বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

সাবরমতী – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

Sabarmati by Ashutosh Mukherjee

বিরক্তির একশেষ। এর পরদিন অত সকালে মামা-ভাগ্নের চান দেখতে ঘাটে এসেও দেখে, অদূরে সেই লোক। তার দিকেই নিস্পলক চেয়ে আছে।

এবারে হঠাৎ এক অজ্ঞাত সন্দেহ দেখা দিল যশোমতীর মনে। তাড়াতাড়ি সে বাড়িতে ঢুকে গেল।

কিন্তু দু’ঘণ্টার মধ্যে যশোমতী শঙ্কর সারাভাইয়ের দেখা পেল না। পেলেও তাকে কিছু বলত কিনা জানে না। রাজু বলল, একজন লোকের সঙ্গে মামা কি কাজে গেছে।

এমন প্রায়ই যায়। সন্দেহের কোনো কারণ ঘটল না তখনো। কিন্তু শঙ্কর সারাভাই ফিরল যখন, তার কথা শুনে যত না, তার মুখের দিকে চেয়ে অবাক সকলে। এমন কি পাঁচ বছরের রাজুও। মামার এত ব্যস্ততা আর বুঝি দেখে নি। শুধু ব্যস্ততা নয়, চোখে মুখে চাপা উত্তেজনা।

এসেই খবর দিল যশোমতীর জন্য খুব একটা ভালো চাকরি যোগাড় হয়েছে, এখান থেকে মাইল পনেরো দূরে, ট্রেনে যেতে হবে এক্ষুনি, মেয়েদের হাইস্কুলের হেডমিস্ট্রেসের চাকরি। কথা-বার্তা একরকম পাকা হয়ে গেছে। ভালো মাইনে, থাকার বাসা পাওয়া যাবে, আধঘণ্টার মধ্যে রওনা না হলেই নয়।

শোনামাত্র দিদি আনন্দে আটখানা। কিন্তু তক্ষুনি মনে হল রান্না যে কিছুই হয় নি, মেয়ে খেয়ে যাবে কি? আর তারপরেই ভাইয়ের বুদ্ধি দেখে অবাক। হাতের ঠোঙা আর কাগজের বাক্স আগে লক্ষ্যই

ঠোঙায় ভাল ভাল মিষ্টি। আর কাগজের বাক্সয় দামী স্যাণ্ডাল একজোড়া। যশোমতী পাথরের মতো স্তব্ধ হঠাৎ। শঙ্কর সারাভাইকে দেখছে। দেখতে চেষ্টা করছে। কিন্তু যে ভাবে দেখতে চাইছে, দেখতে পারছে না। কারণ সে ব্যস্ত-সমস্ত। সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে না।

দিদি যশোমতীকে সাজগোজ করালো, জোর করে খাওয়ালো। তার এই নীরবতা বিচ্ছেদের দরুন বলেই ধরে নিল। নানাভাবে সান্ত্বনা দিল তাকে। রিকশা অপেক্ষা করছে। একটা নয়, দুটো। শঙ্কর সারাভাইয়ের আজ দরাজ হাত।

নির্বাক মূর্তির মতো যশোমতী রিকশায় এসে উঠল।

রিকশা চলল। বাড়ির দোরে দিদি দাঁড়িয়ে, রাজু দাঁড়িয়ে, বিহারী দাঁড়িয়ে। যশোমতী ঘাড় ফিরিয়ে দেখল তাদের একবার। কিন্তু একটি কথাও বলতে পারল না, বা বলল না।

পাশের রিকশাটা ঠিক পাশে পাশে চলছে না! দু’চার হাত পিছিয়ে আছে। যশোমতী ফিরে তাকালো। কিন্তু তার সঙ্গী এদিকে ফিরছে, অন্যদিকে চেয়ে আছে। তা সত্ত্বেও লোকটার মুখখানা যেন লালচে দেখাচ্ছে।

স্টেশন। যশোমতী দেখছে লোকটা হন্তদন্ত হয়ে টিকিট কেটে আনল। গাড়ির অপেক্ষায় যে পাঁচ-সাত মিনিট দাঁড়াতে হল, তখনো শঙ্কর সারাভাই সামনা-সামনি এলে না। দূরে দূরে ঘুরপাক খাচ্ছে। তখনো যেন অকারণেই ব্যস্ত সে। যশোমতীর আবারও মনে হল, কি এক চাপা উত্তেজনায় লোকটার সমস্ত মুখ জ্বলজল করছে।

গাড়ি এলো। তারপরই যশোমতী আরো ঠাণ্ডা, আরো নির্বাক। সাদরে তাকে নিয়ে একটা ফাস্ট ক্লাস কামরায় উঠে বসল শঙ্কর সারাভাই। সে কামরায় দ্বিতীয় লোক নেই।

