আমি এইবার নিয়মিতভাবে কাজ করব মনে করছি। কলিকাতায় লেখ, তারা আমার ও আমার কাজ সম্বন্ধে কাগজে যা কিছু বেরোয়, কিছুমাত্র বাদ না দিয়ে যেন পাঠায়, তোমরাও মান্দ্রাজ থেকে পাঠাতে থাক। খুব আন্দোলন চালাও। কেবল ইচ্ছাশক্তিতেই সব হবে। কাগজ ছাপানো ও অন্যান্য খরচের জন্য মাঝে মাঝে তোমাদের কাছে টাকা পাঠাবার চেষ্টা করব। সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে তোমাদের একটা সমিতি স্থাপন করতে হবে—তার নিয়মিত অধিবেশন হওয়া চাই, আর আমাকে যত পার, সব খবরাখবর লিখবে। আমিও যাতে নিয়মিতভাবে কাজ করতে পারি, তার চেষ্টা করছি। এই বছরে অর্থাৎ আগামী শীত ঋতুতে আমি অনেক টাকা পাব—সুতরাং আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। ইতোমধ্যে তোমরা এগিয়ে চল। তোমরা পল কেরসকে (Dr. Paul Carus) একখানা পত্র লিখো, আর যদিও তিনি আমার বন্ধুই আছেন, তথাপি তোমরা তাঁকে আমাদের জন্য কাজ করবার অনুরোধ কর। মোট কথা যতদূর পার আন্দোলন চালাও—কেবল সত্যের অপলাপ না হয়, এ বিষয়ে লক্ষ্য রেখো। বৎসগণ, কাজে লাগো—তোমাদের ভিতর আগুন জ্বলে উঠবে। মিসেস হেল (Mrs. G. W. Hale) আমার পরম বন্ধু—আমি তাঁকে ‘মা’ বলি এবং তাঁর কন্যাদের ‘ভগিনী’ বলি। তাঁকেও একখানা প্রস্তাব পাঠিয়ে দিও—আর একখানা পত্র লিখে তোমাদের তরফ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ দিও। সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কাজ করবার ভাবটা আমাদের চরিত্রে একেবারে নাই, এটা যাতে আসে—তার চেষ্টা করতে হবে। এটি করবার রহস্য হচ্ছে ঈর্ষার অভাব। সর্বদাই তোমার ভ্রাতার মতে মত দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে—সর্বদাই যাতে মিলে মিশে শান্তভাবে কাজ হয়, তার চেষ্টা করতে হবে। এটাই সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কাজ করবার সমগ্র রহস্য। সাহসের সহিত যুদ্ধ কর। জীবন তো ক্ষণস্থায়ী—একটা মহৎ উদ্দেশ্যে জীবনটা সমর্পণ কর।
তুমি নরসিংহ সম্বন্ধে কিছু লেখনি কেন? সে এক রকম অনশনে দিন কাটাচ্ছে। আমি তাকে কিছু দিয়েছিলাম, তারপর সে কোথায় যে চলে গেল, কিছু জানি না; সে আমায় কিছু লেখে না। অক্ষয় ভাল ছেলে, আমি তাকে খুব ভালবাসি। থিওসফিষ্টদের সঙ্গে বিবাদ করবার আবশ্যক নেই। আমি যা কিছু লিখি, তাদের কাছে গিয়ে সব বল না। আহাম্মক! থিওসফিষ্টরা আগে এসে আমাদের পথ পরিষ্কার করে দিয়েছে—জান তো? জজ৫৮ হচ্ছেন হিন্দু আর কর্ণেল অলকট বৌদ্ধ। জজ এখানকার একজন খুব উপযুক্ত ব্যক্তি। এখন হিন্দু থিওসফিষ্টদের বল, তারা যেন জজকে সমর্থন করে। এমন কি, যদি তোমরা তাঁকে সমধর্মাবলম্বী বলে সম্বোধন করে এবং তিনি আমেরিকায় হিন্দুধর্মপ্রচারের জন্য যে পরিশ্রম করেছেন, সেজন্য ধন্যবাদ দিয়ে এক পত্র লিখতে পার, তাতে তাঁর বুকটা দশ হাত হয়ে উঠবে। আমরা কোন সম্প্রদায়ে যোগ দেব না, কিন্তু সকল সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করব ও সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করব।
