তোমাদের আক্কেল বুদ্ধি এক পয়সাও নাই। Indian Mirrorকে ‘পরমহংস মশায় নরেনকে হেন বলতেন, তেন বলতেন’ কেন বলতে গেলে? আর আজগুবি ফাজগুবি যত—পরমহংস মশায়ের বুঝি আর কিছুই ছিল না? খালি thought-reading (পরের মনের কথা বলতে পারা) আর nonsense (বাজে) আজগুবি! দু-পয়সার brain (মস্তিষ্ক)-গুলো! ঘৃণা হয়ে যায়! তোদের নিজের বুদ্ধি বড় একটা খেলাতে হবে না—সাদা বাঙলা কয়ে যা দিকি।
বাবুরামের লম্বা পত্র পড়লাম। বুড়ো বেঁচে আছে—বেশ কথা! তোমাদের আড্ডাটা নাকি বড় malarious (ম্যালেরিয়াগ্রস্ত)—রাখাল আর হরি লিখছেন। রাজাকে আর হরিকে আমার বহুত বহুত দণ্ডবৎ লাট্টিবৎ ইষ্টিকবৎ ছতরীবৎ দিবে। বাবুরাম অনেক delirium (প্রলাপ) বকেছে। সাণ্ডেল আনাগোনা করছে, বেশ বেশ। গুপ্তকে তোমরা চিঠিপত্র লেখ—আমার ভালবাসা জানিও ও যত্ন কর। সব ঠিক আসবে ধীরে ধীরে। আমার বহুত চিঠি লেখবার সময় বড় একটা হয় না। Lecture ফেক্চার (বক্তৃতা) তো কিছু লিখে দিই না, একটা লিখে দিয়েছিলুম, যা ছাপিয়েছি। বাকী সব দাঁড়াঝাঁপ, যা মুখে আসে গুরুদেব জুটিয়ে দেন। কাগজপত্রের সঙ্গে কোন সম্বন্ধই নাই। একবার ডেট্রয়েটে তিন ঘণ্টা ঝাড়া বুলি ঝেড়েছিলুম। আমি নিজে অবাক্ হয়ে যাই সময়ে সময়ে; ‘মধো, তোর পেটে এতও ছিল!!’ এরা সব বলে, পুঁথি লেখ; একটা এইবার লিখতে ফিকতে হবে দেখছি। ঐ তো মুশকিল, কাগজ কলম নিয়ে কে হাঙ্গাম করে বাবা!
কোন চিঠি বাজার গুজব করিসনি, খবরদার! চ্যাঙড়ামো নাকি? যা করতে বলছি পার তো কর, না পার তো মিছে ফেচাং কর না। তোমাদের বাড়ীতে কটা ঘর আছে, কেমন করে চলছে, রাঁধুনী-ফাঁধুনী আছে কিনা—সব লিখবে। মা ঠাকুরাণীকে আমার বহুত বহুত সাষ্টাঙ্গ দিবে। তারকদাদা আর শরতের বুদ্ধি নিয়ে যে কাজটা করতে বলেছি—করবার চেষ্টা করবে—দেখব কেমন বাহাদুর। এইটুকু যদি না করতে পার তাহলে তোমাদের ওপর হতে আমার সব বিশ্বাস আর ভরসা চলে যাবে। মিছামিছি কর্তাভজার দল বাঁধতে আমার ইচ্ছা নাই—I will wash my hands off you for ever (তোমাদের সঙ্গে কোন সম্বন্ধই আমি আর রাখব না)।
সমাজকে, জগৎকে electrify (বৈদ্যুতিকশক্তিসম্পন্ন) করতে হবে। বসে বসে গপ্পবাজির আর ঘণ্টা নাড়ার কাজ? ঘণ্টা নাড়া গৃহস্থের কর্ম, মহীন্দ্র মাষ্টার, রামবাবু করুন গে। তোমাদের কাজ distribution and propagation of thought currents (ভাবপ্রবাহ বিস্তার)। তাই যদি পার তবে ঠিক, নইলে বেকার। রোজকার করে খাওগে। মিছে eating the begging bread of idleness is of no use (অনায়াসলব্ধ ভিক্ষান্ন খাওয়া নিরর্থক) বুঝলে বাপু? কিমধিকমিতি
নরেন্দ্র
