শেষে প্রাণপণ চেষ্টায় রুচিরা ছাড়িয়ে নিল নিজেকে দূরে সরে গিয়ে হাঁপাতে লাগল। মাথা ঝিম ঝিম করছে তখনো। ইন্দ্র ব্যানার্জী হাসছে তার দিকে চেয়ে।
–আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি-এই অসভ্যতা করার জন্য আমাকে এখানে নিয়ে এসেছ?
ইন্দ্র ব্যানার্জীর অবাক মুখ।-এর নাম অসভ্যতা?
আবার এগোচ্ছে ওর দিকে।
–ভাল হবে না বলছি! আমি চলে যাব।
হাসতে হাসতে ইন্দ্র ব্যানার্জী একটা সোফায় বসে পড়ল।
.
দেড় মাসের মধ্যে বিয়েটা হয়ে গেল। বিয়ে ঠিক হবার পর তাড়া ছেলের তরফেরই বেশি। কারণ, ইন্দ্র ব্যানার্জীর বাবার শরীর হঠাৎ বেশি রকম অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ব্লাডপ্রেসার সর্বদা টঙে উঠে থাকে। কখন কি হয় ঠিক নেই, বিয়ে যখন হবে, আগেই হয়ে যাওয়া ভাল।
এই দেড় মাস সাগ্রহে একটি একটি করে দিন গুনেছে রুচিরাও। এই দেড় মাসের অবাধ মেলামেশায় চিরার বাড়ির দিক থেকেও কোনো আপত্তির প্রশ্ন ওঠেনি। তাই এই সময়টুকুর মধ্যে লোকটার পুরুষকারের ছটা আরও যেন অনেকগুণ বেশি চোখে পড়েছে। তার সঙ্গে তাদের ক্লাবে গেছে, পার্টিতে গেছে, কংগ্রেসের উৎসবে গেছে। ওই লোকের সর্বত্র মাদর। বড় বড় ঘরের মেয়েরা পর্যন্ত তার পিছনে পিছনে। ঘোরে, একটু তোয়াজ তোষামোদ করতে পেলে বর্তে যায়। মদ খাওয়া রুচিরা পছন্দ করে না, দাদা চুপিচুপি মাঝেসাঝে খায় টের পায়। কিন্তু মদ খাওয়ার পর সকলের যে মূর্তি, এর তা নয়। মদ আর জল দুই-ই যেন সমান তার কাছে। চোখ আর মুখ সামান্য লাল হয় শুধু, আর কোনো বিকার নেই, তার পরেও দিব্যি গাড়ি হাঁকিয়ে। বেড়ায় ওকে নিয়ে।
এত সব রূপসী চটকদার মেয়ে থাকতে এই লোক ওর মধ্যে কি দেখল। রুচিরা সময় সময় ভেবে পায় না। দেখে-শুনে মনে হয়েছে, যাকে ডাকত সেই বর্তে যেত।
রুচিরার দিন গোনার আরো একটা কারণ, ভয়। এই মানুষের বেপরোয়া মতিগতির কিছু বিশ্বাস নেই। অভিজাত হোটেলের সেই ঘরে আরো একাধিক দিন ওকে নিয়ে গিয়ে তুলতে চেয়েছে। রুচিরা সরাসরি বেঁকে বসতে অবুঝের মতো রাগও করেছে। সঙ্গে আরো ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা ছিল বলে একদিন নির্ভয়ে গেছল। হোটেলের ওই ঘরটা যেন এরই দখলে। চাইলেই মেলে–ঘণ্টা দেড় দুই খানাপিনা হৈ-হুঁল্লোড়ের পর রুচিরা বেশ বুঝল চালাকি করেই অন্য মেয়ে-পুরুষদের জুটিগুলোকে একে একে বিদায় দেওয়া হচ্ছে। বিয়ের তখন মাত্র আর নদিন বাকি। শেষ জুটি বিদায় নিয়ে বেরোবার আগেই রুচিরা উঠে পড়ল। যাবে। গম্ভীর মুখে ইন্দ্র ব্যানার্জী বলল, বিল নিয়ে আসছে, মিটিয়ে দিয়ে বেরুচ্ছি, বসো।
তারপরেই এগিয়ে গিয়ে চোখের পলকে দরজার লক টেনে দিল।
সেই একদিনের মতোই ব্যাপার শুরু হল তারপর। কিন্তু শেষ কোন দিকে গড়াচ্ছে, মতলবখানা কি রুচিরা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে। সেটা চোখেমুখে স্পষ্ট লেখা। কিন্তু এ-দিন আর অপ্রস্তুত ছিল না। জোর করে বার বার তাকে ঠেলে সরিয়েছে। শেষে রেগেই গেছে অবুঝ মানুষটা।
-কেন?
