চোখে-মুখে আগ্রহ উপচে উঠল ইন্দ্র ব্যানার্জীর।–আমার এখনকার অবস্থা সব শুনেছ তুমি? জানো?
-জানি।
–তাহলে একটু ভিতরে আসবে? দুই-একটা কথা বলার ছিল…শুনবে?
রুচিরা চুপচাপ চেয়ে রইল কয়েক নিমেষ। ওই ব্যাকুল মুখের দিকে চেয়ে বুকের তলায় আবার মোচড় পড়ছে।
বলল, আমি শুনে কি করতে পারি জানি না। আমার এখন যাওয়া সম্ভব নয়, তুমি ইচ্ছে করলে আমার ওখানে আসতে পার। শুনব।
–কবে?
–কাল, পরশু-যেদিন তোমার ইচ্ছে।
আবার গিয়ে গাড়িতে বসল। দিদির ওখানে যেতে আর ইচ্ছে করল না। একটু ঘুরে-টুরে আবার বাড়ি ফিরে এল।
সমস্ত রাত ঘুম হল না রুচিরার। ভেবেছে। শুধু ভেবেছে।
…পরশু নয়, ওই লোক কালই আসবে জানে।
এল।
বাড়ির লোক, দাদা বউদি মা সকলেই বিরক্ত! ওকে দেখা করতে নিষেধ করল। রুচিরা বলল, আমি তাকে আসতে বলেছিলাম।
সকলে অবাক।
রুচিরা এল। ইন্দ্র ব্যানার্জী বসেছিল। উঠে দাঁড়াল।
–বসো।
ইন্দ্র ব্যানার্জী বলল, তুমি বসো।
রুচিরা বসল।–বল।
সোফাটা একটু কাছে টেনে ইন্দ্র ব্যানার্জী বলল, আমি সত্যি বিশ্বাস করব আমাকে তুমি ভালবেসেছিলে?
–কি বলবে বল?
-সব মিলিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা আমার ভয়ানক দরকার। না পেলে আমার জেল হবেই। আমি জানি এ-টাকাটা তুমি ইচ্ছে করলেই দিতে পার। পার না?
–পারি।
-তুমি আমাকে এবারের মতো বাঁচাও রুচি, আমার আর কোনো পথ খোলা নেই। তুমি অনেক বড়, সব ভুলে এবারের মতো আমাকে রক্ষা কর। তারপর তুমি কি বিচার করবে না করবে জানি না, কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, আমি ভাল হতে চেষ্টা করব, সৎ হতে চেষ্টা করব।
আগ্রহের আতিশয্যে সে উঠে দাঁড়াল। রুচিরা চেয়ে আছে। দেখছে।
চেষ্টা করবে? চেষ্টা?
–রুচি, আমি কি বলতে চাই তুমি বুঝেছ। প্লীজ।
টাকা না দিলে তোমার কত দিনের জেল হবে?
ইন্দ্র ব্যানার্জী থমকাল।–কম করে পাঁচ বছরের। কিন্তু টাকা তুমি দেবে না?
-না। অটল ঠাণ্ডা মুখ রুচিরার।–তুমি যে পুরুষ ছিলে সেই পুরুষ কখনো। দয়া চায় না। দয়া দেখিয়ে কাউকে ফেরানো যায় না। আমি তোমাকে ভালবেসেছিলাম না শুধু, এখনো ভালবাসি। পাঁচটা বছর প্রায়শ্চিত্ত করে যদি এটুকু বুঝতে পার, তাহলে পাঁচটা বছরকে ভয় না করে জঞ্জালমুক্ত হয়ে এস। আমি যাকে ভালবাসি তার ভয় সাজে না। আমার কথায় যদি বিশ্বাস করতে পার, তারপর এস। টাকা পাবে, আমাকেও পাবে।
ইন্দ্র ব্যানার্জী আস্তে আস্তে সোজা হয়ে দাঁড়াল। নির্বাক হতভম্বের মতো চেয়ে। রইল খানিক। তারপর ঝড়ের বেগেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
রুচিরা নিষ্পন্দের মতো বসে। স্থির, শান্ত।