এটা স্মরণ রেখো যে, আমি এখন ক্রমাগত ঘুরে বেড়াচ্ছি, সুতরাং ‘৫৪১ ডিয়ারবর্ন এভিনিউ, চিকাগো’ হচ্ছে আমার কেন্দ্র। সর্বদা ঐ ঠিকানাতেই পত্র দেবে, আর ভারতে যা কিছু হচ্ছে—সব খুঁটিনাটি আমাকে জানাবে আর কাগজে আমাদের সম্বন্ধে যা কিছু বার হচ্ছে, তার একটা টুকরো পর্যন্ত পাঠাতে ভুলো না। আমি জি. জি.-র কাছ থেকে একখানি সুন্দর পত্র পেয়েছি। প্রভু এই বীরহৃদয় ও আদর্শচরিত্র বালকদের আশীর্বাদ করুন। বালাজী, সেক্রেটারী এবং আমাদের সকল বন্ধুকে আমার ভালবাসা জানাবে। কাজ কর, কাজ কর—সকলকে তোমার ভালবাসার দ্বারা জয় কর। আমি মহীশূরের রাজাকে একখানা পত্র লিখেছি ও কয়েকখানা ফটোগ্রাফ পাঠিয়েছি। তোমাদের কাছে যে ফটো পাঠিয়েছি, তা নিশ্চয়ই এতদিনে পেয়েছ। একখানা রামনাদের রাজাকে উপহার দিও—তাঁর ভেতর যতটা ভাব ঢোকাতে পার, চেষ্টা কর। খেতড়ির রাজার সঙ্গে সর্বদা পত্রব্যবহার রাখবে। বিস্তারের চেষ্টা কর। মনে রেখো, জীবনের একমাত্র চিহ্ন হচ্ছে গতি ও উন্নতি। আমি তোমার চিঠি আসতে বিলম্ব দেখে প্রায় নিরাশ হয়ে পড়েছিলাম—এখন দেখছি, তোমার আহাম্মকিতেই এত দেরী হয়েছে। বুঝতে পারছ তো, আমি ক্রমাগত ঘুরছি আর চিঠি-বেচারাকে ক্রমাগত নানাস্থান খুঁজে তবে আমাকে বার করতে হয়। আরও তোমাদের এটি বিশেষ করে মনে রাখতে হবে যে, সব কাজ দস্তুরমত নিয়ম-মাফিক করতে হবে। যে প্রস্তাবগুলি সভায় পাস হয়েছে, সেগুলি ধর্মমহাসভার সভাপতি, চিকাগো, ডাঃ ব্যারোজ (Dr. J. H. Barrows)-কে পাঠাবে এবং তাঁকে অনুরোধ করবে যে, ঐ প্রস্তাব ও পত্র যেন তিনি খবরের কাগজে ছাপান।
ডাঃ ব্যারোজকে ও ডাঃ পল কেরসকে ঐগুলি ছাপার জন্য অনুরোধ-পত্রও যেন ঐরূপ সভার প্রতিনিধিস্থানীয় কারও কাছ থেকে যায়। বিশ্ব মহামেলার (ডেট্রয়েট, মিশিগান) সভাপতি, সেনেটার পামার (Palmer)-কে পাঠাবে—তিনি আমার প্রতি বড়ই সহৃদয় ব্যবহার করেছিলেন। মিসেস ব্যাগ্লি (J. J. Bagley)-কে ওয়াশিংটন এভিনিউ, ডেট্রয়েট, এই ঠিকানায় একখানা পাঠাবে, আর তাঁকে অনুরোধ করবে যে, সেটা যেন কাগজে প্রকাশ করা হয় ইত্যাদি। খবরের কাগজ প্রভৃতিতে দেওয়া গৌণ—দস্তুর মাফিক পাঠানোই হচ্ছে আসল অর্থাৎ ব্যারোজ প্রভৃতি প্রতিনিধিকল্প ব্যক্তিগণের হাত দিয়ে আসা চাই, তবেই সেটি একটি নিদর্শনরূপে গণ্য হবে। খবরের কাগজে অমনি অমনি কিছু বেরুলে সেটি নিদর্শনরূপে গণ্য হয় না। সব চেয়ে নিয়ম অনুযায়ী উপায় হচ্ছে ডাঃ ব্যারোজকে পাঠানো ও তাঁকে কাগজে প্রকাশ করতে অনুরোধ করা। আমি এসব কথা লিখছি, তার কারণ এই যে, আমার মনে হয়, তোমরা অন্য জাতের আদব-কায়দা জান না। যদি কলিকাতা থেকেও বড় বড় নাম দিয়ে—এ রকম সব আসে, তাহলে আমেরিকানরা যাকে বলে ‘boom’, তাই পাব (আমার স্বপক্ষে খুব হুজুক মেচে যাবে) আর যুদ্ধের অর্ধেক জয় হয়ে যাবে। তখন ইয়াঙ্কিদের বিশ্বাস হবে যে, আমি হিন্দুদের যথার্থ প্রতিনিধি, আর তখনই তারা তাদের গাঁট থেকে পয়সা বার করবে। স্থিরভাবে লেগে থাকো—এ পর্যন্ত আমরা অদ্ভুত কার্য করেছি। হে বীরগণ, এগিয়ে যাও, আমরা নিশ্চয় জয়লাভ করব। মান্দ্রাজ থেকে যে কাগজখানা বার হবার কথা হচ্ছিল, তার কি হল? সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে সভাসমিতি স্থাপন করতে থাকো, কাজে লেগে যাও—এই একমাত্র উপায়। কিডিকে দিয়ে লেখাতে থাকো, তাতেই তার মেজাজ ঠিক থাকবে। এ সময়টা বেশী বক্তৃতা করবার সুবিধা নেই, সুতরাং এখন আমাকে কলম ধরে বসে লিখতে হবে। অবশ্য সর্বক্ষণই আমাকে কঠিন কার্যে নিযুক্ত থাকতে হবে, তারপর শীত ঋতু এলে লোকে যখন তাদের বাড়ী ফিরবে, তখন আবার বক্তৃতাদি শুরু করে এবার সভাসমিতি স্থাপন করতে থাকব। সকলকে আমার আশীর্বাদ ও ভালবাসা। খুব খাটো। সম্পূর্ণ পবিত্র হও—উৎসাহাগ্নি আপনিই জ্বলে উঠবে।