আমি আর লিখতে পারছি না, বাকী তিনি নিজে বলুন গে।
ইতি নরেন্দ্র
পুঃ—একটা বড় খাতা রাখবে এবং তাহাতে যখন যে স্থান হইতে কোন পত্র আসে তাহার একটা চুম্বক লিখিয়া রাখিবে। তাহা হইলে উত্তর দিবার বেলায় ভুলচুক হইবে না। Organisation (সঙ্ঘ) শব্দের অর্থ division of labour (শ্রমবিভাগ)—প্রত্যেকে আপনার আপনার কাজ করে এবং সকল কাজ মিলে একটা সুন্দর ভাব হয়। …
বিশেষ অনুধাবন করে যা যা লিখলাম তা করিবে। আমার কবিতা৫৭ কপি করে রেখো, পরে আরও পাঠাব।
১০৩*
[মিসেস হেলকে লিখিত]
C/o. ডাঃ ই. গার্নসি
Fishkill Landing, N. Y.
জুলাই, ১৮৯৪
মা,
কাল এখানে এসেছি। কয়েক দিন থাকব। নিউ ইয়র্কে আপনার এক পত্র পেয়েছিলাম, কিন্তু ‘ইণ্টিরিয়র’ পাইনি। তাতে খুশীই হয়েছি; কারণ আমি এখনও নিখুঁত হইনি; আর প্রেসবিটেরিয়ন ধর্মযাজকদের—বিশেষতঃ ‘ইণ্টিরিয়র’দের—আমার প্রতি যে নিঃস্বার্থ ভালবাসা আছে, তা জেনে পাছে এই ‘প্রেমিক’ খ্রীষ্টান মহোদয়গণের উপর আমার বিদ্বেষ উদ্বুদ্ধ হয়, এই জন্য তফাতেই থাকতে চাই। আমাদের ধর্মের শিক্ষা—ক্রোধ সঙ্গত (সমর্থনযোগ্য) হলেও মহাপাপ। নিজ নিজ ধর্মই অনুসরণীয়। ‘সাধারণ’ ও ‘ধর্মসংক্রান্ত’ ভেদে ক্রোধ, হত্যা, অপবাদ প্রভৃতির মধ্যে কোন তফাত করতে পারি না—শত চেষ্টা সত্ত্বেও। এই সূক্ষ্ম নৈতিক পার্থক্যবোধ যেন আমার স্বজাতীয়গণের মধ্যে কখনও প্রবেশ না করে। ঠাট্টা থাক, শুনুন মাদার চার্চ, আপনাকে বলছি—এরা যে কপট, ভণ্ড, স্বার্থ ও প্রতিষ্ঠাপ্রিয়—তা বেশ স্পষ্ট দেখে আমি এদের উন্মত্ত আস্ফালন মোটেই গ্রাহ্য করি না।
এইবার ছবির কথা বলিঃ প্রথমে মেয়েরা কয়েকটি আনে, পরে আপনি কয়েক কপি আনেন। আপনি তো জানেন মোট ৫০ কপি দেবার কথা। এ বিষয়ে ভগিনী ইসাবেল আমার চেয়ে বেশী জানেন।
আপনি ও ফাদার পোপ আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা প্রীতি জানবেন। ইতি
আপনাদের
বিবেকানন্দ
পুঃ—গরম কেমন উপভোগ করেছেন? এখানকার তাপ আমার বেশ সহ্য হচ্ছে। সমুদ্রতীরে সোয়াম্স্কটে (Swampscot) যাবার নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন এক অতি ধনী মহিলা; গত শীতে নিউ ইয়র্কে এঁর সঙ্গে আলাপ হয়। ধন্যবাদ সহ প্রত্যাখান জানিয়েছি। এ দেশে কারও আতিথ্যগ্রহণ-বিষয়ে আমি এখন খুব সতর্ক—বিশেষ করে ধনী লোকের। খুব ধনবান্দের আরও কয়েকটি নিমন্ত্রণ আসে, সেগুলিও প্রত্যাখ্যান করেছি। এতদিনে এদের কার্যকলাপ বেশ বুঝলাম। আন্তরিকতার জন্য ভগবান্ আপনাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন; হায়, জগতে ইহা এতই বিরল!
