ওঠার সময় চন্দনার মা ব্যাণ্ডেদাকে জিজ্ঞেস করল, কাল আসছ তো বাবা? কুণালকেও নিয়ে এসো।
ব্যাণ্ডোদা বলল, কাল হয়ে উঠবে না…দেখি। আপনাকে আমাদের বাড়ি কবে নিয়ে যাচ্ছি বলুন?
–যেতে তো হবেই, শীগগিরই যাব…তবে আমার কেমন ভয় করে বাবা।
জবাবে কুণাল ব্যাণ্ডোদার হা-হা হাসির একটা নমুনা দেখল।
আবার ট্যাক্সি। ব্যাণ্ডোদা বলল, কি রকম বুঝলি?
কুণাল ঝুঁকে পায়ের ধুলো নিতে গেল।তোমার জবাব নেই গুরু, পায়ের ধুলো দাও। দারুণ-দারুণ–আমার বুকে চিতার আগুন জ্বলছে।
গুরু খুশি।
-তোমার মাকে সত্যি বলে রেখেছ?
-না বলার কি আছে! বলতে তো হবেই। তা কেমন লাগল বল!
–বললাম তো জবাব নেই। বয়েস সতেরো হলেও খুব বাড়ন্ত গড়ন।
–বয়েস সতেরো নয়, আঠারো। আমার সাতাশ শুনে ওর মা-ই স্বীকার করেছে। আঠারো না হলে সব-দিকে অমন ডবকা হয়?
–তুমি কাল আসছ না বললে, ফের কবে আসছ?
–পরশু। মুচকি হাসল।তবে পরশু তোকে আনা যাচ্ছে না।
–কেন?
চন্দনার বাবাকে নিয়ে ওর মা পনের দিনে একদিন পোলিক্লিনিকে দেখাতে যায়…পরশু শনিবার, যাবে আমি কদিন আগেই শুনেছিলাম। ঘণ্টা কয়েকের মামলা। পুরনো ঝিটা অবশ্য বাড়ি আগলে বসে থাকে, তবু এই মওকায় তাকে এদিক ওদিক সরিয়ে চন্দনাকে দুই একবার বুকে চেপে তো ধরতে পারব আর কষে দুচার করে চুমুও খেতে পারব–এবারে কোন শালা ঠেকায়।–তা তোর ভিতরটা খুব চড়চড় করছে?
–খাঁ-খাঁ করছে।
–সত্যি বলছিস?
–এই দেখানোর আগে আমার চোখ দুটো তুমি অন্ধ করে দিলে না কেন গুরু।
প্রদীপ ব্যাণ্ডো হাসতে লাগল। খানিক বাদে হঠাৎ বলল, যা এত যখন..ছমাস। এক বছর বাদে সুবিধে বুঝে তোকেই দিয়ে দেব।
কুণাল আঁতকে উঠল।–দিয়ে দেবে!
-না তো কি! কোন একটা মেয়েকে নিয়ে আমি জীবন কাটাবো ভাবিস নাকি? ঐ আগের অন্য বউ দুটোর মতো হবে না–সাপের মতো ফেস-ফোঁস করবে না…ঠিক চিট করা যাবে। তোকে নিয়ে আমার একটা দায়িত্ব আছে?
রাত নটা নাগাদ কুণাল বাড়ি ফিরে দেখে শিবুকাকা বসে আছে। সামনে বাবা আর দাদারাও আছে। ওকে দেখেই শিবুকাকা বলল, তোর কথাই এদের বলছিলাম এতক্ষণ। তোর সাবজেক্ট ঠিক করে ফেলেছি
বাবা আর দাদাদের মুখ দেখে মনে হল তারা আশার কথাই শুনছিল কিছু। বাবা বলে উঠল, আগে কাকার পায়ের ধুলো নে হারামজাদা পায়ের ধুলো নে।
কুণাল পিতৃ আদেশ পালন করল।
শিবুকাকা বলল, ওই বাঁদরেতরদের নিয়েই তোর ফীচার স্টার্ট করব। মানে তরুণের মন নাম দিয়ে তুই মাসে একটা করে ফীচার লিখবি। এক এক পর্যায়ের এক-একটা তরুণ:বেছে নিবি–তার মনের কথা সুখ দুঃখের কথা শুনবি তারপর। লিখবি। শেষে তোর মন্তব্য জুড়ে দিবি। মন্তব্য ওই রকম সরস হওয়া চাই–বুঝলি কোন রকম?
