বিবেকানন্দ
৩৬৩*
[মিস ম্যাকলাউডকে লিখিত]
আলমোড়া
১১ অগষ্ট, ১৮৯৭
প্রিয় জো,
… হ্যাঁ, জগন্মাতার কার্য পড়ে থাকবে না, কারণ তা সত্য, আন্তরিকতা ও পবিত্রতার উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এখনও তা থেকে বিচ্যুতি ঘটেনি। ঐকান্তিক অকপটতাই হল এর মূলনীতি।
ভালবাসা সহ তোমার
বিবেকানন্দ
৩৬৪
[স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে লিখিত]
আম্বালা
১৯ অগষ্ট, ১৮৯৭
কল্যাণবরেষু,
মান্দ্রাজের কাজ অর্থাভাবে উত্তমরূপে চলিতেছে না শুনিয়া অত্যন্ত দুঃখিত হইলাম। আলাসিঙ্গা ও তাহার ভগিনীপতির টাকা আলমোড়ায় পৌঁছিয়াছে শুনিয়া সুখী হইয়াছি। গুডউইন লিখিতেছে, যে টাকা বাকী আছে লেকচার-এর দরুন—তাহা হইতে কিছু লইবার জন্য, Reception Committee (অভ্যর্থনা সমিতি)-কে চিঠি লিখিতে বলিতেছে। … উক্ত লেকচার-এর টাকা Reception-এ (অভ্যর্থনায়) খরচ করা অতি নীচ কার্য—তাহার বিষয়ে আমি কোন কথা কাহাকেও বলিতে ইচ্ছা করি না। টাকা সম্বন্ধে আমাদের দেশীয় লোক যে কিরূপ, তাহা আমি বিলক্ষণ বুঝিয়াছি। … তুমি নিজে বন্ধুদের—আমার তরফ হইতে এ-কথা বুঝাইয়া বলিবে এবং তাঁহারা যদি খরচ চালান ভাল, নতুবা তোমরা কলিকাতার মঠে চলিয়া আসিবে, অথবা রামনাদে মঠ উঠাইয়া লইয়া যাইবে।
আমি এক্ষণে ধর্মশালার পাহাড়ে যাইতেছি। নিরঞ্জন, দীনু, কৃষ্ণলাল, লাটু ও অচ্যুত অমৃতসরে থাকিবে। সদানন্দকে এতদিন মঠে কেন পাঠাও নাই? যদি সেখানে এখনও থাকে, পরে অমৃতসর হইতে নিরঞ্জন পত্র লিখিলেই তাহাকে পাঞ্জাবে পাঠাইবে। আমি কিছুদিন আরও পাঞ্জাবী পাহাড়ে বিশ্রাম করিয়া পাঞ্জাবে কার্য আরম্ভ করিব। পাঞ্জাব ও রাজপুতানাই কার্যের ক্ষেত্র। কার্য আরম্ভ করিয়াই তোমাদের পত্র লিখিব।
আমার শরীর মধ্যে বড় খারাপ হইয়াছিল। এক্ষণে ধীরে ধীরে শুধরাইতেছে। পাহাড়ে দিনকতক থাকিলেই ঠিক হইয়া যাইবে। আলাসিঙ্গা, জি. জি, গুডউইন, গুপ্ত, সুকুল প্রভৃতি সকলকে আমার ভালবাসা দিও, তুমিও জানিও। ইতি
বিবেকানন্দ
২৬. পত্রাবলী ৩৬৫-৩৭৪
৩৬৫*
মঠ, (বেলুড়?)১২৭
১৩ জুলাই, ১৮৯৭
প্রিয় মিসেস বুল,
আমার শরীর বিশেষ ভাল যাচ্ছে না; যদিও খানিকটা বিশ্রাম পেয়েছি, তবু আগামী শীতের আগে পূর্ব শক্তি ফিরে পাব বলে বোধ হয় না। জো-র একখানি পত্রে জানলাম যে, আপনারা দুজন ভারতবর্ষে আসছেন। বলাই বাহুল্য আপনাদের এখানে দেখতে পেলে আমি আনন্দিত হব; কিন্তু গোড়া থেকেই জেনে রাখা ভাল যে, ভারতবর্ষ পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে নোংরা এবং অস্বাস্থ্যকর। বড় নগরাদি ছাড়া অন্যত্র ইওরোপীয় জীবনযাত্রার সুখ-সুবিধা নেই বললেই চলে।