–না।
–না কেন, বিয়ের তো নদিন মাত্র বাকি আর।
রাগ হয়ে যাচ্ছিল রুচিরারও।–সেই কাণ্ডজ্ঞান যদি থাকে তো ওই নদিন আগে তুমি আমাকে ছোঁবে না পর্যন্ত বলে দিলাম!
–আচ্ছা, অবাধ্যতার ফল টের পাবে! প্রচণ্ড রাগ চেপেই ঘর থেকে বেরিয়েছে। ইন্দ্র ব্যানার্জী।
নটা দিন এরপর ভালয় ভালয় কেটেছে। বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু ফুলশয্যার রাতে ভিতরে ভিতরে বেশ একটু ধাক্কাই খেয়েছে রুচিরা। ভিতরে ভিতরে মানুষটা সত্যি নিষ্ঠুর কিনা ভেবে পায়নি। নদিন আগের সেই অবাধ্যতার জবাব দেবারই যেন রাত এটা। সারাক্ষণ শিকারীর মতো সময় আর সুযোগের অপেক্ষায় ছিল যেন। সেটা মিলতেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
তারপর এই দেহটা যেন শুধু তারই বেপরোয়া ভোগের সামগ্রী। এর সঙ্গে আর কারো যেন আনন্দের যোগ নেই। ছিঁড়ে-খুঁড়ে একাকার করে দিয়ে মত্ত উল্লাসে বিস্মৃতির অতলে ডুবে যাওয়ার তাড়না। না বলেও পারেনি।
এ রকম করছ কেন? আমি কি ফুরিয়ে যাচ্ছি যে একেবারে খেয়ে না ফেলা পর্যন্ত শান্তি নেই?
চোখে-মুখে সেই রকমই উল্লাস নিয়ে ইন্দ্র ব্যানার্জী সদর্পে বলেছে, আমার কথা শোননি কেন? আমার অবাধ্য হয়েছিলে কেন?
রুচিরার দিক থেকে প্রথম ফুলশয্যার রাত ব্যর্থ গেছে।
মেজাজ-পত্র তার ঠাণ্ডা হলে কি হত বলা যায় না, মন বুঝে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করলে কি হত তাও বলা যায় না। কিন্তু রুচিরার মনে হত সে-ভাবে চলা মানে একজনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার দাসী হয়ে থাকা। পরিচয়ের গোড়ায় যে-ভাবে ফোঁস করে। উঠত, এখনো তার সেই মেজাজ। বিয়ের আগে ইন্দ্র ব্যানার্জীর কাছে তার এই মেজাজ একটা বড় আকর্ষণ ছিল। বিয়ের পরে বউয়ের এই মেজাজ নিজের একচ্ছত্র বশে আনার অহংকারে ঘা পড়লে সেও কড়া দাপটের মানুষ।
প্রথম পনেরো বিশটা দিন তৃষ্ণা যেন মাথায় চেপেই থাকল তার। বেপরোয়া সম্ভোগে কোনোরকম বাধা বরদাস্ত করার পাত্র নয়। কিন্তু মদ খেয়ে এলে রুচিরা সাফ বলে দিয়েছে, ও-সব খেয়ে এদিক ঘেঁষবে না। ব্যস, তারপর আরো বেশি খাবে আর জোর করেই আরো বেশি ঘেঁষবে, দখল নেবে। তারও সাফ কথা, দেখো, আমার ইচ্ছেটাই সব, যখন যেমন চেয়েছি তেমনি হয়ে আসছে, আর তেমনি হবে! তুমি এটা মনে রাখলে ভাল, না রাখলে কিছু এসে যায় না, তবে তাতে তোমারই অশান্তি!