এবারকার জন্মোৎসবে বোধ হয় আমি যোগদান করিতে পারিব। আমি পারি বা না পারি, এখন হইতে তার সূত্রপাত করিলে তবে মহা উৎসব হইতে পারিবে। অধিক লোক একত্র হইলে খিচুড়ি প্রভৃতি বসাইয়া খাওয়ান বড়ই অসম্ভব ও খাওয়া দাওয়া করিতেই দিন যায়। এজন্য যদি অধিক লোক হয়, তাহা হইলে দাঁড়া-প্রসাদ, অর্থাৎ একটা সরাতে লুচি প্রভৃতি হাতে হাতে দিলেই যথেষ্ট হইবে। মহোৎসবাদিতে পেটের খাওয়া কম করিয়া মস্তিষ্কের খাওয়া কিছু দিতে চেষ্টা করিবে। যদি ২০ হাজার লোকে চারি আনা করিয়া দেয় তো ৫ হাজার টাকা উঠিয়া যায়। পরমহংসদেবের জীবন এবং তাঁহার শিক্ষা এবং অন্যান্য শাস্ত্র হইতে উপদেশ করিবে ইত্যাদি ইত্যাদি। বাঙলার গ্রামে গ্রামে প্রায় হরিসভা আছে। ঐগুলিকে ধীরে ধীরে লইতে হইবে—বুঝিতে পার কিনা? সর্বদা আমাকে পত্র লিখিবে। অধিক newspaper cutting (খবরের কাগজের অংশ) পাঠাইবার আবশ্যক নাই—অনেক হইয়াছে। ইতি—
বিবেকানন্দ
১২৪*
ওয়াশিংটন
২৩ অক্টোবর, ১৮৯৪
প্রিয় বিহিমিয়া চাঁদ,
আমি এদেশে বেশ ভাল আছি। এতদিনে আমি ইহাদের নিজেদের ধর্মাচার্যগণের মধ্যে একজন হইয়া দাঁড়াইয়াছি। ইহারা সকলে আমাকে এবং আমার উপদেশ পছন্দ করে। সম্ভবতঃ আমি আগামী শীতে ভারতে ফিরিব। আপনি বোম্বাইয়ে মিঃ গান্ধীকে জানেন কি? তিনি এখনও চিকাগোতেই আছেন। ভারতে যেমন আমার অভ্যাস ছিল, এখানেও সেইরূপ আমি সমস্ত দেশের ভিতর ভ্রমণ করিয়া বেড়াইতেছি। প্রভেদ এইটুকু যে, এখানে উপদেশ দিয়া, প্রচার করিয়া বেড়াইতেছি। সহস্র সহস্র ব্যক্তি খুব আগ্রহ ও যত্নের সহিত আমার কথা শুনিয়াছে। এদেশে থাকা খুব ব্যয়সাধ্য, কিন্তু প্রভু সর্বত্রই যোগাড় করিয়া দিতেছেন।
ওখানে (লিমডি, রাজপুতানায়) আমার সমস্ত বন্ধুদের ও আপনাকে ভালবাসা জানাইতেছি। ইতি
বিবেকানন্দ
০২. পত্রাবলী ১২৫-১৩৪
১২৫*
[মিসেস হেলকে লিখিত]
১১২৫ সেণ্ট পল ষ্ট্রীট
বাল্টিমোর
অক্টোবর, ১৮৯৪
মা,
দেখুন, আমি কোথায় এসে পড়েছি। ‘চিকাগো ট্রিবিউনে’ ভারতের একটি টেলিগ্রাফ লক্ষ্য করেছেন কি? এখান থেকে যাব ওয়াশিংটন; সেখান থেকে ফিলাডেলফিয়া। তারপর নিউ ইয়র্ক। ফিলাডেলফিয়ায় আমাকে মিস মেরীর ঠিকানা পাঠাবেন। নিউ ইয়র্ক যাবার পথে তার সঙ্গে দেখা করে যাব। আশা করি এতদিনে আপনি নিরুদ্বেগ হয়েছেন।
আপনার স্নেহের
বিবেকানন্দ
১২৬*
[মিস মেরী হেলকে লিখিত]
১৭০৩ ফার্ষ্ট ষ্ট্রীট
ওয়াশিংটন
প্রিয় ভগিনী,
তুমি অনুগ্রহ করে যে পত্র দুখানি লিখেছিলে সেগুলি পেয়েছি। আজ এখানে, কাল বাল্টিমোরে আমার বক্তৃতা হবে; পুনরায় সোমবার বাল্টিমোরে ও মঙ্গলবার এখানে। তার দিন কয়েক পরে যাচ্ছি ফিলাডেলফিয়া। ওয়াশিংটন থেকে যাবার দিন তোমাকে পত্র দেব। অধ্যাপক রাইটের সঙ্গে দেখা করবার জন্যই ফিলাডেলফিয়ায় মাত্র দিনকয়েক থাকব। ওখান থেকে নিউ ইয়র্ক। বার কয়েক নিউ ইয়র্ক—বোষ্টন দৌড়াদৌড়ি করে ডেট্রয়েট হয়ে চিকাগোয় যাব। তারপর প্রবীণ (Senator) পামার যেমন বলেন—‘সাঁ করে ইংলণ্ডে।’