Character formed (চরিত্র গঠিত) হয়ে যাক, তারপর আমি আসছি, বুঝলে? দু হাজার, দশ হাজার, বিশ হাজার সন্ন্যাসী চাই, মেয়ে-মদ্দ—বুঝলে? গৌর-মা, যোগেন-মা, গোলাপ-মা কি করছেন? চেলা চাই at any risk (যে-কোন রকমে হোক)। তাঁদের গিয়ে বলবে আর তোমরা প্রাণপণে চেষ্টা কর। গৃহস্থ চেলার কাজ নয়, ত্যাগী—বুঝলে? এক এক জনে ১০০ মাথা মুড়িয়ে ফেল, young educated men—not fools (শিক্ষিত যুবক—আহাম্মক নয়), তবে বলি বাহাদুর। হুলস্থুল বাঁধাতে হবে, হুঁকো ফুঁকো ফেলে কোমর বেঁধে খাড়া হয়ে যাও। তারকদাদা, মান্দ্রাজ কলিকাতার মাঝে বিদ্যুতের মত চক্র মারো দিকি, বার কতক। জায়গায় জায়গায় centre (কেন্দ্র) কর, খালি চেলা কর, মায়ে মেয়ে-মদ্দ, যে আসে দে মাথা মুড়িয়ে, তারপর আমি আসছি। মহা spriritual tidal wave (আধ্যাত্মিক বন্যা) আসছে—নীচ মহৎ হয়ে যাবে, মূর্খ মহাপণ্ডিতের গুরু হয়ে যাবে তাঁর কৃপায়—‘উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্ নিবোধত।’
Life is ever expanding, contraction is death (জীবন হচ্ছে সম্প্রসারণ, সঙ্কোচনই মৃত্যু)। যে আত্মম্ভরি আপনার আয়েস খুঁজছে, কুঁড়েমি করছে, তার নরকেও জায়গা নাই। যে আপনি নরক পর্যন্ত গিয়ে জীবের জন্য কাতর হয়, চেষ্টা করে, সেই রামকৃষ্ণের পুত্র—ইতরে কৃপণাঃ (অপরে কৃপার পাত্র)। যে এই মহা সন্ধিপূজার সময় কোমর বেঁধে খাড়া হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে তাঁর সন্দেশ বিতরণ করবে, সেই আমার ভাই, সেই তাঁর ছেলে, বাকী যে তা না পার—তফাত হয়ে যাও এই বেলা ভালয় ভালয়।
এই চিঠি তোমরা পড়বে—যোগেন-মা, গোলাপ-মা সকলকে শুনাবে। এই test (পরীক্ষা), যে রামকৃষ্ণের ছেলে, সে আপনার ভাল চায় না, ‘প্রাণাত্যয়েঽপি পরকল্যাণচিকীর্ষবঃ’ (প্রাণ দিয়েও পরের কল্যাণাকাঙ্ক্ষী) তারা। যারা আপনার আয়েস চায়, কুঁড়েমি চায়, যারা আপনার জিদের সামনে সকলের মাথা বলি দিতে রাজী, তারা আমাদের কেউ নয়, তারা তফাত হয়ে যাক, এই বেলা ভালয় ভালয়। তাঁর চরিত্র, তাঁর শিক্ষা, ধর্ম চারিদিকে ছড়াও—এই সাধন, এই ভজন; এই সাধন, এই সিদ্ধি। উঠ, উঠ, মহাতরঙ্গ আসছে, Onward, onward (এগিয়ে যাও, এগিয়ে যাও)। মেয়ে-মদ্দে আচণ্ডাল সব পবিত্র তাঁর কাছে—Onward, onward, নামের সময় নাই, যশের সময় নাই, মুক্তির সময় নাই, ভক্তির সময় নাই, দেখা যাবে পরে। এখন এ জন্মে অনন্ত বিস্তার, তাঁর মহান্ চরিত্রের, তাঁর মহান্ জীবনের, তাঁর অনন্ত আত্মার। এই কার্য—আর কিছু নাই। যেখানে তাঁর নাম যাবে, কীটপতঙ্গ পর্যন্ত দেবতা হয়ে যাবে, হয়ে যাচ্ছে, দেখেও দেখছ না? এ কি ছেলেখেলা, এ কি জ্যাঠামি, এ কি চ্যাংড়ামি—‘উত্তিষ্ঠত জাগ্রত’—হরে হরে। তিনি পিছে আছেন। আমি আর লিখতে পারছি না—Onward, এই কথাটি খালি বলছি, যে যে এই চিঠি পড়বে, তাদের ভিতর আমার spirit (শক্তি) আসবে, বিশ্বাস কর। Onward, হরে হরে। চিঠি বাজার কর না। আমার হাত ধরে কে লেখাচ্ছে। Onward, হরে হরে। সব ভেসে যাবে—হুঁশিয়ার—তিনি আসছেন। যে যে তাঁর সেবার জন্য—তাঁর সেবা নয়—তাঁর ছেলেদের—গরীব-গুরবো, পাপী-তাপী, কীট-পতঙ্গ পর্যন্ত, তাদের সেবার জন্য যে যে তৈরী হবে, তাদের ভেতর তিনি আসবেন—তাদের মুখে সরস্বতী বসবেন, তাদের বক্ষে মহামায়া মহাশক্তি বসবেন। যেগুলো নাস্তিক, অবিশ্বাসী, নরাধম, বিলাসী—তারা কি করতে আমাদের ঘরে এসেছে? তারা চলে যাক।