আপনার স্নেহের
বি
১০৪*
[হেল ভগিনীগণকে লিখিত]
নিউ ইয়র্ক
৯ জুলাই, ১৮৯৪
ভগিনীগণ,
জয় জগদম্বে! আমি আশারও অধিক পেয়েছি। মা আপন প্রচারককে মর্যাদায় অভিভূত করেছেন। তাঁর দয়া দেখে আমি শিশুর মত কাঁদছি। ভগিনীগণ! তাঁর দাসকে তিনি কখনও ত্যাগ করেন না। আমি যে চিঠিখানি তোমাদের পাঠিয়েছি, তা দেখলে সবই বুঝতে পারবে। আমেরিকার লোকেরা শীঘ্রই ছাপা কাগজগুলি পাবে। পত্র যাঁদের নাম আছে, তাঁরা আমাদের দেশের সেরা লোক। সভাপতি ছিলেন কলিকাতার এক অভিজাতশ্রেষ্ঠ, অপর ব্যক্তি মহেশচন্দ্র ন্যায়রত্ন কলিকাতার সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ও ভারতীয় ব্রাহ্মণ-সমাজের শীর্ষস্থানীয়। তাঁর এই মর্যাদা গভর্ণমেণ্টেরও অনুমোদিত। ভগিনীগণ! আমি কি পাষণ্ড! তাঁর এত দয়া প্রত্যক্ষ করেও মাঝে মাঝে বিশ্বাস প্রায় হারিয়ে ফেলি। সর্বদা তিনি রক্ষা করছেন দেখেও মন কখনও কখনও বিষাদগ্রস্ত হয়। ভগিনীগণ! ভগবান্ একজন আছেন জানবে, তিনি পিতা, তিনি মাতা; তাঁর সন্তানদের তিনি কখনও পরিত্যাগ করেন না—না, না, না। নানা রকম বিকৃত মতবাদ ছেড়ে-ছুড়ে দিয়ে সরল শিশুর মত তাঁর শরণাগত হও। আমি আর লিখতে পারছি না, মেয়েদের মত কাঁদছি।
জয় প্রভু, জয় ভগবান্!
তোমাদের স্নেহের
বিবেকানন্দ
৯৫*
U. S. A
১১ জুলাই, ১৮৯৪
প্রিয় আলাসিঙ্গা,
তুমি ৫৪১ নং ডিয়ারবর্ন এভিনিউ, চিকাগো ছাড়া আর কোন ঠিকানায় আমায় পত্র লিখো না। তোমার শেষ চিঠিখানা সারা দেশ ঘুরে আমার কাছে পৌঁছেছে—আর পত্রটা যে শেষে পৌঁছল, মারা গেল না, তার কারণ এখানে আমার কথা সকলে বেশ ভালরকম জানে। সভার খানকতক প্রস্তাব ডাঃ ব্যারোজকে পাঠাবে—তার সঙ্গে একখানা পত্র লিখে আমার প্রতি সহৃদয় ব্যবহারের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দেবে এবং উহা আমেরিকার কতকগুলি সংবাদপত্রে প্রকাশ করবার জন্য অনুরোধ করবে। মিশনরীরা আমার নামে এই যে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে যে, আমি কারও প্রতিনিধি নই—ঐতেই তার উত্তম প্রতিবাদ হবে। বৎস, কি করে কাজ করতে হয়, শেখো। এইভাবে দস্তুরমত প্রণালীতে কাজ করতে পারলে আমরা খুব বড় বড় কাজ করতে নিশ্চিতই সমর্থ হব। গত বছর আমি কেবল বীজ বপন করেছি—এই বছর ফসল কাটতে চাই। ইতোমধ্যে ভারতে যতটা সম্ভব আন্দোলন চালাও। কিডি নিজের ভাবে চলুক—সে ঠিক পথে দাঁড়াবে। আমি তার ভার নিয়েছি—সে নিজের মতে চলুক, এ বিষয়ে তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। তাকে আমার আশীর্বাদ জানাবে। পত্রিকাখানা বার কর—আমি মাঝে মাঝে প্রবন্ধ পাঠাব। বষ্টনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাইট (Wright)-কে একখানা প্রস্তাব পাঠাবে, আর সঙ্গে সঙ্গে একখানা পত্র লিখে এই বলে তাঁকে ধন্যবাদ দেবে যে, তিনি সর্বপ্রথম আমেরিকায় আমার বন্ধুরূপে দাঁড়িয়েছিলেন, আর তাঁকেও ঐটি কাগজে ছাপাতে অনুরোধ করবে; তা হলে মিশনরীদের (আমি যে কারু প্রতিনিধি হয়ে আসিনি) এ কথা মিথ্যা প্রমাণিত হবে। ডেট্রয়েটের বক্তৃতায় আমি ৯০০ ডলার অর্থাৎ ২৭০০৲ টাকা পেয়েছিলাম। অন্যান্য বক্তৃতায় একটাতে এক ঘণ্টায় আমি ২৫০০ ডলার অর্থাৎ ৭৫০০৲ টাকা রোজগার করি, কিন্তু পাই মাত্র ২০০ ডলার। একটা জুয়াচোর বক্তৃতা কোম্পানী আমায় ঠকিয়েছিল। আমি তাদের সংস্রব ছেড়ে দিয়েছি। এখানে খরচও হয়ে গেছে অনেক টাকা—হাতে আছে মাত্র ৩০০০ ডলার। আসছে বছরে আবার আমায় অনেক জিনিষ ছাপাতে হবে।