শরৎ যদি কলিকাতা না জাগিয়ে তুলতে পারে … তুমি যদি এ বৎসরের মধ্যে পোস্তা না গাঁথতে পার তো দেখতে পাবে তামাসা! আমি কাজ চাই—no humbug (কোন প্রতারণা নয়)! মাতাঠাকুরাণীকে আমার সাষ্টাঙ্গ, ইত্যাদি। ইতি
বিবেকানন্দ
৪৩১*
রিজলি
২ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯
প্রিয়—,
জীবন হচ্ছে কতকগুলো ঘাত-প্রতিঘাত ও ভুল-ভাঙার সমষ্টি মাত্র। … জীবনের রহস্য হচ্ছে ভোগ নয়, পরন্তু অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিক্ষালাভ। কিন্তু হায়, যখন সবেমাত্র আমাদের প্রকৃত শিক্ষা আরম্ভ হয় ঠিক তখনি ডাক আসে। এইটি অনেকের নিকট পরজন্মের অস্তিত্ব সম্বন্ধে একটা প্রবল যুক্তি বলে মনে হয়। … সর্বত্রই কাজের উপর দিয়ে একটা ঘূর্ণিবায়ু বয়ে যাওয়া যেন ভাল বলে মনে হয়—তাতে সব পরিষ্কার করে দেয় এবং জিনিষের আসল রূপটি আমাদের সামনে তুলে ধরে। নূতন করে সে কাজ গড়ে তোলা হয়—বজ্রদৃঢ় ভিত্তির উপরে। … আমার একান্ত শুভেচ্ছা জানবে। ইতি
তোমাদের
বিবেকানন্দ
৪৩২*
[মিসেস ওলি বুলকে লিখিত]
রিজলি
৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯
প্রিয়—,
… আমার সম্বন্ধে তো ঐ এক কথা—মা-ই সব জানেন।
তোমাদের
বিবেকানন্দ
৪৩৩*
রিজলি ম্যনর ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯
প্রিয় স্টার্ডি,
আমি লেগেটদের বাড়ীতে শুধু বিশ্রামই উপভোগ করছি, আর কিছুই করছি না। অভেদানন্দ এখানে আছে, খুব খাটছে। দু-এক দিনের মধ্যে সে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে চলে যাবে এক মাসের জন্য। তারপর নিউ ইয়র্কে কাজ করতে আসবে।
তোমার প্রস্তাবিত ধারা অবলম্বনে আমি কিছু করবার চেষ্টায় আছি; কিন্তু হিন্দুদের সম্বন্ধে হিন্দুরই লেখা বই পাশ্চাত্য দেশে কতটা সমাদর পাবে জানি না।
মিসেস জন্সনের মতে ধার্মিক ব্যক্তির রোগ হওয়া উচিত নয়। এখন আবার তাঁর মনে হচ্ছে, আমার ধূমপানাদিও পাপ। মিস মূলারও আমায় ছেড়ে গেছেন—ঐ রোগের জন্য। হয়তো তাঁরাই ঠিক। তুমিও জান, আমিও জানি, আমি যা, আমি তাই। ভারতে অনেকে এই দোষের জন্য এবং ইওরোপীয়দের সঙ্গে আহার করার জন্য আপত্তি জানিয়েছেন, ইওরোপীয়দের সঙ্গে খাই বলে আমায় একটি পারিবারিক দেবালয় থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। আমার তো ইচ্ছা হয়, আমি এমন নমনীয় হই যে, প্রত্যেকের ইচ্ছানুরূপ আকারে গঠিত হতে পারি; কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এমন লোক তো আজও দেখলাম না, যে সকলকে সন্তুষ্ট করতে পারে। বিশেষতঃ যাকে বহু জায়গায় যেতে হয়, তার পক্ষে সকলকে তুষ্ট করা সম্ভব নয়।
আমি যখন প্রথম আমেরিকায় আসি, তখন প্যাণ্টালুন না থাকলে লোকে আমার প্রতি দুর্ব্যবহার করত; তারপর আমাকে শক্ত আস্তিন ও কলার পরতে বাধ্য করা হল—তা না হলে আমায় ছোঁবেই না। তারা আমাকে যা খেতে দিত, তা না খেলে আমায় অদ্ভুত মনে করত। এমনি সব!
