সতত প্রভুসমীপে তোমার
বিবেকানন্দ
৪১৮*
[খেতড়ির মহারাজকে লিখিত]
মঠ, বেলুড়
১৫ ডিসেম্বর, ১৮৯৮
মহামান্য মহারাজ,
মিঃ দুলিচাঁদের নামে ৫০০-র অর্ডার সহ আপনার সহৃদয় লিপিখানি পেলাম। আজকাল আমি কিছুটা ভাল আছি। জানি না (স্বাস্থের) এই উন্নতি স্থায়ী হবে, কি না।
শুনলাম এই শীতে আপনি কলিকাতায় আসছেন। এ কথা কি সত্যি? নূতন বড়লাটাকে সম্মান জ্ঞাপন করতে অনেক রাজা আসছেন। কাগজ দেখে জানলাম শিখরের (Sikar) মহারাজা ইতোমধ্যেই এখানে এসেছেন।
আপনার ও আপনার স্বজনদের জন্য সর্বদা প্রার্থনা জানাই।
সতত প্রভুসমীপে আপনার
বিবেকানন্দ
৪১৯*
বেলুড়মঠ
১৫ ডিসেম্বর, ১৮৯৮
প্রিয়—,
… ‘মা’ই আমাদের একমাত্র পথপ্রদর্শক। আর যা কিছু ঘটছে বা ঘটবে, সে-সকল তাঁরই বিধানে।
তোমাদের
বিবেকানন্দ
৪২০*
[মিসেস ওলি বুলকে লিখিত]
বৈদ্যনাথ ধাম, দেওঘর
২৯ ডিসেম্বর, ১৮৯৮
প্রিয় ধীরামাতা,
আমি যে আপনার সহযাত্রী হতে পারব না, তা আপনি আগেই জেনেছেন। আপনার সঙ্গে যাবার মত শারীরিক শক্তি আমি সংগ্রহ করতে পারছি না। বুকে যে সর্দি জমেছিল তা এখনও আছে, আর তারই ফলে এখন আমি ভ্রমণে অক্ষম। মোটের উপর এখানে আমি ক্রমে সেরে উঠব বলেই আশা করি।
জানলাম, আমার ভগ্নী গত কয়েক বৎসর যাবৎ বিশেষ সংকল্প নিয়ে নিজের মানসিক উন্নতি সাধনের চেষ্টা করছে। বাঙলা সাহিত্যের ভেতর দিয়ে যা কিছু জানা সম্ভব—বিশেষ করে অধ্যাত্মবাদ সম্বন্ধে, সে-সবই সে শিখেছে, আর তার পরিমাণও বড় কম নয়। ইতোমধ্যে সে নিজের নাম ইংরেজী ও রোমান অক্ষরে সই করতে শিখেছে। এখন তাকে অধিকতর শিক্ষাদান বিশেষ মানসিক পরিশ্রম-সাপেক্ষ; সুতরাং সে কাজ থেকে আমি বিরত হয়েছি। আমি শুধু বিনা কাজে সময় কাটাতে চেষ্টা করছি এবং জোর করেই বিশ্রাম নিচ্ছি।
কয়েকদিনের জন্য আমি দূরে চলে গিয়েছিলাম। এখন আমি মহিলাদের সঙ্গে যোগ দিতে যাচ্ছি। তারপর যাত্রিদলটি যাচ্ছে কোন পাহাড়ের পিছনে এক বনের মধ্যে একটি শান্ত সুন্দর পরিবেশ, যেখানে কুলকুল করে ছোট নদী বয়ে চলেছে। সেখানে তারা দেবদারু গাছের নীচে বুদ্ধের মত আসন করে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে থাকবে।
এ-যাবৎ আমি আপনাকে কেবল শ্রদ্ধাই করেছি, কিন্তু এখন ঘটনা পরম্পরায় মনে হচ্ছে যে, মহামায়া আপনাকে আমার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্য নিযুক্ত করেছেন; সুতরাং এখন শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রগাঢ় বিশ্বাস যুক্ত হয়েছে। এখন থেকে আমি আমার নিজের জীবন এবং কর্মপ্রণালী বিষয়ে মনে করব যে, আপনি মায়ের আজ্ঞাপ্রাপ্ত; সুতরাং সকল দায়িত্ববোধ নিজের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে আপনার ভেতর দিয়ে মহামায়া যে নির্দেশ দেবেন, তাই মেনে চলব।