কুণাল সুবোধ ছেলের মতো মাথা নাড়ল, বুঝেছে।
প্রত্যেকটা লেখার জন্য পঁচিশ টাকা আর ঘোরাঘুরির জন্য পাঁচ টাকা করে পাবি। সেরকম উতরোলে বই ছাপার ব্যবস্থাও আমি করে দেব। বাবাকে বলল, তুমি কিছু ভেব না ভায়া, ওর ভার আমি নিলাম–আজ পর্যন্ত অনেক গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করেছি।
বাবা কৃতজ্ঞতায় গদগদ।
.
আরো রাত্রি।
ঘুম থেকে ধড়মড় করে একেবারে বিছানায় উঠে বসল কুণাল। বেডসুইচ টিপে আলো জ্বালল। ঘেমে গেছে। এ কি অদ্ভুত স্বপ্ন রে বাবা! ঘুরে ঘরের কোণের সুটকেসটার দিকে তাকালো। না, থাক–স্বপ্ন ছাড়া আর কি। কিন্তু বুকের ভিতরটা ধপধপ করছে। এখনো। হাত বাড়িয়ে ড্রয়ারটা খুলল। ছোট হুইস্কির বোতলটা খুলে কাঁচাই গলায় ঢেলে দিল। দুই একবার গা ঝাঁকানি দিয়ে টেবিলের গেলাস থেকে অল্প একটু জল খেল। বোতলটা ড্রয়ারে রেখে আলো নিভিয়ে আবার শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুম আর আসে না। যতবার চোখ লেগে আসে, গুরুর মুখ আর চন্দনার মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠছে।…চন্দনাকে বুকে চেপে গুরু চুমু খেতে যাচ্ছে। কাল বাদে পরশু দুপুরে যা ঘটবে।
বার কয়েক এ-রকম হতে আবার বেডসুইচ টিপে উঠে বসল। নিজের উদ্দেশে গাল পাড়ল, শালা পেট জ্বালিয়ে দিয়ে তোর জেগে খোয়াব দেখা বার করছি। ড্রয়ার খুলল। হুইস্কির বোতলটা এবারে গলায় ঢেলে শেষই করে দিল।
.
পরের দিন।
দুপুর তিনটেয় একটা রিকশ চেপে কুণাল বোস বাড়ি ফিরল। এই দুপুরে ঘরের বাইরে কেউ নেই, নইলে ওকে দেখলে হাঁ হয়ে যেত। ট্রাউজারের ওপর ওর গায়ে শুধু একটা সৃতির গেঞ্জি। জামাটা এক হাতে গোল করে দলা পাকানো।
রিকশা ভাড়া দিয়ে নিঃশব্দে নিজের ঘরে চলে এলো। দলা পাকানো জামাটা চৌকির কোণে ছুঁড়ে ফেলে দিল। সুটকেস খুলে কালো ডায়েরিটা বার করল। ড্রয়ার হাতড়ে একটা পুরনো ব্লেড নিয়ে বসল। ওড় অন বারমুডা লিলির পাতাটা খুলল। তকতকে সবুজ ডাটার ওপর বসা রঙিন বীভৎস পোকাটার মাথাটুকু শুধু ব্লেড দিয়ে কেটে দিল। তারপর নতুন পাতায় চলে এলো। কলম বার করল। শিবু কাকার কাগজের জন্য তরুণের মনএর প্রথম বা শেষ ফীচার এক্ষুণি লিখে ফেলবে। বারমুডা লিলির লেখাটা পছন্দ হয়েছিল যখন, এ লেখাটা নিশ্চয় আরো ঢের বেশি পছন্দ হবে।
-আমি এক্ষুণি গুরুর বাড়ি থেকে ফিরলাম। বেলা বারোটা থেকে পৌনে তিনটে পর্যন্ত তার ওখানে তার সঙ্গেই ছিলাম। গুরু পরের দিনের অপেক্ষায় মশগুল। আর আমি? না, জীবনে এত থ্রিল আর এমন উত্তেজনার স্বাদ আমি পাইনি। গ্র্যাণ্ড–যাকে বলে সুপার গ্র্যাণ্ড। অথচ নেশা কেবল একলা গুরুই করছিল। আমি যোগান দিয়ে চলেছিলাম। গুরুর তখন আমার দিকে মন দেবার চোখ কোথায়। ভাবে মশগুল। তার থেকে ঢের বেশি নেশায় মশগুল। আমার নেশা যোগানদারির ব্যাপারটা তো আর খেয়াল করে দেখেনি। কেবল টেনেই চলেছে।…তারপরে একসময় মাথা আর তুলতে পারছে না। চোখ আর খুলতে পারছে না। আমার থ্রিল আর উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। গ্র্যাণ্ড গ্র্যাণ্ড গ্র্যাণ্ড!