শুভাকাঙ্ক্ষী
বিবেকানন্দ
পুঃ—সকলকে আমার ভালবাসা। আমি কাকেও কখনও ভুলি না। তবে নেহাত অলস বলে সকলকে আলাদা আলাদা লিখতে পারি না। প্রভু তোমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
বি
পুঃ—তোমার ট্রিপ্লিকেনের ঠিকানা অথবা যদি কোন সভাসমিতি স্থাপন করে থাকো, তার ঠিকানা আমায় পাঠাবে।
বি
১০৬*
[হেল ভগিনীগণকে লিখিত]
সোয়াম্স্কট্
২৬ জুলাই, ১৮৯৪
প্রিয় খুকীরা
দেখো, আমার চিঠিগুলো যেন নিজেদের বাইরে না যায়। ভগিনী মেরীর এক সুন্দর পত্র পেয়েছি। দেখছ তো সমাজে আমি কি রকম বেড়ে চলেছি। এ সব ভগিনী জিনীর (Jeany) শিক্ষার ফলে। খেলা দৌড়ঝাঁপে সে ধুরন্ধর, মিনিটে ৫০০ হিসাবে ইতরভাষা ব্যবহারে দক্ষ, কথার তোড়ে অদ্বিতীয়, ধর্মের বড় ধার ধারে না, তবে ঐ যা একটু-আধটু। সে আজ বাড়ী গেল, আমি গ্রীনএকারে যাচ্ছি। মিসেস ব্রীডের কাছে গিয়েছিলাম, মিসেস স্টোন সেখানে ছিলেন। মিসেস পুলম্যান প্রভৃতি আমার এখানকার হোমরাচোমরা বন্ধুগণ মিসেস স্টোনের কাছে আছেন। তাঁদের সৌজন্য আগের মতই। গ্রীনএকার থেকে ফেরবার পথে কয়েক দিনের জন্য এনিসস্কোয়ামে যাব মিসেস ব্যাগলির সঙ্গে দেখা করবার জন্য। দূর ছাই, সব ভুলে যাই; সমুদ্রে স্নান করছি ডুবে ডুবে মাছের মত—বেশ লাগছে। ‘প্রান্তর মাঝে’ … (‘dans la plaine’) ইত্যাদি কি ছাইভস্ম গানটি হ্যারিয়েট আমায় শিখিয়েছিল; জাহান্নমে যাক! এক ফরাসী পণ্ডিত আমার অদ্ভুত অনুবাদ শুনে হেসে কুটিপাটি। এইরকম করে তোমরা আমায় ফরাসী শিখিয়েছিলে, বেকুফের দল। তোমরা ডাঙায় তোলা মাছের মত খাবি খাচ্ছ তো? বেশ হয়েছে, গরমে ভাজা হয়ে যাচ্ছ। আঃ এখানে কেমন সুন্দর ঠাণ্ডা! যখন ভাবি তোমরা চার জনে গরমে ভাজা পোড়া সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছ, আর আমি এখানে কি তোফা ঠাণ্ডা উপভোগ করছি, তখন আমার আনন্দ শতগুণ বেড়ে যায়। আ হা হা হা।
নিউ ইয়র্ক প্রদেশের কোন স্থানে মিস ফিলিপ্সের পাহাড় হ্রদ নদী জঙ্গলে ঘেরা সুন্দর একটি স্থান আছে। আর কি চাই! আমি যাচ্ছি স্থানটিকে হিমালয়ে পরিণত করে সেখানে একটি মঠ খুলতে—নিশ্চয়ই। তর্জন গর্জন, লাথি ঝগড়ায় তোলপাড় এই আমেরিকায় ধর্মের মতভেদের আবর্তে আর একটি নূতন বিরোধের সৃষ্টি না করে এদেশ থেকে যাচ্ছি না।
ভ্রাতঃ, আপনার মত বলিষ্ঠ হৃদয় সহজে মেলে না। এটা একটা আজব জায়গা—আমাদের এই দুনিয়াটা। তবে এই দেশে যেখানে আমি সম্পূর্ণ অপরিচিত, সামান্য ‘পরিচয়পত্র’ও যেখানে আমার নেই, সেখানে এখানকার মানুষের কাছ থেকে যে পরিমাণে সহৃদয়তা পেয়েছি, তার জন্য সব জড়িয়ে আমি ঈশ্বরের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। শেষ পর্যন্ত সব কিছু মঙ্গলমুখী।