ইংলণ্ড থেকে সংবাদ পেলাম যে, মিঃ স্টার্ডি অভেদানন্দকে নিউ ইয়র্কে পাঠাচ্ছেন। আমাকে বাদ দিয়ে ইংলণ্ডের কাজ চলা অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে। এক্ষণে একটি মাত্র পত্রিকা মিঃ স্টার্ডি চালাবেন। এই মরসুমেই আমি ইংলণ্ডে যাবার আগেই ব্যবস্থা করেছিলাম, কিন্তু ডাক্তারদের বোকামিতে বাধা পেলাম। ভারতবর্ষের কাজ চলছে।
ইওরোপ কিম্বা আমেরিকার কেউ ঠিক এখনই এদেশের কোন কাজে আসবে বলে আমার তো মনে হয় না। তা ছাড়া কোন পাশ্চাত্য দেশবাসীর পক্ষে এদেশের জলবায়ু সহ্য করা বিশেষ কষ্টসাধ্য। এনি বেস্যাণ্টের অসাধারণ শক্তি থাকলেও তিনি কেবল থিওসফিষ্টদের মধ্যে কাজ করেন; ফলে এদেশে ম্লেচ্ছদের যে-রকম সমাজবর্জিত হয়ে থাকা প্রভৃতি নানা অসম্মান ভোগ করতে হয়, তাঁকেও তাই করতে হচ্ছে। এমন কি গুডউইন পর্যন্ত মাঝে মাঝে যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে ওঠে এবং তাকে ঠিক করে দিতে হয়। গুডউইন বেশ কাজ করছে, সে পুরুষ বলে লোকের সঙ্গে মিশতে বাধা নেই। কিন্তু এদেশে পুরুষদের সমাজে মেয়েদের কোন স্থান নেই, মেয়েরা শুধু নিজেদের মধ্যেই কাজ করতে পারে। যে-সব ইংরেজ বন্ধু এদেশে এসেছেন, তাঁরা এ যাবৎ কোন কাজেই লাগেননি; ভবিষ্যতেও তাঁদের দ্বারা কিছু হবে কিনা, জানি না। এ সকল জেনেও যদি কেউ চেষ্টা করতে রাজী থাকে, তবে তাকে সাদরে আহ্বান করি।
সারদানন্দ যদি আসতে চায় তো চলে আসুক, আমার স্বাস্থ্য এখন ভেঙে গেছে; সুতরাং সে এলে সব কাজ গুছোতে বিশেষ সাহায্য হবে, সন্দেহ নেই।
দেশে ফিরে গিয়ে যাতে এদেশের জন্য কাজ করতে পারেন—এই উদ্দেশ্যে মিস মার্গারেট নোব্ল্ নামে একটি ইংরেজ মেয়ে ভারতে এসে এখানকার অবস্থার সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয়-লাভের জন্য খুব উৎসুক হয়েছে। আপনারা যদি লণ্ডন হয়ে আসেন, তবে আপনার সঙ্গে আসার জন্য তাকে লিখেছি। বড় অসুবিধা এই যে, দূর থেকে কখনও আপনারা এখানকার অবস্থা পুরোপুরি বুঝতে পারবেন না। দুটি দেশের ধরন এতই স্বতন্ত্র যে, আমেরিকা কিম্বা ইংলণ্ড থেকে তার কোন ধারণা করা অসম্ভব।
ভাববেন যে, আপনারা যেন আফ্রিকার অভ্যন্তরে যাবার জন্য বেরিয়েছেন, তারপর যদি দৈবাৎ উৎকৃষ্ট কিছু পান তো সেটা আশাতিরিক্ত। ইতি
আপনাদের
বিবেকানন্দ
৩৬৬
[স্বামী ব্রহ্মানন্দকে লিখিত]
অমৃতসর
২ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৭
অভিন্নহৃদয়েষু,
যোগেন এক পত্রে … বাগবাজারে … বাটী ২০,০০০ টাকায় … কিনিতে বলেন। … ঐ বাড়ী কিনিলেও বেশ হাঙ্গাম আছে, যথা—ভেঙেচুরে বৈঠকখানাটিকে একটি হল করা এবং অন্যান্য বন্দোবস্ত করা। আবার ঐ বাটী অতি প্রাচীন ও জীর্ণ। যাহা হউক গিরিশবাবু ও অতুলের সঙ্গে পরামর্শ করিয়া যাহা ভাল হয় করিবে। আমি সদলে অদ্য কাশ্মীরে চলিলাম দুইটার গাড়ীতে। মধ্যে ধর্মশালা পাহাড়ে যাইয়া শরীর অনেক সুস্থ হইয়াছে এবং টনসিল, জ্বর প্রভৃতি একেবারে আরাম হইয়া গিয়েছে। …