১০ | জন্মাদ্যস্য যতঃ। —ব্রহ্মসূত্র, ১।১।২ |
১১ | পাতঞ্জল যোগসূত্র, ১।২৫।২৬ |
১২ | স ঈশ্বরোঽনির্বচনীয়প্রেমস্বরূপ। —শাণ্ডিল্যসূত্র |
১৩ | জগদ্ব্যাপারবর্জং প্রকরণাদসন্নিহিতত্বাচ্চ। —ব্রহ্মসূত্র, ৪।৪।১৭ |
১৪ | কিং মুক্তস্যৈশ্বর্যং জগৎসৃষ্ট্যাদি পরমপুরুষাসাধারণং সর্বেশ্বরত্বমপি উত তদ্রহিতং কেবলপরমপুরুষানুভববিষয়মিতি সংশয়ঃ, কিং যুক্তং, জগদ্বীশ্বরত্বমপীতি, কুতঃ নিরঞ্জনঃ পরমং সাম্যমুপৈতীতি পরমপুরুষেণ পরমসাম্যাপত্তিশ্রুতেঃ সত্যসংকল্পত্বশ্রুতেশ্চ, নহি পরমসাম্যসত্যসঙ্কল্পত্বে সর্বেশ্বরাসাধারণজগদ্ব্যাপাররূপজগন্নিয়মনেন বিনোপপদ্যেতে অতঃ সত্যসঙ্কল্পতাপরমসাম্যোপপত্তয়ে সমস্তজগন্নিয়মনরূপমপিমুক্তৈশ্বর্যমিত্যেবং প্রাপ্তেঃ,প্রচক্ষ্মহে—জগদ্ব্যাপারবর্জমিতি জগদ্ব্যাপারো নিখিলচেতনাচেতন-স্বরূপস্থিতিপ্রবৃত্তিভেদনিয়মনন্তদ্বর্জং নিরস্তনিখিলতিরোধানস্য নির্ব্যাজব্রহ্মানুভবরূপং মুক্তস্যৈশ্বর্যং কুতঃ প্রকরণাৎ নিখিলজগন্নিয়মনং হি পরং ব্রহ্ম প্রকৃত্যাম্নায়তে, ‘যতো বা ইমানি ভুতানি জায়ন্তে, যেন জাতানি জীবন্তি, যৎ প্রযন্ত্যভিসংবিশন্তি তদ্বিজিজ্ঞাসস্ব তদ্বব্রহ্মেতি’।যদ্যেতন্নিখিলজগন্নিয়মনং মুক্তানামপি সাধারণং স্যাৎ ততশ্চেদং জগদীশ্বরত্বরূপং ব্রহ্মলক্ষণং ন সঙ্গচ্ছতে। অসাধারণস্য হি লক্ষণত্বং তথা ‘সদেব সোম্যেদমগ্র আসীদেকমেবাদ্বিতীয়ং তদৈক্ষত বহু স্যাং প্রজায়েয়েতি তত্তেজোহসৃজতেতি’ ‘ব্রহ্ম বা ইদমেকমেবাগ্র আসীত্তদেকং সন্নব্যভবৎ, তচ্ছেয়োরূপমত্যসৃজত ক্ষত্রং যান্যেতানি দেবক্ষত্রাণীন্দ্রো বরুণঃ সোমো রুদ্রঃ পর্জন্যো যমো মৃত্যুরীশান’ ইতি ‘আত্মা বা ইদমেক এবাগ্র আসীৎ নান্যৎ কিঞ্চনমিষৎ স ঐক্ষত লোকান্নুসৃজা ইতি স ইমাল্লোকানসৃজত ইতি’। ‘একো হ বৈ নারায়ণ আসীন্ন ব্রহ্মা নেশানো নেমে দ্যাবাপৃথিবী ন নক্ষত্রাণি নাপো নাগ্নির্ণ সোমো ন সূর্যঃ স একাকী ন রমতে তস্য ধ্যানান্তস্থস্যৈকা কন্যা দশেন্দ্রিয়াণি’ ইত্যাদিষু যঃ পৃথিব্যাং তিষ্ঠন্ পৃথিব্যা অন্তর’ ইত্যারভ্য ‘য আত্মনি তিষ্ঠন্ ইত্যাদিষু চ নিখিলজগন্নিয়মনং পরমপুরুষং প্রকৃত্যৈব শ্রূয়তে’ অসন্নিহিতত্বাচ্চ, ন চৈতেষু নিখিলজগন্নিয়মনপ্রসঙ্গেষু মুক্তস্য সন্নিধানমস্তি যেন জগদ্ব্যাপারস্তস্যাপি স্যাৎ। —রামানুজভাষ্য, ব্র্হ্মসূত্র, ৪।৪।১৭ |