অবশ্য সবই আমার কর্মফল, আর এতে আমি খুশীই আছি। কারণ এতে যদিও সময়ের মত যন্ত্রণা হয়, তবু এতে জীবনের আর এক অভিজ্ঞতা হয় এবং তা এ-জীবনেই হোক বা পরজীবনেই হোক, কাজে লাগবে।
আমি নিজে কিন্তু জোয়ার-ভাঁটার মধ্য দিয়েই চলেছি। আমি সর্বদা জানি এবং প্রচার করে এসেছি যে, প্রত্যেক আনন্দের পশ্চাতে আসে দুঃখ—চক্রবৃদ্ধি সুদ সমেত না হলেও আসলটা তো আসবেই। আমি জগতের কাছে প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি, সুতরাং যথেষ্ট ঘৃণার জন্যও আমায় প্রস্তুত থাকতে হবে। আর এতে আমি খুশীই আছি—কারণ আমাকে অবলম্বন করে আমার এই মতবাদই প্রমাণিত হচ্ছে যে, প্রত্যেক উত্থানের সঙ্গে থাকে তার অনুরূপ পতন।
আমার দিক্ থেকে আমি আমার স্বভাব ও নীতিকে সর্বদা আঁকড়ে ধরে থাকি— একবার যাকে বন্ধু বলে গ্রহণ করেছি, সে সর্বদাই আমার বন্ধু। তাছাড়া ভারতীয় রীতি অনুসারে আমি বাইরের ঘটনাবলীর কারণ আবিষ্কারের জন্যই অন্তরে দৃষ্টিপাত করি; আমি জানি যে আমার উপর যত বিদ্বেষ ও ঘৃণার তরঙ্গ এসে পড়ে, তার জন্য দায়ী আমি এবং শুধু আমিই। এমনটি না হয়ে অন্য রকম হওয়া সম্ভব নয়।
তুমি ও মিসেস জন্সন যে আর একবার আমাকে অন্তর্মুখী হবার জন্য অবহিত করেছ, সেজন্য তোমাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
চিরকালের মত স্নেহ ও শুভাকাঙ্ক্ষী
বিবেকানন্দ
৪৩৪*
[মিস মেরী হেলকে লিখিত]
রিজলি ম্যানর
সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯
স্নেহের মেরী,
হ্যাঁ, এসে পৌঁছেছি। গ্রীনএকার থেকে ইসাবেল-এর একখানা চিঠি পেয়েছি। তার সঙ্গে এবং হ্যারিয়েটের সঙ্গে শীঘ্রই দেখা করব। হ্যারিয়েট আগের মতই নীরব। যাই হোক, আমি অপেক্ষা করব, মিঃ উলী (Mr. Woolley) ক্রোরপতি হলেই আমার টাকা দাবী করব। তোমার চিঠিতে মাদার চার্চ বা ফাদার পোপের খুঁটিনাটি খবর কিছুই নেই, কতকগুলি কাগজে আমার সম্বন্ধে কি লিখেছে না লিখেছে, কেবল তাই আছে। কাগজের লেখার প্রতি আমার আগ্রহ অনেকদিন কেটে গিয়েছে; সেগুলি শুধু জনসাধারণের সামনে আমাদের তুলে ধরে ও তাতে আমার বইগুলি—তোমার মতে ‘যা হোক করে’ বিক্রী হয়ে যায়। এখন কি করবার চেষ্টা করছি, জান? ‘ভারত ও ভারতবাসী’ সম্বন্ধে একটি বই লিখছি—ছোট্ট সহজ খোশগল্পে-ভরা একটা কিছু। ফরাসী শিখছি আবার। এ বছর শিখতে না পারলে আগামী বছর পারি-প্রদর্শনীর ব্যাপারটা ঠিকভাবে চালাতে পারব না। হ্যাঁ, এখানে বেশ খানিকটা ফরাসী শিখে নিতে চাই, চাকরেরা পর্যন্ত ফরাসীতে কথা বলে।
মিসেস লেগেটকে তুমি কখনও দেখনি, তাই নয় কি? মহিলাটি সত্যি চমৎকার। আগামী বছর আবার তাঁদের অতিথি হয়ে পারি যাচ্ছি, যেমন প্রথমবারে গিয়েছিলাম।