সময় পাবেন।
আপনার প্রেরিত এক পাণ্ডুলিপি আমি পেয়েছি। আপনার ইচ্ছা অনুসারে আমি সেটি ফেরত পাঠিয়েছি। এ ছাড়া আমার কাছে আর কোন হিসাব নেই। সব ঠিকই আছে। লণ্ডন থেকে মিস সুটার আমায় একখানি চমৎকার চিঠি লিখেছেন। তিনি আশা করেছেন যে, মিঃ ট্রাইন তাঁর সঙ্গে নৈশ আহারে যোগ দেবেন।
নিবেদিতার অর্থ-সংগ্রহের সাফল্যের সংবাদে আমি যার-পর-নাই খুশী হয়েছি। আমি তাকে আপনার হাতে সঁপে দিয়েছি এবং নিশ্চিত জানি যে, আপনি তার দেখাশুনা করবেন। আমি এখানে আরও কয়েক সপ্তাহ আছি; তার পরেই পূর্বাঞ্চলে যাব। শুধু গরমকালের অপেক্ষায় আছি।
টাকাকড়ির দিক্ দিয়ে এখানে মোটেই সফল হইনি; কিন্তু অভাবও নেই। যা হোক, বরাবরের মত আমার দিনগুলি এক-রকম চলে যাবেই; আর যদি না চলে, তাতেই বা কি? আমি সম্পূর্ণ গা ভাসিয়ে দিয়েছি।
মঠ থেকে একখানি চিঠি পেয়েছি। কাল তাদের উৎসব হয়ে গেল। আমি প্রশান্ত মহাসাগরের পথে যেতে চাই না। কোথায় যাব বা কখন যাব—এ বিষয়ে আমি মোটেই ভাবি না। আমি সম্পূর্ণ গা ভাসিয়ে দিয়েছি—মা-ই সব জানেন। আমার ভেতরে একটা বড় রকম পরিবর্তন আসছে—আমার মন শান্তিতে ভরে যাচ্ছে। আমি জানি, মা-ই সব ভার নেবেন। আমি সন্ন্যাসিরূপেই মৃত্যুবরণ করব। আপনি আমার ও আমার আত্মীয়দের জন্য মায়ের চেযেও বেশী করেছেন। আপনি আমার অসীম ভালবাসা জানবেন আর আপনার চিরমঙ্গল হোক—বিবেকানন্দের এই সতত প্রার্থনা।
দয়া করে মিসেস লেগেটকে বলবেন যে, কয়েক সপ্তাহের জন্য আমার ঠিকানা হবে—-১৭১৯ টার্ক ষ্ট্রীট, সান ফ্রান্সিস্কো।
৪৬৮*
[মিস মেরী হেলকে লিখিত]
১৭১৯ টার্ক ষ্ট্রীট, সান ফ্রান্সিস্কো
১২ মার্চ, ১৯০০
প্রিয় মেরী,
কেমন আছ? মা কেমন, ভগিনীরা কেমন? চিকাগোর হালচাল কি রকম? আমি ফ্রিস্কোতে১৮ আছি, মাসখানেকের মত এখানে থাকব। এপ্রিলের প্রথম দিকে চিকাগোয় যাব। অবশ্য তার আগে তোমাকে লিখে জানাব। তোমাদের সঙ্গে কয়েকদিন কাটাতে খুবই ইচ্ছা, এত কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যেতে হয়। আমার স্বাস্থ্য একপ্রকার, কিন্তু মন খুব শান্ত, কিছুদিন থেকে তাই আছে। যাবতীয় দুশ্চিন্তার ভার প্রভুর কাছে সমর্পণ করে দিতে চেষ্টা করছি। আমি শুধু কর্মী বৈ তো নয়। আদেশমত কাজ করে যাওয়াই আমার জীবনের উদ্দেশ্য। বাকী তিনিই জানেন।