১৫ | ‘প্রত্যক্ষোপদেশান্নোতিচেন্নাধিকারিকমণ্ডলস্থোক্তেঃ।’ এই সূত্রের (ব্রহ্মসূত্র, ৪।৪।১৮) রামানুজভাষ্য দ্রষ্টব্য। |
১৬ | আত্মারামাশ্চ মুনয়ো নিগ্রর্ন্থা অপ্যুরুক্রমে। কুর্বন্ত্যহৈতুকীং ভক্তিমিথুম্ভূতগুণো হরিঃ। —শ্রীমদ্ভাগবত, ১।৭।১ |
১৭ | তাসামাবিরভূচ্ছৌরঃ স্ময়মানমুখাম্বুজঃ। পীতম্বরধরঃ স্রগ্বী সাক্ষান্মন্মথমন্মথঃ।। —শ্রীমদ্ভাগবত, ১০।৩২।২ |
১৮ | যে সগুণব্রহ্মোপাসনাৎ সহৈব মনসেশ্বরসাযুজ্যং ব্রজন্তি কিন্তেষাং নিরবগ্রহমৈশ্বর্যং ভবত্যাহোস্বিৎ সাবগ্রহমিতি সংশয়ঃ। কিন্তাবৎ প্রাপ্তম্? নিরঙ্কুশমেবৈষামৈশ্বর্যং ভবিতুমর্হতি ‘আপ্নোতি স্বারাজ্যম্’ ‘সর্বেহস্মৈ দেবা বলিমাবহন্তি’ ‘তেষাং সর্বেষু লোকেষু কামচরো ভবতি’ ইত্যাদিশ্রুতিভ্য ইত্যেবং প্রাপ্তে পঠতি—জগদ্ব্যাপারবর্জমিতি। জগদুৎপত্ত্যাদি ব্যাপারং বর্জয়িত্বাঽন্যদণিমাদ্যাত্মকমৈশ্বর্যং মুক্তানাং ভবিতুমর্হতি, জগদ্ব্যাপারস্তু নিত্যসিদ্ধস্যৈবেশ্বরস্য। কুতঃ? তস্য তত্র প্রকৃতত্বাদসন্নিহিতত্বাচ্চেতরেষাম্। পর এব হীশ্বরো জগদ্ব্যাপারেহধিকৃতঃ তমেব প্রকৃত্যোৎপত্ত্যাদ্যুপদেশান্নিত্যশব্দনিবন্ধনত্বাচ্চ। তদন্বেষণবিজিজ্ঞাসনপূর্বকমিতরেষামাদিমদৈশ্বর্যং শ্রুয়তে। তেনাসন্নিহিতাস্তে জগদ্ব্যাপারে। সমনস্কত্বাদেব চৈষামনৈকমত্যে কস্যচিৎ স্থিত্যাভিপ্রায়ঃ, কস্যচিৎ সংহারাভিপ্রায় ইত্যেবং নিরোধোঽপি কদাচিৎ স্যাৎ। অথ কস্যচিৎ সঙ্কল্পমন্বন্যস্য সঙ্কল্প ইত্যবিরোধ সমর্থ্যেত, পরমেশ্বরাকূততন্ত্রত্বমেবেতরেষামিতি ব্যবতিষ্ঠন্তে। —শাঙ্করভাষ্য, ব্রহ্মসূত্র, ৪।৪।১৭ |
১৯ | গীতা, ১২।৫ |
০৩. প্রত্যাক্ষানুভূতিই ধর্ম