শীঘ্রই ইওরোপ কিম্বা আমেরিকায় আপনার সহিত মিলিত হতে পারব, এই আশা নিয়ে এই চিঠি শেষ করছি। ইতি
আপনার স্নেহের সন্তান
বিবেকানন্দ
৪২১*
মঠ, বেলুড়
২ ফেব্রুআরী, ১৮৯৯
স্নেহের জো,
তুমি নিশ্চই এর মধ্যে নিউ ইয়র্ক পৌঁছেছ এবং দীর্ঘ অনুপস্থিতির পরে আবার স্বজনদের সঙ্গে মিলেছ। এবারকার যাত্রায় ভাগ্য প্রতি পদে তোমার অনুকূল হয়েছে— এমন কি সমুদ্র পর্যন্ত স্থির ও শান্ত ছিল এবং অবাঞ্ছিত সঙ্গীও জাহাজে বড় কেউ ছিল না। আমার বেলায় ঠিক এর উল্টো। তোমার সঙ্গে যেতে না পেরে আমি নিরাশ হয়ে পড়েছি। বৈদ্যনাথে বায়ু পরিবর্তনে কোন ফল হয়নি। সেখানে আট দিন আট রাত্রি শ্বাসকষ্টে প্রাণ যায় যায়। মৃতকল্প অবস্থায় আমাকে কলিকাতায় ফিরিয়ে আনা হয়। এখানে এসে বেঁচে উঠবার লড়াই শুরু করেছি।
ডাঃ সরকার এখন আমার চিকিৎসা করছেন। আগের মত হতাশ ভাব আর নেই। অদৃষ্টের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছি। এটা আমাদের পক্ষে বড় দুর্বৎসর। যোগানন্দ, যে মায়ের বাড়ীতে থাকত, একমাস ধরে ভুগছে এবং প্রতিদিনই মৃত্যুর প্রতিক্ষা করছে। মা-ই ভাল জানেন। আবার কাজে লেগেছি, ঠিক নিজে করছি না, ছেলেদের পাঠিয়ে দিচ্ছি সারা ভারতে আবার একটা আলোড়ন জাগাবার জন্য। সর্বোপরি তুমি তো জানই, অর্থাভাব হচ্ছে প্রধান অসুবিধা। জো, তুমি এখন আমেরিকায়, আমাদের এখানকার কাজের জন্য কিছু টাকা তুলতে চেষ্টা কর।
মার্চ নাগাদ আবার ঝাঁপিয়ে পড়ছি, এপ্রিলে ইওরোপ যাত্রা। বাকী মা-ই ভাল জানেন।
সারাটা জীবন শরীর ও মনের কষ্ট সয়েছি অনেক, কিন্তু মায়ের অপার করুণা।আমার পাওনার চেয়ে অনন্তগুণ বেশী আনন্দ ও আশীর্বাদ পেয়েছি। মায়ের কাজে অবিরাম সংগ্রাম করছি, মা দেখছেন। আমি সর্বদা লড়াই করে চলেছি এবং যুদ্ধক্ষেত্রেই আমি শেষনিঃশ্বাস ফেলব।
আমার অশেষ প্রীতি এবং আশীর্বাদ—তোমার জন্য চিরদিন।
সতত সত্যরূপে তোমার
বিবেকানন্দ
৪২২*
[ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষকে লিখিত]৮
বেলুড় মঠ, হাওড়া
৬ মার্চ, ১৮৯৯
প্রিয় মহাশয়,
আপনার অত্যন্ত সানুগ্রহ আমন্ত্রণের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আপনার পত্রের উত্তর দিতে এত দেরী হল বলে বিশেষ দুঃখিত।
আমি সে-সময় খুব অসুস্থ ছিলাম এবং যাঁর উপর পত্রের উত্তর দেবার ভার ছিল, তিনি তা দেননি বলেই মনে হয়। আমি এইমাত্র তা জানতে পেরেছি।
আপনাদের সানুগ্রহ আহ্বানের সুযোগ গ্রহণের জন্য আমি এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হইনি। এই শীতকালেই আপনাদের ঐ অঞ্চল (পূর্ববঙ্গ) দেখব বলে সঙ্কল্প করেছিলাম। কিন্তু আমার কর্মের গতি অন্যরূপ। প্রাচীন বাঙলার সভ্যতার কেন্দ্র দেখবার আনন্দ পাবার জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হবে।