গদির ওপরেই একটা কিছু পেতে দিতে পারলে ভালো হত যেন, আর কিছু না পেয়ে নিজের রুমালে করেই গদীটা ঝেড়ে মুছে দিল শঙ্কর সারাভাই।

বসুন–

যশোমতী বসল। বসে এবার সোজাসুজি দুটো চোখ তার মুখের ওপর আটকে নিতে চেষ্টা করল। কিন্তু পারা গেল না। লোকটা এখনো যেন ব্যস্ত। এদিক-ওদিক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

যশোমতী দেখছে। দেখছে দেখছে দেখছে। যতখানি দেখা যায় দেখছে। চলন্ত গাড়ির ঝাঁকুনিতে দেহ দুলছে বটে, কিন্তু সে মূর্তির মতোই বসে আছে, আর নিষ্পলক চোখে দেখছে।

একটা স্টেশন এলো। একটা কথারও বিনিময় হয় নি। শঙ্কর সারাভাই তাড়াতাড়ি ঝুঁকে কাগজ কিনল একটা। তারপর গভীর মনোযোগে দৃষ্টিটা কাগজের দিকে ধরে রাখল।

যশোমতী দেখছে। গাড়ি চলছে।

আমরা কোথায় যাচ্ছি?

এত ঠাণ্ডা নিরুত্তাপ প্রশ্ন যে চমকে উঠল শঙ্কর সারাভাই। হঠাৎ যেন জবাব খুঁজে পেল না।

গোটা মুখখানা দু’চোখের আওতায় আটকে রাখতে চেষ্টা করে ধীর অনুচ্চ স্বরে যশোমতী আবার জিজ্ঞাসা করল, ফার্স্ট ক্লাসে চড়ে আমরা কোথায় যাচ্ছি?

হাসল শঙ্কর সারাভাই। এ-রকম কৃত্রিম বিনীত হাসি আর দেখে নি যশোমতী। এ-রকম চাপা অস্বস্তি আর চাপা উদ্দীপনাও আর দেখে নি।

–চলুন না, কাছেই।

চেয়ে আছে যশোমতী–পঞ্চাশ হাজার টাকা তাহলে অনেক টাকা….কেমন?

কাগজের ওপর মুখ নেমে এসেছে শঙ্কর সারাভাইয়ের। তার উদ্দেশ্য গোপন নেই বোঝার ফলে প্রাণান্তকর অস্বস্তি।

একটু অপেক্ষা করে যশোমতী আবার বলল, আমি যদি পরের স্টেশনে নেমে যাই, আপনি কি করবেন?

চমকে তাকালো শঙ্কর সারাভাই। উত্তেজনা সামলে হাসল। বলল, আপনি সে চেষ্টা করবেন না জানি। তাহলে আমাকেও নামতে, হবে, স্টেশনের লোককে বলতে হবে। মনে যা আছে খোলাখুলি ব্যক্ত করল এবার, বলল, আপনার বাবার কাছে লোক চলে গেছে, টেলিগ্রাম চলে গেছে, আর তারপরে ট্রাঙ্ক-টেলিফোনে আমার সঙ্গে কথাও হয়ে গেছে। এতক্ষণে তাঁরা সকলে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছেন–তাঁরা জানেন এই গাড়িতে আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি।

যশোমতীর দেখার শেষ নেই। এতদিন যা দেখে এসেছে তা যেন সব ভুল।

আপনার জীবনের তাহলে একটা হিল্লে হয়ে গেল, আর কোনো সমস্যা নেই?

শঙ্কর সারাভাই সানুনয়ে বোঝাতে চেষ্টা করল তাকে, সে কিছু অন্যায় করছে না, দুদিন আগে হোক পরে হোক বাবার কাছে ফিরে যেতে তো হবেই তাকে। কাগজে ছবি দেখেই পাড়ার লোকের সন্দেহ হয়েছে, ক’দিন আর এভাবে থাকা যেত। রাগের মাথায় সে চলে এসেছে, ফিরে গেলে তার বাবা নিশ্চয় অনুতপ্ত হবেন, টেলিফোনে তো প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলেন ভদ্রলোক, তাছাড়া এভাবে বেরিয়ে এসে যে বিপদের ঝুঁকি যশোমতী নিয়েছিল সেটাও কম নয়, কত রকমের লোক আছে সংসারে।

Page 55 of 61
Prev1...545556...61Next
Previous Post

সোনালী রেখা – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

Next Post

সাত পাকে বাঁধা – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

Next Post

সাত পাকে বাঁধা - আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

রূপসী বাংলার মুখ – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In