ভক্তের পক্ষে এই-সকল শুষ্ক বিষয় জানার প্রয়োজন—কেবল নিজ ইচ্ছাশক্তিকে দৃঢ় করার জন্য। এতদ্ব্যতীত উহাদের আর কোন উপযোগিতা নাই, কারণ তিনি এমন এক পথে চলিয়াছেন যাহা শীঘ্রই তাঁহাকে যুক্তির অস্পষ্ট ও চিত্তচঞ্চলকারী রাজ্যের সীমা ছাড়াইয়া প্রত্যক্ষানুভূতির রাজ্যে লইয়া যাইবে; তিনি শীঘ্রই ঈশ্বরকৃপায় এমন এক অবস্থায় উপনীত হন, যেখানে পাণ্ডিত্যাভিমানিগণের শুষ্ক যুক্তি অনেক পশ্চাতে পড়িয়া থাকে, আর বুদ্ধির সাহায্যে অন্ধকারে বৃথান্বেষণের পরিবর্তে প্রত্যক্ষানুভূতির উজ্জ্বল দিবালোক প্রকাশিত হয়। তিনি তখন বিচার বা বিশ্বাস কিছুই করেন না, তিনি প্রত্যক্ষ অনুভব করেন। তিনি আর তর্ক করেন না, উপলব্ধি করেন। আর এই ভগবানকে দেখা, তাঁহাকে উপলব্ধি করা ও তাঁহাকে সম্ভোগ করা কি তর্কবিচার হইতে উচ্চতর নয়? শুধু তাই নয়, অনেক ভক্ত আছেন, যাঁহারা ভক্তিকে মুক্তি হইতেও বড় বলিয়াও বর্ণনা করিয়াছেন। আর ইহা কি আমাদের জীবনের সর্বোচ্চ প্রয়োজনও নয়? এমন লোক জগতে আছেন, তাঁহাদের সংখ্যাও অনেক, যাঁহারা স্থির সিদ্ধান্ত করিয়াছেন, যাহা কিছু মানুষকে সুখ দিতে পারে—তাহারই বাস্তবিক প্রয়োজন ও উপকারিতা আছে; ধর্ম, ঈশ্বর, পরকাল, আত্মা এবং এইরূপ অন্যান্য বিষয়গুলি কোন কাজের নয়, কারণ এগুলি দ্বারা টাকাকড়ি বা দৈহিক সুখ পাওয়া যায় না। এরূপ লোকের মতে যে-সকল পদার্থে ইন্দ্রিয় চরিতার্থ না হয়, সেগুলির কোন প্রয়োজন নাই। যাহার যে-বিষয়ে যেমন অভাববোধ, তাহার প্রয়োজনবোধও সেই বিষয়ে তদনুরূপ। সুতরাং যাহারা পান, ভোজন, অপত্য-উৎপাদন ও তারপর মৃত্যু—ইহার উপর আর উঠিতে পারে না, তাহাদের পক্ষে লাভ-বোধ কেবল ইন্দ্রিয়ের সুখে। তাহাদের হৃদয়ে উচ্চতর বিষয়ের জন্য সামান্য ব্যাকুলতা জন্মিতেও অনেক জন্ম লাগিবে। কিন্তু যাঁহাদের নিকট আত্মার উন্নতি-সাধন ঐহিক জীবনের ক্ষণিক সুখ অপেক্ষা অধিকতর মূল্যবান্ বোধ হয়, যাঁহাদের চক্ষে ইন্দ্রিয়-পরিতৃপ্তি কেবল অবোধ শিশুর ক্রীড়ার মত মনে হয়, তাঁহাদের নিকট ভগবান্ ও ভগবৎ-প্রেমেই মানবজীবনের সর্বোচ্চ ও একমাত্র প্রয়োজন বলিয়া বিবেচিত হয়। ঈশ্বরেচ্ছায় এই ঘোর ভোগলিপ্সাপূর্ণ জগতে এইরূপ মানুষ এখনও কয়েকজন জীবিত আছেন।