কিন্নাম রোদিষি সখে ত্বয়ি সর্বশক্তিঃ
আমন্ত্রয়স্ব ভগবন্ ভগদং স্বরূপম্।
ত্রৈলোক্যমেতদখিলং তব পাদমূলে
আত্মৈব হি প্রভবতে ন জড়ঃ কদাচিৎ॥১১
মহা হুঙ্কারের সহিত কার্য আরম্ভ করে দাও। ভয় কি? কার সাধ্য বাধা দেয়? কুর্মস্তারকচর্বণং ত্রিভুবনমুৎপাটয়ামো বলাৎ। কিং ভো ন বিজানাস্যম্মান্—রামকৃষ্ণদাসা বয়ম্।১২ ডর? কার ডর? কাদের ডর?
ক্ষীণাঃ স্ম দীনাঃ সকরুণা জল্পন্তি মূঢ়া জনাঃ
নাস্তিক্যস্ত্বিদন্তু অহহ দেহাত্মবাদাতুরাঃ।
প্রাপ্তাঃ স্ম বীরা গতভয়া অভয়ং প্রতিষ্ঠাং যদা
আস্তিক্যস্ত্বিদন্তু চিনুমঃ রামকৃষ্ণদাসা বয়ম্॥
পীত্বা পীত্বা পরমপীযূষং বীতসংসাররাগাঃ
হিত্বা হিত্বা সকলকলহপ্রাপিণীং স্বার্থসিদ্ধিম্।
ধ্যাত্বা ধ্যাত্বা শ্রীগুরুচরণং সর্বকল্যাণরূপং
নত্বা নত্বা সকলভবনং পাতুমামন্ত্রয়ামঃ॥
প্রাপ্তং যদ্বৈ ত্বনাদিনিধনং বেদোদধিং মথিত্বা
দত্তং যস্য প্রকরণে হরিহর ব্রহ্মাদিদেবৈর্বলম্।
পূর্ণং যত্তু প্রাণসারৈর্ভৌমনারায়ণানাং
রামকৃষ্ণস্তনুং ধত্তে তৎপূর্ণপাত্রমিদং ভোঃ॥১৩
ইংরেজী লেখাপড়া-জানা young men (যুবক)-দের ভিতর কার্য করতে হবে। ‘ত্যাগেনৈকে অমৃতত্বমানশুঃ’ (ত্যাগের দ্বারাই অনেকে অমৃতত্ব লাভ করিয়াছেন)। ত্যাগ, ত্যাগ—এইটি খুব প্রচার করা চাই। ত্যাগী না হলে তেজ হবে না। কার্য আরম্ভ করে দাও। তোমরা যদি একবার গোঁ ভরে কার্য আরম্ভ করে দাও, তা হলে আমি বোধ হয় কিছুদিন বিরাম লাভ করতে পারি। তার জন্যই বোধ হয় কোথাও বসতে পারতুম না—এত হাঙ্গাম করতে হবে না কি? মান্দ্রাজ থেকে আজ অনেক খবর এল। মান্দ্রাজীরা তোলপাড়টা করছে ভাল। মান্দ্রাজের মিটিং-এর খবর সব ‘ইণ্ডিয়ান মিরর’ (Indian Mirror)-এ ছাপিয়ে দিও। আর কি অধিক লিখিব? সব খবর আমাকে খুঁটি-নাটি পাঠাবে। ইতি
বাবুরাম, যোগেন অত ভুগছে কেন?—‘দীনাহীনা’ ভাবের জ্বালায়। ব্যামো-ফ্যামো সব ঝেড়ে ফেলে দিতে বল—এক ঘণ্টার মধ্যে সব ব্যামো-ফ্যামো সেরে যাবে। আত্মাতে কি ব্যামো ধরে না কি? ছুট! ঘণ্টাভর বসে ভাবতে বল—‘আমি আত্মা—আমাতে আবার রোগ কি?’ সব চলে যাবে। তোমরা সকলে ভাব—‘আমরা অনন্ত বলশালী আত্মা’; দেখ দিকি কি বল বেরোয়। ‘দীনহীনা!’ কিসের ‘দীনহীনা’? আমি ব্রহ্মময়ীর বেটা! কিসের রোগ, কিসের ভয়, কিসের অভাব? ‘দীনহীনা’ ভাবকে কুলোর বাতাস দিয়ে বিদেয় কর দিকি। সব মঙ্গল হবে। No negative, all positive, affirmative—I am, God is and everything is in me. I will manifest health, purity, knowledge, whatever I want.১৪আরে, এরা ম্লেচ্ছগুলো আমার কথা বুঝতে লাগল, আর তোমরা বসে বসে ‘দীনাহীনা’ ব্যামোয় ভোগো? কার ব্যামো—কিসের রোগ? ঝেড়ে ফেলে দে! বলে, ‘আমি কি তোমার মত বোকা?’ আত্মায় আত্মায় কি ভেদ আছে? গুলিখোর জল ছুঁতে বড় ভয় পায়। ‘দীনহীনা’ কি এইসি তেইসি—নেই মাঙ্গতা ‘দীনাক্ষীণা’! ‘বীর্যমসি বীর্যং, বলমসি বলম, ওজোঽসি ওজঃ, সহোঽসি সহো ময়ি ধেহি’।১৫ রোজ ঠাকুরপূজার সময় যে আসন প্রতিষ্ঠা—আত্মানম্ অচ্ছিদ্রং ভাবয়েৎ (আত্মাকে অচ্ছিদ্র ভাবনা করিবে)—ওর মানে কি? বল—আমার ভেতর সব আছে, ইচ্ছা হলে বেরুবে। তুমি নিজের মনে মনে বল, বাবুরাম যোগেন আত্মা—তারা পূর্ণ, তাদের আবার রোগ কি? বল ঘণ্টাখানেক দুচার দিন। সব রোগ বালাই দূর হয়ে যাবে। কিমধিকমিতি—
নরেন্দ্র
১১৮*
[মিসেস ওলি বুলকে লিখিত]
হোটেল বেল ভিউ, ইওরোপীয়ান প্ল্যান
বীকন ষ্ট্রীট, বোষ্টন
২৬ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪
প্রিয় মিসেস বুল,
আমি আপনার কৃপালিপি দুইখানিই পেয়েছি। আমাকে শনিবারে মেলরোজ ফিরে গিয়ে সোমবার পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে। মঙ্গলবার আপনার ওখানে যাব। কিন্তু ঠিক কোন্ জায়গাটায় আপনার বাড়ী আমি ভুলে গেছি; আপনি অনুগ্রহ করে যদি আমায় লেখেন। আমার প্রতি অনুগ্রহের জন্য আপনাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না—কারণ, আপনি যা দিতে চেয়েছেন, ঠিক সেই জিনিষটাই আমি খুঁজছিলাম—লেখবার জন্য একটা নির্জন জায়গা। অবশ্য আপনি দয়া করে যতটা জায়গা আমার জন্য দিতে চেয়েছেন, তার চেয়ে কম জায়গাতেই আমার চলে যাবে। আমি যেখানে হয় গুড়িসুড়ি মেরে পড়ে আরামে থাকতে পারব।
আপনার সদা বিশ্বস্ত
বিবেকানন্দ
১১৯*
[ইসাবেল ম্যাক্কিণ্ডলিকে লিখিত]
বোষ্টন
২৬ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
প্রিয় ভগিনী,
ভারতের ডাক ও তোমার চিঠি এইমাত্র পেলাম। ভারত থেকে বেশ কিছু সংবাদপত্রের অংশ কেটে আমার কাছে পাঠান হয়েছে। তুমি সেগুলি পড়ে নিরাপদ স্থানে রেখে দেবে, তাই সেগুলি তোমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ভারতের চিঠি লেখার ব্যাপারে গত কয়েকদিন ধরে ব্যস্ত আছি। আরও দিন কয়েক বোষ্টনে থাকব। প্রীতি ও আশীর্বাদ।
সদা স্নেহবদ্ধ
বিবেকানন্দ
১২০*
যুক্তরাষ্ট্র, আমেরিকা
২৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
প্রিয় আলাসিঙ্গা,
… কলিকাতা থেকে আমার বক্তৃতা ও কথাবার্তা সম্বন্ধে যে-সব বই ছাপা হয়েছে, তাতে একটা জিনিষ আমি দেখতে পাচ্ছি। তাদের মধ্যে কতকগুলি এরূপভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যে, পড়লে বোধ হয় যেন আমি রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করছি। প্রকৃতপক্ষে কিন্তু আমি একজন রাজনীতিক নই, অথবা রাজনৈতিক আন্দোলনকারীও নই। আমার লক্ষ্য কেবল ভেতরের আত্মতত্ত্বের দিকে; সেইটি যদি ঠিক হয়ে যায়, তবে আর সবই ঠিক হয়ে যাবে—এই আমার মত। … অতএব তুমি কলিকাতার লোকদের অবশ্য অবশ্য সাবধান করে দেবে, যেন আমার কোন লেখা বা কথার ভেতর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মিথ্যা করে আরোপিত করা না হয়। কি আহাম্মকি! … শুনলাম, রেভারেণ্ড কালীচরণ বাঁড়ুয্যে নাকি খ্রীষ্টান মিশনরীদের সমক্ষে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, আমি একজন রাজনৈতিক প্রতিনিধি। যদি সর্বসাধারণের সমক্ষে এ কথা বলা হয়ে থাকে, তবে আমার তরফ থেকে তাঁকে প্রকাশ্যে জিজ্ঞাসা করবে, তিনি কলিকাতার যে-কোন সংবাদপত্রে লিখে হয় তা প্রমাণ করুন, নতুবা তাঁর ঐ বাজে আহাম্মকি কথাটা প্রত্যাহার করুন। এটা অন্য ধর্মাবলম্বীকে অপদস্থ করবার খ্রীষ্টান মিশনরীদের একটা অপকৌশলমাত্র। আমি সাধারণভাবে খ্রীষ্টান-পরিচালিত শাসনতন্ত্রকে লক্ষ্য করে সরলভাবে সমালোচনার ছলে কয়েকটা কড়া কথা বলেছি। কিন্তু তার মানে এ নয় যে, আমার রাজনৈতিক বা ঐ রকম কিছু চর্চার দিকে কিছু ঝোঁক আছে, অথবা রাজনীতি বা তৎসদৃশ কিছুর সঙ্গে আমার কোনরূপ সম্পর্ক আছে। যাঁরা ভাবেন, ঐ সব বক্তৃতা থেকে অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে ছাপান একটা খুব জমকাল ব্যাপার, আর যাঁরা প্রমাণ করতে চান যে আমি একজন রাজনৈতিক প্রচারক, তাঁদের আমি বলি, ‘হে ঈশ্বর, আমার বন্ধুদের হাত থেকে আমায় রক্ষা কর।’