তোমাদের
বিবেকানন্দ
১১২*
[মিঃ ল্যাণ্ডস্বার্গকে৬১ লিখিত]
বেল ভিউ হোটেল, বষ্টন
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
অভিন্নহৃদয়েষু,
তুমি কিছু মনে করিও না, গুরু হিসাবে তোমাকে উপদেশ দিবার অধিকার আমার আছে বলিয়াই আমি জোর করিয়া বলিতেছি যে, তুমি নিজের ব্যবহারের জন্য কিছু বস্ত্রাদি অবশ্য ক্রয় করিবে, কারণ এগুলির অভাব এদেশে কোন কাজ করার পক্ষে তোমার প্রতিবন্ধকস্বরূপ হইয়া দাঁড়াইবে। একবার কাজ শুরু হইয়া গেলে অবশ্য তুমি ইচ্ছামত পোষাক পরিধান করিতে পার, তাহাতে কেহ কোন আপত্তি করিবে না।
আমাকে ধন্যবাদ দিবার কোন প্রয়োজন নাই, কারণ ইহা আমার কর্তব্যমাত্র। হিন্দু আইন অনুসারে শিষ্যই সন্ন্যাসীর উত্তরাধিকারী, যদি সন্ন্যাসগ্রহণের পূর্বে তাহার কোন পুত্রও জন্মিয়া থাকে, তথাপি সে উত্তরাধিকারী নহে। এ সম্বন্ধ খাঁটি আধ্যাত্মিক সম্বন্ধ—ইয়াঙ্কির ‘অভিভাবকগিরি’ ব্যবসা নহে, বুঝিতেই পারিতেছ।
তোমার সাফল্যের জন্য প্রার্থনা ও আশীর্বাদ করি। ইতি
তোমাদের
বিবেকানন্দ
১১৩*
[মিস মেরী হেলকে লিখিত]
হোটেল বেল ভিউ
বীকন ষ্ট্রীট, বষ্টন
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
প্রিয় ভগিনী,
আজ সকালে তোমার প্রীতিপূর্ণ পত্রখানি পেলাম। প্রায় সপ্তাহখানেক হল এই হোটেলে আছি। আরও কিছুকাল বষ্টনে থাকব। গাউন তো এতগুলো রয়েছে, সেগুলি বয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ নয়। এনিস্কোয়ামে যখন খুব ভিজে যাই, তখন পরনে ছিল সেই ভাল কালো পোষাক—যেটি তোমার খুব পছন্দ। মনে হয়, এটি আর নষ্ট হচ্ছে না; আমার নির্গুণ ব্রহ্মধ্যান এর ভিতরেও প্রবিষ্ট হয়েছে! গ্রীষ্মকাল খুব আনন্দে কাটিয়েছ জেনে বিশেষ খুশী হলাম। আমি তো ভবঘুরের মত ঘুরেই বেড়াচ্ছি। এবহিউ-লিখিত তিব্বতদেশীয় ভবঘুরে লামাদের বর্ণনা সম্প্রতি পড়ে খুব আমোদ পেলাম—আমাদের সন্ন্যাসী-সম্প্রদায়ের যথার্থ চিত্র। লেখক বলেন এরা অদ্ভুত লোক, খুশীমত এসে হাজির হয়, যার সঙ্গে হোক, খায়—নিমন্ত্রিত বা অনিমন্ত্রিত। যেখানে খুশী থাকবে, যেখানে খুশী চলে যাবে। এমন পাহাড় নেই যা তারা আরোহণ করেনি, এমন নদী নেই যা তারা অতিক্রম করেনি। তাদের অবিদিত কোন জাতি নেই, অকথিত কোন ভাষা নাই। লেখকের অভিমত, যে শক্তিবশে গ্রহগুলি সদা ঘূর্ণায়মান তারই কিয়দংশ ভগবান্ এদের দিয়ে থাকবেন। আজ এই ভবঘুরে লামাটি লেখবার আগ্রহ দ্বারা আবিষ্ট হয়ে সোজা একটি দোকানে গিয়ে লেখবার যাবতীয় উপকরণ সহ বোতাম-লাগানো কাঠের ছোট দোয়াত সমেত একটি পোর্টফোলিও কিনে এনেছে। শুভ সঙ্কল্প। মনে হয়, গত মাসে ভারত হতে প্রচুর চিঠিপত্র এসেছে। আমার দেশবাসিগণ আমার কাজের এরূপ তারিফ করায় খুব খুশী হলাম। তারা যথেষ্ট করেছে। আর কিছু তো লেখবার দেখতে পাচ্ছি না। অধ্যাপক রাইট, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা খুব খাতির যত্ন করেছিলেন, সর্বদা যেমন করে থাকেন। ভাষায় তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারছি না। এ পর্যন্ত সবই ভাল যাচ্ছে। তবে একটু বিশ্রী সর্দি হয়েছিল। এখন প্রায় নেই। অনিদ্রার জন্য ক্রিশ্চান সায়েন্স অনুসরণ করে বেশ ফল পেয়েছি। তোমরা সুখী হও। ইতি
চিরস্নেহশীল ভ্রাতা
বিবেকানন্দ
পুঃ—মাকে জানিও, এখন আর কোট চাই না।
বি
১১৪*
[মিসেস ওলি বুলকে লিখিত]
হোটেল বেল ভিউ
বীকন ষ্ট্রীট, বষ্টন
১৯ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
মা সারা,
আমি তোমাকে মোটেই ভুলে যাইনি। তুমি কি মনে কর, আমি কখনও এতটা অকৃতজ্ঞ হতে পারি? তুমি আমাকে তোমার ঠিকানা দাওনি, তবু মিস ফিলিপ্স্ ল্যাণ্ডসবার্গকে প্রেরিত সংবাদ থেকে তোমার খবর পাচ্ছি। বোধ হয় মান্দ্রাজ থেকে আমায় যে অভিনন্দন পাঠিয়েছে, তা তুমি দেখেছ। আমি তোমাকে পাঠাবার জন্য খানকতক পাঠাচ্ছি ল্যাণ্ডসবার্গের কাছে।
হিন্দু সন্তান কখনও মাকে টাকা ধার দেয় না, সন্তানের ওপর মায়ের সর্ববিধ অধিকার আছে, সন্তানেরও মায়ের ওপর। সেই তুচ্ছ ডলার কটি আমাকে ফিরিয়ে দেবার কথা বলাতে তোমার ওপর আমার বড় রাগ হয়েছে। তোমার ধার আমি কোন কালে শুধতে পারব না।
এখন আমি বষ্টনের কয়েক জায়গায় বক্তৃতা দিচ্ছি। এখন চাই এমন একটা জায়গা, যেখানে বসে আমার ভাবরাশি লিপিবদ্ধ করতে পারি। বক্তৃতা যথেষ্ট হল, এখন আমি লিখতে চাই। আমার বোধ হয়, তার জন্য আমাকে নিউ ইয়র্কে যেতে হবে। মিসেস গার্নিস আমার প্রতি বড়ই সদয় ব্যবহার করেছিলেন এবং তিনি সদাই আমায় সাহায্য করতে ইচ্ছুক। আমি মনে করছি, তাঁর ওখানে গিয়ে বসে বসে বই লিখব।
তোমার সদা স্নেহাস্পদ
বিবেকানন্দ
পুঃ—অনুগ্রহ করে আমায় লিখবে, গার্নসিরা শহরে ফিরেছে, না এখনও ফিশকিলে আছে। ইতি
বি