‘ধর্মে’র ইংরেজী প্রতিশব্দ ‘রিলিজন্’। কলিকাতাবাসিগণ পেট্রোর প্রতি রূঢ় ব্যবহার করায় আমি খুব দুঃখিত। আমি এখানে বেশ সদ্ব্যবহার পেয়েছি, কাজও চমৎকার হচ্ছে। ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেনি। কেবল ভারত থেকে বোঝা বোঝা সংবাদপত্র আসায় বিরক্ত হয়েছিলাম। ‘মাদার চার্চ’ ও মিসেস গার্নসিকে সেগুলি গাড়ী বোঝাই করে পাঠিয়ে দিয়ে ভারতে ওদের নিষেধ করে দিলাম, আর যেন সংবাদপত্র না পাঠায়। ভারতে খুব হইচই পড়ে গিয়েছে। আলাসিঙ্গা লিখেছে, দেশ জুড়ে গ্রামে গ্রামে আমার নাম রটেছে। ফলে পূর্বেকার যে শান্তি আর রইল না; এর পর আর কোথাও বিশ্রাম বা অবসর পাওয়া কঠিন। ভারতের এই সংবাদপত্রগুলি আমাকে শেষ না করে ছাড়বে না দেখছি। কবে কি খেয়েছি, কখন হেঁচেছি—সব কিছু ছাপাবে। অবশ্য বোকামি আমারই। প্রকৃতপক্ষে এখানে এসেছিলাম নিঃশব্দে কিছু অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে; কিন্তু ফাঁদে পড়ে গেছি, আর এখন চুপচাপ থাকতে পাব না। সকলে আনন্দে থাক।
তোমাদের স্নেহের
বিবেকানন্দ
১২৭*
[ইসাবেল ম্যাক্কিণ্ডলিকে লিখিত]
১৭০৮ ডব্লিউ, ১ ষ্ট্রীট, ওয়াশিংটন
২৬ (?) অক্টোবর, ১৮৯৪
প্রিয় ভগিনী,
আমার দীর্ঘ নীরবতার জন্য ক্ষমা করো। ‘মাদার চার্চ’কে কিন্তু আমি নিয়মিত চিঠি লিখে যাচ্ছি। তোমরা সকলে নিশ্চয়ই সুন্দর শীতল আবহাওয়া উপভোগ করছ। আমিও বাল্টিমোর ও ওয়াশিংটনকে খুব উপভোগ করছি। এখান থেকে ফিলাডেলফিয়া যাব। আমার ধারণা ছিল মিস মেরী ফিলাডেলফিয়ায় আছে; সুতরাং আমি তার ঠিকানা চেয়েছিলাম। কিন্তু সে ফিলাডেলফিয়ার কাছাকাছি অন্য কোন জায়গায় আছে। তাই মাদার চার্চের কথামত সে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসার কষ্ট স্বীকার করুক, এ আমি চাই না।
যে মহিলাটির কাছে আমি আছি, তাঁর নাম মিস টটন, মিস হাউ-এর এক ভাইঝি। এখন এক সপ্তাহ তাঁর অতিথি হয়ে থাকব। সুতরাং তুমি তাঁর ঠিকানায় চিঠি লিখতে পার।
এই শীতে জানুআরী-ফেব্রুআরীর কোন এক সময়ে আমার ইংলণ্ডে যাবার ইচ্ছা। লণ্ডনের এক মহিলার কাছে আমার এক বন্ধু আছেন। মহিলাটি তাঁর আতিথ্যগ্রহণের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ওদিকে ফিরে যাবার জন্য ভারত থেকে প্রতিদিন তাগিদ দিচ্ছে।
কার্টুনে পিটুকে কেমন লাগল? কাউকে কিন্তু দেখিও না। পিটুকে নিয়ে এইভাবে তামাশা করা কিন্তু আমাদের দেশের লোকের অন্যায়। তোমার কাছ থেকে চিঠি পেতে সব সময় আমার কত না আগ্রহ; দয়া করে যদি লেখাকে আর একটু স্পষ্ট করার পরিশ্রম করো। দোহাই, এই প্রস্তাবে চটে যেও না যেন।