হ্রদটির ক্ষণিক স্মৃতি কখনও কখনও তোমাদের মনে জাগে নিশ্চয়। দুপুরের গরমে ভাববে হ্রদের একেবারে নীচে তলিয়ে যাচ্ছ, যতক্ষণ না বেশ স্নিগ্ধ বোধ কর। তারপর সেই তলদেশে স্নিগ্ধতার মাঝে চুপ করে পড়ে থাকবে—তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে, কিন্তু নিদ্রাভিভূত হবে না—স্বপ্ন-বিজড়িত অর্ধচেতন অবস্থায়। ঐ যেমন আফিমের নেশায় হয়—অনেকটা সেই রকম। ভারী চমৎকার। তার উপর খুব বরফ-ঠাণ্ডা জলও খেতে থাকো। মাংসপেশীতে এক একবার এমন খিল ধরে যাতে হাতী পর্যন্ত কাবু হয়ে পড়বে; ভগবান্ আমাকে রক্ষা করুন। আর আমি ঠাণ্ডা জলে নাবচি না।
স্নেহের আধুনিকারা! তোমরা সকলে সুখী হও—সর্বদা এই প্রার্থনা করি।
বিবেকানন্দ
১০৭*
[মিস মেরী ও মিস হ্যরিয়েট হেলকে লিখিত]
গ্রীনএকার ইন, ইলিয়ট, মেন
৩১ জুলাই, ১৮৯৪
প্রিয় ভগিনীগণ,
আমি অনেকদিন তোমাদের কোন পত্রাদি লিখিনি, লিখবারও বড় কিছু ছিল না। এটা একটা বড় সরাই ও খামার বাড়ী; এখানে ক্রিশ্চান সায়েণ্টিস্টরা৫৯ তাদের সমিতির বৈঠক বসিয়েছে। যে মহিলাটির মাথায় এই বৈঠকের কল্পনাটা প্রথমে আসে, তিনি গত বসন্তকালে নিউ ইয়র্কে আমাকে এখানে আসবার জন্য নিমন্ত্রণ করেন, তাই এখানে এসেছি। এ জায়গাটি বেশ সুন্দর ও ঠাণ্ডা, তাতে কোন সন্দেহ নাই, আর আমার চিকাগোর অনেক পুরাতন বন্ধু এখানে রয়েছেন। মিসেস মিল্স্ ও মিস স্টকহ্যামের কথা তোমাদের স্মরণ থাকতে পারে। তাঁরা এবং আর কতকগুলি ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা নদীতীরে খোলা জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে বাস করছেন। তাঁরা খুব স্ফূর্তিতে আছেন এবং কখনও কখনও তাঁরা সকলেই সারাদিন, যাকে তোমরা বৈজ্ঞানিক পোষাক বল, তাই পরে থাকেন। বক্তৃতা প্রায় প্রত্যহই হয়। বষ্টন থেকে মিঃ কলভিল নামে একজন ভদ্রলোক এসেছেন। লোকে বলে, তিনি প্রত্যহ ভাবাবিষ্ট হয়ে বক্তৃতা করে থাকেন—‘ইউনিভার্সাল ট্রুথ’-এর সম্পাদিকা, যিনি ‘জিমি মিল্স্’ প্রাসাদের উপর তলায় থাকতেন—এখানে এসে বসবাস করছেন। তিনি উপাসনা পরিচালনা করছেন আর মনঃশক্তিবলে সব রকমের ব্যারাম ভাল করবার শিক্ষা দিচ্ছেন—মনে হয়, এঁরা শীঘ্রই অন্ধকে চক্ষুদান এবং এই ধরনের নানা কর্ম সম্পাদন করবেন! মোট কথা, এই সম্মিলনটি এক অদ্ভুত রকমের। এরা সামাজিক বাঁধাবাঁধি নিয়ম বড় গ্রাহ্য করে না—সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ও বেশ আনন্দে আছে। মিসেস মিল্স্ বেশ প্রতিভাসম্পন্না, অন্যান্য অনেক মহিলাও তদ্রূপ। … ডেট্রয়েটবাসিনী আর একটি উচ্চশিক্ষিতা মহিলা সমুদ্রতীর থেকে পনর মাইল দূরবর্তী একটি দ্বীপে আমায় নিয়ে যাবেন—আশা করি তথায় আমাদের পরমানন্দে সময় কাটবে। মিস আর্থার স্মিথ এখানে রয়েছেন। মিস গার্নসি সোয়াম্স্কট থেকে বাড়ী গেছেন। আমি এখান থেকে এনিস্কোয়াম যেতে পারি বোধ হয়।