আরো মাস দুই বাদে অংশুমানের প্রমোশনসহ বদলির হুকুম এসেছে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই এখন এজন্যেই আবার খুব মন খারাপ। বাকি দিনগুলো এখানে এভাবে কেটে গেলেই যেন বড় সুখের হত। সুচারু দেবী স্বামীর আসকারা পেয়ে রাধাকে জোন করেই কোয়াটারস এ ধরে নিয়ে আসেন, তিন-চার দিনও আটকে রাখেন। কপালী বাবা একটুও আপত্তি করেন না। তিনি আবার একটা মজার গান বেঁধেছেন, মোটা ভাঙা-ভাঙা গলায় বাউল সুরে সকলকে সে গান শোনান। এরা স্বামী-স্ত্রীও তাঁর ওখানে গিয়ে চেলাদের সঙ্গে বসে এ গান এনেছেন।
ওরে ও মাতনের মানুষ
রাধার বুকে কতই তোরা
ভক্তি দেখলি পুজা দেখলি
মায়ের সঙ্গে লড়াই দেখলি না।
ওরে ও মাতনের মানুষ
রাখার চোখে কতই তোরা
প্রেম দেখলি জল দেখলি
রাধার চোখে আগুন দেখলি না।
শুনে সকলে না বুঝেও হাসে। অংশুমান হাসেন সুচারু দেবী হাসেন। গম্ভীর হতে গিয়ে রাধাও এক-একসময় হেসেই ফেলে। কখনো দুহাত জোড় করে বাবাকে নিষেধ করে মিনতি জানায়।
না, সে-লড়াই আমি দেখিনি। সেই আগুনও না। কিন্তু সেদিন অংশুমানের ঘরে বসে রাধার কালো টানা চোখে কয়েক পলকের জন্য আগুন আমি দেখেছি।…দেওয়ালে টাঙানো মায়ের বড় ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ধীর টনটনে গলায় বলেছিল, আমিও দেখব তোর মুরোদ কত, হেরে হাসিস না জিতে কঁদিস!
এই লড়াই বা তার হার-জিত হাসি-কান্না আমার কাছে দূরের জিনিস। এপথের কথা শোনা আছে, জানা নেই। এখনো লড়াইয়ের হাতিয়ার তো দেখছি বিজ্ঞানের ওষুধ। রাধার নিজস্ব লড়াই বা তার চোখের আগুনের দাম কি, অংশুমান ঘোষের রোগের ভবিষ্যৎ কি, আমি জানি না। কিন্তু মন আশার দরিয়ায় সাঁতার কাটছে। আশা করতে বড় ভালো লাগছে।